একটি সাধারণ গলার সংক্রমণ স্ট্রেপ থ্রোট যা প্রায় প্রতিটি শিশুই জীবনে অন্তত একবারে আক্রান্ত হয়। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে এই নিরীহ সংক্রমণ শিশুদের জীবনে নিয়ে আসে অকল্পনীয় যন্ত্রণা। এমনই এক বিরল কিন্তু ভয়াবহ অবস্থা হচ্ছে পান্ডাস (PANDAS) Paediatric Autoimmune Neuropsychiatric Disorders Associated with Streptococcal infections যা শিশুদের আচরণ, চিন্তা ও মানসিক ভারসাম্যে ভয়াবহ প্রভাব ফেলে। বিজ্ঞানীদের মতে, কিছু শিশুর ক্ষেত্রে স্ট্রেপ ব্যাকটেরিয়া শরীরের বিরুদ্ধে এমনভাবে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে যে, তাদের ইমিউন সিস্টেম ভুলবশত মস্তিষ্কের নিজস্ব কোষ আক্রমণ করে ফেলে। এতে বেসাল গ্যাংলিয়া নামে মস্তিষ্কের অংশে প্রদাহ সৃষ্টি হয়। যা শিশুর চিন্তা, আবেগ, ও মানসিক কন্ট্রোল এ গভীর প্রভাব ফেলে। ১৯৯০ এর দশকে মার্কিন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের বিজ্ঞানী ড. সুসান সুইডো প্রথম এই রোগটির অস্তিত্ব শনাক্ত করেন। বিশেষজ্ঞদের মতে প্রতি বছর প্রায় ১১,৮০০ শিশুর মধ্যে একজন প্যান্ডাস বা অনুরূপ PANS (Paediatric Acute-onset Neuropsychiatric Syndrome) রোগে আক্রান্ত হয়। সাধারণত ছেলেদের মধ্যে এটি তুলনামূলক বেশি দেখা যায় এবং বয়ঃসন্ধিকালের আগেই আঘাত হানে। উপসর্গগুলোর মধ্যে থাকে হঠাৎ করে OCD (Obsessive-Compulsive Disorder) আচরণ, ভয় এবং খিটখিটে মেজাজ, ঘুমের সমস্যা, আক্রমণাত্মক আচরণ, এমনকি হ্যালুসিনেশন পর্যন্ত।
বিশেষজ্ঞ ড. জেনিফার ফ্র্যাংকোভিচ বলেন, এটি শুধুমাত্র মানসিক ব্যাধি নয়, বরং একটি অটোইমিউন প্রতিক্রিয়া। যদিও প্যান্ডাস চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক, স্টেরয়েড, আইভিআইজি (IVIG) বা প্লাজমা এক্সচেঞ্জ থেরাপি কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। তবে চিকিৎসা পাওয়া অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এক জরিপে দেখা গেছে ৮৭ শতাংশ রোগী সঠিক চিকিৎসা পেতে ব্যর্থ হন। কারণ চিকিৎসক বা বীমা সংস্থাগুলো রোগটিকে গুরুত্ব দেয় না। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জর্জটাউন ইউনিভার্সিটিতে একটি বিশেষ প্যান্ডাস ব্রেইন ব্যাংক তৈরি হয়েছে। যেখানে মৃত রোগীদের মস্তিষ্ক সংরক্ষণ করে এই বিরল রোগের রহস্য উন্মোচনের চেষ্টা চলছে। গবেষকরা আশা করছেন, একদিন হয়তো নির্ভুল পরীক্ষার মাধ্যমে আগেভাগেই রোগটি শনাক্ত করা যাবে। এক সাধারণ গলার ইনফেকশন কতটা ভয়াবহ রূপ নিতে পারে পান্ডাস তারই উদাহরণ। শিশুদের এমন আকস্মিক মানসিক ও আচরণগত পরিবর্তনকে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ সময়মতো চিকিৎসা পেলে জীবন ফিরে পেতে পারে শিশুটি। অন্যথায় সেটি হয়ে উঠতে পারে আজীবনের মানসিক ও স্নায়বিক সংগ্রাম।
-মো: সাইদুর রহমান (বাবু), বিশেষ প্রতিনিধি. অধিকারপত্র।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: