ঢাকা | রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২

করোনাভাইরাসের নতুন নাম দেওয়া হচ্ছে

Mahbubur Rohman Polash | প্রকাশিত: ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৯:৪২

Mahbubur Rohman Polash
প্রকাশিত: ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৯:৪২

 

নতুন নাম দেওয়া হচ্ছে করোনাভাইরাসের

 

যে ভাইরাসটির কারণে পুরো চীনে মহামারির মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সেটির এখনো কোনো যথাযথ নাম নেই। একে করোনাভাইরাস বলে উল্লেখ করা হচ্ছে। কিন্তু এটা আসলে ওই ভাইরাসটির নাম নয়, বরং ভাইরাসের যে গ্রুপ বা দলে এটির অবস্থান সেটির নাম করোনাভাইরাস। এটির সাময়িক একটা নামও দেয়া হয়েছিল ২০১৯-এনকভ হিসেবে। কিন্তু বলার ক্ষেত্রে এটা খুব একটা সহজ নয়।

একদল বিজ্ঞানী এই ভাইরাসটির একটি উপযুক্ত নাম ঠিক করার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। তারা জানিয়েছেন যে, তারা খুব শিগগিরই নাম ঘোষণা করতে যাচ্ছেন।

কিন্তু ভাইরাসের নাম ঠিক করতে এত সময় লাগল কেন এ বিষয়ে জন হপকিন্স সেন্টার ফর হেলথ সিকিউরিটির সহকারী অধ্যাপক এবং জ্যেষ্ঠ স্কলার ক্রিস্টাল ওয়াটসন বলেন, ‘নতুন কোনো ভাইরাসের নামকরণ সাধারণত কিছুটা দেরিতে হয় এবং জনস্বাস্থ্যের ওপর এটি কী ধরনের প্রভাব ফেলে তার উপর গুরুত্ব দেয়া হয়, যা যুক্তিসম্মত। কিন্তু নামকরণকেও অগ্রাধিকার দেয়ার কারণ রয়েছে।’

নতুন এই ভাইরাসকে চিহ্নিত করতে বিজ্ঞানীরা একে নোভেল বা নতুন করোনাভাইরাস নামে ডাকছেন। অণুবীক্ষণ যন্ত্রের মধ্যে দিয়ে দেখলে মুকুটের মতো স্পাইক বা কাটা থাকে বলে এদের করোনাভাইরাস নামকরণ করা হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) একে প্রাথমিকভাবে ২০১৯-এনকভ নামে ডাকার সুপারিশ করেছে- যার মধ্যে এটি কোন সালে আবিষ্কৃত হয়েছিল অর্থাৎ ২০১৯ এবং ‘এন’ দিয়ে নোভেল বা নিউ বা নতুন বোঝায় এবং ‘কভ’ দিয়ে করোনাভাইরাস বোঝায়। তবে এটাই চূড়ান্ত নয়।

ডা. ওয়াটসন বলেন, ‘বর্তমানে এটির যে নাম আছে তা ব্যবহার সহজ নয় এবং জনগণ ও মিডিয়া এর অন্য নাম ব্যবহার করছে। আনুষ্ঠানিক নাম না থাকার সমস্যা হচ্ছে মানুষ এটাকে চায়না ভাইরাস বলে ডাকতে শুরু করে, আর এটা নির্দিষ্ট জনগণের জন্য নেতিবাচক হতে পারে।’

তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনানুষ্ঠানিক নাম দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং পরে তা আর পরিবর্তন করাটা কঠিন হয়ে পড়ে।

জরুরী ভিত্তিতে ভাইরাসটির আনুষ্ঠানিক নামকরণ করার দায়িত্ব রয়েছে ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অন ট্যাক্সোনমি অব ভাইরাসেস-আইসিটিভি নামে একটি প্রতিষ্ঠানের।

এর আগে প্রাদুর্ভাবটি এই দলটির জন্য সতর্কতামূলক উদাহরণ ছিল। ২০০৯ সালে এইচওয়ানএনওয়ান ভাইরাসের নাম দেয়া হয়েছিল ‘সোয়াইন ফ্লু’। এ কারণে মিশর তাদের সব শূকর মেরে ফেলেছিল, যদিও ভাইরাসটি শূকরের মাধ্যমে নয় বরং মানুষের মাধ্যমে ছড়ায়।

আনুষ্ঠানিক নাম অনেক সময় সমস্যাও তৈরি করে। ২০১৫ সালে মার্স (মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) নামেরও সমালোচনা করেছিল বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা। এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জানায়, ‘আমরা দেখেছি যে কিছু কিছু রোগের নামে নির্দিষ্ট কোনো ধর্মের বা নৃ-গোষ্ঠীর মানুষদের জন্য নেতিবাচকতা উস্কে দেয়, যার কারণে ভ্রমণ, ব্যবসা-বাণিজ্যে অন্যায় আচরণের মুখে পড়ে তারা, আর অনেক সময় পশুপাখিদের হত্যাও করা হয়’।

যার কারণে এটি নীতিমালা প্রণয়ন করে। এই নীতিমালা অনুযায়ী, নতুন করোনাভাইরাসের নামকরণের ক্ষেত্রে যেসব বিষয় থাকা উচিত নয় সেগুলো হচ্ছে:

• ভৌগোলিক অবস্থান

• মানুষের নাম

• জীবজন্তুর নাম বা খাদ্যদ্রব্যের নাম

• নির্দিষ্ট কোনো সংস্কৃতি বা শিল্পের উদ্ধৃতি

এতে বলা হয় যে, নামটি হবে ছোট কিন্তু বর্ণনামূলক- যেমন সার্স (সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম)

কিন্তু নামটি নির্ধারণের জন্য একটি সম্পর্ক বা হুকও দরকার, বলেন বেঞ্জামিন নিউম্যান যিনি ভাইরোলজির একজন অধ্যাপক। আইসিটিভির ১০ সদস্যের গবেষক দলের মধ্যেও তিনি একজন যারা নাম ঠিক করার দায়িত্বে রয়েছেন।

দুই সপ্তাহ আগে এই দলটি নাম নির্ধারণের জন্য আলোচনা শুরু করে এবং শেষমেশ দুই দিনের আলোচনার পর তারা একটি নামের বিষয়ে নিয়ে ঐক্যমতে পৌঁছান, বলেন অধ্যাপক নিউম্যান যিনি যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস এএন্ডএম ইউনিভার্সিটির জীববিজ্ঞান বিভাগের প্রধান।

তারা এখন নামটি প্রকাশের জন্য একটি বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নালে জমা দিচ্ছে এবং আশা করা হচ্ছে যে, কয়েক দিনের মধ্যেই এটি ঘোষণা করা হবে।

জনগণের বোঝাপড়া ছাড়াও আইসিটিভি আশা করছে যে এটির প্রতিষেধক আবিষ্কারের গবেষণায় এটি গবেষকদের সময় বাঁচাবে এবং ঝামেলা কমাবে।

অধ্যাপক নিউম্যান বলেন, ‘ভবিষ্যতে দেখবো যে আমরা ঠিক নামটি দিতে পেরেছি কিনা। আমার মতো কারো ক্ষেত্রে, একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাইরাসের নামকরণে সহায়তা করতে পারাটা দীর্ঘস্থায়ী এবং পুরো কর্মজীবনের কাজের চেয়ে অনেক বেশি সহায়ক। এটা খুব বড় একটা দায়িত্ব।’

সূত্র: বিবিসি



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: