-2018-02-19-17-53-03.jpg)
আব্দুর রাহিম, শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধিঃ বগুড়ার শেরপুর উপজেলার পালস ক্লিনিকে ভর্তির পর চিকিৎসা অবহেলায় মা ও নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগে গতকাল রবিবার পুলিশ অভিযান চালিয়ে ক্লিনিকের ম্যানেজার আমিনুর ও ওয়ার্ডবয় ইউসুফকে আটক করেছে।
এদিকে প্রসুতির মৃত্যুর ঘটনায় একটি চক্র ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের সাথে দেন দরবারে ব্যর্থ হওয়ায় ওই রাতেই থানায় ক্লিনিক মালিকসহ ৪ জনকে আসামী করে মামলা দেয় রোগীর পরিবার।
জানা যায়, শেরপুর উপজেলার খামারকান্দি ইউনিয়নের ঝাঁজর হিন্দুপাড়ার মৃত রঘুনাথ হাওলদারের ছেলে শিবেন হাওলদার তার গর্ভবতী স্ত্রী পুতুল রানীকে নিয়ে গত ১৭ ফেব্রæয়ারী শনিবার রাত ২টার দিকে শেরপুর শহরের পালস্ধসঢ়; জেনারেল হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশনের জন্য ভর্তি করে। এদিকে রোগী ভর্তির পর সারারাত কোন কর্তব্যরত ডাক্তার না থাকায় কোন চিকিৎসা না করিয়ে পরদিন রবিবার সকালে অনকল ডাক্তার ডেকে ওই রোগীর অপারেশন করে কর্তৃপক্ষ। এতে মৃত সন্তান প্রসব করে প্রসূতি।
এদিকে সিজারিয়ান অপারেশনে নবজাতকের মা পুতুল রানীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয় এবং ক্লিনিক মালিক ডা. আখতারুল আলম আজাদের সাথে কথা বলে দুই ব্যাগ রক্ত দিয়েও উন্নতি করতে না পেরে ওইদিন বিকেল ৩টার দিকে উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপাতে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ।
এদিকে কোন উপায়ন্তর না দেখে রোগীর পরিবার বগুড়া হাসপাতালে নিয়ে গেলে পুতুল রানী পথিমধ্যে মারা যায় বলে সরকারি হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান।
এ ব্যাপারে পুতুল রানীর স্বামী শিবেন হাওলদার বলেন, আমি মুর্খ মানুষ, তবে রোগিকে ভর্তির সময় কোনো চিকিৎসক ছিলেন না। ওয়ার্ডবয় তাকে একটি ভর্তির কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে নেয় এবং পরের দিন সকালে অপারেশনের মাধ্যমে মৃত সন্তান প্রসব করায়।
তাছাড়া আমার স্ত্রীর গুরুতর অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ার বিষয় তারা টের পেয়ে কৌশলে আমাদের ওই ক্লিনিক থেকে বের করে দিয়ে বগুড়া সরকারী হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। এভাবে মা ও নবজাতক শিশুর করুণ মৃত্যুতে দরিদ্র জেলে পরিবারটির মাঝে চরম আহাজারি সৃষ্টি হয় এবং দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবী জানিয়েছেন নিহতের স্বজনেরা। অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, পুর্বের দুই সন্তানের জননী পুতুল রানী ৩য় সন্তান প্রসবের জন্য গত শনিবার রাতে শেরপুর শহরের পালস জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়।
ভর্তির সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কৌশলে ভর্তির ফর্মে সিজারিয়ান অপারেশনের বদলে ‘‘আমরা দুজন আর সন্তান নিবোনা মর্মে স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির অপারেশন করতে রাজী আছি” লিখে নিয়ে দায়িত্বে থাকা ওয়ার্ডবয় প্রতারনামূলক ভর্তি করে নেয়।
এ প্রসঙ্গে শেরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রফিকুল ইসলাম জানান, গত রোববার সন্ধ্যায় মৃতের স্বামী শিবেন থানায় অভিযোগ দিলে রাত ৮টার দিকে পুলিশ বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতাল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে শেরপুর থানায় আনা হয়।
গত শনিবার (১৭ ফেব্রæয়ারি) দিনগত রাত ২টার দিকে প্রসব বেদনার কারণে ওই প্রসূতিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপরও কর্তৃপক্ষ আইনের চরম ব্যতয় ঘটিয়ে ওই প্রসূতিকে ভর্তি করায়। ভোরে অস্ত্রপচার করানো হয় পুতুল রানীর। এতে প্রসূতি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। এদিকে অভিযোগের ভিত্তিতেই ওই ক্লিনিকের ম্যানেজার আমিনুল ও ওয়ার্ডবয় ইউসুফকে গ্রেফতার করা হয় বলে তিনি আরও জানান। এ ঘটনায় বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও নিহতের স্বজনদের সাথে কথা বলেন এবং সুষ্ঠ বিচার পাইয়ে দেয়া হবে মর্মে আশ্বস্ত করেন।
এতে ওইদিন রাতেই শিবেন বাদী হয়ে পালস জেনারেল হাসপাতালের মালিক ডাঃ আখতারুল আলম আজাদসহ ৪জন আসামী করে থানায় একটি মামলা দায়ের করে। এর প্রেক্ষিতে সোমবার সকালে মামলার তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা এসআই এবাদ আলী মৃতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য বগুড়া শজিমেক হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেন।
এ ঘটনার পর থেকেই পালস জেনারেল হাসপাতালের মালিক ডা. আখতারুল আলম আজাদসহ সংশ্লিষ্টরা গা ঢাকা দিয়েছেন। তবে তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: