
ঘটনার প্রায় ২০ ঘণ্টা পার হলেও ছিনতাইকারী কিভাবে অস্ত্র নিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ওই উড়োজাহাজে প্রবেশ করেছিল, সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী, ওই মন্ত্রণালয়ের সচিব কিংবা বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। তারা বলছেন, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর এ বিষয়ে স্পষ্ট তথ্য জানানো সম্ভব হবে।
সোমবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তারা। চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-৭৩৭৮০০ ফ্লাইট ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে দুবাই যাওয়ার পথে ছিনতাইকারীর কবলে পড়া এবং এ ঘটনায় চালানো অভিযান নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনের আগে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রতিমন্ত্রী ও সচিবসহ অন্যরা বিমানবন্দরের নিরাপত্তার বিভিন্ন ধাপ পরিদর্শন করেন। এসময় গণমাধ্যমকর্মীদেরও এসব ধাপ দেখান তারা
পরে সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বলেন, আমি গতকাল (রোববার) সংসদে ছিলাম। ঠিক মাগরিবের আজানের আগে এক সহকর্মীর কাছে জানতে পারি, আমাদের একটি বিমান ছিনতাইকারীর কবলে পড়েছে। আমি সঙ্গে সঙ্গে এমডি সাহেবের কাছে ফোন করি, তিনিও সামগ্রিক বিষয়টি তখনও জানেন না। এরপরই সব বিমানবন্দরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।
বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবগত করা হয় জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীও ততক্ষণে বিষয়টি অবহিত হয়েছেন। তিনি টেলিভিশনে ঘটনাপ্রবাহ দেখছিলেন। তিনি নিজেই বিমান বাহিনী, নৌবাহিনী, সেনাবাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিলে অভিযানের মাধ্যমে এ ঘটনার পরিসমাপ্তি ঘটে। আমরা আজকে নিজেরাও বোঝার চেষ্টা করেছি, কী ঘটেছি
মাহবুব আলী বলেন, একজন যাত্রী বিমানবন্দরে আসার পর থেকে বিমানে ওঠা পর্যন্ত কী কী নিরাপত্তার ভেতর দিয়ে যান, সেটা আপনারাও এখন দেখলেন। এখানে এমন কোনো ফাঁক-ফোঁকড় ছিল না বা এখনও নেই যে একজন যাত্রী এসব নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাইপাস করে বিমানে উঠতে পারেন।
তবে গণমাধ্যমে বিমান বাংলাদেশের ওই ফ্লাইট জরুরি অবতরণ করেছিল বলে গণমাধ্যমে যে সংবাদ প্রকাশ হয়, তা নিয়ে আপত্তি জানান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী। তিনি বলেন, এটার রুটই ছিল ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে দুবাই। ডোমেস্টিক ও ইন্টারন্যাশনাল— দুই ধরনের যাত্রীই ছিল। চট্টগ্রামের যাত্রাবিরতিটা ছিল রুটিন ওয়ার্ক।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে মন্ত্রণালয়ের সচিব মহীবুল হক বলেন, গতকালের ফ্লাইটে পাইলট-কেবিন ক্রু যারা ছিলেন, তাদের বক্তব্য নেওয়া হয়েছে। তদন্ত দল আজই (সোমবার) চট্টগ্রাম যাবে। সেখানে সংশ্লিস্ট সবার সঙ্গে কথা বলবে। তাদের পাঁচ দিনের ভেতরে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য বলেছি।
একজন যাত্রীকে কতগুলো নিরাপত্তা ধাপ পেরিয়ে উড়োজাহাজে উঠতে হয়, সে প্রক্রিয়া গণমাধ্যমকর্মীদের দেখানোর চেষ্টা করেছেন বলে জানান সচিব। নিরাপত্তার এত ধাপ পেরিয়ে কিভাবে একজন অস্ত্রধারী উড়োজাহাজে উঠে যায়— এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তার হাতে পিস্তল ছিল কি না, আমরা এখনও ওয়াকিবহাল না। সেটা পিস্তল বা খেলা পিস্তল— যেকোনো কিছুই হতে পারে। আমরা তদন্ত টিম গঠন করেছি, তাদের প্রতিবেদনের পর আমরা বুঝতে পারব এটা প্রকৃত অস্ত্র নাকি খেলনা অস্ত্র বা কী।
অস্ত্রধারীর হাতে খেলনা পিস্তল ছিল— চট্টগ্রাম পুলিশ কমিশনারের এমন বক্তব্য উল্লেখ করলে সচিব বলেন, ‘পুলিশ কমিশনারের বক্তব্যের বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে পারব না।’ উড়োজাহাজে গুলি বিনিময় হয়েছে— এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, গুলি বিনিময় হয়েছে কি না, আমরা সেটা এখান থেকে বলতে পারব না।
এ ঘটনায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, যাত্রীরা উড়োজাহাজের ভেতরে গুলির শব্দ শুনেছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেবিচক চেয়ারম্যান এম নাঈম হাসান বলেন, উড়োজাহাজে যারা ছিল তাদের আমরা জিজ্ঞাসা করেছি। তারা বলেছে, ধোঁয়া বের হয়েছে। কিন্তু গুলি বের হলে তো ছিদ্র হয়ে যাবে। এমন কোনো এভিডেন্স নেই। আর খেলা পিস্তলেও তো শব্দ হয়।
এসময় প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বলেন, আমরা নিজেরা দেখিনি। কিন্তু আমাদের অবস্থান থেকে এ ঘটনার একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান যেন হয়, কোনো ক্ষতি যেন না হয়, সে ব্যবস্থা করেছি।
সিসিটিভি ফুটেজ থেকে অস্ত্রধারী ওই যাত্রী সম্পর্কে কী তথ্য জানা গেছে— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, সিসিটিভি ফুটেজ আমরা দেখেছি। আর দশ জন যাত্রীর যেভাবে সিকিউরিটি স্ক্রিনিং হয়, তারও ঠিক একইভাবে স্ক্রিনিং হয়েছে। আনসার সদস্যরা তাকে চেক করেছেন, তার ঘাড়ে একটা ব্যাগ ছিল, সেই ব্যাগও স্ক্যানিং মেশিনের ভেতর দিয়ে গেছে। কিন্তু স্ক্যানিং মেশিন কিছু শো করেনি। সন্দেহজনক কিছু থাকলে যে লালবাতি জ্বলে, তাও জ্বলেনি। আমরা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের পরে সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারব।
খেলনা পিস্তল হলেও তো স্ক্যানিং মেশিনে সেটার উপস্থিতি দেখানোর কথা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘না, শো করেনি।’
বেবিচক চেয়ারম্যান আরও বলেন, পাইলট যখন বুঝতে পারলেন, তখন চট্টগ্রাম বিমানবন্দর ম্যানেজারকে জানিয়েছেন, তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানিয়েছে, আমাদের জানিয়েছে। তখন সবাই মিলে বিমানবন্দর কর্ডন করে রেখেছে, বিমানকে ঘিরে রেখেছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেছে।
এ ঘটনার দায় কে নেবে— জানতে চাইলে সচিব মুহীবুল হক বলেন, আপনারা যাই বলুন না কেন, তদন্ত না হলে আমরা কিছু বলতে পারব না। আমাদের বিমানবন্দর, এটি তো আমাদের ভাবমূর্তির বিষয়। আপনাদের কাছে ইতিবাচক অ্যাপ্রোচ আশা করব।
এ ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষই স্পষ্ট কোনো তথ্য জানাতে পারছে না বলে সাংবাদিকরা উল্লেখ করলে সচিব বলেন, তদন্ত চলছে। আমরা যেটুকু দেখে
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: