ঢাকা | মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ৮ বৈশাখ ১৪৩২
ইংল্যান্ডে জমে উঠেছে ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয়ের লড়াই: ব্যস্ততা বেড়েছে ব্যাটের তৈরিতে

চিত্রা,কাজলা,নবগঙ্গা ও হরি নদীর বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে কচুরিপানা দু’পারের হাজার হাজার মানুষ সময় পারাপার হতে পারছেন না!!

odhikar patra | প্রকাশিত: ২৭ জুন ২০১৯ ১৭:৫১

odhikar patra
প্রকাশিত: ২৭ জুন ২০১৯ ১৭:৫১

নড়াইলের নবগঙ্গা, চিত্রা, কাজলা ও হরি নদীর ৬৭ কিঃমিটার এলাকাজুড়ে 

কচুরিপানায় ভরে গেছে। এসব কচুরিপানা বিভিন্ন খালেও প্রবেশ করছে। বর্তমানে এ সমস্যা অনেকটা স্থায়ী রূপ নিয়েছে। গত
৬মাস ধরে কচুরিপানা একটানা আটকে থাকায় ২৫টি খেয়া ঘাটের দু’পারের হাজার হাজার মানুষ সময় মতো নদী পারাপার হতে
পারছেন না। আবার পারাপরে খরচও বেড়ে গেছে। এ কচুরিপানার কারণে নড়াইলে পণ্যবাহী কোনো ট্রলার, কার্গো সময় মতো
যাতায়াত করতে পারছে না। মাছ ধরতে না পারায় জেলেরাও হয়ে পড়েছে বেকার। কচুরিপানা অপসারণে জেলা প্রশাসন, নড়াইল এক্সপ্রেস
ফাউন্ডেশন এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড স¤প্রতি উদ্যোগ নিলেও তা কাজে আসেনি। জানা যায়, এ কচুরিপানার উৎপত্তি মাগুরা-
নড়াইলের নবগঙ্গা নদী থেকে। ষাটের দশকের মাঝামাঝি মাগুরা শহরের ওপর নবগঙ্গা নদীতে বাঁধ দিয়ে ¯-ুইচগেট করা হলে নদীর
স্রোতধারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বর্তমানে মাগুরার সাতদোয়া, বিনোদপুর, রাজাপুর, নহাটা, গঙ্গারামপুর, নড়াইলের মিঠাপুর ও নলদী এলাকায়
জোয়ার-ভাটা না থাকায় এ অঞ্চলে জন্ম নেওয়া কচুরিপানা ঠিকমতো সরতে পারে না। আবার বর্ষকালে মাগুরার নাড়িখালী, নাদপুর খাল
এবং এর পার্শ্ববর্তী নড়াইলের ছাতরা, ধোপাদা ও বাড়িভাঙ্গা খালের কচুরিপানা আশ্বিন-কার্তিক মাসে খাল থেকে এ অঞ্চলের নবগঙ্গা
নদীতে নেমে আসে। কিন্তু প্রয়োজনীয় ভাটায় এসব কচুরিপানা লোনা পানিতে নামতে না পেরে নবগঙ্গা ও চিত্রার বিস্তীর্ণ অঞ্চল
জুড়ে বংশ বৃদ্ধি করছে এবং মানুষের জীবনযাত্রায় ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। এর ফলে নড়াইলের চিত্রা নদীর পেড়লি, জামরিলডাঙ্গা, খড়রিয়া,
রঘুনাথপুর, সুমেরুখোলা, বাগডাঙ্গা, গোবরা, মিরাপাড়া, ভদ্রবিলা, পংকবিলা, শিখেলি, রতডাঙ্গা, ধোন্দা, পাঝারখালি, নবগঙ্গা
নদীর নলদী, ভুমুরদিয়া, কলাগাছি, চালিতাতলা, চন্ডিবরপুর, সিঙ্গে, মনোখালী, গংগারামপুর, দরি-মিঠাপুর, হরি নদীর নিরালি ও কাজলা
নদীর মুলিয়া খেয়া ঘাটে জরুরি প্রয়োজনে পারাপার, বিভিন্ন পেশা ও চাকরিজীবী শ্রেণি ও শিক্ষার্থীদের গন্তব্যে পৌছাতে
দ‚র্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এ কচুরিপানা অপসারণের জন্য গত ২৪এপ্রিল জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা শহরের বাঁধাঘাট এলাকায়
মাশরাফি বিন মর্তুজা এমপির নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশন, জেলা প্রশাসন এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে এসব নদীর
প্রায় ৬০ কিঃ মিটার এলাকার কচুরিপানা অপসারণ কাজের উদ্বোধন করলেও কয়েকদিন পর ঘ‚র্ণী ঝড় ফনির প্রভাবে তা ভেস্তে যায়।
নড়াইল শহরের ব্যবসায়ী পংকবিলা গ্রামের রানা দাস ও পার্শ্ববর্তী লস্করপুর গ্রামের গৃহকর্মী আসমিনা বেগম জানান, বাড়ি থেকে শহরে আসতে পংকবিলা ঘাটে কচুরিপানার কারনে নৌকা পারাপারে ১০মিনিটের জায়গায় প্রায় ৫০ মিনিট লেগে যায়।
আবার পারাপারে ৪টাকার পরিবর্তে ১০টাকা নেয়া হচ্ছে। পংকবিলা ঘাটের ডিঙ্গি নৌকার মাঝি বিনয় বিশ্বাস জানান,
কচুরিপানার কারনে কষ্ট অনেক বেশী হয় এবং পারাপারে আধাঘন্টা সময় নেয়। ফলে অধিকাংশ যত্রীরা এ পথে না এসে সুলতান এবং
রাসেল সেতু দিয়ে যাতায়াত করছে। বর্তমানে এ ঘাটে ৬টি নৌকার বদলে একটি নৌকা চলছে। রতডাঙ্গা খেয়া ঘাটের মাঝি
সেলিম বিশ্বাস বলেন, কচুরিপানার কারনে কমপক্ষে ১০জন যাত্রী না হলে নৌকা ছাড়া সম্ভব হয়না। ফলে কমপক্ষে আধাঘন্টা দেরী করতে
হয়। প‚র্বে পারাপারে ৪টাকা নিলেও এখন বাধ্য হয়ে ১০টাকা নিচ্ছেন। সদরের আউড়িয়া ইউনিয়নের কামরুজ্জামান তুহিন
বলেন,কচুরিপানার বেহাল অবস্থার কারণে পংকবিলাসহ ৪টি গ্রামের স্কুল-কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী সময় মতো
নড়াইল শহরে প্রবেশ করতে পারে না। তিনি এ কচুরিপানা অপসারণে নিজে প্রায় ২৫হাজার টাকা ব্যয় এবং বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েও
ব্যর্থ হয়েছেন। সদরের ঘোলাখালী গ্রামের অনিল বিশ্বাস বলেন, দীর্ঘ প্রায় ৬মাস নৌকায় মাছ ধরতে না পারার কারনে মাছ ধরতে
সাহায্যকারী ৩টি ভোদরকে (স্থানীয় নাম ধাইড়ে) বসিয়ে বসিয়ে ছোট মাছ ও ব্যাঙ খাওয়াতে হচ্ছে। প্রতিদিন প্রায় দেড় কেজি
মাছ বা সম পরিমান ব্যাঙ খাওয়ানো তাদের জন্য অত্যন্ত কষ্টকর বিষয় বলে জানান। সদরের রতডাঙ্গা গ্রামের জেলে উজ্জল সরকার ও উত্তম
সরকার (০১৭৩৫-২৫৯৯৮৯) জানান,গত এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে ৭টি নৌকায় ১২জনের একটি দল নিয়ে মোটা দড়া-কাছি ও
কলা গাছ দিয়ে কৌশলে মিঠাপুর থেকে পেড়লি পর্যন্ত প্রায় ৬০ কিঃমিঃ এলাকার কচুরিপানা নদীর ভাটার সময় দক্ষিনাঞ্চল খুলনার রূপসা
নদীর লোনা পানিতে পাঠানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু ২মে ঘ‚র্ণিঝড় ফনির প্রভাবে এসব কচুরিপানা জোয়ারে আবার চিত্রা-নবগঙ্গায়
ফিরে আসে। তবে নতুন কওে এসব বিস্তীর্ণ এলাকার কচুরিপানা অপসারণের কাজ শুরু হয়েছে। দেখা যাক কি হয়! জেলা প্রশাসক
আনজুমান আরা এ প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়কে বলেন, নড়াইল ও মাগুরা অঞ্চলের বিশাল এলাকার কচুরিপানা ভাটির টানে খুলনার লোনা
পানিতে পাঠানোর জন্য অনেক চেষ্টা করেও কাজ হচ্ছে না। এর সাথে কয়েকটি জেলা জড়িত। এ নিয়ে সংশি-ষ্ট মন্ত্রনালয়ে কথা বলেছি।
এ কাজ শুধু জেলা প্রশাসনের একার নয়। এখানে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

ইংল্যান্ডে জমে উঠেছে ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয়ের লড়াই: ব্যস্ততা
বেড়েছে ব্যাটের তৈরিতে

,নরেন্দ্রপুর গ্রাম থেকে ফিরে■: ইংল্যান্ডে জমে উঠেছে ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয়ের লড়াই। এ লড়াইকে ঘিরে দেশে বর্ষা
মৌসুমেও চাঙ্গা হয়ে উঠেছে ক্রিকেট সামগ্রীর বাজার, বিশেষ করে ব্যাটের। তাই ব্যস্ততা বেড়েছে ‘ব্যাটের গ্রাম’ হিসেবে
পরিচিত যশোর সদর উপজেলার নরেন্দ্রপুর ইউনিয়নের কারিগরদের। এ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে তৈরি ব্যাট বিক্রি হচ্ছে দেশের অন্তত
৩২টি জেলায়। জানা গেছে, নরেন্দ্রপুর ইউনিয়নের নরেন্দ্রপুর গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে তৈরি হচ্ছে ক্রিকেট ব্যাট। এরই ফলে ওই গ্রাম
পরিচিত লাভ করেছে ‘ব্যাটের গ্রাম’ হিসেবে। তবে নরেন্দ্রপুর ছাড়াও এ ইউনিয়নের মিস্ত্রিপাড়া, বটতলা, মহাজেরপাড়া,
রূপদিয়াসহ কয়েকটি গ্রামে এখন তৈরি হচ্ছে ক্রিকেট ব্যাট। এ ব্যাট তৈরিতে ব্যবহার করা হয় ছাতিম, কদম, নিম, পুয়ো,
আমড়াসহ বিভিন্ন প্রকার দেশীয় গাছের কাঠ। শ্রমিকদের পাশাপাশি গৃহিণী ও কিশোর-কিশোরীরাও পুটিং লাগানো, ঘষামাজা,
রঙ করা, স্টিকার লাগানো, প্যাকেটজাত করার কাজ করেন। স্থানীয়রা জানায়, নরেন্দ্রপুর ইউনিয়নে ব্যাট তৈরি শুরু হয় ম‚লত সঞ্জিত
মজুমদার নামে এক ব্যক্তির হাত ধরে। তিনি ১৯৮৪ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে কাঠের শিল্পকমের প্রতি আকৃষ্ট
হন। পরে দেশে ফিরে ক্রিকেট ব্যাট তৈরির পদ্ধতি শেখেন। ১৯৮৬ সালে তিনি বাণিজ্যিকভাবে ব্যাট তৈরি ও স্থানীয় বাজারে বিক্রি শুরু
করেন। সেই থেকে শুরু। পরে তার দেখাদেখি আরো অনেকে জড়িয়ে পড়েন এ পেশায়। সঞ্জিত মজুমদারের দুই ছেলে তপন ও সুমন মজুমদারও
এখন ব্যাট তৈরির কাজ করছেন। তপন জানান, উত্তরবঙ্গের জেলা গুলো ম‚লত তাদের বাজার। দেশের ৩২টি জেলায় এসব ব্যাট বাজারজাত করা
হয়। সাধারণত প‚র্ণ মৌসুম ধরা হয় অগ্রহায়ণ থেকে বৈশাখ পর্যন্ত। তবে এবার বিশ্বকাপের কারণে বর্ষা মৌসুমেও ভালো বিক্রি
হচ্ছে। সঞ্জিত মজুমদার জানান, শুরুতে সব কাজ হাতে করা হলেও এখন তা মেশিনে করা হয়। এতে কাজের গতি বেড়েছে। স্থানীয়ভাবে
মাসে ৪০ থেকে ৫০ হাজার ব্যাট তৈরি হচ্ছে। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক টানা পড়েনের কারণে ব্যবসায় কিছুটা মন্দা যাচ্ছে। তবে
ফরিদপুর অঞ্চলে ‘বইন্যে কাঠ’ নামে একটি গাছের সন্ধান পেয়েছি। খালপাড়ে স্যাঁতসেঁতে জায়গায় হয়, হালকা কিন্তু টেকসই। এ
কাঠ দিয়ে আন্তর্জাতিক মানের ব্যাট তৈরির ইচ্ছা আছে আমার। সঞ্জিত মজুমদারের কাছে ব্যাট তৈরির পদ্ধতি শিখে নিজেই কারখানা
দিয়েছেন গৌরাঙ্গ মজুমদার নামে এক ব্যক্তি। ব্যাট তৈরির সুবাদে এখন তিনি স্বাবলম্বী। পাঁচ-ছয়জন কর্মী নিয়মিত কাজ করেন
তার কারখানায়। অথচ একসময় দিনমজুরি করে তাকে সংসার চালাতে হতো। গৌরাঙ্গ মজুমদার বলেন, প্রায় পাঁচ বছর ধরে ব্যাট তৈরি ও
বিক্রির কাজ করছি। আমার কারখানায় সাত থেকে আট প্রকারের ব্যাট তৈরি হয়। প্রতিদিন ন্য‚নতম ১০০টি ব্যাট তৈরি সম্ভব।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: