odhikarpatra@gmail.com ঢাকা | Saturday, 25th October 2025, ২৫th October ২০২৫
ধর্ষণ

'নিজে ধর্ষিত হলাম, ভয় পাচ্ছি মেয়েদের নিয়েও

সারাহ মিডগ্লে | প্রকাশিত: ১৭ September ২০১৯ ১৬:০২

সারাহ মিডগ্লে
প্রকাশিত: ১৭ September ২০১৯ ১৬:০২

 

সারাহ মিডগ্লেসারাহ মিডগ্লে

টুইটারে ক্যাম্পেইন চলছে #অ্যামআইনেক্সট এবং অনলাইনে আবেদনে স্বাক্ষর করেছেন পাঁচ লক্ষেরও বেশি মানুষ। তাদের দাবি, অপরাধ কমাতে মৃত্যুদণ্ডের বিধান ফিরিয়ে আনা হোক।

মূলত ধর্ষণ ও খুনের ঘটনাগুলোর প্রতিবাদেই এই ক্যাম্পেইন চলছে, আর তাতে অংশ নিচ্ছেন দক্ষিণ আফ্রিকার মানুষ।

দেশটির প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা অবশ্য সমস্যা মোকাবেলায় ব্যবস্থা নেয়ার অঙ্গীকার করেছেন।

যেসব ব্যবস্থার কথা বলা হচ্ছে, সেগুলোর মধ্যে থাকবে যৌন সহিংসতার বিচারের জন্য বিশেষ আদালতের সংখ্যা বাড়ানো এবং কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা ব্যবস্থা।

সাইত্রিশ বছর বয়সী ফটোসাংবাদিক সারাহ মিডগ্লে দু'সন্তানের জননী এবং বাস করেন দেশটির প্রধান শহর জোহানেসবার্গে।

এক দশক আগে ধর্ষণের শিকার হওয়ার যে মানসিক আঘাত, সেটি এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেননি তিনি।

বিবিসি আফ্রিকার সাথে সেই কঠিন ও দুঃসহ অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলেছেন তিনি

অনেকেই কন্যা সন্তানের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্নঅনেকেই কন্যা সন্তানের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন

২০১০ সালে ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন তিনি

২০১০ সালের নিজের সাবেক প্রেমিকের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন সারাহ মিডগ্লে, যখন তার দেশে বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজন চলছিলো।

আঠারো মাস ধরে সেই প্রেমিক তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করেছেন বলে জানান তিনি।

"অনেকবার আমি তাকে ছেড়ে আসার কিন্তু যতবারই চেষ্টা করেছি ততবার সে আরও সহিংস আচরণ করেছে"।

সারাহ বলছেন তাকে লাথি মারা, গলা টিপে ধরা ও কামড় দেয়া হতো।

"যদি তাকে ছেড়ে যাই, তাহলে সে নিয়মিত আমার কন্যাদের ধর্ষণ ও আমার সামনেই তাদের খুন করবে বলে হুমকি দিতো। এমনকি একবার আমাকে ইলেকট্রিক শক পর্যন্ত দিয়েছিলো সে"।

সারাহ বলেন, এসব ঘটনা তিনি কারও কাছে বলেননি কারণ এটি ছিলো তার জন্য লজ্জার ও বিব্রতকর।

"আমি পরিবার ও বন্ধুদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলাম। আমি বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলাম যে সে আমার সন্তানদেরও ক্ষতি করবে"।

কিন্তু যখন তার সাহস হলো প্রেমিককে ছেড়ে যাওয়ার, তখন তিনি সেই কাজটি করলেন অত্যন্ত গোপনে।

"দশ দিন পর সে আমার ঘরের দরজায় এলো, বললো যে সে শেষবারের মতো সহযোগিতা চায়। সে বললো ২৫ কিলোমিটার দূরে তার চাচার খামারে যাওয়ার মতো পয়সাও তার হাতে নেই," বিবিসিকে বলেন তিনি।

তবে সারাহর কাছে সে অঙ্গীকার করে যে তাকে পৌঁছে দিলে সে আর তাদের জীবনে থাকবে না।

"ধর্ষণের ঘটনার বহু বছর পর আমি নিজেকেই দোষ দিলাম এ কারণে যে আমি বিশ্বাস করেছিলাম আমাকে সে যন্ত্রণামুক্ত হওয়ার সুযোগ দিয়েছে। গাড়ীতে করে দিয়ে আসার সময়ই খেয়াল করলাম যে সে চুপ হয়ে আছে। আমি আবারও বুঝতে পারলাম যে সে আসলে হেরোইন সেবন করে"।

সারাহ ওই ব্যক্তিকে বলেছিলেন যে তিনি খামার বাড়ির গেটে তাকে নামিয়ে দিয়ে চলে আসবেন।

"কিন্তু যখন খামারে পৌঁছলাম সে দৌড়ে আমার দিকে এসে দরজা খুলে চুল ধরে টেনে-হিঁচড়ে বের করার চেষ্টা করে। আমি গাড়িতে পড়ে গেলে সে আমার মাথায় লাথি মারে"।

"যখন জ্ঞান ফিরলো তখন খামারের বাইরে একটি কোয়ার্টারে এবং আমার ওপরে তাকে দেখতে পেলাম। তার এক বন্ধুও তার সাথে যোগ দিলো। আমি আবারো জ্ঞান হারালাম। জ্ঞান ফেরার পর দেখি তারা চলে গেছে, আর খামারের পরিচ্ছন্নতা কর্মী এলো সেখানে"।

অপরাধ কমাতে ব্যবস্থা নেয়ার দাবিঅপরাধ কমাতে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি

ছোট সার্জারিও করাতে হয়েছে

সারাহর পাশে দাঁড়ানো পরিচ্ছন্নতা কর্মীর হাতে এক বালতি পানি ছিলো। নিজের কিছু কাপড় দিয়ে সে সারাহকে পরিষ্কার করে দিতে উদ্যত হয়।

সারাহ তাকে থামতে বলেন এবং পুলিশ বা অ্যাম্বুলেন্স ডাকতে বলেন। এরপর একটি অ্যাম্বুলেন্স এসে সারাহকে হাসপাতাল নিয়ে যায়।

কিন্তু সারাহর শারীরিক ক্ষত বেশ গভীর ছিলো এবং তাকে একটি ছোটো অপারেশনও করতে হয়।

এসবের মধ্যে সারাহ দেখতে পান তার ওপর হামলাকারী জামিন পেয়েছে শহর ছেড়েছে। পরে অবশ্য সে গ্রেফতার হয় এবং তার আট বছরের জেলও হয়।

এরপর সে সাত বছর জেল খাটার পর প্রস্টেট ও ব্লাডার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় ২০১৭ সালে।

"সত্যিকার অর্থে সাত বছরের মধ্যে তখনি প্রথম আমি শান্তিতে নিঃশ্বাস নিলাম। কিন্তু আমি স্বপ্নেও দেখতাম যে আমার সাবেক বয়ফ্রেন্ড ফিরে আসছে এবং আমাকে ও আমার সন্তানদের ওপর আক্রমণ করছে"।

এক পর্যায়ে একা থাকতে না পেরে বাবা-মায়ের কাছে চলে যান সারাহ।

"আমি মানুষকে ভয় পেতে শুরু করলাম। চেষ্টা করলাম যাতে কেউ না বোঝে"।

সন্তানের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ

ছোটো বেলায় একবার যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ার পর থেরাপি নেয়ার অভিজ্ঞতাও ছিলো তারা।

তবে ভয়ংকর বিষয় ছিলো যে ধর্ষণের শিকার এক মাকে এই যন্ত্রণার ভেতর দিয়ে যেতে হবে, যার দুটো সন্তান রয়েছে।

"আমি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম এই ভেবে যে আমি যে ঘটনার শিকার হয়েছিলাম, তেমনটি যদি তাদের ক্ষেত্রেও হয়!"

সারাহ নিজের মেয়েদের বোঝাতে শুরু করেন যে তিনি সবসময়ই তাদের জন্য নিরাপদ জায়গা। তারা যেনো তাকে সবসময় বিশ্বাস করে এবং মা হিসেবে তিনিও সন্তানদের বিশ্বাস করবেন।

তিনি সন্তানদের নিরাপত্তা বিষয়ে বেশী চিন্তিত হয়ে পড়লেন।

সন্তানদের ফোন কিনে দিলেন ও নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে শুরু করলেন।

কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে তিনি মনে করেন নারী ও শিশুদের সুরক্ষায় খুব বেশী কোনো ব্যবস্থা নেই।

বিবিসি 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: