ঢাকা | শুক্রবার, ৯ মে ২০২৫, ২৫ বৈশাখ ১৪৩২

গাজায় জরুরি সেবা কার্যক্রম অচল হয়ে পড়ছে গাজায় প্রথম সারির সেবাদানকারীরা

odhikarpatra | প্রকাশিত: ৮ মে ২০২৫ ২৩:৪৯

odhikarpatra
প্রকাশিত: ৮ মে ২০২৫ ২৩:৪৯

বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, ইসরাইলি অবরোধের দুই মাস পার হওয়ার প্রেক্ষাপটে খাদ্য ও জ্বালানির তীব্র সংকটের কারণে গাজায় তাদের কার্যক্রম প্রায় অচল হয়ে পড়েছে।

গাজা সিটি থেকে এএফপি জানায়, ইসরাইল যদিও গাজা উপত্যকায় মানবিক বিপর্যয় চলছে বলে অস্বীকার করছে, তথাপি তারা সেখানে সামরিক অভিযান সম্প্রসারণের প্রস্তুতি নিচ্ছে যাতে হামাসকে জিম্মি মুক্ত করতে বাধ্য করা যায়। হামাস গত বছর অক্টোবরে নজিরবিহীন হামলা চালিয়ে বহু ইসরাইলিকে জিম্মি করে।

'আমাদের ৭৫ শতাংশ গাড়ি ডিজেলের অভাবে চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে,' বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন গাজা সিভিল ডিফেন্স সংস্থার মুখপাত্র মাহমুদ বাসসাল।

তিনি আরও জানান, জরুরি সেবাদানকারী এই সংস্থার দলগুলো বিদ্যুৎ জেনারেটর ও অক্সিজেন যন্ত্রপাতির তীব্র ঘাটতির সম্মুখীন।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে জাতিসংঘ এবং অন্যান্য মানবিক সংস্থাগুলো সতর্ক করে আসছে যে, উপত্যকার ২৪ লাখ মানুষের জন্য জ্বালানি, ওষুধ, খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে।

জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ সতর্ক করেছে যে, খাবারের অভাবে জাতিসংঘ-সহায়তাপ্রাপ্ত রান্নাঘরগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গাজার শিশুরা ‘অনাহার, অসুস্থতা এবং মৃত্যুর ক্রমবর্ধমান ঝুঁকিতে’ রয়েছে।

মানবাধিকার পরিষদের অধীন নিযুক্ত ২০ জনেরও বেশি স্বাধীন বিশেষজ্ঞ বুধবার গাজায় ফিলিস্তিনিদের ‘সম্পূর্ণ বিনাশ’ ঠেকাতে জরুরি পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনুসের একটি ফিল্ড হাসপাতালে রক্তদানের লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন বহু ফিলিস্তিনি—এএফপির এক সাংবাদিক এমনটাই জানিয়েছেন।

'এই কঠিন পরিস্থিতিতে আমরা আহত ও অসুস্থদের পাশে দাঁড়াতে এসেছি, খাদ্য ও প্রোটিনের চরম সংকটের মধ্যে রক্ত দিয়ে সহায়তা করতে,' বলেন লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ফিলিস্তিনি নাগরিক মোয়ামেন আল-ঈদ।

‘খাবার নেই, পানি নেই’

হাসপাতালটির ল্যাব প্রধান হিন্দ জোবা বলেন, 'এখানে খাবার নেই, পানি নেই, সীমান্ত বন্ধ, পুষ্টিকর খাবার বা প্রোটিনের কোনো ব্যবস্থা নেই।'

‘তবু মানুষ রক্ত দিতে এসেছে, নিজেদের শরীর নিঃশেষ করেও মানবিক কর্তব্য পালন করছে,’ তিনি বলেন।

‘এই রক্তই বাঁচায় আহতদের জীবন—তারা তা জানে বলেই এক ফোঁটা ফোঁটা দিয়ে যাচ্ছেন।’

ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতির আলোচনায় অগ্রগতি না হওয়ার প্রেক্ষাপটে গত ১৮ মার্চ ইসরাইল আবার গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে। সোমবার ইসরাইলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা গাজায় সামরিক অভিযান নিয়ে নতুন রূপরেখা অনুমোদন করে, যেখানে জনগণকে ব্যাপকভাবে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে—যা আন্তর্জাতিক মহলে নিন্দার জন্ম দিয়েছে।

একজন ইসরাইলি নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ১৩ থেকে ১৬ মে উপসাগরীয় সফরের সময়সীমার মধ্যে আলোচনার একটি ‘জানালা’ এখনও খোলা রয়েছে।

হামাস বুধবার এক বিবৃতিতে ইসরাইলের ‘আংশিক সমাধান’ চাপিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টাকে প্রত্যাখ্যান করে বলে, তারা ‘সমপূর্ণ ও চূড়ান্ত চুক্তি’র পক্ষে রয়েছে।

সিভিল ডিফেন্স সংস্থার মতে, বৃহস্পতিবার ভোররাতে চালানো বিমান হামলায় অন্তত আটজন নিহত হয়েছেন।

এই যুদ্ধের সূচনা হয় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন হামলায়, মোট ১,২১৮ জন ইসরাইলি নিহত হন, যেখানে এএফপি-র হিসাব মতে, অধিকাংশই বেসামরিক নাাগরিক।

সেদিন অপহৃত ২৫১ জনের মধ্যে এখনো ৫৮ জন গাজায় আটকা আছেন, যাদের মধ্যে ৩৪ জনকে মৃত ঘোষণা করেছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী।
২০১৪ সালের যুদ্ধের সময় নিহত এক ইসরাইলি সেনার মরদেহও হামাসের কাছে রয়েছে।

গাজায় ইসরাইলি অভিযানে এখন পর্যন্ত ৫২,৬৫৩ জন নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক—এ তথ্য হামাস-চালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া, যা জাতিসংঘ গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করে।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো অভিযোগ করেছে, গাজায় চলমান মানবিক বিপর্যয় ইচ্ছাকৃতভাবে তৈরি করা হয়েছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও মেডিসিন স্যান ফ্রঁতিয়ে বলছে, সীমান্ত বন্ধ রেখে খাদ্য ও চিকিৎসা সামগ্রীর প্রবেশ ঠেকিয়ে ইসরাইল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘন করছে।

গাজায় প্রতিদিন বেসামরিক মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকায় আরব ও ইসলামি বিশ্বে ক্ষোভ দানা বাঁধছে। কাতার, ইরান ও তুরস্ক ইসরাইলি অভিযানকে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ বলে অভিহিত করেছে। ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা ও ওআইসি ইসরাইলকে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালেও দৃশ্যমান সাড়া মেলেনি।

সংবাদপত্র ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর বরাতে জানা গেছে, ইসরাইলি বাহিনী ধারাবাহিকভাবে সাংবাদিক ও চিকিৎসাকর্মীদের লক্ষ্য করছে। ‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস’ জানায়, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গাজায় অন্তত ১০১ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন, যা একক সংঘাতে সর্বোচ্চ।

জাতিসংঘের একাধিক সংস্থা সতর্ক করেছে, চলমান অবরোধ ও ধ্বংসযজ্ঞ অব্যাহত থাকলে গাজা আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই ‘মানব বসবাসের অযোগ্য’ হয়ে পড়বে। ইতোমধ্যে পানীয়জলের উৎস, হাসপাতাল ও স্কুলসহ প্রায় সব অবকাঠামো ভেঙে পড়েছে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: