ঢাকা | বৃহঃস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রাজনৈতিক পরিচয়ে র‍্যাগিংয়ের ঘটনায় হাইকোর্টের উদ্বেগ

মো. আহসানুল ইসলাম আমিন | প্রকাশিত: ২ মার্চ ২০২৩ ০৪:৩৮

মো. আহসানুল ইসলাম আমিন
প্রকাশিত: ২ মার্চ ২০২৩ ০৪:৩৮

নিজস্ব প্রতিবেদক:

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনীতির নামে কিংবা রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে কিছু উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষার্থীদের দ্বারা নবাগতদের র‍্যাগিংয়ের নামে অমানবিক নির্যাতন করার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, এ কাজের মাধ্যমে উচ্ছৃঙ্খল ছাত্ররা দলের পাশাপাশি ছাত্র রাজনীতির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের ভাবমূর্তি ভূলুণ্ঠিত করছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়ায় এক ছাত্রীকে নির্যাতনের ঘটনায় করা রিটের শুনানিকালে আজ বুধবার (১ মার্চ) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব পর্যবেক্ষণ দেন।

আদালত বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসা খবরে দেখা যাচ্ছে, সম্প্রতি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্দিষ্টভাবে আবাসিক হল ও হোস্টেলে কিছু উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষার্থী তাদের রাজনৈতিক পরিচয়ের অপব্যবহার করে অপ্রত্যাশিত ঘটনায় জড়িয়ে পড়ে। এসব শিক্ষার্থীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভেতরে ঢুকে সাধারণ শিক্ষার্থী বিশেষ করে নবাগতদের নির্যাতন করে। এ ধরনের অবাধ্য ছাত্ররা শিক্ষার মানসম্মত পরিবেশ বাধাগ্রস্ত করে। এমনকি তাদের দলীয় শৃঙ্খলাও ভঙ্গ করে। এর মাধ্যমে তারা দলের পাশাপাশি ছাত্র রাজনীতির গৌরবোজ্জ্বল ভাবমূর্তি ভূলুণ্ঠিত করছে।

ইবির ঘটনা প্রসঙ্গে আদালত বলেন, বিচার তো আমরা করছি না। বিচার করবে বিশ্ববিদ্যালয়, তারা রিপোর্ট পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখে সিদ্ধান্ত দেবে। আমরা উদ্বিগ্ন অন্য সব শিক্ষার্থী ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ে। অনেক সময় রাজনৈতিক আশ্রয়ের অপব্যবহার করে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। ছাত্র রাজনীতির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস নষ্ট করে দিচ্ছে। ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করো—এ সমস্ত কথাও উঠতে পারে। তবে ছাত্র রাজনীতির যে প্রয়োজন, সেটি আমরা আমাদের ইতিহাস থেকে দেখেছি। কিন্তু এটাকে নষ্ট করার জন্য, ক্ষুণ্ণ করার জন্য অনেকে না বুঝে করে, অনেকে বুঝে করে। এটা থেকে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।

এ সময় আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন রিটকারী আইনজীবী গাজী মো. মহসীন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক।

শুনানি শেষে ওই ঘটনায় দুটি তদন্ত প্রতিবেদন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে সিলগালা করে পাঠানোর আদেশ দিয়ে ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জড়িত শিক্ষার্থী, অবহেলা করা হল প্রশাসনসহ অন্যদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিধি অনুসারে ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসা পর্যন্ত ছাত্রলীগ নেত্রী অন্তরাসহ ৫ ছাত্রীকে সব ধরণের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ও ক্যাম্পাসের বাইরে রাখতে বলা হয়েছে।

বহিষ্কার হওয়া পাঁচ ছাত্রী হলেন- পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, চারুকলা বিভাগ ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী হালিমা আক্তার উর্মি, আইন বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের ইসরাত জাহান মীম, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের তাবাসসুম ইসলাম ও মোয়াবিয়া জাহান।

এছাড়া ঘটনার সময় নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুনের ভিডিও করা চারুকলা বিভাগ ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী হালিমা আক্তার উর্মির মোবাইল ফোন সংগ্রহ এবং ধারণ করা ভিডিও উদ্ধার করে আদালতে দাখিল করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি নির্ভয়ে স্বাভাবিক শিক্ষাজীবন চালিয়ে নিতে তিন দিনের মধ্যে আবাসিক হলে ফুলপরীর জন্য সিট বরাদ্দ দিতে বলা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ও হল কর্তৃপক্ষকে। সেই সঙ্গে কুষ্টিয়ার এসপি ও পাবনার এসপিসহ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ফুলপরীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। ঘটনার সাক্ষীদেরও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।

এ আদেশের বিষয়ে ৮ মে’র মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আদেশের সময় আদালত রিটকারী আইনজীবীর উদ্দেশ্যে বলেন, আমরা বিষয়টি মনিটরিংয়ে রাখবো। আপনিও এ বিষয়ে খেয়াল রাখবেন। কোনও সমস্যার উদ্ভব হলে আদালতকে জানাবেন। তখন আমরা প্রয়োজনীয় আদেশ দেবো।

এর আগে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি), কুষ্টিয়ার এক ছাত্রীকে রাতভর মারধর ও শারীরিক নির্যাতন করে ভিডিও ধারণের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। রিটে জড়িতদের হাইকোর্টে তলব করার নির্দেশনা চাওয়া হয়। জনস্বার্থে রিট আবেদনটি দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গাজী মো. মোহসীন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সচিব, শিক্ষা মন্ত্রণালয় সচিব, ইবির ভিসি, রেজিস্ট্রার, প্রক্টরসহ সংশ্লিষ্টদের রিটে বিবাদী করা হয়।

পরে রিটটির শুনানি নিয়ে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) এক ছাত্রীকে রাতভর মারধর ও শারীরিক নির্যাতন করে ভিডিও ধারণের ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও একজন সহকারী শিক্ষকের সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি করতে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়। তিন দিনের মধ্যে কমিটি গঠন করে পরবর্তী ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়। একইসঙ্গে এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের করা কমিটির রিপোর্টও ১০ দিনের মধ্যে দাখিল করতে নির্দেশ দেন আদালত। পাশাপাশি নির্যাতনে জড়িত দুই শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাসের বাইরে রাখতে বলা হয়। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীকে। এছাড়াও এ ঘটনায় রুল জারি করেন আদালত।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: