ঢাকা | মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা মেয়ে ও নারীদের নির্যাতন করছে রাখাইন সেনারা

Mahbubur Rohman Polash | প্রকাশিত: ১৩ নভেম্বর ২০১৭ ০৯:২৬

Mahbubur Rohman Polash
প্রকাশিত: ১৩ নভেম্বর ২০১৭ ০৯:২৬

 

রাখাইনে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী রোহিঙ্গা মেয়েদের সম্মিলিতভাবে নির্যাতন করেছে। দেশটির বর্ডার গার্ড পুলিশ, রাখাইন বৌদ্ধ ও অপরাপর এথনিক গ্রুপের মিলিশিয়ারাও এতে যোগ দিয়েছে। মেয়েদের ৪৫ দিন পর্যন্ত আটকে রেখে তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়। এমন কি নির্যাতনের পর অনেককে হত্যা করা হয়েছে। তিনি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন শেষে ঢাকায় ফিরে রোববার সংবাদ সম্মেলনে নারী নির্যাতনের কথা বললেন প্রমিলা প্যাটেন।

এ সময় তিনি রোহিঙ্গাদের ওপর যৌন সহিংসতার ভয়াবহ বর্ণনা দেন। প্রমিলা প্যাটেনকে সংঘাতকালে যৌন সহিংসতা বিষয়ে বিশেষ প্রতিনিধি নিয়োগ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস। নিউইয়র্কে ফিরে গিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবকে রোহিঙ্গাদের ওপর যৌথ সহিংসতা বিষয়ে অবহিত করবেন প্যাটেন। তমব

আগামী বছরের মার্চে তিনি এ ব্যাপারে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট মহাসচিবের কাছে হস্তান্তর করবেন। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) প্রসিকিউটর ও সভাপতির কাছে পুরো বিষয়টি উত্থাপন করবেন।

প্রমিলা প্যাটেন জানান, তিনি মিয়ানমারে সফরে যেতে চেয়েছিলেন। এমন নিষ্ঠুরতার মাধ্যমে গণহত্যা কিংবা মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠিত হয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখতেই যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ তাকে ওই দেশ সফরে অনুমতি দেয়নি। তিনি বলেন, রাখাইনে বিভিন্ন ধরনের সৈন্য রোহিঙ্গা মেয়েদের আটক অবস্থায় তোলা উলঙ্গ ছবি জনসমক্ষে ছড়িয়ে দিয়েছে। মেয়েদের বন্দি রেখে দাসত্বের সৃষ্টি করেছে।

প্রমিলা প্যাটেন বলেন, সংঘবদ্ধভাবে দমনপীড়ন, গ্রামগুলোয় অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, নির্যাতন, বেসামরিক মানুষদের গলাকাটার মতো ঘটনা ঘটেছে। যৌন সহিংসতাকে রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। শিশুদেরও গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। সীমান্তজুড়ে মিয়ানমার স্থল মাইন স্থাপন করেছে। পালিয়ে আসার সময় তাদের অনেককে গুলি করা হয়েছে। গুলিবিদ্ধ অনেকেই গুরুতর আহত হয়ে বাংলাদেশে এসেছেন। নারী ও শিশুদের সামনেই তাদের পরিবারের সদস্যদের গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। তারা দেখেছেন, তাদের বাড়িঘর ধুলায় মিশিয়ে দেয়া হয়েছে।

জাতিসংঘ মহাসচিবের এ প্রতিনিধি আরও বলেন, কুতুপালং ক্যাম্পে এক নারী আমাকে বলেছেন, তাদের সামনেই শিশু ও স্বামীদের গলাকাটা হয়। এদৃশ্য দেখার পর তারা কাঁদতেও পারেননি। কান্না বন্ধের জন্য তাদের ওপর জবরদস্তি করা হয়।

রোহিঙ্গাদের কেউ কেউ জানিয়েছেন তাদের নাগরিকত্ব দিয়ে সমানাধিকার নিশ্চিত করা হলে নিজ বাড়িতে ফিরে যাবেন। অনেকেই জানিয়েছেন, তারা ফিরে গিয়ে ছাই ছাড়া কিছুই পাবেন না। মেয়েরা তাদের ওপর চালানো নিষ্ঠুরতার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখের পানি ফেলেন। সব নারীই অপরাধীদের বিচার চেয়েছেন।

জাতিসংঘের এ বিশেষ প্রতিনিধি বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের উদারতার ভূয়ষী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ‘আমি কক্সবাজার সদর হাসপাতাল পরিদর্শন করেছি। সেখানে ধারণক্ষমতা হল ২৫০ রোগীর; কিন্তু সেই হাসপাতালে এখন আছেন ৫৭৬ রোগী’। প্রমিলা প্যাটেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীরও প্রশংসা করে বলেন, ‘আমি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ডে অভিভূত। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এসব সদস্যের অনেকেই জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে কাজ করেছেন। সেনাবাহিনীর সদস্যরা শিশুদের মধ্যে দক্ষতার সঙ্গে খাদ্য বিতরণ করেছেন।’

তিনি আরও বলেন, কয়েকজন নারী আমাকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশে আসার পর তারা কয়েক মাসের মধ্যে প্রথম ঘুমাতে পেরেছেন।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গা মেয়েদের আগামী তিন মাসে জেন্ডার ভিত্তিক জরুরি সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে এক কোটি ডলারের তহবিল সংকট আছে। জেন্ডার ইস্যুতে এক কোটি ৩৪ লাখ ডলার সহায়তার জন্য অক্টোবরে আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু দাতাদের কাছ থেকে সাড়া পাওয়া গেছে মাত্র ৩৮ লাখ ডলার। তিনি এ ব্যাপারে দাতাদের কাছ থেকে পূর্ণ সাড়া পাওয়ার আশা করে বলেন, বাংলাদেশের পক্ষে চাহিদা মেটানো বিরাট এক বোঝা হবে।

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: