
মাদকের অবৈধ ব্যবসা এবং পাচারের বিষয় নিয়ে কাজ করেন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো: এমদাদুল হক। তিনি বলছিলেন, পাচারের রুটগুলো নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে সাফল্য আসবে না।
"দেশের অভ্যন্তরে মাদক বিরোধী অভিযানের কারণে চাপের মধ্যে পড়লেও পাচারকারিরা তৎপর আছে। তারা তাদের কৌশল এবং রুট পাল্টিয়ে পাচার অভ্যাহত রাখে এবং সেটা রাখছে।"

বাংলাদেশে অবৈধ মাদক ব্যবসার বিরুদ্ধে র্যাব পুলিশের অভিযানে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নয়টি জেলায় সোমবার আরও অন্তত ১২জন নিহত হয়েছে।
চলমান এই অভিযানে গত দুই সপ্তাহে এখন নিহতের সংখ্যা ১০০'র কাছাকাছি।
দেশটির ভেতরে অভিযানে নিহত এবং গ্রেফতারের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
কিন্তু ইয়াবাসহ মাদক পাচারের বিরুদ্ধে কতটা নজর দেয়া হচ্ছে, এনিয়ে বিশ্লেষকদের অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন।
কর্মকর্তারা বলছেন,অভিযানের কারণে মাদক পাচারকারিরা রুট পাল্টিয়ে গভীর সমুদ্র দিয়ে পাচারের চেষ্টা চালাচ্ছে।
এই অভিযানে সারাদেশ থেকে এপর্যন্ত সাড়ে আট হাজারের বেশি মানুষ গ্রেফতার হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহতের সংখ্যাও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।
কিন্তু দেশের ভিতরে তোলপাড় সৃষ্টি করে অভিযান চালানো হলেও এর মধ্যেই ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদক আসা থামছে না, এমন খবর সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশ হচ্ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই অভিযানে মাঠ পর্যায়ের পরিচিত মাদক ব্যবসায়ীদের দিকেই নজর রয়েছে।
কিন্তু পরিস্থিতির কারণে পাচারকারিরা যে কৌশল এবং পাচারের প্রচলিত রুট পাল্টিয়ে ফেলেছে, সেদিকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।
ভারতের সাথে সীমান্তবর্তী বিভিন্ন জেলা দিয়ে ফেন্সিডিল অবৈধভাবে বাংলাদেশে আসে।
তবে অবৈধভাবে মিয়ানমার থেকে আসা ইয়াবা অন্য সব মাদককে ছাড়িয়ে দেশব্যাপী উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি করেছে। আর এই ইয়াবার বড় অংশই কক্সবাজারে টেকনাফে নাফ নদী দিয়ে আসে বলে বলা হয়।

টেকনাফ থেকে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি'র অধিনায়ক কর্নেল আসাদুজ্জামান চৌধুরী বলছিলেন, এখন পাচার অনেক কমে এলেও বিস্তীর্ণ সীমান্তে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
"মিয়ানমার থেকে চায়না হয়ে কিছু ইয়াবা আসে। আবার মিয়ানমার থেকেই কিছু আসে। যেটা আমরা বড় বড় চালান ধরি। কিন্তু রাতের অন্ধকারে এলে অনেক সময় ধরা সম্ভব হচ্ছে না। তবে এখন অনেক কমে এসেছে। কিন্তু নিশ্ছিদ্র যে ব্যবস্থা, সেটা এত বিস্তীর্ণ এলাকায় করা সম্ভব হচ্ছে না।"
মাদক পাচারকারিদের কৌশল এবং রুট পাল্টানোর বিষয়গুলো কতটা বিবেচনা করা হচ্ছে এই প্রশ্ন মাথায় রেখে অভিযান চালানোর কথা বলছেন সরকারি কর্মকর্তারা।
মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জামাল উদ্দীন আহমেদ বলছেন, পাচারকারীদের রুট পাল্টানোর বিষয়েও তথ্য তাদের কাছে এবং তারা ব্যবস্থা নিচ্ছেন।
"এক সময় স্থল পথ দিয়েই বেশি সংখ্যক ইয়াবা আসতো। আমাদের আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতার কারণে সেটি গভীর সমুদ্র দিয়ে আসছে বলে তথ্য আমাদের কাছে আছে।"
"প্রথমে মিয়ানমার থেকে ভারতে প্রবেশ করায়, ভারতের উপকূল হয়ে সেটা আবার বাংলাদেশে আসছে। তবে আপনারা দেখছেন, আমাদের কোস্টগার্ড এবং নেভী লক্ষ লক্ষ ইয়াবা জব্দ করেছে।"
এদিকে, বিজিবি'র কর্মকর্তা কর্নেল আসাদুজ্জামান চৌধুরী মনে করেন, ইয়াবা পাচার বন্ধে কূটনৈতিকভাবেও আলোচনার মাধ্যমে মিয়ানমার সরকারকে সহযোগিতার ব্যাপারে রাজি করাতে হবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, দুই দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সব বৈঠকেই মিয়ানমার বাংলাদেশকে সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। কিন্তু মিয়ানমার থেকে ইয়াবা পাচার বন্ধ হচ্ছে না।
bbc
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: