
রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ সহায়ক হবে না বলে জানিয়েছে চীন। রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানোর দায়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে অভিযুক্ত করে জাতিসংঘের প্রতিবেদন প্রকাশের একদিন পর চীন এ কথা বলেছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সোমবার প্রকাশিত জাতিসংঘের ওই তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা এবং অন্যান্য নৃ-তাত্ত্বিক সংখ্যালঘুদের ওপর গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মিয়ানমারের শীর্ষ ছয়জন সামরিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত এবং বিচার হওয়া দরকার। জাতিসংঘ নিরাপত্তা কাউন্সিলকে মিয়ানমারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও বিচারের জন্য বিষয়টি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে পাঠানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতা থামানোর জন্য হস্তক্ষেপ করতে ব্যর্থ হওয়ায় মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি’র কড়া সমালোচনাও করা হয়েছে।
মঙ্গলবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনিং নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে ওই প্রতিবেদনের বিষয়ে বলেন, রাখাইন ইস্যুর ঐতিহাসিক, ধর্মীয় এবং নৃ-গোষ্ঠীগত প্রেক্ষাপট খুবই জটিল। আমরা মনে হয় না, একপাক্ষিক সমালোচনা বা চাপ প্রয়োগ এই সমস্যার সমাধানে সহায়ক হবে।
মুখপাত্র হুয়া বলেন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় ইতিবাচক অগ্রগতি এসেছে। দুই বছরের মধ্যে রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছা ও প্রত্যাবাসন সম্পন্ন করতে চুক্তি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত গঠনমূলক ভূমিকা রাখা। যাতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সংলাপ ও আলোচনার মাধ্যমে যথাযথভাবে রাখাইন রাজ্যের সমস্যার সমাধান করতে পারে।
রাখাইনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় দায়মুক্তি দেওয়া উচিত হবে না: যুক্তরাজ্য
যুক্তরাজ্যের এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মার্ক ফিল্ড বলেছেন, রাখাইনে সংখ্যালঘু রাখাইনদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় দায়মুক্তি দেওয়া উচিত হবে না। জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের প্রতিবেদন প্রকাশের পর তিনি এক বিবৃতিতে এ মন্তব্য করেছেন।

বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, মিয়ানমারের সেনারা ব্যাপকহারে রোহিঙ্গাদের ধর্ষণ ও হত্যার মাধ্যমে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। এই অপরাধের অকাট্য প্রমাণ হাজির করেছে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন। এ ধরনের অপরাধে কোনোভাবেই দায়মুক্তি দেওয়া যাবে না। আমরা পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দেখতে চাই। আমরা আশা করি, এই প্রতিবেদনের গুরুতর অবস্থা জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিল এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা কাউন্সিলের নজরে আসবে। সেপ্টেম্বরে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশের পর নিরাপত্তা পরিষদে তা উপস্থাপনে আমরা আলোচনা করবো।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে রোহিঙ্গা নিপীড়নের প্রমাণ সংহত হয়েছে: যুক্তরাষ্ট্র
জাতিসংঘ প্রকাশিত তদন্ত প্রতিবেদন রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণকে আরও সংহত করেছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র এই কথা বলেছেন বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক খবরে জানানো হয়েছে। ওই মুখপাত্র বলেন, রাখাইনে গণহত্যা বা মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে কিনা তথ্য প্রমাণাদির পর্যবেক্ষণ ও সংশ্লিষ্ট আইনি ব্যাখ্যার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র তা নির্ধারণ করবে।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরা রাখাইনের কয়েকটি পুলিশ চৌকিতে হামলা চালালে পরিকল্পিত নিধন অভিযান শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এর প্রেক্ষিতে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: