
সভা-সেমিনার ও বর্ণাঢ্য র্যালিসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যদিয়ে আজ রাজধানীসহ সারাদেশে ষষ্ঠ ‘জাতীয় আইনগত সহায়তা’ দিবস পালিত হয়েছে।
আর্থিকভাবে অসচ্ছল ও অসহায় জনগণের ন্যায় বিচার পেতে সহযোগিতার লক্ষ্যে ২০১৩ সাল থেকে প্রতিবছরই ‘২৮ এপ্রিল’ জাতীয়ভাবে এ দিবসটি পালন করা হচ্ছে। এ সময় থেকে দেশের সব আদালতে অসহায় ও অস্বচ্ছল বিচারপ্রার্থীরা বিনামূল্যে আইনি সহায়তা পেয়ে আসছেন।
এ বছর এই দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারন করা হয়েছে ‘উন্নয়ন আর আইনের শাসনে এগিয়ে চলছে দেশ-লিগ্যাল এইডের সুফল পাচ্ছে সারা বাংলাদেশ’।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো.আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
এদিকে দিবসটি উপলক্ষে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আজ সকালে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আইন,বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।
দিবস উপলক্ষে বাসস’র প্রতিনিধির সাথে আলাপকালে জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থার সহকারি পরিচালক ও সিনিয়র সহকারি জজ কাজী ইয়াসিন হাবিব জানান, সরকারি আইন সহায়তা কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত করা, আইনি জটিলতায় পতিত দেশের দরিদ্র ও অসহায় জনগণকে সচেতন করার পাশাপাশি তাদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে ২০১৩ সাল থেকে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। তিনি বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই এ ধরনের সেবা কার্যক্রম রয়েছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ সেবা চালু ছিলো সময়ের দাবি। সে আলোকে দেশের আর্থিকভাবে অসচ্ছল ও দুস্থ জনগোষ্ঠী, শ্রমিক, সহিংসতার শিকার নারী-শিশু এবং পাচারের শিকার মানুষের জন্য আইনি সেবা নিশ্চিত করতে ২০০০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার আইন প্রণয়নের মাধ্যমে আইনী সহায়তা কার্যক্রম শুরু করে। পরে এ আইনের অধীনে বিভিন্ন বিধি প্রণীত হয়। বিধিতে আইনি সহায়তা কারা পাবেন তা নির্ধারণ করা হয়। তিনি বলেন, দেশের সবক’টি জেলা আদালত, চৌকি আদালত এবং সুপ্রিমকোর্টে লিগ্যাল এইড সার্ভিস চালু রয়েছে।
ইয়াসিন হাবিব জানান, জেলা লিগ্যাল এইড অফিসগুলোকে এখন শুধু আইনি সহায়তা প্রদানের কেন্দ্র হিসেবেই সীমাবদ্ধ রাখা হয়নি, মামলা জট কমানোর লক্ষ্যে এ অফিসগুলোকে ‘এডিআর কর্ণার’ বা বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির কেন্দ্রস্থল’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। তিনি জানান, পক্ষসমূহের সম্মতির ভিত্তিতে লিগ্যাল এইড অফিসে বিকল্প উপায়ে বিরোধ নিষ্পত্তি করা হয়ে থাকে। মার্চ ২০১৭ পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার ৬শ’ মামলা এডিআর’র মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হয়েছে এবং বিরোধে প্রায় ৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকা আদায় হয়েছে।
ঢাকা জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার (সিনিয়র সহকারী জজ) রাজেশ চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বাসসকে জানান, আজ জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস উপলক্ষে ঢাকা জেলা আইনগত সহায়তা কমিটি ও জেলা লিগ্যাল এইড অফিস জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে। তিনি জানান, কর্মসূচির মধ্যে ছিল- লিগ্যাল এইড ক্যাম্প, আইনগত পরামর্শ দেওয়া, ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী ও আলোচনা সভা।
তারা উভয়েই জানান সরকারি আইনি সেবা প্রাপ্তির যোগ্যতা হচ্ছে : আর্থিকভাবে অসচ্ছল ব্যক্তি যার বার্ষিক গড় আয় সুপ্রিমকোর্টে আইনগত সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে দেড় লাখ এবং অন্যান্য আদালতের ক্ষেত্রে এক লাখ টাকার উর্ধে নয়।
কর্মক্ষম নন, আংশিক কর্মক্ষম, কর্মহীন বা বার্ষিক দেড় লাখ টাকার ঊর্ধ্বে আয় করতে অক্ষম এমন মুক্তিযোদ্ধা। যে কোনো শ্রমিক যার বার্ষিক গড় আয় এক লাখ টাকার উর্ধে নয়। যে কোনো শিশু। মানব পাচারের শিকার যে কোনো ব্যক্তি। শারীরিক নির্যাতন, মানসিক নির্যাতন এবং যৌন নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশু। নিরাশ্রয় ব্যক্তি বা ভবঘুরে। যে কোন উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের লোক। পারিবারিক সহিংসতার শিকার অথবা সহিংসতার ঝুঁকিতে আছেন এরুপ যে কোন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি। বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন এরূপ ব্যক্তি। ভিজিডি কার্ডধারী দুঃস্থ মাতা। দুর্বৃত্তের এসিড নিক্ষেপে দগ্ধ নারী বা শিশু। আদর্শ গ্রামে গৃহ বা ভূমি বরাদ্দ প্রাপ্ত ব্যক্তি। অসচ্ছল বিধবা স্বামী পরিত্যক্তা এবং দুঃস্থ নারী। যে কোন প্রতিবন্ধী। আর্থিক অসচ্ছলতার দরুন আদালতে অধিকার প্রতিষ্ঠা বা আত্মপক্ষ সমর্থন করতে অসমর্থ ব্যক্তি। বিনা বিচারে আটক এমন ব্যক্তি যিনি আত্মপক্ষ সমর্থন করার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে আর্থিকভাবে অসচ্ছল। আদালত কর্তৃক আর্থিকভাবে অসহায় বা অসচ্ছল বলে বিবেচিত ব্যক্তি। জেল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আর্থিকভাবে অসহায় বা অসচ্ছল বলে বিবেচিত ব্যক্তি।
এছাড়াও ২০১৬ সালের ২৮ এপ্রিল জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘টোল ফ্রি হেল্প লাইন-১৬৪৩০’ উদ্বোধন করেছিলেন। এরপর থেকে দেশের মানুষ এ হেল্প লাইনের সহায়তায় আইনি সুযোগ গ্রহণ করছেন।
জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থার সহকারি পরিচালক কাজী ইয়াসিন হাবিব জানান, টোল ফ্রি হেল্প লাইনটি প্রতিষ্ঠার পর মার্চ ২০১৭ পর্যন্ত ২৫ হাজার ৮৮৭ জন আইনি সহায়তা গ্রহণ করেছেন।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: