—পর্ব ৫ (শেষ পর্বে):গ্রীক দার্শনিকদের দৃষ্টিতে আজকের বাংলাদেশ এবং সমাজের অসঙ্গতির ফিচার সিরিজ
বি.দ্র. আগের পর্বগুলো না পড়লে, এই অভিজ্ঞতা অসম্পূর্ণ। আজকের নিবন্ধটি একটি ধারাবাহিক সিরিজের পঞ্চম পর্ব। পুরোপুরি বোঝার জন্য আমরা পাঠককে অনুরোধ করছি আগের পর্বগুলো কোনোটি না পড়ে থাকলে পড়ার অনুরোধ করছি:
তিন দার্শনিক একযোগে ঈশ্বরের দরবারে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়- বাংলাদেশ কে চালায়? এই পশ্নের উত্তরে ঈশ্বর ঘোষণা করেন: “আসলে আমি স্বয়ং আমার নিজ হাতে এই দেশের ভার বহন করি! কারণ, এত অনিয়ম, এত আবেগ ও এত বৈপরীত্য নিয়ে গড়ে ওঠা বাংলার ভূমিকে কোনো মানুষের পক্ষে শাসন করা সম্ভব নয়।” অপরদিকে ঈশ্বরও প্রশ্ন ছুড়ে দেন, কেন থামলেন দিগ্বিজয়ী আলেকজান্ডার?
দার্শনিকদের জিজ্ঞাসা: নিয়ন্ত্রক কে?
স্বর্গে সক্রেটিস, প্লেটো ও এরিস্টটলের বাংলাদেশ সংলাপে আলোচনায় উঠে আসে দেশটির প্রতিটি স্তরের অবক্ষয় চিত্র। রন্ধ্রে রন্ধ্রে আবাস বানানো দূর্নীতি, আর শাসকগোষ্ঠীর স্বজনপ্রীতি, আমলাতন্ত্রের অনিয়ম, জনগণের অধিকারহীনতা এবং সমাজে মিথ্যার রাজত্ব।
এরিস্টটল কপাল কুঁচকে বললেন, "আমি সেই দেশের সংবিধান, অর্থনীতি এবং সামাজিক সম্পর্কগুলো খুঁটিয়ে দেখেছি। আমার বৈজ্ঞানিক নীতি অনুযায়ী, এত পরিমাণ অনিয়ম, বৈষম্য এবং নৈতিকতার অভাব থাকার পরেও—এই রাষ্ট্রটি টিকে আছে কীভাবে? এর কার্যকারণ (Causality) কী?"
প্লেটো হতাশায় মাথা নাড়লেন, "আমার 'রিপাবলিক' অনুযায়ী, এই দেশ বহু আগেই ভেঙে পড়ার কথা। এই রাষ্ট্রের শাসকরা জনগণের হিত (Good) নয়, বরং নিজেদের লোভ দ্বারা চালিত। তবু, কে বা কারা এই রাষ্ট্রকে চালাচ্ছে? এমন একটি ভঙ্গুর কাঠামোতে মানুষ কীভাবে জীবন যাপন করছে? আমার মডেল এখানে ব্যর্থ!"
সক্রেটিস, যিনি সারা জীবন মানুষকে প্রশ্ন করতে শিখিয়েছেন, তাঁর কণ্ঠে ছিল গভীর বিষাদ। তিনি বললেন: "আমার শিক্ষা হলো: 'যে জীবন পরীক্ষা করা হয়নি, সে জীবন যাপন করার যোগ্য নয়।' কিন্তু আমি দেখলাম, অধিকাংশ মানুষই একটি 'অ-পরীক্ষিত জীবন'-এর দাসত্ব করছে। তারা ন্যায়বিচারহীনতা মেনে নিয়েছে। এই সব কিছুর ঊর্ধ্বে, আমার সবচেয়ে বড় প্রশ্ন: এতসব অনিয়ম সত্ত্বেও, এই দেশটির প্রকৃত শাসক তবে কে?
তখন তিনজনেরই চোখে মুখে বিস্ময়। এইবারই তাদের কাছে প্রথম। এই প্রথমবারের মতো তাদের দর্শন কোনো কাজে আসছে না। জাগতিক একটি বিষয়ের সন্তোষজনক জ্ঞানীয় ব্যাখ্যা তাঁরা দিতে পারছেন না। এতা তাদের তিনজনের জন্যেই হয়ে দাঁড়ালো হতাশার একটি সময়। স্বর্গের সুখময় জীবন যেন মুহূর্তেই বদলে গেল াস্থিরতায়। সত্য জানার তীব্র টানে তারা াস্থিরতায় নিমজ্জিত হলেন!
স্বর্গ থেকে ঈশ্বরের দরবারে
দার্শনিক ত্রয়ী বহু তর্ক করেও কোনো যৌক্তিক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারলেন না। মানবীয় দর্শন, রাজনীতি ও বিজ্ঞানের কোনো সূত্র দিয়েই বাংলাদেশের টিকে থাকার রহস্য ভেদ করা গেল না। হঠাৎ গুরু সক্রেটিস স্থির হলেন। তিনি দুই শিষ্যকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “প্রিয় প্লেটো ও এরিস্টটল, আমাদের জ্ঞান এখানে অপারগ। মানবীয় যুক্তি দিয়ে এই প্রহেলিকা ভেদ করা অসম্ভব। চলো, আমরা সরাসরি স্রষ্টার কাছে যাই। এই অমীমাংসিত প্রশ্নগুলো একমাত্র তিনিই সমাধান করতে পারেন।” প্লেটো ও এরিস্টটল সহমত পোষণ করলেন। দার্শনিক ত্রয়ী তখন একযোগে যাত্রা করলেন ঈশ্বরের দরবারের দিকে।
ঈশ্বরের উত্তর: নিয়তির হাতে বাংলা
স্বর্গের সর্বোচ্চ সিংহাসনে উপবিষ্ট ঈশ্বর দেখলেন, তিন কিংবদন্তী দার্শনিক তাঁর সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন। ঈশ্বরের কণ্ঠে ছিল এক মহাজাগতিক দ্যুতি। “আমার প্রিয় সন্তানেরা, তোমরা এখানে কেন? তোমাদের কি কিছু জানার আছে?”
দার্শনিকরা একযোগে উত্তর দিলেন। সক্রেটিস বিনম্রভাবে বললেন, “হে প্রভু, আমরা মর্ত্যের বাংলাদেশ নামক একটি দেশ পর্যবেক্ষণ করে এলাম। সেই দেশে শাসনতন্ত্রে রয়েছে চরম দুর্নীতি, শিক্ষায় অবক্ষয়, মানুষের অধিকার নেই, এবং সমাজ বৈষম্যের শিকারে জর্জরিত। এত অনিয়ম সত্ত্বেও এই দেশটি কীভাবে টিকে আছে এবং কে এটি পরিচালনা করছে—আমরা মানবীয় জ্ঞানে তার উত্তর খুঁজে পাইনি। তাই এই অমীমাংসিত রহস্যের জন্য আপনার কাছে এসেছি।”
সবকিছু শুনে ঈশ্বর প্রথমে মুচকি হাসলেন, তারপর উচ্চস্বরে হেসে উঠলেন। সেই হাসি স্বর্গীয় অলিন্দে প্রতিধ্বনিত হলো। তারপরে ঈশ্বর বললেন: “দার্শনিকেরা, তোমরা সত্যই বলেছ। তোমরা যা দেখেছ, তার চেয়েও গভীরে সমস্যা প্রোথিত। কিন্তু তোমরা যা জানতে চেয়েছো, তার উত্তর সরল। এই দেশটি (বাংলাদেশ) আমি, স্বয়ং আমার নিজ হাতে পরিচালনা করি! কারণ, আমি ভালো করেই জানি—এত অনিয়ম, এত বিপরীত স্রোত, এত আবেগ ও এত বৈপরীত্য নিয়ে গড়ে ওঠা বাংলার ভূমিকে কোনো মানুষের পক্ষে শাসন করা সম্ভব নয়। তোমরা ফিরে যাও। বাংলার নিয়তি তার স্রষ্টার হাতেই ন্যস্ত।”
ঈশ্বরের করুণা: পাপের ভার, দরবেশের ইবাদত
ঈশ্বর, যার মুখে এতক্ষণ হাসি ও কৌতুক ছিল, তাঁর কণ্ঠে এবার মিশে গেল এক গভীর করুণা এবং বিস্ময়বোধ। “তোমাদের সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার পরও, আমার কাছে একটি ব্যক্তিগত যন্ত্রণা রয়ে গেছে,” ঈশ্বর এরিস্টটল ও অন্যদের দিকে তাকিয়ে বললেন। ঈশ্বর শান্ত, কিন্তু ভারাক্রান্ত স্বরে বলতে শুরু করলেন: “তোমরা দেখেছ, এই বাংলাদেশে পাপের মাত্রা সকল সীমা ছাড়িয়ে গেছে—দুর্নীতি, মিথ্যা আর অবিচার আকাশ ছুঁয়েছে। কিন্তু জেনে রাখো, আমি কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছি না। জানো কেন?”
সক্রেটিস, প্লেটো এবং এরিস্টটল উৎসুক হয়ে ঈশ্বরের দিকে চাইলেন। “কারণ,” ঈশ্বর ব্যাখ্যা করলেন, “এই ভূমিতেই বহু সূফি-দরবেশের বাস। এই সাধক-পুরুষেরা সর্বদা আমার ইবাদতে মগ্ন থাকে। তাদের প্রার্থনার ভারে এই দেশের পাপের ভার প্রশমিত হয়। তাদের বিশুদ্ধ আত্মা এই দেশকে রক্ষা করে চলেছে।”
ঈশ্বরের দৃষ্টি তখন যেন পুরো বাংলাদেশের উপর পড়ল: “এখানকার অধিকাংশ মানুষই খুব সহজ-সরল, ধর্মপ্রাণ, কিন্তু তাদের ঈমান দুর্বল! তারা খুব সহজেই শয়তানের ধোঁকায় পতিত হয়ে বিপথে চালিত হয়, পাপ করে বসে। কিন্তু শোনো, মজার বিষয় কী—পরক্ষণেই তারা অনুতপ্ত হয়ে আমার কাছে ক্ষমা চায়। তাদের এই সরল স্বীকারোক্তি ও ক্ষমা চাওয়ার প্রবণতা তাদের পাপের ভারকে হালকা করে দেয়।”
ঈশ্বর এরপর সেই সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষগুলোর কথা বললেন: “এখানে যারা খেটে খায়, যারা ঘাম ঝরিয়ে উপার্জন করে—তারা কিন্তু দুর্নীতি করে না। আর যারা অভাবে থাকে, যারা তিনবেলা পেট পুরে খেতেও পারে না, তারাও কখনো আমার উপর থেকে বিশ্বাস হারায় না। বরং, তারা অভাবের মধ্যেও আমার শুকরিয়া বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে চলে। তাদের এই অটল কৃতজ্ঞতা আমার কাছে পৃথিবীর সব ঐশ্বর্যের চেয়েও মূল্যবান।”
ঈশ্বরের কণ্ঠস্বর আবেগে ভরে উঠল: “এবার তোমরাই বলো, হে দার্শনিকেরা! যেখানে কিছু মানুষের বিশুদ্ধ ইবাদত, আর কোটি কোটি মানুষের সরল বিশ্বাস ও অসীম কৃতজ্ঞতা বিদ্যমান—সেই অভাগা দেশকে আমি কিভাবে অভিশাপ দেই? এই দেশটি টিকে আছে আমার ক্রোধে নয়, বরং আমার এই অসীম করুণায়।”
নিয়তির হাতে বাংলা : এক বিস্ময়-ভরা বৈপরীত্যের দেশ
ঈশ্বর এবার সকলের উদ্দেশ্য ভরাট কন্ঠে স্বর্গীয় অলিন্দে প্রতিধ্বনিত স্বরে বলতে লাগলেন, “দার্শনিকেরা! তোমরা সত্যই বলেছ। তোমরা যা দেখেছ, তার চেয়েও গভীরে সমস্যা প্রোথিত। শোনো, তোমাদের কাছে একটি অদ্ভুত প্রহেলিকা বলি। এই দেশটিকে আমি বহুবার বিপর্যয় দিয়েছি, যাতে সেখানকার মানুষ সজাগ হয় এবং তাদের জীবনযাত্রার ভুল পথ পরিবর্তন করে। আজ পৃথিবী এই দেশটিকে ‘দুর্যোগের দেশ’ বলেই জানে।”
এরপরে ঈশ্বর মাথা নেড়ে দুঃখ প্রকাশ করলেন: “কিন্তু হাস্যকর হলো, সেখানকার মানুষ এই দুর্যোগগুলোকে আমার আশীর্বাদ হিসেবে গ্রহণ করেছে! তারা তাদের জীবনধারা বা চিন্তা-ভাবনার পথ পরিবর্তন করেনি। তারা কেবল দুর্যোগ শেষে আবারও নিজেদের পুরনো অভ্যাসে ফিরে যায়। তোমাদের জানা আছে কি, এই ছোট্ট দেশটিতে প্রায় ২০ কোটি মানুষ বাস করে? এবং তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশেরও বেশি মানুষ অত্যন্ত ধর্মপ্রাণ ও শুদ্ধাচারী, যারা আমার কাছে দেশের কল্যাণের জন্য প্রার্থনা করে। কিন্তু সমস্যা হলো, মাত্র ১০ থেকে ২০ শতাংশ মানুষ সেখানে অসহযোগী এবং অসৎ—আর তারাই গোটা দেশের সকল সমস্যার জন্য দায়ী।”
ঈশ্বরের কণ্ঠে এবার করুণা ও দৃঢ়তা উভয়ই প্রকাশ পেল: “আমি ওই সংখ্যাগরিষ্ঠ সৎ ও ধর্মপ্রাণ মানুষদের প্রার্থনা উপেক্ষা করতে পারি না, যারা প্রতিনিয়ত দেশের মঙ্গলের জন্য আমার কাছে হাত পাতে। এই অল্পসংখ্যক দুষ্টের কারণে আমি পুরো দেশটি ধ্বংস করতে পারি না। এই জন্যই আমি বলছি, আমি স্বয়ং আমার নিজ হাতে এই দেশের ভার বহন করি! কারণ, এত অনিয়ম, এত আবেগ ও এত বৈপরীত্য নিয়ে গড়ে ওঠা বাংলার ভূমিকে কোনো মানুষের পক্ষে শাসন করা সম্ভব নয়।”
দার্শনিকদের বিষ্ময়: এটা কেমন দেশ!
দার্শনিক ত্রয়ী ঈশ্বরের কথা মুণে যেনো নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না! তাই ছানাবড়া চোখে একে অপরের দিকে তাকালেন। তাঁরা এতক্ষণ মানবীয় রাজনীতি, অর্থনীতি ও নৈতিকতার দৃষ্টিকোণ থেকে সমস্যা বিচার করছিলেন। কিন্তু এখন তাঁরা বুঝলেন, বাংলাদেশের টিকে থাকার মূল কারণটি আসলে কোনো দার্শনিক তত্ত্ব বা রাজনৈতিক মডেল নয়, বরং এটি ঐশ্বরিক করুণা এবং সাধারণ মানুষের সহজ সরল বিশ্বাস। তারা ফিরে গেলেন—সঙ্গে নিয়ে গেলেন এক নতুন উপলব্ধি: বাংলার নিয়তি বিজ্ঞান বা যুক্তির ঊর্ধ্বে। এটি এক অলৌকিক করুণার বন্ধন, যা যুগ যুগ ধরে এই দেশকে রক্ষা করে চলেছে।
ঈশ্বরের শেষ প্রশ্ন: কেন থামলেন দিগ্বিজয়ী আলেকজান্ডার?
ঈশ্বর, যিনি সবেমাত্র বাংলাদেশের নিয়তির ভার নিজের হাতে থাকার কথা ঘোষণা করেছেন, এবার সরাসরি এরিস্টটলের দিকে ফিরলেন। এরিস্টটল, যিনি ছিলেন দিগ্বিজয়ী আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট-এর শিক্ষক এবং মেন্টর। ঈশ্বরের কণ্ঠে ছিল চ্যালেঞ্জ: “এরিস্টটল, তুমি জ্ঞান ও যুক্তির ভান্ডার। তুমি আমার সৃষ্টি মানবজাতির মধ্যে সবচেয়ে বুদ্ধিমানদের একজন। কিন্তু আমার একটি প্রশ্ন আছে, যার উত্তর তোমার কাছে থাকা উচিত।”
এরিস্টটল বিনম্রভাবে মাথা নত করলেন।“বলো! প্রভু।”
ঈশ্বর তখন সেই ঐতিহাসিক রহস্য উন্মোচন করলেন: “তুমি যাকে হাতে ধরে শিক্ষা দিয়েছিলে, সেই আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট—যার অশ্বের খুরের নিচে তখন প্রায় গোটা বিশ্ব পদানত—সে কেন বাংলার সীমান্তে এসে থমকে গেল? কেন সে এই ভূমিতে আক্রমণ করার সাহস দেখালো না? তার সৈন্যরা কেন বিপাশা (Hyphasis) নদীর তীরে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল, যখন তারা জানতো সামনে আরও ধন-সম্পদ ও রাজ্য জয় করার হাতছানি রয়েছে? সেই সময় বাংলার ক্ষমতা, সামরিক শক্তি এবং বিশেষ করে তার ভৌগোলিক বাধার কথা তোমাদের অজানা ছিল না। কিন্তু তুমি বলো এরিস্টটল, আলেকজান্ডারকে শেষ পর্যন্ত এই বাংলা আক্রমণের চিন্তা থেকে পিছু হটতে হয়েছিল কেন?”
এরিস্টটল, যিনি সবকিছুর কার্যকারণ ব্যাখ্যা করতে পারতেন, ঈশ্বরের এই প্রশ্নের সামনে নীরব হয়ে গেলেন। “প্রভু,” এরিস্টটল নত মস্তকে বললেন, “আপনার সৃষ্টির এই বিশেষ রহস্য আমার মানবীয় যুক্তির বাইরে ছিল। আমি আমার ছাত্র আলেকজান্ডারকে সাহস, কৌশল ও বিজয়ের শিক্ষা দিতে পারলেও, এই বিশেষ ভূমির অলৌকিক শক্তি ও নিয়তি তাকে থামিয়ে দেবে—সেই ভবিষ্যদ্বাণী আমার জ্ঞানের পরিধির বাইরে ছিল। বাংলার মাটি, নদী এবং তার জনগণের সহ্যক্ষমতা—সবকিছুই ছিল আমার সমীকরণের বাইরে।“
নিয়তির অলৌকিক শাসন
সক্রেটিস, প্লেটো ও এরিস্টটলের ডায়ালগ শেষ হলো। তাঁরা বুঝতে পারলেন, কিছু বাস্তবতা যুক্তি, বিজ্ঞান বা এমনকি সামরিক কৌশল দিয়েও ব্যাখ্যা করা যায় না। বাংলাদেশ—এক অনিয়মের ভূমি, যেখানে নিয়তিই চূড়ান্ত শাসক, এবং সেই নিয়তির কাছে দিগ্বিজয়ী আলেকজান্ডারও মাথা নত করতে বাধ্য হয়েছিল। তাঁরা ফিরে গেলেন নিজেদের আসনে—সঙ্গে নিয়ে গেলেন এই নতুন উপলব্ধি: সব জ্ঞান, সব যুক্তি এবং সব দর্শনের ঊর্ধ্বেও এমন অলৌকিক শক্তি থাকে, যা কেবলমাত্র স্রষ্টার বিশেষ তত্ত্বাবধানেই চলে। আর এই নিয়তিই হলো বাংলার মানুষের সহনশীলতা।
সমাপ্তি: দর্শনের সীমাবদ্ধতা
দার্শনিক ত্রয়ী নির্বাক হয়ে রইলেন। তাঁরা বুঝতে পারলেন, কিছু বাস্তবতা যুক্তি, বিজ্ঞান বা এমনকি আদর্শ রাষ্ট্রনীতি দিয়েও ব্যাখ্যা করা যায় না। বাংলাদেশ—এক অনিয়মের ভূমি, যেখানে নিয়তিই চূড়ান্ত শাসক। সক্রেটিস, প্লেটো ও এরিস্টটলের ডায়ালগ শেষ হলো। তাঁরা ফিরে গেলেন নিজেদের আসনে—সঙ্গে নিয়ে গেলেন এক নতুন উপলব্ধি: যুক্তির বাইরেও এমন কিছু থাকে, যা কেবল নিয়তির খেয়ালেই চলে। এবং স্রষ্টার অলৌকিক শাসন।
এরভাবে দার্শনিক ত্রয়ী নিজেদের দর্শনের সীমাবদ্ধতা উপলব্দি করে নির্বাক হয়ে রইলেন। তাঁরা বুঝতে পারলেন, বাংলাদেশের টিকে থাকার রহস্যটি রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক নয়, এটি এক অদ্ভুত মানবিক সহনশীলতা এবং ঈশ্বরের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে সৃষ্ট। সক্রেটিস, প্লেটো ও এরিস্টটলের ডায়ালগ শেষ হলো। তাঁরা ফিরে গেলেন নিজেদের আসনে—সঙ্গে নিয়ে গেলেন এক নতুন উপলব্ধি: সব জ্ঞান, সব যুক্তি এবং সব দর্শনের ঊর্ধ্বেও এমন কিছু থাকে, যা কেবল নিয়তির খেয়ালেই চলে—আর সেই নিয়তিই হলো বাংলার মানুষের সহনশীলতা এবং স্রষ্টার বিশেষ তত্ত্বাবধান।
ডিসক্লেইমার: এই লেখাটি কল্পনাপ্রসূত ও রূপকধর্মী। সক্রেটিসের দার্শনিক চিন্তাকে ব্যবহার করে বাংলাদেশের সমসাময়িক বাস্তবতাকে ব্যঙ্গ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছে। লেখাটির উদ্দেশ্য একমাত্র চিন্তাশীল পাঠের অনুপ্রেরণা দেওয়া, বাস্তব ব্যক্তি বা ঘটনার সঙ্গে মিল কাকতালীয়।
✍️ –অধ্যাপক ড. মাহবুব লিটু, উপদেষ্টা্ সম্পাদক, অধিকারপত্র (odhikarpatranews@gmail.com)
#দর্শনের_আলোকে_বাংলাদেশ

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: