স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মদাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সন্তান লালন-পালনের স্বপ্ন থাকলেও তা পূরণের সময় দেয়নি স্বপ্নশত্রæ হায়েনারা। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের সঠিক কাজটি করে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা। তিন মেয়াদে ১৫ বছর বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিয়েছেন। শান্তি, শিক্ষা, স¤প্রীতিসহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বব্যাপী। যা সম্ভব হয়েছে তার দূরদর্শিতা ও দেশের প্রতি নিঃস্বার্থ ভালোবাসার কারণে। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশের ধারাবাহিক উন্নতির পাশাপাশি শেখ হাসিনার ঝুলিতে জমেছে অনেকগুলো অর্জন। বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত দেশি-বিদেশি ৪১টি পুরস্কার, পদক, ডক্টরেট ও সম্মাননা অর্জন করেছেন। এর মধ্যে জাতিসংঘের বেশকটি পুরস্কার রয়েছে। এ ছাড়াও দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩ ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেছেন।
স্বাধীনতার সাড়ে তিন বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ঘাতকদের হাতে সপরিবারে নিহত হন। দীর্ঘ ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে একে একে কর্মসূচি হাতে নেন তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন, মধ্য আায়ের দেশ হওয়ার অগ্রগতি, পার্বত্য চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তি সম্পাদন, একুশে ফেব্রæয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি লাভ, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিচার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ, ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণ, নারীর ক্ষমতায়ন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উৎপাদনে অভাবনীয় সাফল্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থানসহ সব ক্ষেত্রেই সেই উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। এসব উন্নয়ন কর্মসূচি তাকে বাংলাদেশের উন্নয়নের রূপকারে পরিণত করেছে।
বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ২০১৪ সালে তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পড়েছে শেখ হাসিনার কাঁধে। তার সময়েই বাংলাদেশ নিম্ন থেকে নিম্ন মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিকে মজবুত ভিতের ওপর দাঁড় করিয়েছেন। জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার সব সময় ৬ এর ওপর রয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের হার রেকর্ড ৩৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
দীর্ঘ একুশ বছর পর ১৯৯৬ সালে প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় এসে ভারতের সঙ্গে ৩০ বছর মেয়াদি গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষর করেন। যে চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ ফারাক্কায় ৩৫ হাজার কিউসেক পানি প্রাপ্তির নিশ্চয়তা পায়। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তি চুক্তির মাধমে পার্বত্য অ লে জিইয়ে থাকা আড়াই দশকের যুদ্ধাবস্থার অবসান ঘটান শেখ হাসিনা। দেশের সর্ববৃহৎ বঙ্গবন্ধু সেতুর কাজ শেষ হওয়ার পর চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের পর বঙ্গবন্ধু হত্যাকাÐের বিচারের অসমাপ্ত কাজ শেষ করেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে মৃত্যুদÐ কার্যকর করা হয়।
নির্বাচনী প্রতিশ্রæতি অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের কার্যক্রম শুরু করেন। ১৯৭৩ সালের প্রণীত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধনের মাধ্যমে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে ইতিমধ্যে এই বিচারে জামায়াতের পাঁচজনসহ শীর্ষ ছয়জনের মৃত্যুদÐ কার্যকর করা হয়েছে। জঙ্গিবাদ দমনেও তার সরকার অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। সারা বিশ্ব যখন আইএস আতঙ্কে, তখন বাংলাদেশ শীর্ষ জঙ্গিদের দমন করতে সক্ষম হয়েছে।
২০১৪ সালে তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা সমুদ্রসীমা নির্ধারণে আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিজয়ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান। ভারতের সঙ্গে অনিষ্পন্ন ছিটমহল বিনিময় চুক্তি করে নিজেকে অনন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তিনি। যে চুক্তির আওতায় ২০১৫ সালের ১ আগস্ট রাতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের ১১১টি ও ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল বিনিময় হয়।
দেশের অভ্যন্তরে সর্বক্ষেত্রেই এই সময়ে লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া। যোগাযোগ ক্ষেত্রে সারা দেশের চিত্রই পাল্টে গেছে। ঢাকায় প্রবেশের ক্ষেত্রে সব মহাসড়কই চার লেনে উন্নীত করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও জাইকা সরে যাওয়া সত্বেও নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন চলছে। রাজধানীতে নতুন নুতন ফ্লাইওভার তৈরি করা হচ্ছে। বাস্তবায়নাধীন রয়েছে মেট্রোরেল প্রকল্প। গড়ে তোলা হয়েছে হাতিরঝিলের মতো দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা। আকাশ জয়ে পাঠানো হয়েছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট।
নারীর ক্ষমতায়নে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির আওতায় দেশব্যাপী প্রযুক্তি ব্যবহারে এক বিপ্লব ঘটেছে। ইন্টারনেট ব্যবহারে সহজলভ্যতা, বিদ্যুৎ উৎপাদনে অভাবনীয় সাফল্য, দুর্যোগ মোকাবিলা, কৃষি উন্নয়ন, শিক্ষার হার বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর ১৯৯৭ সালে গ্রেট ব্রিটেনের ডান্ডি অ্যাবার্তে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ‘ডক্টর অব লিবারেল আর্টস’ ডিগ্রি, ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক সম্মাণসূচক ‘ডক্টর অব লজ’ ডিগ্রি এবং যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয় সম্মানসূচক ‘ডক্টর অব লজ’ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৯৮ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইউনেস্কো শেখ হাসিনাকে ‘ফেলিক্স হুফে বইনি’ শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করে। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় অবদানের জন্য ১৯৯৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি শেখ হাসিনাকে ‘ডক্টর অব লজ’ ডিগ্রি প্রদান করে। ২০০০ সালে ব্রাসেলসের ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয় ‘ডক্টর অনারিয়াস কসা’ এবং যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাটের ইউনিভার্সিটি অব বার্ডিগ্রেপোট বিশ্ব শান্তি ও উন্নয়নে অবদানের জন্য শেখ হাসিনাকে ‘ডক্টরস অব হিউম্যান লেটার্স’ প্রদান করে।
এছাড়া ১৯৯৯ : ক্ষুধার বিরুদ্ধে আন্দোলনের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ঋঅঙ কর্তৃক ‘সেরেস পদক’ লাভ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
১৯৯৮ সালেণ নরওয়ের রাজধানী অসলোয় মহাত্মা গান্ধী ফাউন্ডেশন প্রধানমন্ত্রী শখ হাসিনাকে ‘এম কে গান্ধী’ পুরস্কারে ভূষিত করে। ১৯৯৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অব ল’জ পান। ওই বছরে পান মাদার তেরেসা পদক। শান্তি নিকেতন বিশ্বভারীর এক আড়ম্বরপূর্ণ বিশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনাকে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ সম্মানমূচক ‘দেশিকোত্তম’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
১৯৯৭ সালে লায়ন্স ক্লাবসমূহের আন্তর্জাতিক অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃক ‘রাষ্ট্রপ্রধান পদক’, রোটারি ইন্টারন্যাশনালের রোটারি ফাউন্ডেশন শেখ হাসিনাকে ‘পল হ্যারিস ফেলো’ ও নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস কমিটি শান্তি, গণতন্ত্র ও উপমহাদেশের দেশগুলোর মধ্যে সৌহার্দ্য স্থাপনে অনন্য ভূমিকার স্বীকৃতিস্বরূপ শেখ হাসিনাকে ‘নেতাজী মেমোরিয়াল পদক ১৯৯৭’ প্রদান করে।
২০০০ সালে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও মানবাধিকারের ক্ষেত্রে সাহসিকতা ও দূরদর্শিতার জন্য ম্যাকন ওমেনস কলেজ যুক্তরাষ্ট্র ‘পার্ল এস বাক পদক’ প্রদান করে।
২০০৫ সালের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও শান্তির পক্ষে অবদান রাখার জন্য শেখ হাসিনাকে পিপলস ফ্রেন্ডশিপ ইউনিভার্সিটি অব রাশিয়া শেখ হাসিনাকে সম্মানসূচক ‘ডক্টরেট’ ডিগ্রি প্রদান করে।
২০০৮ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর শিশুমৃত্যু হ্রাসসংক্রান্ত এমডিজি-৪ অর্জনের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতিসংঘ ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করে। একই বছর আন্তর্জাতিক উন্নয়নে অবদানের জন্য এসটি পিটার্সবার্গ ইউনিভার্সিটি প্রধানমন্ত্রীকে সম্মানসূচক ‘ডক্টরেট’ ডিগ্রি প্রদান করে। ওই বছরে বিশ্বখ্যাত ‘ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পদক ২০০৯’-এ ভূষিত হন।
২০১২ সালে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য রক্ষায় অবদানের জন্য শেখ হাসিনা আইএনইএসসিও কর্তৃক ‘কালচারাল ডাইভারসিটি’ পদকে ভূষিত হন। ২০১৪ সালে নারী ও শিশু শিক্ষা উন্নয়নে বিশেষ অবদানের জন্য ইউনেস্কো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘শান্তিবৃক্ষ পদক’, জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) দরিদ্রতা, অপুষ্টি দূর করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করায় ‘ডিপ্লোমা অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করে।
২০১৩ সালে খাদ্য নিরাপত্তা এবং ক্ষুধা ও দারিদ্র্য বিমোচনে বিশেষ অবদানের জন্য জাতিসংঘের ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর সাউথ সাউথ কো-অপারেশন ‘সাউথ সাউথ এওয়ার্ড’ প্রদান করে।
২০১৫ সালে জাতিসংঘের ৭০তম অধিবেশনে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ’ এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন ও তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নে বিশেষ অবদানের জন্য ‘আইসিটি টেকসই উন্নয়ন পুরস্কার’ লাভ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
২০১৬ সালে লিঙ্গ সমতা ও নারীর ক্ষমতায়নে বিশেষ অবদানের জন্য জাতিসংঘের দুটি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পুরস্কারগুলো হলো- ‘পানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’ ও ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ অ্যাওয়ার্ড’। ‘প্যানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’ পুরস্কারটি দেওয়া হয় ইউএন উইমেনের পক্ষ থেকে। আর ‘এজেন্ট অব চেইঞ্জ অ্যাওয়ার্ড’ দেয় গেøাবাল পার্টনারশিপ ফোরাম।
গত ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভূমিকা রাখায় লন্ডনের নামকরা একটি টেলিভিশন প্রধানমন্ত্রীকে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ খেতাবে ভূষিত করেছে।ওই বছরে বিশ্বের ক্ষমতাধর ১০০ নারীর তালিকায় ৩০তম অবস্থানে ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাময়িকী ফোর্বস এ তালিকা করেছে। এই সাময়িকীর আগের বছরের করা তালিকায় তিনি ছিলেন ৩৬তম অবস্থানে। এতে ক্ষমতাধর ১০০ নারীর তালিকা দেওয়ার পাশাপাশি বিশ্বের রাজনীতিতে সবচেয়ে ক্ষমতাধর ২১ জনের নাম স্থান পেয়েছে। শেখ হাসিনাকে ‘লেডি অব ঢাকা’ আখ্যায়িত করে ফোর্বস।
২০১৮ সালে নারী নেতৃত্বের সফলতার স্বীকৃতি হিসেবে ‘গেøাবাল উইমেনস লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ পুরস্কার পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে জমকালো অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গেøাবাল সামিট অব উইমেন শেখ হাসিনাকে এই মর্যাদাবান সম্মাননা প্রদান করে।
------
উন্নয়নের কারিগর মানবতাবাদী সফল দেশনায়ক শেখ হাসিনা
মাহবুবুর রহমান পলাশ
স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মদাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সন্তান লালন-পালনের স্বপ্ন থাকলেও তা পূরণের সময় দেয়নি স্বপ্নশত্রæ হায়েনারা। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের সঠিক কাজটি করে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা। তিন মেয়াদে ১৫ বছর বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিয়েছেন। শান্তি, শিক্ষা, স¤প্রীতিসহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বব্যাপী। যা সম্ভব হয়েছে তার দূরদর্শিতা ও দেশের প্রতি নিঃস্বার্থ ভালোবাসার কারণে। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশের ধারাবাহিক উন্নতির পাশাপাশি শেখ হাসিনার ঝুলিতে জমেছে অনেকগুলো অর্জন। বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত দেশি-বিদেশি ৪১টি পুরস্কার, পদক, ডক্টরেট ও সম্মাননা অর্জন করেছেন। এর মধ্যে জাতিসংঘের বেশকটি পুরস্কার রয়েছে। এ ছাড়াও দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩ ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেছেন।
স্বাধীনতার সাড়ে তিন বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ঘাতকদের হাতে সপরিবারে নিহত হন। দীর্ঘ ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে একে একে কর্মসূচি হাতে নেন তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন, মধ্য আায়ের দেশ হওয়ার অগ্রগতি, পার্বত্য চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তি সম্পাদন, একুশে ফেব্রæয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি লাভ, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিচার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ, ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণ, নারীর ক্ষমতায়ন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উৎপাদনে অভাবনীয় সাফল্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থানসহ সব ক্ষেত্রেই সেই উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। এসব উন্নয়ন কর্মসূচি তাকে বাংলাদেশের উন্নয়নের রূপকারে পরিণত করেছে।
বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ২০১৪ সালে তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পড়েছে শেখ হাসিনার কাঁধে। তার সময়েই বাংলাদেশ নিম্ন থেকে নিম্ন মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিকে মজবুত ভিতের ওপর দাঁড় করিয়েছেন। জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার সব সময় ৬ এর ওপর রয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের হার রেকর্ড ৩৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
দীর্ঘ একুশ বছর পর ১৯৯৬ সালে প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় এসে ভারতের সঙ্গে ৩০ বছর মেয়াদি গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষর করেন। যে চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ ফারাক্কায় ৩৫ হাজার কিউসেক পানি প্রাপ্তির নিশ্চয়তা পায়। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তি চুক্তির মাধমে পার্বত্য অ লে জিইয়ে থাকা আড়াই দশকের যুদ্ধাবস্থার অবসান ঘটান শেখ হাসিনা। দেশের সর্ববৃহৎ বঙ্গবন্ধু সেতুর কাজ শেষ হওয়ার পর চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের পর বঙ্গবন্ধু হত্যাকাÐের বিচারের অসমাপ্ত কাজ শেষ করেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে মৃত্যুদÐ কার্যকর করা হয়।
নির্বাচনী প্রতিশ্রæতি অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের কার্যক্রম শুরু করেন। ১৯৭৩ সালের প্রণীত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধনের মাধ্যমে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে ইতিমধ্যে এই বিচারে জামায়াতের পাঁচজনসহ শীর্ষ ছয়জনের মৃত্যুদÐ কার্যকর করা হয়েছে। জঙ্গিবাদ দমনেও তার সরকার অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। সারা বিশ্ব যখন আইএস আতঙ্কে, তখন বাংলাদেশ শীর্ষ জঙ্গিদের দমন করতে সক্ষম হয়েছে।
২০১৪ সালে তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা সমুদ্রসীমা নির্ধারণে আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিজয়ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান। ভারতের সঙ্গে অনিষ্পন্ন ছিটমহল বিনিময় চুক্তি করে নিজেকে অনন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তিনি। যে চুক্তির আওতায় ২০১৫ সালের ১ আগস্ট রাতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের ১১১টি ও ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল বিনিময় হয়।
দেশের অভ্যন্তরে সর্বক্ষেত্রেই এই সময়ে লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া। যোগাযোগ ক্ষেত্রে সারা দেশের চিত্রই পাল্টে গেছে। ঢাকায় প্রবেশের ক্ষেত্রে সব মহাসড়কই চার লেনে উন্নীত করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও জাইকা সরে যাওয়া সত্বেও নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন চলছে। রাজধানীতে নতুন নুতন ফ্লাইওভার তৈরি করা হচ্ছে। বাস্তবায়নাধীন রয়েছে মেট্রোরেল প্রকল্প। গড়ে তোলা হয়েছে হাতিরঝিলের মতো দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা। আকাশ জয়ে পাঠানো হয়েছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট।
নারীর ক্ষমতায়নে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির আওতায় দেশব্যাপী প্রযুক্তি ব্যবহারে এক বিপ্লব ঘটেছে। ইন্টারনেট ব্যবহারে সহজলভ্যতা, বিদ্যুৎ উৎপাদনে অভাবনীয় সাফল্য, দুর্যোগ মোকাবিলা, কৃষি উন্নয়ন, শিক্ষার হার বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর ১৯৯৭ সালে গ্রেট ব্রিটেনের ডান্ডি অ্যাবার্তে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ‘ডক্টর অব লিবারেল আর্টস’ ডিগ্রি, ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক সম্মাণসূচক ‘ডক্টর অব লজ’ ডিগ্রি এবং যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয় সম্মানসূচক ‘ডক্টর অব লজ’ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৯৮ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইউনেস্কো শেখ হাসিনাকে ‘ফেলিক্স হুফে বইনি’ শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করে। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় অবদানের জন্য ১৯৯৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি শেখ হাসিনাকে ‘ডক্টর অব লজ’ ডিগ্রি প্রদান করে। ২০০০ সালে ব্রাসেলসের ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয় ‘ডক্টর অনারিয়াস কসা’ এবং যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাটের ইউনিভার্সিটি অব বার্ডিগ্রেপোট বিশ্ব শান্তি ও উন্নয়নে অবদানের জন্য শেখ হাসিনাকে ‘ডক্টরস অব হিউম্যান লেটার্স’ প্রদান করে।
এছাড়া ১৯৯৯ : ক্ষুধার বিরুদ্ধে আন্দোলনের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ঋঅঙ কর্তৃক ‘সেরেস পদক’ লাভ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
১৯৯৮ সালেণ নরওয়ের রাজধানী অসলোয় মহাত্মা গান্ধী ফাউন্ডেশন প্রধানমন্ত্রী শখ হাসিনাকে ‘এম কে গান্ধী’ পুরস্কারে ভূষিত করে। ১৯৯৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অব ল’জ পান। ওই বছরে পান মাদার তেরেসা পদক। শান্তি নিকেতন বিশ্বভারীর এক আড়ম্বরপূর্ণ বিশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনাকে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ সম্মানমূচক ‘দেশিকোত্তম’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
১৯৯৭ সালে লায়ন্স ক্লাবসমূহের আন্তর্জাতিক অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃক ‘রাষ্ট্রপ্রধান পদক’, রোটারি ইন্টারন্যাশনালের রোটারি ফাউন্ডেশন শেখ হাসিনাকে ‘পল হ্যারিস ফেলো’ ও নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস কমিটি শান্তি, গণতন্ত্র ও উপমহাদেশের দেশগুলোর মধ্যে সৌহার্দ্য স্থাপনে অনন্য ভূমিকার স্বীকৃতিস্বরূপ শেখ হাসিনাকে ‘নেতাজী মেমোরিয়াল পদক ১৯৯৭’ প্রদান করে।
২০০০ সালে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও মানবাধিকারের ক্ষেত্রে সাহসিকতা ও দূরদর্শিতার জন্য ম্যাকন ওমেনস কলেজ যুক্তরাষ্ট্র ‘পার্ল এস বাক পদক’ প্রদান করে।
২০০৫ সালের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও শান্তির পক্ষে অবদান রাখার জন্য শেখ হাসিনাকে পিপলস ফ্রেন্ডশিপ ইউনিভার্সিটি অব রাশিয়া শেখ হাসিনাকে সম্মানসূচক ‘ডক্টরেট’ ডিগ্রি প্রদান করে।
২০০৮ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর শিশুমৃত্যু হ্রাসসংক্রান্ত এমডিজি-৪ অর্জনের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতিসংঘ ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করে। একই বছর আন্তর্জাতিক উন্নয়নে অবদানের জন্য এসটি পিটার্সবার্গ ইউনিভার্সিটি প্রধানমন্ত্রীকে সম্মানসূচক ‘ডক্টরেট’ ডিগ্রি প্রদান করে। ওই বছরে বিশ্বখ্যাত ‘ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পদক ২০০৯’-এ ভূষিত হন।
২০১২ সালে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য রক্ষায় অবদানের জন্য শেখ হাসিনা আইএনইএসসিও কর্তৃক ‘কালচারাল ডাইভারসিটি’ পদকে ভূষিত হন। ২০১৪ সালে নারী ও শিশু শিক্ষা উন্নয়নে বিশেষ অবদানের জন্য ইউনেস্কো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘শান্তিবৃক্ষ পদক’, জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) দরিদ্রতা, অপুষ্টি দূর করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করায় ‘ডিপ্লোমা অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করে।
২০১৩ সালে খাদ্য নিরাপত্তা এবং ক্ষুধা ও দারিদ্র্য বিমোচনে বিশেষ অবদানের জন্য জাতিসংঘের ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর সাউথ সাউথ কো-অপারেশন ‘সাউথ সাউথ এওয়ার্ড’ প্রদান করে।
২০১৫ সালে জাতিসংঘের ৭০তম অধিবেশনে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ’ এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন ও তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নে বিশেষ অবদানের জন্য ‘আইসিটি টেকসই উন্নয়ন পুরস্কার’ লাভ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
২০১৬ সালে লিঙ্গ সমতা ও নারীর ক্ষমতায়নে বিশেষ অবদানের জন্য জাতিসংঘের দুটি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পুরস্কারগুলো হলো- ‘পানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’ ও ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ অ্যাওয়ার্ড’। ‘প্যানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’ পুরস্কারটি দেওয়া হয় ইউএন উইমেনের পক্ষ থেকে। আর ‘এজেন্ট অব চেইঞ্জ অ্যাওয়ার্ড’ দেয় গেøাবাল পার্টনারশিপ ফোরাম।
গত ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভূমিকা রাখায় লন্ডনের নামকরা একটি টেলিভিশন প্রধানমন্ত্রীকে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ খেতাবে ভূষিত করেছে।ওই বছরে বিশ্বের ক্ষমতাধর ১০০ নারীর তালিকায় ৩০তম অবস্থানে ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাময়িকী ফোর্বস এ তালিকা করেছে। এই সাময়িকীর আগের বছরের করা তালিকায় তিনি ছিলেন ৩৬তম অবস্থানে। এতে ক্ষমতাধর ১০০ নারীর তালিকা দেওয়ার পাশাপাশি বিশ্বের রাজনীতিতে সবচেয়ে ক্ষমতাধর ২১ জনের নাম স্থান পেয়েছে। শেখ হাসিনাকে ‘লেডি অব ঢাকা’ আখ্যায়িত করে ফোর্বস।
২০১৮ সালে নারী নেতৃত্বের সফলতার স্বীকৃতি হিসেবে ‘গেøাবাল উইমেনস লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ পুরস্কার পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে জমকালো অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গেøাবাল সামিট অব উইমেন শেখ হাসিনাকে এই মর্যাদাবান সম্মাননা প্রদান করে।
------
উন্নয়নের কারিগর মানবতাবাদী সফল দেশনায়ক শেখ হাসিনা
মাহবুবুর রহমান পলাশ
স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মদাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সন্তান লালন-পালনের স্বপ্ন থাকলেও তা পূরণের সময় দেয়নি স্বপ্নশত্রæ হায়েনারা। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের সঠিক কাজটি করে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা। তিন মেয়াদে ১৫ বছর বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিয়েছেন। শান্তি, শিক্ষা, স¤প্রীতিসহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বব্যাপী। যা সম্ভব হয়েছে তার দূরদর্শিতা ও দেশের প্রতি নিঃস্বার্থ ভালোবাসার কারণে। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশের ধারাবাহিক উন্নতির পাশাপাশি শেখ হাসিনার ঝুলিতে জমেছে অনেকগুলো অর্জন। বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত দেশি-বিদেশি ৪১টি পুরস্কার, পদক, ডক্টরেট ও সম্মাননা অর্জন করেছেন। এর মধ্যে জাতিসংঘের বেশকটি পুরস্কার রয়েছে। এ ছাড়াও দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩ ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেছেন।
স্বাধীনতার সাড়ে তিন বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ঘাতকদের হাতে সপরিবারে নিহত হন। দীর্ঘ ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে একে একে কর্মসূচি হাতে নেন তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন, মধ্য আায়ের দেশ হওয়ার অগ্রগতি, পার্বত্য চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তি সম্পাদন, একুশে ফেব্রæয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি লাভ, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিচার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ, ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণ, নারীর ক্ষমতায়ন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উৎপাদনে অভাবনীয় সাফল্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থানসহ সব ক্ষেত্রেই সেই উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। এসব উন্নয়ন কর্মসূচি তাকে বাংলাদেশের উন্নয়নের রূপকারে পরিণত করেছে।
বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ২০১৪ সালে তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পড়েছে শেখ হাসিনার কাঁধে। তার সময়েই বাংলাদেশ নিম্ন থেকে নিম্ন মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিকে মজবুত ভিতের ওপর দাঁড় করিয়েছেন। জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার সব সময় ৬ এর ওপর রয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের হার রেকর্ড ৩৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
দীর্ঘ একুশ বছর পর ১৯৯৬ সালে প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় এসে ভারতের সঙ্গে ৩০ বছর মেয়াদি গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষর করেন। যে চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ ফারাক্কায় ৩৫ হাজার কিউসেক পানি প্রাপ্তির নিশ্চয়তা পায়। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তি চুক্তির মাধমে পার্বত্য অ লে জিইয়ে থাকা আড়াই দশকের যুদ্ধাবস্থার অবসান ঘটান শেখ হাসিনা। দেশের সর্ববৃহৎ বঙ্গবন্ধু সেতুর কাজ শেষ হওয়ার পর চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের পর বঙ্গবন্ধু হত্যাকাÐের বিচারের অসমাপ্ত কাজ শেষ করেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে মৃত্যুদÐ কার্যকর করা হয়।
নির্বাচনী প্রতিশ্রæতি অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের কার্যক্রম শুরু করেন। ১৯৭৩ সালের প্রণীত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধনের মাধ্যমে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে ইতিমধ্যে এই বিচারে জামায়াতের পাঁচজনসহ শীর্ষ ছয়জনের মৃত্যুদÐ কার্যকর করা হয়েছে। জঙ্গিবাদ দমনেও তার সরকার অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। সারা বিশ্ব যখন আইএস আতঙ্কে, তখন বাংলাদেশ শীর্ষ জঙ্গিদের দমন করতে সক্ষম হয়েছে।
২০১৪ সালে তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা সমুদ্রসীমা নির্ধারণে আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিজয়ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান। ভারতের সঙ্গে অনিষ্পন্ন ছিটমহল বিনিময় চুক্তি করে নিজেকে অনন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তিনি। যে চুক্তির আওতায় ২০১৫ সালের ১ আগস্ট রাতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের ১১১টি ও ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল বিনিময় হয়।
দেশের অভ্যন্তরে সর্বক্ষেত্রেই এই সময়ে লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া। যোগাযোগ ক্ষেত্রে সারা দেশের চিত্রই পাল্টে গেছে। ঢাকায় প্রবেশের ক্ষেত্রে সব মহাসড়কই চার লেনে উন্নীত করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও জাইকা সরে যাওয়া সত্বেও নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন চলছে। রাজধানীতে নতুন নুতন ফ্লাইওভার তৈরি করা হচ্ছে। বাস্তবায়নাধীন রয়েছে মেট্রোরেল প্রকল্প। গড়ে তোলা হয়েছে হাতিরঝিলের মতো দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা। আকাশ জয়ে পাঠানো হয়েছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট।
নারীর ক্ষমতায়নে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির আওতায় দেশব্যাপী প্রযুক্তি ব্যবহারে এক বিপ্লব ঘটেছে। ইন্টারনেট ব্যবহারে সহজলভ্যতা, বিদ্যুৎ উৎপাদনে অভাবনীয় সাফল্য, দুর্যোগ মোকাবিলা, কৃষি উন্নয়ন, শিক্ষার হার বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর ১৯৯৭ সালে গ্রেট ব্রিটেনের ডান্ডি অ্যাবার্তে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ‘ডক্টর অব লিবারেল আর্টস’ ডিগ্রি, ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক সম্মাণসূচক ‘ডক্টর অব লজ’ ডিগ্রি এবং যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয় সম্মানসূচক ‘ডক্টর অব লজ’ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৯৮ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইউনেস্কো শেখ হাসিনাকে ‘ফেলিক্স হুফে বইনি’ শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করে। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় অবদানের জন্য ১৯৯৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি শেখ হাসিনাকে ‘ডক্টর অব লজ’ ডিগ্রি প্রদান করে। ২০০০ সালে ব্রাসেলসের ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয় ‘ডক্টর অনারিয়াস কসা’ এবং যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাটের ইউনিভার্সিটি অব বার্ডিগ্রেপোট বিশ্ব শান্তি ও উন্নয়নে অবদানের জন্য শেখ হাসিনাকে ‘ডক্টরস অব হিউম্যান লেটার্স’ প্রদান করে।
এছাড়া ১৯৯৯ : ক্ষুধার বিরুদ্ধে আন্দোলনের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ঋঅঙ কর্তৃক ‘সেরেস পদক’ লাভ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
১৯৯৮ সালেণ নরওয়ের রাজধানী অসলোয় মহাত্মা গান্ধী ফাউন্ডেশন প্রধানমন্ত্রী শখ হাসিনাকে ‘এম কে গান্ধী’ পুরস্কারে ভূষিত করে। ১৯৯৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অব ল’জ পান। ওই বছরে পান মাদার তেরেসা পদক। শান্তি নিকেতন বিশ্বভারীর এক আড়ম্বরপূর্ণ বিশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনাকে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ সম্মানমূচক ‘দেশিকোত্তম’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
১৯৯৭ সালে লায়ন্স ক্লাবসমূহের আন্তর্জাতিক অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃক ‘রাষ্ট্রপ্রধান পদক’, রোটারি ইন্টারন্যাশনালের রোটারি ফাউন্ডেশন শেখ হাসিনাকে ‘পল হ্যারিস ফেলো’ ও নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস কমিটি শান্তি, গণতন্ত্র ও উপমহাদেশের দেশগুলোর মধ্যে সৌহার্দ্য স্থাপনে অনন্য ভূমিকার স্বীকৃতিস্বরূপ শেখ হাসিনাকে ‘নেতাজী মেমোরিয়াল পদক ১৯৯৭’ প্রদান করে।
২০০০ সালে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও মানবাধিকারের ক্ষেত্রে সাহসিকতা ও দূরদর্শিতার জন্য ম্যাকন ওমেনস কলেজ যুক্তরাষ্ট্র ‘পার্ল এস বাক পদক’ প্রদান করে।
২০০৫ সালের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও শান্তির পক্ষে অবদান রাখার জন্য শেখ হাসিনাকে পিপলস ফ্রেন্ডশিপ ইউনিভার্সিটি অব রাশিয়া শেখ হাসিনাকে সম্মানসূচক ‘ডক্টরেট’ ডিগ্রি প্রদান করে।
২০০৮ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর শিশুমৃত্যু হ্রাসসংক্রান্ত এমডিজি-৪ অর্জনের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতিসংঘ ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করে। একই বছর আন্তর্জাতিক উন্নয়নে অবদানের জন্য এসটি পিটার্সবার্গ ইউনিভার্সিটি প্রধানমন্ত্রীকে সম্মানসূচক ‘ডক্টরেট’ ডিগ্রি প্রদান করে। ওই বছরে বিশ্বখ্যাত ‘ইন্দিরা গান্??
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: