ঢাকা | রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২

লালমনিরহাটে গৃহবধুকে পিটিয়ে শরীরে মরিচের গুড়া ঢেলে দেয়ার অভিযোগ

Mahbubur Rohman Polash | প্রকাশিত: ২৫ জানুয়ারী ২০১৮ ০০:০৬

Mahbubur Rohman Polash
প্রকাশিত: ২৫ জানুয়ারী ২০১৮ ০০:০৬

হাসান মাহমুদ (লালমনিরহাট প্রতিনিধি): লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলায় ভালোবেসে বিয়ে করায় জেসমিন আক্তার(২২) নামে এক গৃহবধুকে বেধড়ক পিটিয়ে রক্তাক্ত করে শরীরে মরিচের গুড়া ঢেলে দিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে তারই দুই ভাসুরের বিরুদ্ধে। বর্তমানে ওই গৃহবধু আশংকাজনক অবস্থায় লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের সার্জারী ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।


এ ঘটনায় থানায় পাল্টাপাল্টি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে থানা পুলিশ জানান। এর আগে গত মঙ্গলবার রাতে উপজেলার সারপুকুর ইউনিয়নের বালাটারী গ্রামে তার স্বামীর ভাই নুর ইসলামের বাড়িতে এ ঘটনাটি ঘটে। এমন খবর পেয়েই থানা পুলিশ সে রাতেই সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য-কমপ্লেক্সে ভর্তি করান।


পরে ওই গৃহবধুর অবস্থা অবনতি হলে বুধবার বিকেলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে আশংকাজনক অবস্থায় লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে সার্জারী ওয়াডে ভর্তি করানো হয়।


আহত গৃহবধু জেসমিন আক্তার উপজেলার ওই গ্রামের বাদশা আলমের স্ত্রী। এছাড়া সে উপজেলার রথেরপাড় গ্রামের জাফর উদ্দিনের মেয়ে। অভিযুক্তারা হলেন, উপজেলার বালাটারী গ্রামের হাফেজ আলীর দুই বড় ছেলে ও ওই গৃহবধুর ভাসুর নুর ইসলাম ও নুর আলম।


নির্যাতনের শ্বীকার ওই গৃহবধু জেসমিন আক্তার জানান, প্রায় আড়াই বছর আগে ভালো বেসে বিয়ে হয় বাদশা আলমের সাথে। তার শশুর হাফেজ আলী মেনে নিলেও মানতে পারেনি স্বামীর ওই দুই বড় ভাই। তাই জেসমিন ও বাদশা আলাদা বাড়ি করে থাকেন। এরপরেও তাকে ওই বাড়ি ছাড়ার জন্য বিভিন্ন পায়তারা শুরু করে জেসমিনের ওই দুই ভাসুর। তাকে বিভিন্ন কারনে তাদের আলাদা বাড়িতে গিয়েও মারপিট করে নুর আলম ও নুর ইসলাম। এ নিয়ে কয়েক দফায় স্থানীয় ভাবে শ্যালিস বৈঠক হয়।


এদিকে ঘটনার দিন গত মঙ্গলবার বিকেলে তার স্বামী বাড়ির বাইরে গেলে ভাসুর নুর ইসলাম জেসমিনকে নুর আলমের বাড়িতে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে কোন কারন ছাড়াই লোহার রড দিয়ে বেধড়ক মারপিট শুরু হয়। এরপর শরীর বিভিন্ন স্থানে কামড়ে রক্তাক্ত করে। পরে জেসমিন মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তাকে ভাসুর নুর আলমের ঘরে আটকে রাখা হয়। এরপর মরিচিরের গুড়া মিশ্রিত পানি জেসমিনের গোপনাঙ্গসহ সমস্থ শরীরে ঢেলে দেন ওই বাড়ির মহিলারা। এ সময় জেসমিনকে ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখে এবং উল্টো তার বিরুদ্ধে থানায় গিয়ে মারামারির অভিযোগ দায়ের করেন নুর আলমরা।


স্থানীয়দের খবরে স্বামী বাদশা আলম ও মা রাশেদা বেগম আহত জেসমিনকে উদ্ধার করতে গেলে তাদেরকে দেখা করতে দেয়া হয় নি। অপরদিকে পুলিশ খবর পেয়ে অবশেষে গভির রাতে জেসমিনকে ওই ঘর থেকে উদ্ধার করে প্রথমে আদিতমারী হাসপাতালে পরে আশংকাজনক অবস্থায় লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।

এ ঘটনায় জেসমিনের স্বামী বাদশা আলম বাদি হয়ে আদিতমারী থানায় একটি লিখত অভিযোগ দায়ের করেন। জেসমিনের মা রাশেদা বেগম জানান, ঘটনার পর সন্ধ্যা থেকে পুলিশকে ডাকলেও তারা টাকার জোড়ে ঘাতকদের পক্ষ নিয়ে আসতে বিলম্ব করেন। হাতে পায়ে ধরার পর রাতে পুলিশ গিয়ে জেসমিনকে উদ্ধার করেন।


লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. সামিহা তাসনিম মুনমুন জানান, গৃহবধুর সমস্থ শরীরের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রসাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া কিছুটা কমলেও চোখে সমস্যা দেখা দিতে পাওে বলে জানান তিনি।

আদিতমারী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) হরেশ্বর রায় জানান, এ ঘটনায় দুই পক্ষই থানায় অভিযোগ দিয়েছে। তদন্ত করে দুটি মামলাই নেয়া হবে। লালমনিরহাট পুলিশ সুপার এসএম রশিদুল হক জানান, খোঁজ খবর নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: