odhikarpatra@gmail.com ঢাকা | Thursday, 1st January 2026, ১st January ২০২৬
পথিক! তুমি পথ হারাইয়াছ? পথ খুজিয়া সঠিক রাস্তায় উঠতে করতে হবে পরিশ্রম, থাকতে হবে নি:খাদ কমিটমেন্ট ও সততা। পাঞ্জেরী বলেছে, তাহলেই তাড়াতাড়ি অন্ধকার সরে গিয়ে রাত পোহাবে।

২০২৬ সালের নতুন বছরে বাংলাদেশে প্রত্যাশা ও সংশয়ের ছায়ায়: আশার বেলুন, গণতন্ত্রের নাটাই, আর আমজনতার কুয়াশাচ্ছন্ন চশমা

Dr Mahbub | প্রকাশিত: ১ January ২০২৬ ০২:০২

Dr Mahbub
প্রকাশিত: ১ January ২০২৬ ০২:০২

—অধিকারপত্র সম্পাদকীয় ফিচার

নতুন বছরের প্রথম প্রভাতের এই সম্পাদকীয়টিন্যারেটিভ অ্যানালজিক্যাল স্টোরিটেলিংবা বর্ণনামূলক সাদৃশ্যরীতিতে নিপুণভাবে বুনন করা হয়েছে ২০২৬ সালের প্রেক্ষাপটে বঙ্কিম নজরুলের সেই চিরন্তন প্রশ্ন—"পথিক! তুমি পথ হারাইয়াছ?"—কীভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে? আবার কীভাবেই বা তীরে তরী ভিড়বেতা এই লেখায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে মনে রাখবেন, লেখাটি রম্যব্যঙ্গের ছলে লেখাহাসুন, ভাবুন; কাউকে লক্ষ্য করে নয়, কাউকে আঘাত করার জন্যও নয়।

নতুন যাত্রা শুরু: কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে চিরন্তন সেই ডাকে সূর্য ওঠে, কিন্তু আলো কোথায়?

আজ ১ জানুয়ারি, ২০২৬। ক্যালেন্ডারের পাতায় নতুন একটি তারিখ। ক্যালেন্ডারের পাতা ওলটানোর শব্দটা বড্ড যান্ত্রিক, কিন্তু এর ধাক্কাটা বেশ জোরেই লাগে বাঙালির বুকে। ঠিক সকাল ৬টা ৪০ মিনিট। রাজধানী ঢাকার আকাশে কুয়াশার চাদর ভেদ করে ১১৫ ডিগ্রী পূর্ব-দক্ষিণ কোণ থেকে উদিত হলো নতুন বছরের সূর্য। ঢাকার কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশে সূর্য ঠিক সময়েই উঠেছে—১১৫ ডিগ্রি পূর্ব-দক্ষিণ কোণ থেকে, ঘড়িতে তখন সকাল ৬টা ৪০ মিনিট। সূর্যের উদয় আমাদের সময়কে চিহ্নিত করে, কিন্তু সময় কি আমাদের জীবনের দিশা নির্ধারণ করে দিতে পারে?

সূর্য মামা তার ডিউটিতে পাকা, তিনি বিধাতার সৃষ্ট নিয়মেই চলে। ঠিক সময়েই ‘নতুন স্বপ্ন’ বারতা নিয়ে উঁকিঝুঁকি মারেন। কিন্তু এই বাংলারধ রাধামে আমরা যারা আছি, তাদের স্বপ্নগুলো কি আদৌ উঁকি দিতে পারছে, নাকি ট্রাফিক জ্যামে আটকে আছে—সেটাই এখন কোটি টাকার প্রশ্ন। এই দেশ? এই জাতি? আমরা কি আমাদের সঠিক পথে আছি? নাকি পথ হারিয়ে কুয়াশার মধ্যে হাঁটছি, গন্তব্যহীন? ঠিক এই সন্ধিক্ষণে, বঙ্কিমচন্দ্রের সেই ঝাউবনের স্নিগ্ধতা আর ‘কপালকুণ্ডলা’র মায়াবী কণ্ঠ যেন কুয়াশা ভেদ করে ২০২৬-এর বাঙালির কানে ফিসফিস করে বলে উঠছে—‘‘পথিক, তুমি পথ হারাইয়াছো?’’ । এ প্রশ্নটিরই প্রতিধ্বনি আমরা খুঁজে পাই কাজী নজরুল ইসলামের সেই প্রবন্ধে—পথিক! তুমি পথ হারাইয়াছ?”। একসময়ের রোমান্টিক সাহিত্যিক এই বাক্যটিকে রূপ দেন রক্তাক্ত বিপ্লবের আহ্বানে। নতুন বছরের শুরুতে এই প্রশ্নই যেন আবার ছুঁড়ে দেওয়া হয় বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির বুকে।

বঙ্কিমের সেই প্রশ্ন বাঙালির মগজে এক চিরন্তন রোমান্টিক হাহাকার তৈরি করে রাখলেও, আজকের এই ২০২৬-এ দাঁড়িয়ে প্রশ্নটির অর্থ বদলে গেছে। গতকাল বুধবার বিকেল ৫টা ২২ মিনিটে ২৪৫ ডিগ্রী পশ্চিমে যখন ২০২৫-এর শেষ সূর্যটি অস্তমিত হলো, তখন মনে হলো জাতি একটা ‘হাফ ছেড়ে বাঁচল’। ২০২৫ আমাদের ভুগিয়েছে বেশ। কিন্তু আজ নতুন বছরের ভোরে দাঁড়িয়ে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘দুর্দিনের যাত্রী’ প্রবন্ধের সেই হুঙ্কার যেন আমাদের সত্তাকে নাড়িয়ে দিচ্ছে। নজরুল বলেছিলেন, আজকের পথিক নবকুমারের মতো মায়ায় ভুলে পথ হারায় না । তবে কি ২০২৬-এর বাংলাদেশ তার গন্তব্য চিনে নেবে? নাকি আমরা কোনো পাঠাও চালকের মতো ভুল গলিতে ঢুকে কাঁচুমাচু মুখে বলব, ‘‘মামা, ম্যাপটা জানি কেমন করতেছে!’’?

চায়ের কাপে ঝড় তোলা আমার পরিচিত দার্শনিক, ‘আম-জনতা’র প্রতিনিধি কুদ্দুস মিয়া (ছদ্মনাম) আজ সকালে তার ভাঙা চশমা মুছতে মুছতে বললেন, ‘‘বুঝলেন ভাই, নজরুল তো বলেছিলেন পথিকরা ‘ঘরের পথ’ হারিয়ে ‘বনের পথ’ বা ন্যায়ের পথ চিনে নেয় । কিন্তু আমরা তো মনে হচ্ছে ঘর আর বন—দুই পথই হারিয়ে এখন গোলকধাঁধায় ঘুরছি!’’

চলে যাওয়া বছর: জগদ্দল পাথর নামানো সময়

২০২৫ সাল ছিল প্রতীক্ষার, অনিশ্চয়তার, এবং অতৃপ্তির এক দীর্ঘ অধ্যায়। বছরের শেষ সূর্য যখন পশ্চিম দিগন্তে ডুবেছে, তখন দেশের অধিকাংশ মানুষ একটি ক্লান্তির শ্বাস ফেলেছে। “যাও বাবা, বাঁচি!”—এই অনুভূতির মধ্যে দিয়েই মানুষ বিদায় জানিয়েছে একটি জটিল ও অসহনীয় সময়কে। নতুন বছরের প্রত্যাশা তাই কেবল আনুষ্ঠানিক নয়, তা এক গভীর মানবিক প্রয়োজন। ২০২৬ আমাদের কী দেবে—উন্নয়ন, শাসন, স্বাধীনতা? না কি শুধুই নতুন মোড়কে পুরোনো ব্যর্থতা?

ফেব্রুয়ারির কোকিল গণতন্ত্রেরবন-পথ

২০২৬-এর ক্যালেন্ডারের দিকে তাকালেই সবার চোখ আটকে যাচ্ছে ফেব্রুয়ারি মাসে। ফালগুনে কোকিল ডাকবে কি না জানি না, তবে আম জনতা কান পেতে আছে ‘গণতন্ত্রের কোকিল’ ডাকার অপেক্ষায়। নজরুলের ভাষায়, এ যেন সেই ‘‘গহন-বনের তরুণ-পথিক দল’’, যারা বনানী-কুন্তলা ভৈরবীর ডাক শুনে বেরিয়ে এসেছে।

সবার নজর এখন ফেব্রুয়ারির দিকে—জাতীয় নির্বাচন। গণতন্ত্রের এক নতুন অধ্যায়ের সম্ভাবনা নিয়ে হাজির হচ্ছে ২০২৬। সবচেয়ে বড় প্রত্যাশা—ফেব্রুয়ারিতে একটি সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন। আহা! —এই দুটি শব্দই যেন দীর্ঘদিন ধরে আমাদের কাছে সোনার হরিণ। তাই এই শব্দ দুটি শুনলেই কানে যেন মধুর রসের হাড়ি উল্টে পড়ে। নজরুল তার প্রবন্ধে তরুণদের বলেছিলেন, ‘‘আমাদের এ-পথ চির-চেনা পথ—এই বনের বুকে রক্ত-আঁকা পথ’’ । বাংলাদেশের মানুষও ভাবছে, তাদের ভোটের পথটি কি এবার সত্যিই চেনা হবে? নাকি ব্যালট পেপারগুলো আগে থেকেই বাক্সভর্তি হয়ে মুচকি হাসবে?

কুদ্দুস মিয়ার সংশয়, ‘‘ভাই, নজরুল তো বলেছিলেন সিংহ-শার্দূল-শঙ্কিত কণ্টক-কুন্ঠিত বিপথে আমাদের চলা । আমাদের রাজনীতির মাঠও তো বাঘ-সিংহে ভরা জঙ্গল। এই জঙ্গলে আম-জনতা কি কেবলই নবকুমার, নাকি তারা নজরুলের সেই ‘রক্ত-পথিকের দল’ হয়ে উঠতে পারবে?’’ নির্বাচন নিয়ে বাঙালির রোমান্টিসিজমের শেষ নেই, কিন্তু এবারের খেলাটা ভিন্ন। আম্পায়ার কি ঠিক থাকবেন, নাকি তিনিও ফিল্ডিং করতে নেমে যাবেন? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়েই মনে হয়—পথিক, তুমি সত্যিই পথ হারাইয়াছ?

বাজার সিন্ডিকেট: জঙ্গলের হিংস্র শ্বাপদ

দ্রব্যমূল্যের আগুন আমাদের মধ্যবিত্তকে টিকে থাকার লড়াইয়ে ফেলে দিয়েছে। পেঁয়াজ, ডিম, কাঁচামরিচ—এসব হয়ে উঠেছে বিলাসপণ্য। বাজার যেন এক ‘নিলামঘর’—দোকানদার দাম হাঁকায়, ক্রেতা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।

নতুন বছরে মানুষের দ্বিতীয় বড় প্রত্যাশা—দ্রব্যমূল্য হাতের নাগালে থাকা। নজরুলের প্রবন্ধে বনের বুকে যেমন ‘‘সিংহ-শার্দূল’’ ওৎ পেতে থাকে, তেমনি আমাদের কাঁচাবাজারে ওৎ পেতে আছে সিন্ডিকেট নামক অদৃশ্য দানব। লুসিফারের যেমন স্বর্গ হাতের নাগালে নয়, তেমনি মধ্যবিত্তের জন্য পেঁয়াজ-মরিচ-ডিম এখন ‘বিলাসদ্রব্য’।

গত বছর বাজারে গেলে মনে হতো আমরা কোনো নিলাম ঘরে ঢুকেছি। দোকানদার দাম হাঁকেন, আর আমরা দীর্ঘশ্বাস ফেলি। নজরুলের সেই ‘‘হাটের পথিকের পায়ে-চলার পথ’’ আমাদের জন্য নয়, আমাদের চলতে হচ্ছে সিন্ডিকেটের কাঁটা বিছানো পথে। ২০২৬-এ মানুষ আশা করছে, অন্তত ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে থাকা যাবে। কিন্তু আমাদের দেশের সিন্ডিকেটগুলো ফিনিক্স পাখির মতো—ভস্ম থেকে বারবার জেগে ওঠে। সরকার বদলায়, বছর বদলায়, কিন্তু সিন্ডিকেটের সদস্যদের স্বাস্থ্য বদলায় না। তবুও আশা, নতুন বছরে ইলিশ মাছের দিকে তাকালে হার্ট অ্যাটাক হবে না।

মব জাস্টিস: আধুনিক কাপালিকের রক্ত-তিলক

গত বছর আমরা এক অদ্ভুত সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত হয়েছি—‘মব জাস্টিস’ বা গণপিটুনি। নজরুলের লেখার সেই ভয়ংকর চিত্রকল্প যেন আমাদের রাজপথে জীবন্ত হয়ে উঠেছে। ‘‘অদূরে কাপালিকের রক্ত-পূজার মন্দির। মন্দিরে রক্ত-ভুখারিনির তৃষ্ণাবিহ্বল জিহ্বা দিয়ে টপটপ করে পড়ছে কাঁচা খুনের ধারা’’ ।

আজকের বাংলাদেশে যখন পান থেকে চুন খসলেই ‘‘ধর ধর’’ বলে ঝাঁপিয়ে পড়ে পিটিয়ে মানুষ মারা হয়, তখন মনে হয় আমরা কি সেই কাপালিকের যুগেই ফিরে গেলাম? যেখানে ‘‘কাপালিকের খড়্গ আর একবার নৃত্য করে উঠল’’ এবং বিচার নয়, কেবল বলিদানই শেষ কথা। ২০২৬-এ এই আদিম প্রবৃত্তি থেকে মুক্তি চায় বাংলাদেশ। মানুষ চায়, বিচার হবে আদালতে, ফুটপাথে নয়।

নজরুলের ভাষায়, ‘‘মন্দিরের শুভ্র বেদি রক্তে ভেসে গেছে’’ —আমাদের রাজপথও রক্তে ভেসেছে অনেক। কিন্তু এই রক্ত কি ন্যায়ের জন্য, নাকি কেবলই হিংস্রতার বহিঃপ্রকাশ? কুদ্দুস মিয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, ‘‘ভাই, নজরুল তো বলেছিলেন ‘এই বনের পথই আমাদের চির চেনা পথ’, কিন্তু সেই পথ কি কাউকে পিটিয়ে মারার পথ? আমরা কি তবে পথ হারিয়ে অন্ধকারের যাত্রী হলাম?’’

কুদ্দুসের মতো এ দেশের াধিকাংশ মানুষেরই প্রত্যাশা, “পকেটমার ধর!”—এই ডাকের পরেই এক ব্যক্তি গণপিটুনিতে মৃত। আমরা এমন সমাজে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি, যেখানে বিচার হয় ফুটপাথে। আইনের প্রতি আস্থা না থাকলে জনগণ নিজেরাই বিচারক হয়ে ওঠে। ২০২৬ সালে এই প্রবণতা বন্ধ করতে হবে। বিচার হোক আদালতে, জনতার রোষে নয়।

হ্যান্ডসাম পে-স্কেল আমলাতান্ত্রিক গোলকধাঁধা

সরকারি কর্মজীবীদের দীর্ঘশ্বাস বাতাসে ভারী হয়ে আছে। তাদের দাবি একটি ‘হ্যান্ডসাম পে-স্কেল’। শব্দটি লক্ষ্য করুন—‘হ্যান্ডসাম’। কিন্তু ডিজিটাল বাংলাদেশের ফাইলে ফাইলে ঘুরতে ঘুরতে এই দাবিটিও যেন পথ হারিয়েছে। ২০২৫-এর ডিজিটাল বাংলাদেশে দাঁড়িয়ে কেউ যদি আপনাকে পে-স্কেলের খবর জিজ্ঞেস করে, তবে নিশ্চিত থাকুন—সেটি কোনো মহৎ সাহিত্যের অংশ নয় । বড়জোর কোনো কেরানি কাঁচুমাচু মুখে বলবে, ‘‘স্যার, ফাইলটা জানি কোন টেবিলে আটকে আছে!’’

বাজারের আগুনের সাথে পাল্লা দিতে গিয়ে সরকারি চাকুরেদের জিব বেরিয়ে যাওয়ার দশা। তারা আশা করছেন, সরকার এবার তাদের দিকে একটু সদয় দৃষ্টি দেবেন। কিন্তু ফাইল চালাচালির দৌড়ে পে-স্কেল যেন কচ্ছপ না হয়ে খরগোশ হয়, এটাই তাদের মিনতি।

শিক্ষকের মর্যাদা: সুন্দরের আঘাতে মৌন পথিক

শিক্ষকের মর্যাদা আজ প্রশ্নবিদ্ধ। শিক্ষকদের মর্যাদা নিয়ে কথা বলতে গেলে গলার দলা পাকিয়ে আসে। যে দেশে শিক্ষককে কান ধরে ওঠবস করানো হয়, সে দেশে ‘মানুষ গড়ার কারিগর’ কথাটিই একটি নির্মম পরিহাস। নজরুলের প্রবন্ধে বলা হয়েছে, ‘‘সেদিন দিশেহারা পথিকের মুখে উত্তর জোগায়নি। সুন্দরের আঘাতে পথিকের মুখে কথা ফোটেনি’’ । আজ আমাদের শিক্ষকরাও তেমনি অপমানে, লজ্জায় মৌন, নির্বাক।

২০২৬-এ এক মহা গুরুত্বপূর্ণ জোর দাবি—শিক্ষকদের হৃত গৌরব ফিরিয়ে দিতে হবে। ক্লাসরুমে শিক্ষক ঢুকলে ছাত্ররা শ্রদ্ধায় দাঁড়াবে, ভয়ে নয়। নজরুল যেমন তরুণদের আহ্বান করেছিলেন, ‘‘উত্তর দে মায়ের পূজার বলির নির্ভীক শিশু!’’ —তেমনি ছাত্রদেরও আজ উত্তর দিতে হবে, তারা কি শিক্ষকের সম্মান রক্ষায় এগিয়ে আসবে? নাকি টিকটক আর রিলসের জমানায় শিক্ষকের অপমান কেবলই কন্টেন্ট হয়ে থাকবে? ২০২৬-এর দাবি—শিক্ষাক্ষেত্রে ন্যূনতম শ্রদ্ধার পরিবেশ নিশ্চিত করা হোক। জিপিএ-৫ পাওয়ার দৌড়ে যারা সর্বোচ্চ সচেষ্ট, তারা যেন শিক্ষকের প্রতি ন্যূনতম শ্রদ্ধা দেখাতে শেখে।

প্রতিবন্ধীদের স্বপ্ন স্পেশাল বিসিএস: অগ্নিরথযাত্রী দল

রাষ্ট্রের একটি বড় অংশ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা। আদালতের রায় আছে, কোটা আছে, কিন্তু চাকরি নেই। নজরুলের ‘‘অগ্নিরথ-যাত্রীদলের’’ মতো তারাও উঁচুতে উঠতে চায়। শারীরিক সীমাবদ্ধতাকে জয় করে যারা মেধার স্বাক্ষর রাখছে, রাষ্ট্র যদি তাদের অবহেলা করে, তবে সে রাষ্ট্রকে ‘জনবান্ধব’ বলা চলে না।

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য রাষ্ট্রীয় নিয়োগে কোটা থাকলেও বাস্তবে তা কার্যকর নয়। ২০২৬ সালে রাষ্ট্র যদি সত্যিকারের জনবান্ধব হতে চায়, তবে এদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। কুদ্দুস মিয়ার ভাষায়, ‘‘ভাই, যার হাত নেই সে কলম ধরতে চায়, আর যাদের হাত আছে তারা সেই হাত দিয়ে ঘুষ খায়। বিচারটা করবে কে?’’ ২০২৬-এ তাদের প্রত্যাশা, আদালতের রায় অনুযায়ী তাদের প্রাপ্য চাকরিটুকু বুঝিয়ে দেওয়া হবে। তাদের প্রতি এ অবিচার দূর করতে না পারলে নৈতিকতার মাপকাঠিতে আমরা সবাই ফেল করব। তারা যেন বলতে পারে, ‘‘মাভৈঃ! আমরা পথ হারাই না!’’ ।

দুর্নীতি, ডিজিটাল দুর্বৃত্তায়ন নিরাপত্তা: সংশয়ের কালো মেঘ

দুর্নীতি দূর হবে—এই বাক্যটি আমরা ছোটবেলা থেকে রচনা হিসেবে লিখে আসছি। কিন্তু বাস্তবে দুর্নীতি আর আমাদের সমাজ যেন ‘দুধ ও জলের’ মতো মিশে আছে। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ থেকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ হওয়ার পথে দুর্নীতিটাও স্মার্ট হয়ে গেছে।

আমরা এখন স্মার্ট বাংলাদেশে প্রবেশ করছি। কিন্তু স্মার্ট ফোনের মতোই কি দুর্নীতিও স্মার্ট হয়ে যাচ্ছে? অফিসে খামে টাকা দেওয়ার বদলে এখন হয়তো এনক্রিপ্টেড ওয়ালেটেই ঘুষ যায়! সাধারণ মানুষ চায় তার পরিশ্রমের ট্যাক্স যেন রাষ্ট্র সঠিক খাতে ব্যয় করে। দুর্নীতির ভয়াল থাবা থেকে রাষ্ট্র যদি মুক্ত না হয়, তাহলে উন্নয়নের ভিশন কেবল পোস্টারেই শোভা পাবে।

রাতে বাসা থেকে বের হতে হলে ভরসা নয়, ভয় হয় বেশি। কিশোর গ্যাং, ছিনতাইকারী, আর রাজনৈতিক গুন্ডামি—সব মিলে নগরবাসীর জীবন হয়ে উঠেছে অনিশ্চিত। ২০২৬-এর পুলিশ বাহিনী এমন হোক, যারা রক্ষক, ভক্ষক নয়। রাষ্ট্র হোক জনগণের বন্ধু। জনতার কণ্ঠস্বর যেন শোনা যায়, দমন নয়।

নিরাপত্তার প্রশ্নেও জনমনে ভীতি। রাতে বের হলে ছিনতাইকারী আর কিশোর গ্যাং-এর ভয়। মনে হয়, নজরুলের সেই ‘‘তিমির হৃদয়-বিদারন জলদগ্নি নিদারুণ’’ পরিবেশ চারপাশ ঘিরে আছে। ২০২৬-এ আমরা চাই এমন একটি পুলিশ বাহিনী, যাদের দেখলে ভরসা পাব, ভয় নয়। সরকার হবে জনবান্ধব। ইঁদুর-বিড়াল খেলা বন্ধ হোক। বেকার যুবকের দীর্ঘশ্বাসে বাতাস ভারী না হোক।

গণতন্ত্রের যজ্ঞে শিক্ষার আহুতি: ২০১৪- দগদগে স্মৃতি ইতিহাসের কালো দলিল

পুনরাবৃত্তি রোধ করাই এখন বড় দায়! ২০২৬-এর নির্বাচন নিয়ে আমরা যখন আশার রঙিন বেলুন ফোলাচ্ছি, তখন কুদ্দুস মিয়ার কপালে গভীর চিন্তার ভাঁজ। আকাশের দিকে তাকিয়ে তিনি যেন ১৪ সালের সেই কালো ধোঁয়া দেখতে পাচ্ছেন। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, ‘‘ভাই, রাষ্ট্র যেন ২০১৪-র সেই ৫ই জানুয়ারির বিভীষিকা ভুলে না যায়। রাজনীতির দাবা খেলায় সেবার রাজায়-রাজায় যুদ্ধ হলো, আর ‘চেকমেট’ হলো আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম।’’

কুদ্দুস মিয়ার স্মৃতি আজও দগদগে। তিনি বলেন, ‘‘সেবার টিভিতে ব্রেকিং নিউজ দেখলাম—দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। ভাবছিলাম কারও বাড়ি পুড়ছে, পরে দেখি ওগুলা স্কুল!’’ আমরা ভুলে যাই, যা একদিনের ‘পোলিং স্টেশন’, তা বাকি ৩৬৪ দিন ‘মানুষ গড়ার ল্যাবরেটরি’। অথচ ভোট ঠেকানোর জেদে বা নির্বাচন বানচালের নামে সেই ‘ল্যাবরেটরি’গুলোকেই জ্বালিয়ে দেওয়া হলো। রাজনীতির আগুনে আমরা মানুষকে পুড়তে দেখেছি, কিন্তু ৫৫৩টি বিদ্যাপীঠ যখন ছাই হলো, তখন আসলে পুড়ে গেল জাতির মেরুদণ্ড। আগুনের লেলিহান শিখা হয়তো নিভেছে, কিন্তু লাখ লাখ শিশুর শিক্ষাজীবনে যে ‘লার্নিং লস’ বা অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে, তা আজও কিশোর মনে দগদগে ঘায়ের মতো। কুদ্দুস মিয়ার প্রশ্ন—‘‘পথিক যদি তার মানচিত্র তৈরির কারখানাই জ্বালিয়ে দেয়, তবে সে পথ চিনবে কী করে?’’

কুদ্দুস মিয়ার হাতে যেন ইতিহাসের আরেকটি কালো দলিল। তিনি মনে করিয়ে দিলেন ২০১৪ সালের ২৯ এপ্রিল প্রকাশিত আন্তর্জাতিক মহলের সেই লোমহর্ষক সতর্কবার্তাগুলোর কথা। একদিকে ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’-এর প্রতিবেদন ‘‘বাংলাদেশ: ইলেকশনস স্কার্ড বাই ভায়োলেন্স’’, যেখানে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলা হয়েছিল—নির্বাচনকালীন এই অমানবিক নির্যাতনের দায় সরকার এবং বিরোধী দল, কেউই এড়াতে পারে না। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ডেমোক্রেসি ইন দ্য ক্রসফায়ার-এর ৬০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন, যেখানে ২০১৪-র নির্বাচনকে আখ্যা দেওয়া হয়েছিল দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে সহিংস অধ্যায় হিসেবে। শত শত প্রাণ আর রক্তাক্ত জনপদের সেই স্মৃতি আজও ‘পলিটিক্যাল ম্যাসাকার’ বা রাজনৈতিক হত্যাযজ্ঞের অশনিসংকেত দেয়।

২০২৬-এর দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে কুদ্দুস মিয়া তাই চশমাটা ঠিক করে ধদৃঢ় গলায় বললেন, ‘‘অনেক হয়েছে ভাবনা (Enough thinking)’’ এখন আর গোলটেবিল বৈঠক বা চায়ের কাপে ঝড় তোলার সময় নেই। এখন সময় সেই ‘করুণ ইতিহাস’ থেকে শিক্ষা নিয়ে ‘স্ট্র্যাটেজিক অ্যাকশন’ বা কৌশলগত পদক্ষেপ নেওয়ার। রাষ্ট্র যদি প্রতিটি নাগরিকের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়, তবে ২০২৬-এর ভাগ্যও ২০১৪-র মতো অন্ধকারের চোরাবালিতে হারাতে পারে।

কুদ্দুস খুবই বিঞ্জের মতো চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বলে, আজকের রাজনৈতিক বাতাবরণ যেন সেই ২০১৪-রই অশনিসংকেত দিচ্ছে, যা আমাদের স্মৃতির মণিকোঠায় ভয়ের কাঁপুনি ধরায়। যদি এখনই ‘স্ট্র্যাটেজিক অ্যাকশন’ বা কৌশলগত পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, যদি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়ে এবং রাষ্ট্র প্রতিটি নাগরিকের জন্য সমান অধিকার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হয়—তবে আবারও এক ‘পলিটিক্যাল ম্যাসাকার’ বা রাজনৈতিক হত্যাযজ্ঞ দেশের অগ্রযাত্রাকে ধূলিসাৎ করে দিতে পারে। ২০২৬ সাল তাই আমাদের যেন ফিসফিসিয়ে বলতে চাচ্ছে—”সাবধান! পথিক, আর ভুল পথে পা বাড়ানো সাজে না। অনেক হয়েছে ভাবনা (Enough thinking), এবার সেই ভাবনাকে কাজে পরিণত করে বিপর্যয় ঠেকানোর পালা।” কিন্তু কুদ্দুসের মতে রা্জনীতির মাহাসড়কের পথিকরা ক্লান্ত পরিশ্রান্ত হয়ে সে সতর্কবর্তা যেনো শুনতেই পাচ্ছে না। পথিক তাই আমাদের চূড়ান্ত অঙ্গীকার হোক—ব্যালট পেপারের লড়াইয়ে যেন আর কোনো শিশুর বর্ণমালা পুড়ে ছাই না হয়। পথিক যেন এবার আর পথ না হারায়, যেন গণতন্ত্র রক্ষা করতে গিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আর ‘বলির পাঁঠা’ হতে না হয়। ২০২৬ আমাদের আঙুল উঁচিয়ে বলছে—সাবধান! ভুলের পুনরাবৃত্তি মানেই ধ্বংস।

পাঞ্জেরীর ডাক: শ্রম সততার নতুন ইশতেহার

‘‘পথিক! তুমি পথ হারাইয়াছ?’’—কুয়াশার চাদরে ঢাকা ২০২৬-এর ভোরে এই প্রশ্নটি যখনই কানে ভাসে, তখন বঙ্কিমের রোমান্টিকতা ম্লান হয়ে ফররুখ আহমেদের ‘পাঞ্জেরী’র দরাজ কণ্ঠই যেন বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে। পথ খুঁজিয়া সঠিক রাস্তায় উঠতে হলে শর্টকাটের চোরাবালি নয়, ধরতে হবে কণ্টকাকীর্ণ সাধনার পথ। পাঞ্জেরী তো বলেই দিয়েছেন, অলস স্বপ্নের পাল তুলে বসে থাকলে ‘ভুল জলধিতে’ কেবল পথই হারাতে হবে; রাত পোহাতে হলে চাই হাড়ভাঙা পরিশ্রম, নিখাদ কমিটমেন্ট আর সততার বৈঠা বাওয়ার অদম্য সাহস।

আমাদের জাতীয় জীবনের এই সন্ধিক্ষণে, সততাই সেই ধ্রুবতারা, যা বিভ্রান্ত পথিককে দিশা দেখায়। দুর্নীতির আফিমে বুঁদ হয়ে থাকার কাল শেষ; এখন জেগে ওঠার পালা। পাঞ্জেরীর সেই অমোঘ বাণী—‘‘রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরী?’’—এর উত্তর লুকিয়ে আছে আকাশপানে চেয়ে থাকায় নয়, বরং আমাদের কর্মস্পৃহায়। যখনই প্রতিটি নাগরিক তার নিজের অবস্থানে দাঁড়িয়ে সততার শপথ নেবে, যখন ঘাম আর শ্রমের বিনিময়ে গড়ে তুলবে নতুনের ভিত, ঠিক তখনই অন্ধকারের জঞ্জাল সরে গিয়ে দিগন্তে দেখা দেবে কাঙ্ক্ষিত ভোরের রক্তিম সূর্য। ভুলের মাশুল দিয়ে, সংশয়ের মেঘ কাটিয়ে ২০২৬-এ আমরা সেই সোনালী ভোরের প্রত্যাশায় বাজি ধরব—কারণ পরিশ্রমী পথিকের পায়ের নিচেই পথের জন্ম হয়, আর সততার আলোতেই কেটে যায় দীর্ঘতম অমানিশা।

কল্যাণ ন্যায়ের প্রত্যাশা: আধুনিকফাসাদবনাম রুহানি ইশতেহার

কুদ্দুস মিয়া চশমার গ্লাসটা মুছতে মুছতে এবার এক গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। বললেন, ‘‘ভাই, শুধু ভোট আর সরকার বদলই কি সব? আত্মার বদল না হলে তো সবই মিছে!’’ ২০২৬-এর এই মাহেন্দ্রক্ষণে আমাদের প্রত্যাশা কেবল রাজনৈতিক নয়, বরং আত্মিক ও নৈতিক। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তো স্পষ্টই নির্দেশ দিয়েছেন—ন্যায়বিচার ও ‘ইহসান’ বা সর্বশ্রেষ্ঠ কল্যাণ প্রতিষ্ঠার (সূরা নাহল ১৬:৯০)। কিন্তু আমাদের সমাজটা যেন উল্টো রথে চলছে।

এখানে ধর্মের আনুষ্ঠানিকতার কমতি নেই, কিন্তু বড় অভাব মাওলানা রুমির সেই দর্শনের—যেখানে সৃষ্টির সেবা ছাড়া স্রষ্টার সন্ধান অর্থহীন। কুদ্দুস মিয়ার ভাষায়, ‘‘আমরা টুপি-পাঞ্জাবি পরে ঠিকই ইবাদত করি, কিন্তু অফিস-আদালতে বসে কলমের খোঁচায় যখন গরিবের হক মারি, তখন কি সেই ইবাদত কবুল হয়?’’ বর্তমান বাংলাদেশে আত্মকেন্দ্রিক ভোগবাদ আর ক্ষমতার অপব্যবহার মিলে এক ধরনের ‘আধুনিক ফাসাদ’ বা বিপর্যয় তৈরি করেছে। বিড়ম্বনা হলো, যারা দুর্নীতি আর লুটপাটের মাধ্যমে এই ফাসাদ সৃষ্টি করছে, তারাই আবার সাধু সেজে দাবি করছে—‘‘আমরা তো কেবল সংশোধনকারী!’’ ঠিক যেমনটি সূরা বাকারায় (২:১১) সাবধান করা হয়েছে।

২০২৬-এ আমাদের আকুতি—এই ভণ্ডামির মুখোশ খসে পড়ুক। রাষ্ট্রপরিচালনা কেবল ক্ষমতার দম্ভ না হয়ে উঠুক ‘খিলাফাহ’ বা মহান দায়িত্বের প্রতিফলন। যেখানে আত্মার পরিশুদ্ধি (রুমি) আর সমাজের পরিশুদ্ধি (কোরআন) এক মোহনায় মিলবে। পথিক যেন তার হারানো নৈতিক ‘কম্পাস’ খুঁজে পায়, যেন বোঝে—কল্যাণ ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা ছাড়া কেবল উন্নয়নের বুলি আওড়ানো মানেই পথ হারানো।

নব প্রত্যাশা: পথ হারাই নাই দেবী!

“এ দেশে কিছু হবে না”—এই বাক্যটি এখন তরুণদের মন্ত্র। হাজার হাজার মেধাবী তরুণ বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন, হয়তো চিরদিনের জন্য। বেকারত্ব, অনিশ্চয়তা, আর রাজনৈতিক সংকটে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে জন্ম নিয়েছে এক গভীর হতাশা। রাষ্ট্র যদি তাদের ধারণে না পারে, তবে এ দেশ তার ভবিষ্যৎ হারাবে।

এবার কুদ্দুস কন্ঠস্বর পরিবর্তন করে আশার আলো জ্বালিয়ে চকচকে চোখে বলতে শুরু করে, “এতক্ষণ তো সংশয় আর হাহাকারের কথা বললাম। কিন্তু মুদ্রার উল্টো পিঠটাও দেখতে হবে।” এ প্রসঙ্গে নজরুল যেমন বলেছিলেন, ‘‘নিবিড় অরণ্য। তারই বুকে দোলে, দোলে, মহিরুহ সব দোলে... দোলে তারা সবুজ খুনের তেজের বেগে’’ । বাংলাদেশের তরুণরাও সেই তেজের বেগে দুলছে।

লেখাটা শেষ করার আগে আবার ফিরে যাই সেই ১লা জানুয়ারির সকালের সূর্যটার দিকে। আমরা, বাংলাদেশের মানুষগুলো বড্ড অদ্ভুত। আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেলে আমরা স্প্রিংয়ের মতো লাফিয়ে উঠি। হাজারও সমস্যা, দুর্নীতি, আর হতাশার মধ্যেও আমরা স্বপ্ন দেখি।

২০২৬ সালে দাঁড়িয়ে যদি ‘ভৈরবী রূপসি’ বা সময় আমাদের আবার জিজ্ঞাসা করে, ‘‘পথিক! তুমি পথ হারাইয়াছ?’’ —তবে আমরা যেন নজরুলের সেই অগ্নিরথ-যাত্রীদলের মতো বুক ফুলিয়ে উত্তর দিতে পারি: ‘‘পথ হারাই নাই দেবী! ওই খড়্গ-চিহ্নিত রক্ত-পথই শিব জাগাবার পথ।’’

হয়তো আমরা ‘ঘরের পথ’ হারিয়েছি, আরাম-আয়েশের পথ হারিয়েছি, কিন্তু ‘বনের পথ’ বা ন্যায়ের পথ হারাইনি । ২০২৬ সালটা হবে সেই হারানো পথ ধরে গন্তব্যে পৌঁছানোর বছর। কুদ্দুস মিয়া চা-টা শেষ করে কাপটা নামিয়ে রাখলেন। বললেন, ‘‘শোনেন ভাই, আশায় বাঁচে চাষা, আর স্বপ্ন দেখে খাসা। দেশটা তো আমাদেরই। তাই সংশয় থাকুক পকেটে, আশা থাকুক বুকে।’’

হ্যাঁ, কুদ্দুস মিয়ারা আছে বলেই বাংলাদেশ আছে। অনিশ্চয়তার ঘোর অমানিশা ভেদ করে ২০২৬ সালে বাংলাদেশ তার কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছাবে—এটাই আমাদের একমাত্র প্রার্থনা।

নতুন ২০২৬ সালের প্রভাতে একটি ছোট্ট মিনতি রেখে যাই

হাসুন, ভাবুন; কিন্তু অপমান নয়, সংলাপই হোক আমাদের পথ

শুভ নববর্ষ ২০২৬!

প্রফেসর মাহবুব লিটু, উপদেষ্টা সম্পাদক, আমাদের অধিকারপত্র (odhikarpatranews@gmail.com)

#বাংলাদেশ২০২৬ #গণতন্ত্রেরনাটাই #রম্যসম্পাদকীয় #Bangladesh2026 #EditorialSatire #HopeAndDemocracy



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: