
যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে ডানপন্থি বিতর্কিত নেতা টমি রবিনসন এর ডাকে আয়োজিত “ইউনাইট দ্য কিংডম” সমাবেশে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার মানুষ অংশ নেয় এ বিক্ষোভে, যেখানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ২৬ জন কর্মকর্তা আহত হয়েছেন, এর মধ্যে চারজন গুরুতর। শনিবার বিকালে হোয়াইটহল ও ট্রাফালগার স্কয়ার এলাকায় সমাবেশে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। পুলিশের নির্দেশ অমান্য করে অংশগ্রহণকারীরা নিরাপত্তা ঘেরাটোপ ভাঙার চেষ্টা করলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সমাবেশকারীরা বোতল, কাচ ও অন্যান্য বস্তু নিক্ষেপ করলে পুলিশের কয়েকজন সদস্য ভাঙা দাঁত, মাথায় আঘাত, কনকাশন, ডিস্ক সরে যাওয়াসহ মারাত্মক চোট পান। এ ঘটনায় পুলিশ অন্তত ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে এবং জানিয়েছে, তদন্তে আরও অনেককে চিহ্নিত করা হবে। মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার ম্যাট টুইস্ট বলেন, অনেকেই শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করতে এসেছিলেন, তবে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্যক্তি কেবল সহিংসতা ছড়াতেই হাজির হয়েছিলেন। তিনি আরও জানান, আমাদের অফিসাররা নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে তাদের ওপর হামলা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। পরিস্থিতি সামাল দিতে রায়ট পুলিশ, ঘোড়া ও কুকুর মোতায়েন করা হয়।
ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাবানা মাহমুদ সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, যারা পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। রবিনসন সমাবেশ ও বক্তৃতা টমি রবিনসন (আসল নাম স্টিফেন ইয়াক্সলে-লেনন) সমাবেশকে “মতপ্রকাশের স্বাধীনতার উৎসব” হিসেবে আখ্যা দেন। বক্তব্যে তিনি দাবি করেন, অভিবাসীদের অধিকারের চেয়ে স্থানীয় জনগণের অধিকার উপেক্ষা করা হচ্ছে। অপ্রত্যাশিতভাবে টেক বিলিয়নিয়ার ইলন মাস্ক ভিডিওলিংকের মাধ্যমে সমাবেশে বক্তব্য দেন। তিনি যুক্তরাজ্যে “অপ্রতিহত অভিবাসন” এর সমালোচনা করে সরকার পরিবর্তনের আহ্বান জানান। টেলিভিশন উপস্থাপক কেটি হপকিন্স, সাবেক অভিনেতা লরেন্স ফক্স এবং টিভি ব্যক্তিত্ব অ্যান্ট মিডলটনও রবিনসনের পাশে মিছিলে যোগ দেন। পালটা সমাবেশ একই সময়ে স্ট্যান্ড আপ টু রেসিজম সংগঠনের নেতৃত্বে প্রায় ৫ হাজার মানুষ পালটা সমাবেশে যোগ দেন। স্বাধীন এমপি ডায়ান অ্যাবট সেখানে বলেন, আমরা জানি বর্ণবাদ ও সহিংসতা নতুন কিছু নয়। কিন্তু ইতিহাস বলে— আমরা সবসময়ই এই বিদ্বেষকে পরাজিত করেছি। দক্ষিণ ওয়েলস থেকে আসা রিহানন ও শ্যারন নামে দুই অংশগ্রহণকারী জানান, এখানে আসা আমাদের দায়িত্ব ছিল, কারণ আমরা চাই না ঘৃণা লন্ডনের পরিচয় হয়ে উঠুক।
রবিনসনের এই সমাবেশ ও সংঘর্ষ যুক্তরাজ্যে অভিবাসন ইস্যুকে ঘিরে ক্রমবর্ধমান বিভাজনকে আরও উসকে দিয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও তদন্ত চলবে এবং সহিংসতায় জড়িতদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।
- বিশেষ প্রতিনিধি (Special National Correspondent) মোঃ সাইদুর রহমান (বাবু)
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: