ঢাকা | বৃহঃস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
সবুজায়ন ব্যবসায়

নারী উদ্যোক্তা অরনীর সাফল্য

odhikarpatra | প্রকাশিত: ১৫ মে ২০২২ ০৭:২৭

odhikarpatra
প্রকাশিত: ১৫ মে ২০২২ ০৭:২৭

 

ইফতেসা অরনী পড়াশোনা করেছেন প্র্যাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।  মার্কেটিং বিভাগে বিবিএ ও এমবিএ করেন। এর মাঝে এমবিএ পড়া অবস্থাতেই যোগ দেন একটি করপোরেট প্রতিষ্ঠানে। প্রায় এক দশক চাকরিও করেছেন। কিন্তু কোনো মজা পাচ্ছিলেন না। কোথায়ও যেন একটা গ্যাপ অনুভব করছিলেন। ফলে কিছুতেই চাকরিতে তার মন বসছিলো না।
আসলে বসবেই বা কেন! মনে যার উদ্যোক্তা হওয়ার বাসনা তার কী আর ৯-৫টা অফিসে মন বসে? এর মাঝে শুরু হয় করোনা মহামারী। অরনী বাধ্য হয়েই ঘরে বসে অফিস করা শুরু করেন।  সংক্রমণ কমার পর যখন সশরীর অফিসে ফিরলেন, তখন আর খাপ খাওয়াতে পারছিলেন না নিজেকে।
তাই এক কথাতেই ছেড়ে দেন চাকরি। শুরু করেন ছোট্ট একটা নার্সারি। সবুজায়নের ব্যবসা। শুরুর এক বছরের মাথাতে নার্সারি থেকে অরনীর মাসিক আয় ৪ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা। এরপর আরও বিনিয়োগ করেন তিনি। সিদ্ধান্ত নেন ব্যবসাটাই করবেন, অন্যের প্রতিষ্ঠানে আর চাকরি করবেন না।
অরনীর ভাষ্য, শুরুটা ছিলো মাত্র পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে। সেই ব্যবসায় এখন পর্যন্ত তার বিনিয়োগ ১৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে ভূমি উন্নয়নে গেছে অনেক টাকা। আর বড় খরচ হয়েছে পিকআপ ভ্যান কিনতে। তবে ব্যবসার অবস্থা ভালো। ভবিষ্যতে এই ব্যবসাকে আরও বড় করতে চাই।  
তিনি বলেন,‘আমি আমার ১০ বছরের সঞ্চয় দিয়ে এই ব্যবসাটা শুরু করেছি। এটাকে অনেক দূর নিয়ে যেতে চাই। এক্ষেত্রে পরিবারের সহযোগিতা প্রথম দিকে না পেলেও এখন বেশ ভালোভাবেই সাপোর্ট পাচ্ছি, যা আমার অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে।’
শুরুর দিনগুলোর কথা বলতে গিয়ে অরনী বলেন, করোনার পরে ‘নিউ নরমালে’ যখন আবার অফিসে যাওয়া শুরু করলাম, তখন খুব অস্থিরতা কাজ করছিল নিজের ভেতর। আমার মনে হতো বাড়িতে বসে আমি গাছপালার মধ্যে আপন যে ভুবনে কাজ করতাম, সেই আনন্দটা কেউ কেড়ে নিয়েছে। তাই একদিন হুট করেই চাকরিটা ছেড়ে দিলাম।
তরুণ নারী উদ্যোক্তা অরনী বলেন, ‘বাড়ি ফিরলাম পাঁচ হাজার টাকার গৃহসজ্জার গাছ নিয়ে। তা দিয়েই শুরু। ফেসবুকে পেজ খোলা হলো। ছবি তুলে দেয়া শুরু করলাম। মাত্র তিন মাসের মধ্যে এত বেশি অর্ডার আসতে শুরু করল যে পাশের একটি ফ্ল্যাট ভাড়া করতে হলো। তিন মাস পর দেখা গেল তাতেও হচ্ছে না। তখন বাধ্য হয়েই আমিনবাজারের জমিতে চলে আসি’।
অরনী তার সবুজায়ন ব্যবসার নার্সারির নামও দিয়েছেন ‘অরনী’। নার্সারিতে যেসব গাছ রয়েছে তার বেশির ভাগই পাতাবাহার। প্রথমে ফেসবুকে ‘অরনী’ পেজের মাধ্যমেই ব্যবসার শুরু হয়েছিল। শুরুতে বাসা থেকে কার্যক্রম শুরু কলেও এখন ঢাকার অদূরে আমিনবাজারে পাঁচ কাঠা জমির ওপর নার্সারি তৈরি করেছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, পারিবারিক ওই জমিতে নেটের শেড দিয়ে ঘরের ভেতরের শোভা বাড়ায়, এমন গাছের এক অন্যরকম ভূবন তৈরি করেছেন অরনী। পাশে ছোট একটা টিনের ছাউনির নিচে রাখা একটি পিকআপ ভ্যান। জানালেন, বলতে গেলে এতটুকুই তার ব্যবসার পুঁজি।
তবে জায়গা কম হলেও কাজ কম নয়। ছোট্ট এই নার্সারিতে অরনী বেশ কয়েকজন কর্মী নিয়োগ দিয়েছেন, যারা এসব নানা প্রজাতির পাতাবাহার গাছের পরিচর্যা করেন। কেউ কেউ আবার ক্রয়াদেশ ও চারা সরবরাহ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করেন।
অরনী মূলত কাজ করেন ইন্টেরিয়র ডিজাইনারদের সঙ্গে। তার ভাষ্য, আমি ইন্টেরিয়র ডিজাইনারদের সঙ্গে কাজ করি। তারা যেভাবে একটা ফ্ল্যাটের ইন্টেরিয়র ডিজাইন করে আমি সেভাবে তাদের কাছে গাছ বিক্রি করি।
বিষয়টি একটু খোলা হলো অরনীর কথায়। তিনি বলেন, আমার মূল ব্যবসা হচ্ছে কোথায় কোন গাছ রাখা যাবে বা বসানো দরকার, তা নির্ধারণ করা। ধরা যাক, কেউ অফিসের টেবিলের জন্য গাছের অর্ডার দিলেন।
‘তখন ওই অফিসে কতটা আলো আসে, রাতে কতক্ষণ বাতি জ্বলে, প্রাকৃতিক বাতাস চলাচল করে কিনা, নাকি এসি চলে অথবা ক্রেতার গাছে পানি দেয়ার সময় আছে কিনা ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করে সে অনুযায়ী ক্রেতাকে গাছ পাঠানো হয়। আর সেখান থেকেই ক্রেতা পছন্দের গাছ বেছে নেন,’ যোগ করেন তিনি।
ভবিষ্যতে ‘অরনী’ নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী প্রশ্নের উত্তরে তিনি বেেলন, ভবিষ্যতে গাছ ও গাছের পরিচর্যা সরঞ্জাম নিয়ে এক ছাদের নিয়ে একটি শপ দিতে চাই। যেখানে ক্রেতারা আসবেন, গাছ সম্পর্কে জানবেন, এরপর সিদ্ধান্ত নিয়ে গাছ কিনবেন। এটা বাংলাদেশে নেই বললেই চলে। তবে আপাতত ব্যবসা যেভাবে বাড়ছে, তাতেই খুব খুশি।
জানা যায়, সর্বনিন্ম দুই’শ থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। গাছের ধরন, আকার, জাত ও গাছ রাখার পাত্রের ওপর এই দাম নির্ভর করে। এখন পর্যন্ত অরনী যত গাছ বিক্রি করেছে, তার ৩০  থেকে ৪০ শতাংশই নিজেদের নার্সারিতে জন্ম নেয়া। তবে অন্যান্য জায়গা থেকেও এনে কিছু গাছ বিক্রি করা হয়েছে।
চাকরিজীবী থেকে উদ্যোক্তা হয়ে সফলতা পেয়ে খুশিতে আত্ম হারা ইফসেতা অরনী। হাস্যোজ্জ্বল মুখে তিনি বলেন, অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছেÑ চাকরি থেকে এখন ভালো আছি। এখানে বাড়তি কোনো ঝামেলা নেই। কোনো কেনো সময় আমার এক দিনের বিক্রি আগের চাকরির পুরো মাসের বেতনের সমান হয়, তখন যে কী ভালো লাগে! তা বলে বোঝাতে পারবো না। আরও ভালো লাগে যখন দেখি আমার রোপণ করা গাছগুলো অন্যদের বাসায় বড় হয়।
অরনী আরো বলেন,‘ব্যবসা তো কত রকমেরই আছে। আমার ব্যবসা যদি পরিবেশের ওপর একটা ইতিবাচক প্রভাব ফেলে, সেটাই আমার বড় সাফল্য’।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: