ঢাকা | রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২

বিশ্বকাপে ফাইনাল খেলার স্বপ্ন অবশেষে ইংল্যান্ড ও ক্রোয়েশিয়ার সামনে

Mahbubur Rohman Polash | প্রকাশিত: ১০ জুলাই ২০১৮ ১৬:৪১

Mahbubur Rohman Polash
প্রকাশিত: ১০ জুলাই ২০১৮ ১৬:৪১

 

বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের তিক্ত অভিজ্ঞতাকে পিছনে ফেলে দীর্ঘ সময় পরে ইংল্যান্ড ও ক্রোয়েশিয়ার সামনে সুযোগ এসেছে স্বপ্নের ফাইনাল নিশ্চিত করার।
১৯৯০ সালে সর্বশেষ ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলেছিল। কিন্তু পেনাল্টি শ্যুট আউটে তুরিনে জার্মানীর কাছে পরাজিত হয়ে বিদায় নেয়। আট বছর পরে স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার পর প্রথমবার বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে ক্রোয়েশিয়া স্বাগতিক ফ্রান্সের কাছে সেমিফাইনালে পরাজয়ের স্বাদ পায়। ২৮ বছর আগে ইতালির ঐ বিশ্বকাপে গ্যারি লিনেকার, পল গ্যাসকোয়েনরা ইংল্যান্ডকে সেমিফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছিল। অন্যদিকে ম্যানেজার মিরোস্লাভ ব্লাজেভিচের অধীনে ক্রোয়েশিয়া যখন শেষ চারে পৌঁছায় তখন তা বেশ অপ্রত্যাশিতই ছিল।
রাশিয়ায় দুই দল যখন সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে তখন অতীত কোন স্মৃতি সামনে আনতে চাচ্ছেনা। যদিও ক্রোয়েশিয়ান খেলোয়াড়দের প্রতিনিয়ত ১৯৯৮’র প্রজন্মের সাথে তুলনা করা হচ্ছে। কিন্তু মিডফিল্ডার ইভান রাকিটিচ বলেছেন, ‘১৯৯৮ সালে যা হয়েছিল আমরা তেমনভাবে নিজেদের ওপর কোন চাপ সৃষ্টি করতে চাচ্ছিনা। তারা যা করেছে তা দুর্দান্ত ছিল। কিন্তু আমরা নিজেদের ইতিহাস নিজেরাই রচনা করতে চাই। যা কিছু ইতিবাচক সেগুলোই আমরা উপভোগ করতে চাই। ’
১৯৯০ সালে ইংল্যান্ডের পরাজয় এবং একইসাথে ১৯৬৬ সালের পরে ৫২ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মত বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন, এসবই এখন ইংল্যান্ডকে নতুন ভোরের ইঙ্গিত দিচ্ছে। কিন্তু ইংলিশ ডিফেন্ডার এ্যাশলে ইয়ং এসমস্ত অতীত পিছনে রেখেই এগুতে চান, ‘এই মুহূর্তে কি হচ্ছে আমরা এখন সেগুলো নিয়ে মনোযোগী হতে চাই, অতীতে কি হয়েছে তা নিয়ে নয়। আমরা ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আছি।’
একইসাথে তিনি আরো বলেছেন সেমিফাইনালে লুকাস মড্রিচদের দিকে না তাকিয়ে নিজেদের যোগ্যতার দিকেই বেশী গুরুত্ব দেয়া উচিত। সুইডেনকে কোয়ার্টার ফাইনালে ২-০ গোলে পরাজিত করে শেষ চার নিশ্চিত করেছিল ইংল্যান্ড। ২০০৪ সালের ইউরোর গ্রুপ পর্বের পরে বড় কোন টুর্ণামেন্টে এই প্রথম ইংল্যান্ড ক্রোয়েশিয়ার মুখামুখি হচ্ছে। ঐ ম্যাচটিতে থ্রি লায়ন্সরা ৪-২ গোলে জয়ী হয়েছিল। এই নিয়ে চারবারের মোকাবেলায় দুই দলই দুটি করে ম্যাচ জিতেছে। তবে ২০০৭ সালে ইংল্যান্ডের ৩-২ গোলে পরাজিত হওয়াটা ছিল দারুন হতাশার। ঐ ম্যাচে পরাজিত হয়েই ইংল্যান্ড ২০০৮ ইউরো খেলতে ব্যর্থ হয়েছিল।
এ পর্যন্ত বিশ্বকাপের ম্যাচগুলোর নিরিখে মড্রিচকে রাশিয়া অন্যতম সেরা খেলোয়াড় হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। কিন্তু ৩৩ বছর বয়সী ইয়ং বলেছেন মড্রিচকে আটকানোর জন্য ম্যাচের সব গুরুত্ব সেদিকেই রাখাটা মোটেই বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। তার চেয়ে বরং নিজেদের খেলার উপর মনোনিবেশ করতে হবে। ম্যাচ পূর্ববতী সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, ‘তারা কোন কারন ছাড়া সেমিফাইনালে খেলতে আসেনি। তাদের দলে মড্রিচের মত একজন অসাধারণ খেলোয়াড় রয়েছে। মোট কথা সব জায়গায় তারা দারুন খেলছে। সে কারনেই প্রতিপক্ষ হিসেবে তারা অত্যন্ত কঠিন। আমাদের তাদের প্রতি বেশী মনোযোগী হলে চলবে না। নিজেদের খেলা নিয়ে চিন্তা করতে হবে। ম্যাচে জয়ী হতে হলে আমরা আসলে কি করতে পারি।’
সেমিফাইনালে পথে ক্রোয়েশিয়া ডেনমার্ক ও স্বাগতিক রাশিয়ার বিপক্ষে দুটি পেনাল্টি শ্যুট আউট রক্ষা করেছে। ১৯৯৮ সালে ফ্রান্স বিশ্বকাপে তৃতীয় স্থান অর্জণ করার পরে এটাই তাদের সর্বোচ্চ সাফল্য। নক আউট ম্যাচগুলোতে ঐ ধরনের নার্ভাস পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার মানসিকতা সেমিফাইনালে কাজে আসবে বলে বিশ্বাস করেন রাকিটিচ। ১৯৮২ সালের পরে বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথমবারের মত দুটি ইউরোপীয়ান দেশকে হারানোর সুযোগ এখন ইংল্যান্ডের সামনে। বার্সেলোনা তারকা রাকিটিচ বলেছেন, আমাদের সেই শক্তি আছে। আমরা মাঠে বেশ সংঘবদ্ধ ভাবে খেলছি। সেমিফাইনালে পৌঁছানোয় আমরা বেশ গর্বিত ও খুশী। কিন্তু আমরা এখানেই থামতে চাইনা। ক্রোয়েশিয়ার মত একটি ছোট দেশের জন্য এটা দুর্দান্ত একটি ফল।
পেশীর ইনজুরি কাটিয়ে জর্ডান হেন্ডারসনের খেলা এখনো অনিশ্চিত। আর এটাই ইংল্যান্ডের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। লুকা মড্রিচ, রাকিটিচদের নিয়ে সাজানো ক্রোয়েশিয়ার মধ্যমাঠকে সামলানোর জন্য গ্যারেথ সাউথগেটের তারুন্যনির্ভর দলে হেন্ডারসনের মত অভিজ্ঞদেরও প্রয়োজন রয়েছে।
এবারের বিশ্বকাপে এ পর্যন্ত ১১টি গোল করেছে ইংল্যান্ড। ১৯৬৬ সালে বিশ্বকাপ জয়ী দলটিও পুরো বিশ্বকাপে ১১টি গোল করেছিল। ইংল্যান্ডের জয়ে ৬ গোল করে অধিনায়ক হ্যারি কেন বেশ ভালভাবেই গোল্ডেন বুট অর্জনের দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন। ইংলিশদেও ১১টি গোলের মধ্যে আটটিই এসেছে সেট পিস থেকে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: