12/31/2025 ফিরে দেখা ঘটনাবহুল ২০২৫: জ্যাম, জনতা ও জিলাপির প্যাঁচের বছর
Dr Mahbub
৩১ December ২০২৫ ০৪:২৬
—বছরের শেষ সম্পাদকীয় । বুধবার ১৬ই পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | শীত-কাল
লেখাটি রম্য–ব্যঙ্গের ছলে লেখা—হাসুন, ভাবুন; কাউকে লক্ষ্য করে নয়, ডিসক্লেইমার (Disclaimer) পড়ুন। ২০২৫ সালের বাংলাদেশ কেমন ছিল? জ্যাম, সিন্ডিকেট, রাজনীতির ডিগবাজি আর মব জাস্টিসের হুলুস্থুল কাণ্ডকারখানা নিয়ে এক ভুক্তভোগী নাগরিকের রম্য বয়ান। রাজনীতি থেকে অর্থনীতি, কিশোর গ্যাং থেকে বেকারত্ব—বছরের আলোচিত সব ঘটনা নিয়ে ঝাঁঝালো ও ব্যাঙ্গাত্মক ফিরে দেখা। পড়ুন বাংলাদেশের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির এক ভিন্নধর্মী দলিল। হাসবেন নাকি কাঁদবেন? পড়ুন বর্ষসমাপনী এই বিশেষ ফিচার। সবাইকে জ্যামহীন ও প্যারামুক্ত নতুন বছরের শুভেচ্ছা!
ফিরে দেখা ২০২৫: এক হুলুস্থুল বছর! 👀
ঘড়ির কাঁটা তখন রাত এগারোটা ছুঁই ছুঁই। ফার্মগেটের সিগন্যালে বসে আছি গত দেড় ঘণ্টা ধরে। সামনে এক বিশাল বাস, যার পেছনে লেখা "জন্ম আমার ধন্য, জ্যামে আমি অনন্য"। বাসের সাইলেন্সর দিয়ে বের হওয়া ধোঁয়ার কুন্ডলী আর ২০২৫ সালের শেষ রাতের কুয়াশা মিলেমিশে এক অদ্ভুত 'স্মোকি ফ্লেভার' তৈরি করেছে। এই ধোঁয়াশাচ্ছন্ন আবহে বসে পেছনের দিকে তাকালাম। না, গাড়ির ব্যাক গিয়ারের কথা বলছি না, বলছি মহাকালের ব্যাক গিয়ারের কথা। ফিরে তাকালাম ঘটনাবহুল ২০২৫-এর দিকে।
শোকবার্তা

আহ! ২০২৫। কী এক বছর গেল! ইতিহাসে একে স্বর্ণাক্ষরে লেখা হবে কি না জানি না, তবে ফেসবুকে যে একে 'মিম-াক্ষরে' লেখা হয়েছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। স্মার্ট বাংলাদেশের 'আল্ট্রা-স্মার্ট' ভার্সনে পদার্পণ করা এই বছরে আমাদের প্রাপ্তি আর অপ্রাপ্তির খাতাটা অনেকটা ওই চালকবিহীন গাড়ির মতো—চলছে তো চলছেই, কিন্তু গন্তব্য কেউ জানে না।
২০২৫ সালটাকে নির্দ্বিধায় 'জাতীয় আন্দোলন বর্ষ' ঘোষণা করা যেতে পারে। বছরের শুরুটা হয়েছিল শীতকালীন সবজি, বিশেষ করে ফুলকপির দাম কমানোর আন্দোলন দিয়ে। শাহবাগে তখন স্লোগান উঠেছিল, "ফুলকপি আনব ঘরে, সিন্ডিকেট যাবে সরে!" সে এক তুমুল অবস্থা। পুলিশ অবশ্য কাঁদানে গ্যাসের বদলে গরম কফি স্প্রে করে পরিস্থিতি ঠান্ডা করার চেষ্টা করেছিল, কারণ তখন আবার 'স্মার্ট পুলিশিং' এর যুগ।
তবে আসল খেলা শুরু হলো বর্ষাকালে। যখন বৃষ্টির পানিতে ঢাকা শহর ভেনিস হয়ে গেল, তখন একদল তরুণ দাবি তুলল—রাস্তায় বাস নয়, সরকারি খরচে নৌকা নামাতে হবে। স্লোগান ছিল, "জলজট নয়, নৌপথ চাই, সাঁতার কেটে অফিস যাই!" কী অকাট্য যুক্তি! প্রশাসন অবশ্য কথা রেখেছিল। তারা নৌকা দেয়নি, তবে ড্রেনেজ সিস্টেমের ম্যাপ আপডেট করে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিল, "পানি নামবে, ধৈর্য ধরুন। জল আছে বলেই তো জীবন!"
বছরের মাঝামাঝি সময়ে রাজপথ গরম হলো নতুন এক ইস্যুতে। 'ভাইরাল হওয়ার অধিকার' আন্দোলন। টিকটক এবং রিলস হিরোরা দাবি তুলল, সিগন্যালে গাড়ি থামলে ট্রাফিক পুলিশকে তাদের সাথে নাচের ভিডিও করতে হবে। যুক্তি হলো—এতে চালকদের বোরিং সময়টা আনন্দে কাটবে। যদিও শেষমেশ দাবিটা মানা হয়নি, কিন্তু ট্রাফিক পুলিশের হাতে এখন লাঠির বদলে সেলফি স্টিক দেখা যাচ্ছে মাঝেমধ্যেই।
২০২৫ সালকে বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে 'স্টার্টআপ কালচার'-এর বছর বলা যেতে পারে। তবে এই স্টার্টআপগুলো প্রযুক্তির নয়, রাজনৈতিক দলের। নির্বাচন কমিশন এ বছর অনেকটা পাইকারি দরে দলের নিবন্ধন দিয়েছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছিল যে, পাড়ার মোড়ে চায়ের দোকানে বসা চারজন বন্ধু মিলে আড্ডা দিলেও লোকে সন্দেহ করত—এই বুঝি নতুন কোনো রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটল! 'বাংলাদেশ হতাশ প্রেমিক দল' কিংবা 'নিখিল বাংলা জ্যাম ভুক্তভোগী পরিষদ'—এমন অদ্ভুত সব নামের দলগুলো যখন ইসির গ্রিন সিগন্যাল পেল, তখন জনগণ বুঝল গণতন্ত্র এখন সত্যিই 'দুয়ারে' কড়া নাড়ছে।
তবে দল গড়ার চেয়ে দল ভাঙার নাটকই ছিল এ বছরের ব্লকবাস্টার হিট। এমপি হওয়ার পবিত্র (?) বাসনায় অনেক নেতা নিজের হাতে গড়া দলকে চোখের পলকে বিলুপ্ত ঘোষণা করেছেন। সকালে যিনি 'বিপ্লবী পার্টি'র চেয়্যারম্যান হিসেবে গর্জন ছাড়লেন, বিকেলে দেখি তিনি সেই দল ফ্লাশ করে দিয়ে বড় কোনো জোটে যোগ দিয়ে নমিনেশন পেপার কিনছেন। একে তাঁরা নাম দিয়েছেন "বৃহত্তর স্বার্থে ঐক্য", যদিও পাবলিক জানে ওটা আসলে "ব্যক্তিগত স্বার্থে ডিগবাজি"।
জোটের রাজনীতিও ছিল জগাখিচুড়ি পাকানো। ২০ দলীয় জোট, ৫০ দলীয় জোট—সংখ্যা শুনে মনে হয়েছে এগুলো রাজনৈতিক জোট নয়, কোনো মেগা শপিং মলের ডিসকাউন্ট অফার। এমন সব দল জোটে ভিড়েছে, যাদের কেন্দ্রীয় কমিটি আর তাদের ফ্যামিলি ট্রি মূলত একই। আর সবশেষে ছিল সেই চিরচেনা অলিম্পিক ইভেন্ট—'ব্লেমিং গেম'। মশা কামড়ালে সরকার বলেছে, "এটা বিরোধীদের ষড়যন্ত্র, তারা মশা ট্রেইন করে পাঠাচ্ছে"; আর বিরোধীরা বলেছে, "সরকার মশা দমনে ব্যর্থ কারণ তারা মশার সাথে আঁতাত করেছে।" মাঝখান থেকে জনগণ এই রাজনৈতিক পিংপং খেলা দেখতে দেখতে ঘাড়ে ব্যাথা বানিয়ে ফেলেছে, কিন্তু খেলার স্কোরবোর্ডে কোনো পরিবর্তন আসেনি।
আরো পড়ুন: তিন দার্শনিকের ঈশ্বরের কাছে প্রশ্ন, বঙদেশ কে চালায়? ..,. আজকের বাংলাদেশ ও নিয়তির লিখন
২০২৫ সালে এসে আমরা বুঝতে পেরেছি, মার্ভেল বা ডিচি কমিকসের ভিলেনরা আসলে শিশু। আসল সুপারপাওয়ার আমাদের দেশের 'সিন্ডিকেট'-এর হাতে। বছরের শুরুতে ডিমের দাম এমনভাবে বাড়ল যে, লোকে ডিমকে শোকেসে সাজিয়ে রাখতে শুরু করল। বিয়েবাড়িতে উপহার হিসেবে সোনার আংটির বদলে এক ডজন হাঁসের ডিম দেওয়ার রেওয়াজ চালু হলো এই বছরেই।
পেঁয়াজের ঝাঁঝ তো ছিলই, তার সঙ্গে যুক্ত হলো কাঁচামরিচের অ্যাটম বম্ব। কাঁচামরিচ কিনতে গিয়ে মানুষকে ব্যাংকের লোন নিতে হয়েছে—এমন গুজবও রটেছিল। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে যথারীতি বলা হলো, "আমরা বাজার মনিটরিং করছি।" তাদের মনিটরিং ব্যবস্থাটা এতই শক্তিশালী যে, তারা মনিটরে তাকিয়ে থাকে, আর ওদিকে দাম বাড়তে থাকে। সম্ভবত তাদের মনিটরে 'লাইভ স্কোর' দেখায়, কিন্তু খেলাটা থামানোর বাটনটা কাজ করে না।
সিন্ডিকেট দমনে এ বছর 'আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স' বা এআই ব্যবহারের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শোনা যাচ্ছে, আমাদের দেশের ধুরন্ধর ব্যবসায়ীরা নাকি এআই-কেও ঘুষ দিয়ে ম্যানেজ করে ফেলেছে। এখন এআই বাজারে ঢুকে ডাটা দেয়—"সব ঠিক আছে, দাম বাড়াটা আসলে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি!"
২০২৫ সালে আমাদের অর্থনীতির চাকা সম্ভবত ‘পাংচার’ হয়ে গিয়েছিল, যা সারানোর মতো কোনো দক্ষ মেকানিক খুঁজে পাওয়া যায়নি। বাজারে গেলেই মনে হয়েছে, আমরা সবজি কিনতে যাইনি, ইউরেনিয়াম কিনতে গেছি। ১০০০ টাকার নোটের ‘ভ্যালু’ এখন টিস্যু পেপারের চেয়ে সামান্য বেশি—পকেট থেকে বের করলেই হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। কাঁচাবাজারে এমন আগুন লেগেছে যে, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ডেকেও তা নেভানো সম্ভব হয়নি। মাছ-মাংসের দিকে তাকানোকে এখন মধ্যবিত্তের জন্য ‘বিলাসিতা’ আর গরিবের জন্য ‘অপরাধ’ বলে গণ্য করা হচ্ছে।
সবচেয়ে করুণ দশা মধ্যবিত্তের। এ বছর তারা সফলভাবে ‘নিম্নবিত্তে’ প্রমোশন পেয়েছে। তাদের নতুন নাম দেওয়া হয়েছে ‘লাজুক গরিব’—যাঁরা লোকলজ্জায় টিসিবির ট্রাকের পেছনে দাঁড়াতে পারেন না, আবার সুপারশপে ঢোকার সাহসও পান না। দারিদ্র্যের হার বেড়েছে রকেটের গতিতে, কিন্তু আমাদের অর্থনীতিবিদরা একে ‘দারিদ্র্য’ বলতে নারাজ। তাঁদের মতে, দেশের মানুষ আসলে স্বাস্থ্যসচেতন হয়েছে, তাই তারা তিন বেলার বদলে দুই বেলা খেয়ে ‘ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং’ বা ডায়েট করছে। জিডিপি (GDP) গ্রাফের ওপরের দিকে উঠছে ঠিকই, কিন্তু সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান প্যারাস্যুট ছাড়াই নিচের দিকে নামছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, মানুষ এখন ব্যাংকে টাকা রাখে না, কারণ ব্যাংকের চেয়ে বালিশের নিচেই টাকা বেশি নিরাপদ মনে হয়।
এক নজরে ২০২৫-এর হুলুস্থুল!

২০২৫ সালে আমাদের বিদেশনীতি ছিল অনেকটা সার্কাসের দড়ির ওপর দিয়ে হাঁটার মতো—একটু এদিক-সেদিক হলেই ধপাস! আমাদের পররাষ্ট্রনীতির পুরনো মন্ত্র "সবার সাথে বন্ধুত্ব" এ বছর আপডেট হয়ে দাঁড়িয়েছে—"সবার সাথে সেলফি, কিন্তু ক্যাপশন হবে আলাদা।" একদিকে পশ্চিমা বিশ্ব যখন গণতন্ত্র আর মানবাধিকারের চশমা পরে আমাদের দিকে তাকিয়েছে, তখন আমরা পূর্ব দিকে তাকিয়ে উন্নয়নের গান গেয়েছি। আমেরিকা যখন স্যাংশন বা ভিসানীতির ভয় দেখিয়েছে, আমরা তখন অন্য পরাশক্তির সাথে ‘কৌশলগত অংশীদারিত্বের’ চা খেয়েছি। আমাদের কূটনীতিকরা এ বছর এত বেশি ‘ভারসাম্য’ বজায় রাখার চেষ্টা করেছেন যে, তাদের অনেকেরই এখন ফিজিক্যাল ব্যালেন্স বা ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার জোগাড়। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছিল—আমরা সকালে এক দেশের সাথে হাত মিলিয়েছি, দুপুরে অন্য দেশের সাথে লাঞ্চ করেছি, আর রাতে তৃতীয় কোনো দেশকে বলেছি, "আরে নাহ! ওসব তো লোক দেখানো, তোমরাই আসল বন্ধু!"
প্রতিবেশীদের সাথে সম্পর্কের রসায়নটা এ বছর ছিল ‘টক-ঝাল-মিষ্টি’ চানাচুরের মতো। তিস্তার পানি আমরা পাইনি, তবে তিস্তার পাড়ে দাঁড়িয়ে হতাশ হয়ে ছবি তোলার পূর্ণ স্বাধীনতা পেয়েছি। পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ আর ডিমের ডিপ্লোম্যাসি এ বছরও সুপারহিট ছিল—প্রতিবেশী দেশ যখনই বর্ডার বন্ধ করেছে, আমাদের রান্নাঘরে তখনই হাহাকার লেগেছে। রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আন্তর্জাতিক বিশ্ব এ বছর এত পরিমাণ ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছে যে, সেই উদ্বেগের ভারে কক্সবাজারের মাটি দেবে যাওয়ার দশা। সবাই এসে সহানুভূতি জানিয়েছে, কিন্তু কেউ একজন রোহিঙ্গাকেও সাথে করে নিয়ে যায়নি।
২০২৫ সালে আমাদের প্রযুক্তিগত প্রাপ্তি আকাশচুম্বী। এখন আর পকেটে মানিব্যাগ রাখতে হয় না, সব লেনদেন ডিজিটাল। ভিক্ষুকরাও এখন কিউ-আর কোড গলায় ঝুলিয়ে ঘোরে। রিক্সাওয়ালা মামাকে "মামা, ২০ টাকা হবে?" জিজ্ঞেস করলে তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন, "ক্রিপ্টোকারেন্সিতে দেবেন নাকি লোকাল কয়েনে?"
তবে এই স্মার্টনেসের একটা সাইড এফেক্টও দেখা গেছে। এ বছর বাংলাদেশে 'ফেসবুক গৃহযুদ্ধ' মহামারী আকার ধারণ করেছিল। চায়ের দোকানে বসে তর্কের দিন শেষ, এখন সব তর্ক কমেন্ট বক্সে। কেউ একজন লিখল, "আজ আকাশটা নীল", তো অমনি হাজারো কমেন্ট—"নীল কেন? আপনি কি বিশেষ কোনো দলের এজেন্ট?", "আকাশের রং নিয়ে রাজনীতি করবেন না", "আকাশ কি আপনার বাবার সম্পত্তি?"। এই ভার্চুয়াল কাজিয়ায় আমাদের জাতীয় উৎপাদনশীলতার কতটা যে ব্যয় হয়েছে, তা গবেষণা করতে গেলে গবেষক নিজেই পাগল হয়ে যাবেন।
২০২৫ সালকে নির্দ্বিধায় ‘গণ-বিচারের স্বর্ণযুগ’ বলা যেতে পারে। আগে বিচার পেতে আদালতের বারান্দায় জুতো ক্ষয় হতো, আর এ বছর বিচার হয়েছে রাজপথে—জুতো পেটা করার মাধ্যমে। ‘মব জাস্টিস’ বা গণপিটুনি এ বছর আমাদের জাতীয় শরীরচর্চার অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কারো চালচলন একটু সন্দেহজনক মনে হলেই হলো, চারপাশ থেকে ‘ধর ধর’ রবে এমন উত্তম-মধ্যম দেওয়া হয়েছে যে, ভুক্তভোগী নিজেই ভুলে গেছেন তিনি আসলে দোষী নাকি নির্দোষ। প্রশাসন অবশ্য একে ‘জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ’ বলে এড়িয়ে গেছে।
তবে এই ‘হাতে-নাতে বিচার’ এর সবচেয়ে করুণ শিকার হয়েছেন আমাদের শিক্ষকরা। এককালে যাদের বলা হতো ‘মানুষ গড়ার কারিগর’, ২০২৫-এ এসে সেই কারিগরদের মেরুদণ্ড সোজা রাখার বদলে প্রাণ নিয়ে পালানোটাই ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। বছরজুড়ে আমরা এক অদ্ভুত দৃশ্য দেখেছি—ছাত্ররা ক্লাসে অ্যাসাইনমেন্টের বদলে পকেটে করে নিয়ে এসেছে শিক্ষকের ‘পদত্যাগপত্র’। স্যারেরা কাঁপা কাঁপা হাতে সই করেছেন, আর ছাত্ররা সেটা ফেসবুকে লাইভ করে ক্যাপশন দিয়েছে—"মিশন সাকসেসফুল!" শিক্ষকের চোখের জল আর বৃষ্টির পানি একাকার হয়ে গেছে, কিন্তু সেটা ভাইরাল রিলসের ভিড়ে কারো চোখে পড়েনি। গুরু-শিষ্যের সম্পর্কে এমন ‘ডিজিটাল আপডেট’ আসবে, তা হয়তো চাণক্যও কোনোদিন কল্পনা করেননি।
আইন-শৃঙ্খলার উন্নয়নে এ বছর দায়িত্বশীলদের মুখের বুলি ছিল হলিউড সিনেমার সংলাপের চেয়েও অ্যাকশন-প্যাকড। প্রতিদিন প্রেস ব্রিফিংয়ে তাঁরা বজ্রকন্ঠে ঘোষণা করেছেন—"অপরাধীর কোনো দল নেই", "আমরা জিরো টলারেন্স নীতিতে অটল", এবং "বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।" তবে পাবলিকের কাছে মনে হয়েছে, তাদের 'খতিয়ে দেখা'র চশমার পাওয়ারটা বোধহয় একটু কমে গেছে। ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে কেউ থানায় গেলে ডিউটি অফিসার উল্টো সান্ত্বনা দিয়ে বলেছেন, "ভাই, জান তো বেঁচে আছে! ওটাই শুকরিয়া। চোর-ডাকাতরাও তো মানুষ, ওদেরও তো সংসার আছে!"
মজার ব্যাপার হলো, অপরাধের পরিসংখ্যান কমানোর এক অভিনব ডিজিটাল পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছে এ বছর। পদ্ধতিটি হলো—মামলা না নেওয়া। মামলা নেই তো অপরাধ নেই! কর্তারা দাবি করছেন, আমাদের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন নিউ ইয়র্কের চেয়েও ভালো। অবশ্য নিউ ইয়র্কের কোন চিপা গলির সাথে তুলনা করা হয়েছে, তা স্পষ্ট করা হয়নি। বড় বড় অপরাধীরা যখন জামিন নিয়ে ফুলের মালা গলায় দিয়ে বের হয়, তখন দায়িত্বশীলরা বলেন, "আইন তার নিজস্ব গতিতে চলছে।" জনগণের কাছে মনে হয়, আইনের সেই গতিটা আসলে কচ্ছপের গতির চেয়েও মন্থর।
আইন-শৃঙ্খলার এই দুর্বলতার ফাঁক গলে ২০২৫ সালে ঢাকার অলিগলি শাসন করেছে এক বিশেষ প্রজাতির ‘খুদে মাফিয়া’, যাদের আমরা আদর করে ডাকি ‘কিশোর গ্যাং’। এদের চেনার উপায় খুব সহজ—মাথায় মুরগির ঝুঁটির মতো হরেক রঙের চুল, পরনে অদ্ভুত ফিটিংয়ের প্যান্ট, আর বাইকের সাইলেন্সর খুলে এমন বিকট শব্দ করা যেন যুদ্ধবিমান টেক-অফ করছে। এদের গ্রুপের নামগুলোও বেশ সৃজনশীল—‘নয়ন বন্ড-০০৭’, ‘ডেঞ্জার বয়েজ’ কিংবা ‘কলিজা ফ্রাই গ্রুপ’। মহল্লায় এদের দাপট দেখলে মনে হয়, এলাকার এমপি বা কমিশনার নন, আসল ক্ষমতা এদের হাতেই। তুচ্ছ কারণে রামদা নিয়ে ধাওয়া করতে এরা বিন্দুমাত্র দ্বিধা করে না।
এদের মূল শক্তির উৎস হলো ‘বড় ভাই’ নামক এক অদৃশ্য ছাতা। কিশোর গ্যাংয়ের কোনো সদস্যকে পুলিশ ধরলে থানার ফোন বেজে ওঠে। অপরপ্রান্ত থেকে ভেসে আসে গম্ভীর কণ্ঠস্বর, “ও তো বাচ্চা ছেলে, একটু দুষ্টুমি করেছে, ছেড়ে দিন।” রাষ্ট্রযন্ত্রের এই অসহায় আত্মসমপর্ণ দেখে জনগণ এখন নিজেদের নিরাপত্তা নিজেরাই নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে। ২০২৫ সালে এসে মনে হচ্ছে, রাষ্ট্রযন্ত্র এখন ‘অটো-পাইলট’ মোডে চলছে, যেখানে যাত্রীরা (জনগণ) আল্লাহ্ ভরসায় বসে আছে, আর ককপিট দখল করে বসে আছে কিশোর গ্যাং।
২০২৫ সালে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গন ছিল মূলত একটি ‘রাজনৈতিক পুনর্বাসন কেন্দ্র’। খেলার মাঠ আর রাজনীতির মঞ্চের পার্থক্য করা এ বছর ছিল গবেষকদের জন্য সবচেয়ে কঠিন কাজ। ফেডারেশনগুলোর চেয়ারে বসে থাকা কর্তারা বলের চেয়ে দলের প্রতি বেশি অনুগত ছিলেন। দল গঠন বা খেলোয়াড় নির্বাচনে ফিটনেসের চেয়ে ‘লবিং’ এর জোর ছিল বেশি। ফলে দেখা গেছে, খেলোয়াড়রা মাঠে দৌড়ানোর চেয়ে বড় ভাইদের পেছনে দৌড়াতেই বেশি এনার্জি খরচ করেছেন। ক্রিকেট দল এ বছর আমাদের ‘গৌরবময় অনিশ্চয়তা’র চূড়ান্ত নিদর্শন দেখিয়েছে—টাইগাররা মাঠের চেয়ে শ্যাম্পু আর বার্গারের বিজ্ঞাপনেই বেশি বাঘের মতো গর্জন শুনিয়েছেন।
তবে ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে কলঙ্কজনক অধ্যায় ছিল নারী ক্রীড়াবিদের নিরাপত্তা। যারা দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনছেন, তাদের লড়াই করতে হয়েছে মাঠের প্রতিপক্ষের চেয়ে ফেডারেশনের ভেতরের ‘চাচা-মামাদের’ কুদৃষ্টির সাথে। যৌন হয়রানির অভিযোগগুলো এ বছর ‘ওপেন সিক্রেট’ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। অভিযোগ উঠলেই কর্তারা চিরাচরিত ‘তদন্ত কমিটি’ গঠন করেছেন, যার কাজ ছিল মূলত ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়া। নারী ফুটবলাররা ছাদখোলা বাস চেয়েছিল, কিন্তু জুটেছে লোকাল বাসের অবহেলা আর কর্তাদের ‘অশালীন ইঙ্গিত’।
২০২৫ সালে ঢাকার আকাশ ঢেকে গেছে ফ্লাইওভারে। একটার ওপর দিয়ে আরেকটা, তার ওপর দিয়ে আরেকটা—যেন জিলাপির প্যাঁচ। নিচতলায় যারা থাকে, তারা সূর্যের আলো দেখে শুধু ইউটিউবে। সরকার দাবি করছে, যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমরা ইউরোপকে ছাড়িয়ে গেছি। কথাটা মিথ্যে নয়। ইউরোপে এক দেশ থেকে আরেক দেশে যেতে যা সময় লাগে, আমাদের উত্তরা থেকে মতিঝিল যেতে তার চেয়ে একটু বেশিই সময় লাগে। একেই বলে 'আন্তর্জাতিক মানের' ট্রাফিক!
মেট্রোরেলের লাইন বেড়েছে, এটা নিঃসন্দেহে প্রাপ্তি। কিন্তু স্টেশনে ঢোকার লাইন দেখে মনে হয়, টিকিট নয়, বিনামূল্যে বেহেশতের চাবি বিতরণ করা হচ্ছে। ট্রেনের ভেতরে ধাক্কাধাক্কি করে ওঠার পর বাঙালির যে 'টিম স্পিরিট' দেখা যায়, তা অলিম্পিকে কুস্তি ইভেন্টে পাঠালে আমরা নিশ্চিত গোল্ড মেডেল পেতাম।
২০২৫ সালে আমাদের নদী রক্ষার উদ্যোগগুলো ছিল এক কথায় 'অভাবনীয়'। নদী দখলমুক্ত করার অভিযানে আমরা এতটাই সফল হয়েছি যে, ঢাকার আশেপাশের নদীগুলোতে এখন আর পানি নেই, আছে শুধু 'সলিড উন্নয়ন'। নদী কমিশনের এক নতুন সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, "যেখানে পানি নেই, সেটাই আবাসন প্রকল্পের জন্য উর্বর জমি।" বুড়িগঙ্গাকে বাঁচাতে হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, যার প্রধান কাজ ছিল নদীর তলদেশের পলিথিন না সরিয়ে বরং তার ওপর আরও পলিথিন ফেলে নদী ভরাট করে ফেলা। পরিবেশবাদীরা যখন বললেন, "নদী মরে যাচ্ছে", তখন কর্তাব্যক্তিরা মুচকি হেসে বললেন, "নদী মরেনি, ওটা ল্যান্ড ডেভেলপমেন্টের জন্য 'রেস্ট' নিচ্ছে।"
আর বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি? সে তো ফেসবুকেই সীমাবদ্ধ। এ বছর 'এক কোটি গাছ লাগানোর' মেগা প্রজেক্টের সব গাছই লাগানো হয়েছে স্ট্যাটাস আর হ্যাসট্যাগে। বাস্তবে দেখা গেল, রাস্তার ধারের শতবর্ষী গাছ কেটে সেখানে 'পরিবেশবান্ধব বিলবোর্ড' টাঙানো হয়েছে, যার গায়ে লেখা—"গাছ লাগান, পরিবেশ বাঁচান।"
উন্নয়নের এত সব গল্পের ভিড়ে ২০২৫ সালে বাংলাদেশে সবচেয়ে সস্তায় যা পাওয়া গেছে, তা হলো—‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি’। এ বছর আমরা এত বেশি গ্র্যাজুয়েট ও পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট উৎপাদন করেছি যে, সার্টিফিকেটের কাগজ দিয়ে এখন অনায়াসেই ঝালমুড়ির ঠোঙা বানানো যাবে। ঘরে ঘরে এখন মাস্টার্স পাস ছেলেমেয়েরা বসে আছে, যাদের সার্টিফিকেটের ওজন তাদের নিজের ওজনের চেয়েও বেশি। চাকরির বাজারে সেই অধরা ‘সোনার হরিণ’ এখন আর হরিণ নেই, ওটা ডাইনোসর হয়ে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে এখন চাওয়া হয়—"বয়স অনূর্ধ্ব ২৫, কিন্তু অভিজ্ঞতা থাকতে হবে ৩০ বছরের।"
চাকরি না পেয়ে আমাদের শিক্ষিত তরুণ সমাজ এ বছর নতুন দুটি পরিচয় গ্রহণ করেছে—‘উদ্যোক্তা’ এবং ‘ফ্রিল্যান্সার’। যার কোনো কাজ নেই, সে এখন ফেসবুকে একটি পেজ খুলে নিজেকে ‘ফাউন্ডার অ্যান্ড সিইও’ দাবি করছে। বেকারত্বের লজ্জা ঢাকতে ‘ফ্রিল্যান্সিং’ শব্দটি এখন জাদুর মতো কাজ করছে। মেধার এই অপচয় দেখে মনে হয়, আমরা রকেট বানাতে গিয়ে রিকশা বানিয়ে ফেলেছি।
অপ্রাপ্তির খাতা: যা চেয়েছিলাম আর যা পেলাম
২০২৫-এর হিসাব নিকাশ করতে বসলে অপ্রাপ্তির খাতাটাও নেহায়েত হালকা নয়। এ জন্য পড়ুন:
২০২৫-এর আয়নায় অপ্রাপ্তির হাল খাতা: যা চেয়েছিলাম আর যা পেলাম — উন্নয়নের শোকেসে বাংলাদেশ
২০২৫-এর জেন-জি (Gen-Z) বিপ্লবীরা স্বপ্ন দেখেছিল এক ঝকঝকে ‘নতুন বাংলাদেশ’-এর। তাদের স্লোগান ছিল—"সিস্টেম রিফর্ম চাই, নট জাস্ট রিপেয়ার।" কিন্তু বছর শেষে ব্যালেন্স শিট মেলাতে গিয়ে মনে হচ্ছে, আমরা অপারেটিং সিস্টেমের নাম বদলেছি ঠিকই, কিন্তু মাদারবোর্ডের পুরোনো জং ধরা 'বাগ' (Bug) গুলো দিব্যি রয়ে গেছে। তরুণরা চেয়েছিল মেধার রাজত্ব, কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, মামা-চাচারা কেবল দল আর পোশাক বদল করেছেন, স্বভাব বদলাননি।
তরুণদের সেই কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের বাংলাদেশ ফাইলটি সম্ভবত এখনো ‘ডাউনলোড’ হচ্ছে, কিন্তু নেটওয়ার্ক এরর-এর কারণে ইন্সটল আর করা গেল না।
রাত বারোটা বাজল। বাসের জানলা দিয়ে দূরে কোথাও আতশবাজির ঝলকানি দেখা যাচ্ছে। ২০২৬ সাল এসে গেছে। সিগন্যালটা এখনো ছাড়েনি। পাশের সিটের ভদ্রলোক ঘুমিয়ে পড়েছিলেন, হঠাৎ আতশবাজির শব্দে জেগে উঠে বললেন, "ভাই, কি যুদ্ধ লাগল নাকি?" আমি হেসে বললাম, "না ভাই, বছর বদলালো। ক্যালেন্ডার বদলালো।"
ভদ্রলোক আবার চোখ বুজলেন। বিড়বিড় করে বললেন, "ক্যালেন্ডার বদলালে কী হবে? কপাল তো আর বদলায় না।"
তাঁর এই দার্শনিক উক্তিতেই হয়তো পুরো ২০২৫-এর সারাংশ লুকিয়ে আছে। আমরা অনেক কিছু পেয়েছি, আবার অনেক কিছু হারিয়েছি। ফ্লাইওভার পেয়েছি, কিন্তু গতি পাইনি। ইন্টারনেট পেয়েছি, কিন্তু সহনশীলতা হারিয়েছি। শপিং মল পেয়েছি, কিন্তু ক্রয়ক্ষমতা হারিয়েছি।
তবুও আমরা আশাবাদী জাতি। আমরা বিশ্বাস করি, ২০২৬ সালে সব ঠিক হয়ে যাবে। সিন্ডিকেট ভেঙে যাবে, মশা দেশত্যাগ করবে, আর ট্রাফিক সিগন্যাল সবুজ হবে। এই আশা নিয়েই আমরা জ্যামে বসে থাকি, বাসে ঝুলে থাকি, আর ফেসবুকে লিখি—"হ্যাপি নিউ ইয়ার!"
২০২৫ আমাদের শিখিয়েছে, জীবনে প্যারার কোনো শেষ নেই, কিন্তু সেই প্যারাকে চাটনি বানিয়ে খেয়ে ফেলার নামই হলো বাঙালি জীবন। সুতরাং, আসুন, প্রাপ্তির ঢেঁকুর তুলে আর অপ্রাপ্তির দীর্ঘশ্বাস গোপন করে নতুন বছরকে স্বাগত জানাই।
সিগন্যাল ছেড়েছে। গাড়িটা একটু নড়ে উঠল। মনে হচ্ছে, ২০২৬ সালের দিকে আমরা ১ ইঞ্চি এগিয়েছি। শুভ নববর্ষ, বাংলাদেশ!
এই লেখাটি একটি রম্য–ব্যঙ্গাত্মক (Satirical) সম্পাদকীয় ফিচার। এখানে ব্যবহৃত ঘটনাবলি, উপমা, সংলাপ, চরিত্র ও বর্ণনা সামগ্রিক সামাজিক বাস্তবতার প্রতীকী ও সাহিত্যিক উপস্থাপন—কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠীকে উদ্দেশ্য করে নয়।
এই লেখায় উপস্থাপিত মতামত ও বিশ্লেষণ মূলত রূপকের আবরণে মোড়ানো সাহিত্যিক ব্যঙ্গচর্চার অংশ, যা কোনো তথ্যভিত্তিক দাবি, আইনগত অবস্থান কিংবা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তরূপে বিবেচনার জন্য নয়। এর লক্ষ্য কাউকে ছোট করা বা আঘাত করা নয়; বরং ব্যঙ্গ-রসের আলোকে সময়ের জটিল সামাজিক-রাজনৈতিক বাস্তবতাকে নতুন দৃষ্টিতে দেখার অনুপ্রেরণা জোগানো, বিতর্ক ও সংলাপের এক মুক্ত পরিসর তৈরি করা। আমরা পাঠকের ভিন্নমত, পৃথক ব্যাখ্যা ও বিচিত্র দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি গভীর শ্রদ্ধাশীল। যদি কোনো পাঠক এই লেখার কোনো অংশে নিজস্ব অভিজ্ঞতা, কোনো গোষ্ঠীর বাস্তবতা কিংবা কোনো ঘটনার প্রতিচ্ছবি খুঁজে পান, তবে তা নিছক কাকতালীয় ও অনিচিত সংযোগ হিসেবে বিবেচিত হোক—এই বিনীত অনুরোধ রইল।
হাসুন, ভাবুন—কিন্তু অপমান নয়, সংলাপই হোক আমাদের পথ।
(আপনার মতামত আমাদের জন্য অত্যন্ত মূল্যবান কমেন্ট বক্সে জানান আপনার ভাবনা। তবে অনুরোধ—বিনা কারণে রিলস বা অপ্রাসঙ্গিক ভিডিও শেয়ার করবেন না!)
- প্রফেসর ড. মাহবুব লিটু, উপদেষ্টা সম্পাদক, আমাদের অধিকারপত্র (odhikarpatranews@gmail.com)
#ফিরেদেখা২০২৫ #বাংলাদেশ #রম্য #রাজনীতি #ঢাকা #যানজট #সিন্ডিকেট #বেকারত্ব #সমাজ #মবজাস্টিস #জেনজি #বর্ষসমাপনী #Bangladesh2025 #YearInReview #Satire #DhakaTraffic #PoliticsBD #SocialCommentary #BdEconomy #GenZBangladesh #DhakaDiaries #FeatureArticle