নিউজ ডেস্ক:
রাতে পুরোপুরি অন্ধকারে ঘুমানো শুধু আরামদায়ক ঘুমই দেয় না বরং এটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতেও সহায়তা করে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় এমনই তথ্য উঠে এসেছে। বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর শীর্ষ কারণ হিসেবে পরিচিত হৃদরোগের সঙ্গে রাতে আলো জ্বেলে ঘুমানোর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক পাওয়া গেছে বলে জানায় অস্ট্রেলিয়ার ফ্লিন্ডার্স ইউনিভার্সিটির মেডিসিন অ্যান্ড পাবলিক হেলথ কলেজের গবেষক দল। তাদের গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে জার্নাল অব দ্য আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (JAMA Network Open) এ। যারা উজ্জ্বল আলোর মধ্যে ঘুমাতেন যেমন শোবার ঘরে সিলিং লাইট জ্বালিয়ে রাখা হয়। তাদের মধ্যে হৃদযন্ত্র বিকল হওয়ার ঝুঁকি ৫৬% বেশি দেখা গেছে। এ ছাড়া ৩২% বেশি করোনারি আর্টারি ডিজিজ এবং ২৮% বেশি স্ট্রোকের ঝুঁকিও পাওয়া গেছে। গবেষক ড. ড্যানিয়েল উইন্ডরেড জানান, আমরা অংশগ্রহণকারীদের আলো এক্সপোজার বা উজ্জ্বলতার মাত্রা মেপেছি। কিন্তু উৎসগুলো আলাদা করতে পারিনি। ভবিষ্যতে বিভিন্ন উৎস যেমন স্ক্রিন, স্ট্রিটলাইট বা ইন্ডোর লাইট বিবেচনা করলে আরও স্পষ্ট সুপারিশ দেওয়া সম্ভব হবে। রাতের আলো মস্তিষ্কে মেলাটোনিন নামক ঘুম উদ্দীপক হরমোনের উৎপাদন বাধাগ্রস্ত করে। ফলে ঘুমের ছন্দ (circadian rhythm) ব্যাহত হয়, যা হৃদযন্ত্র ও রক্তনালীর কার্যক্রমে প্রভাব ফেলে। ঘুমানোর আগে অন্তত চার ঘণ্টা স্ক্রিন ব্যবহার কমানো, উজ্জ্বল আলো বন্ধ রাখা, কিংবা উষ্ণ (warm tone) আলো ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন ঘুম বিশেষজ্ঞ ড. হুলিও ফার্নান্দেজ মেনডোজা। তিনি আরও বলেন, যদি লাইট বন্ধ রাখা সম্ভব না হয় তাহলে কম উজ্জ্বলতা বা লালচে আলো ব্যবহার করুন। উজ্জ্বল অ্যালার্ম ঘড়ি ও জানালার আলো এড়িয়ে চলুন। প্রয়োজনে ব্ল্যাকআউট পর্দা বা চোখে স্লিপ মাস্ক ব্যবহার করুন।
গবেষণায় যুক্ত ছিলেন যুক্তরাজ্যের প্রায় ৮৯ হাজার অংশগ্রহণকারী, যাদের বয়স গড়ে ৬২ বছর। তারা ২০১৩ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে হাতঘড়ি ধরনের সেন্সর ডিভাইস পরে ঘুমের সময় আলোর মাত্রা রেকর্ড করেন। মোট ১ কোটি ৩০ লাখ ঘণ্টা তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ফলাফল বলছে, উজ্জ্বল আলোয় ঘুমানো ব্যক্তিদের মধ্যে হৃদরোগ, হার্ট অ্যাটাক ও অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশনের (A-fib) ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। বিশেষ করে নারী ও তরুণদের ক্ষেত্রে প্রভাব ছিল আরও স্পষ্ট। তবে গবেষকরা বলেন, এটি কেবল সম্পর্ক (association) নির্দেশ করে সরাসরি কারণ (causation) প্রমাণ করে না। তবুও শারীরিক কার্যকলাপ, ধূমপান, অ্যালকোহল গ্রহণ বা ডায়েট সবকিছু বিবেচনায় নেওয়ার পরও ফলাফল তাৎপর্যপূর্ণ ছিল। রাতের সময় অল্প আলোতেও শরীর একে স্ট্রেস হিসেবে গ্রহণ করতে পারে, ফলে হৃদস্পন্দন, হরমোন, রক্তে গ্লুকোজ ও ইনসুলিনের মাত্রা বেড়ে যায়। দীর্ঘমেয়াদে এসব পরিবর্তন হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। সেজন্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ দিচ্ছেন, রাতে যতটা সম্ভব অন্ধকার রাখুন। আলো বন্ধ করুন, স্ক্রিন দূরে রাখুন আর নিশ্চিন্তে ঘুমান। আপনার হৃদয় এর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ দেবে।
-মো: সাইদুর রহমান (বাবু), বিশেষ প্রতিনিধি. অধিকারপত্র

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: