odhikarpatra@gmail.com ঢাকা | Saturday, 22nd November 2025, ২২nd November ২০২৫
১৭৬২ সালের ভূমিকম্পে সেন্টমার্টিন দ্বীপের জন্ম—নতুন গবেষণায় চমকপ্রদ তথ্য

ভয়াল ভূমিকম্পে সমুদ্র থেকে উঠে এলো সেন্টমার্টিন! ১৭৬২ সালের রাতে যেভাবে জেগে উঠেছিল বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ

odhikarpatra | প্রকাশিত: ২১ November ২০২৫ ২০:২৩

odhikarpatra
প্রকাশিত: ২১ November ২০২৫ ২০:২৩

বিশেষ প্রতিনিধি, অধিকার পত্র ডটকম

বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন আজ শান্ত নীল জলরাশি, বালুময় সৈকত আর স্বর্গীয় সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। কিন্তু এই নয়নাভিরাম দ্বীপটির জন্ম হয়েছিল একটি ভয়াবহ, ইতিহাস বদলে দেওয়া ভূমিকম্পের মধ্য দিয়ে—যে ভূমিকম্প দ্বীপটিকে রাতারাতি সমুদ্রের তলদেশ থেকে তুলে আনে।

সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা গেছে, ১৭৬২ সালের ২ এপ্রিলের প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্পই সেন্টমার্টিন দ্বীপের প্রকৃত জন্মদাতা। আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান জার্নাল সায়েন্স ডাইরেক্ট-এ প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়, ভারত ও মিয়ানমার টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে সৃষ্ট শক্তিশালী প্লেটচ্যুতির (plate rupture) কারণে বঙ্গোপসাগরের তলদেশে ঘটে ভয়াবহ পরিবর্তন।

গবেষকদের মতে, সেই ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে প্রায় ৮.৫ বা তারও বেশি—যা ইতিহাসের অন্যতম শক্তিশালী ভূমিকম্প হিসেবে বিবেচিত। ভয়াবহ কম্পনে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার উপকূলজুড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল।

 কীভাবে রাতারাতি জেগে উঠেছিল দ্বীপটি?

ভূমিকম্পের সময় সমুদ্রতলের একটি বিশাল অঞ্চল হঠাৎ উপরে ওঠে—যাকে বলা হয় co-seismic uplift। এই আকস্মিক উত্থানের কারণেই সেন্টমার্টিন ও টেকনাফের বিস্তীর্ণ অংশ, যা আগে ছিল ডুবো চর, তা স্থায়ী ভূমিতে রূপ নেয়।

গবেষকরা প্রমাণ পেয়েছেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপ সেই রাতে প্রায় ১০ ফুট পর্যন্ত উপরে উঠে আসে। প্রবালের বয়স নির্ণয় ও কার্বন পরীক্ষায় নিশ্চিত হয়েছে—আজ যেসব মৃত প্রবালের স্তর দেখা যায়, সেগুলো সেই ভয়াল রাতেরই নিদর্শন। পানির নিচের জীবিত প্রবাল হঠাৎ উঁচু স্থলে উঠে এসে মারা যায়—যা ভূমিকম্পজনিত উত্থানের সরাসরি প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত।

 উপকূল বদলে দিয়েছিল সেই রাত

১৭৬২ সালের ভূমিকম্প শুধু সেন্টমার্টিনকে জন্ম দেয়নি, বদলে দিয়েছিল পুরো দক্ষিণ-পূর্ব উপকূল। কম্পনের পর সৃষ্টি হওয়া জলোচ্ছ্বাসে ব্যাপক প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল বলে গবেষণায় তুলে ধরা হয়েছে।

কেন গুরুত্বপূর্ণ এই গবেষণা?

বিজ্ঞানীরা বলছেন—বাংলাদেশ অঞ্চলে বড় ভূমিকম্পের ইতিহাস, প্লেটচ্যুতি এবং ভবিষ্যৎ ভূমিকম্প ঝুঁকি বোঝার জন্য সেন্টমার্টিন দ্বীপের এই জন্মগাথা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দ্বীপের জন্মই প্রমাণ করে—এই অঞ্চলে বড় ভূমিকম্পের আশঙ্কা এখনও বাস্তব।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: