ঢাকা | শনিবার, ৩ মে ২০২৫, ২০ বৈশাখ ১৪৩২
১ মার্চ জাতীয় বীমা দিবস

জাতীয় বীমা দিবস উদযাপনে উৎসবের আমেজ বীমাখাতে

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১ মার্চ ২০২১ ০২:০৪

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১ মার্চ ২০২১ ০২:০৪

শহীদুল ইসলাম

 

যে দেশের বীমাখাত যতো শক্তিশালী সে দেশের অর্থনীতি ততো সমৃদ্ধশালী। এটা প্রথম বুঝতে পেরেছিলেন ১৯৬০ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আর তাই তিনি দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই বীমাখাতের উন্নয়ন সংস্কারে হাত দেন ।

আর এর ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালের ১ মার্চ জাতীয় বীমা দিবস উদযাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশের তৈরী করে এক নতুন দিগন্তের সূচনা। এ বছর দ্বিতীয় বারের মতো ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে পালিত হচ্ছে জাতীয় বীমা দিবস ।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজন করা হয়েছে জাতীয় বীমা দিবসের মূল অনুষ্ঠান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি উপস্থিত থাকবেন ওই অনুষ্ঠানে।

এতে সভাপতিত্ব করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এফসিএ, এমপি। অতিথিবৃন্দের মধ্য বক্তব্য রাখবেন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেন।

১ মার্চকে জাতীয় বীমা দিবস উদযাপনে গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার পেছনে ঐতিহাসিক কারণও জড়িত রয়েছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ১৯৬০ সালে তৎকালীন আলফা ইস্যুরেন্সের পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক প্রতিনিধি হিসেবে বীমা কম্পানিতে যোগ দেন। সে দিনটি ছিলো ১ মার্চ। তাই এ দিনটিকে স্মরণীয় ও বরণীয় করে রাখার জন্য জাতীয় বীমা দিবস হিসেবে এই তারিখ বীমা দিবস ঘোষণা করে বর্তমান সরকার।

বর্তমান সরকার ২০১০ সালে ১৯৩৮ সালের বীমা আইনকে বাতিল করে বীমা আইন ২০১০ পাশ করে এবং বীমা অধিদপ্তরকে আধুনিকায়ন ও শক্তিশালী করণের জন্য বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আইন ২০১০ সালে পাশ করার মাধ্যমে ২০১১ সালে অধিদপ্তর বিলুপ্ত করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গঠন করে।

পরে কর্তৃপক্ষ নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যে বীমা সেক্টরের উন্নয়নে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় অনেকগুলো পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

এ উপলক্ষে বর্তমানে দেশে মোট ৭৯টি বীমা কোম্পানি গ্রাহকদের বীমা সেবা দিয়ে যাচ্ছে । যার মধ্যে ৩৩টি লাইফ বীমাকারী কোম্পানি। ৪৬টি নন-লাইফ বীমাকারী কোম্পানি। লাইফ বীমাকারী কোম্পানির মধ্যে ১টি সরকারী ।৩২টি বেসরকারি মালিকানাধীন। অন্যদিকে নন-লাইফ বীমাকারী কোম্পানির মধ্যে ১টি সরকারী। ৪৫টি বেসরকারি মালিকানাধীন।

এদিকে বীমা খাতে সরকারের এত গুরুত্ব দেয়ার পরেও জিডিপির তুলনায় দেশের বীমা খাতের প্রিমিয়াম আয় অত্যন্ত কম । এর কারণ হিসেবে বীমা দাবির অর্থ পরিশোধে প্রতিষ্ঠানগুলোর গড়িমসিকে দায়ী করেছে গ্রাহকরা।

যেখানে পাশের দেশ ভারতে জিডিপিতে বীমা খাতে ৪ শতাংশ, শ্রীলংকায় ১ দশমিক ২ শতাংশ, ফিলিপাইনে ২ দশমিক ২৫ শতাংশ । সেখানে বাংলাদেশের দশমিক ৫৫ শতাংশ প্রিমিয়াম আয়। যা মাথাপিছু বার্ষিক প্রিমিয়াম ৯ ডলার। এ খাতে বাংলাদেশ বিশ্বে ৬৮তম অবস্থানে রয়েছে।

সম্প্রতিকসময় বীমা খাতের সংকট নিরাসনে বর্তমান সরকার আরো বেশ বিছু উদ্যেগ হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বীমা। যা বাস্তবায়নে দেশের প্রতিটি জেলা থেকে একটি করে প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং এর শিক্ষার্থীদের তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে সরকার। ১ মার্চ জাতীয় বীমা দিবসে এই বীমা প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বীমা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে সরকারি ও বেসরাকরি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়ে এ দিবসটি উপলক্ষ্যে ওয়েবিনার আয়োজন করা হয়েছে।

মূলত, সরকারি ও বেসরাকরি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে বীমা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়নো এই ওয়েবিনারের লক্ষ্য।

এ বিষয় বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেন বলেন, “বীমা উন্নয়নে প্রথমবারের মত অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ৬শ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
চলমান নানামুখী সংস্কারের কাজ শেষ হলে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ খাত হবে বীমা। জনগণের কাছে বার্তা পৌঁছাতে হবে বীমা কতটা জরুরী ও উপকারী। বিভিন্ন কাজে বীমাকে বাধ্যতামূলক করার পাশাপাশি দেশব্যাপী সচেতনতা তৈরি হলে এ খাতের গুরুত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে” ।


ড. এম মোশাররফ হোসেন বলেন, “ছোট শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার স্বার্থে চালু করা হচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বীমা’। কর্তৃপক্ষের নিজস্ব অর্থায়নে ১ মার্চ জাতীয় বীমা দিবসে এর উদ্বোধন করা হবে। প্রথম দুই বছর এটি পাইলট প্রকল্প আকারে পরিচালনা করা হবে”।

ড. এম মোশাররফ হোসেন ৩ থেকে ১৭ বছর বয়সী স্কুল শিশুর জন্য বীমা চালুর কথা জানিয়ে বলেন, “শিশুদের জন্য তাদের আভিভাবকরা এই বীমা কিনতে পারবেন। এজন্য বার্ষিক প্রিমিয়াম দিতে হবে ৮৫ টাকা। বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বীমা পলিসি গ্রহণের পর কোন অভিভাবক মারা গেলে ওই শিশু ১৭ বছর পর্যন্ত মাসে ৫০০ টাকা করে বীমা দাবি পাবে।”

শহীদুল/



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: