ঢাকা | শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১

রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ শুরু হচ্ছে

Admin 1 | প্রকাশিত: ১৮ এপ্রিল ২০১৭ ২১:১৫

Admin 1
প্রকাশিত: ১৮ এপ্রিল ২০১৭ ২১:১৫

বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চূড়ান্ত ঋণচুক্তি সই এবং পক্ষগুলোর মধ্যে চুক্তিপত্র বিনিময় হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক ভারত সফরের সময় ১০ এপ্রিল নয়াদিল্লিতে এই চুক্তিপত্র বিনিময় হয়। ১৬০ কোটি ডলারের এই চুক্তির মাধ্যমে প্রকল্পটির অর্থসংস্থানের বিষয় (ফাইন্যান্সিয়াল ক্লোজার) নিশ্চিত হলো।

এখন মূল বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্মাণকাজ শুরু হবে বলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে। জানতে চাইলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, অচিরেই নির্মাণকাজ শুরু হবে। এর আগে ঠিকাদার কোম্পানির সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তিতে কাজের যে সময়সূচি দেওয়া হয়েছে, সে অনুযায়ীই প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলবে।

অপর দিকে, সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক সুলতানা কামাল প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন। তিনি গতকাল বলেন, এই প্রকল্পের পরিবেশগত সমীক্ষা ও প্রযুক্তি নিয়ে প্রশ্ন আছে। সরকার বলছে, ক্ষতির আশঙ্কা থাকলেও প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা নিয়ে তা নিরসন করা হবে। কিন্তু বাস্তবে এ ধরনের ক্ষতি মোকাবিলা করা প্রায় অসম্ভব। তাই এখনো তাঁরা চাইছেন বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা হোক।

রামপাল প্রকল্পটি বহুল আলোচিত হওয়ার কারণ, এই প্রকল্পকে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন ধ্বংসকারী হিসেবে অভিহিত করে দেশে-বিদেশে পরিবেশবাদীদের বিরোধিতা। পাশাপাশি জাতিসংঘের বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকোও এই প্রকল্পের বিষয়ে তীব্র আপত্তি জানিয়ে এসেছে। এমনকি এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্যের (ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ) বিপন্ন অংশ ঘোষণা করার কথাও ভাবতে পারে বলে ইউনেসকো হুঁশিয়ার করেছিল। তবে এসব বিরোধিতা উপেক্ষা করে সরকার প্রকল্পটির বাস্তবায়ন-প্রক্রিয়া এগিয়ে নিচ্ছে।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, এটা সরকারের অবিশ্বাস্য ধরনের একগুঁয়েমি। সংবেদনহীনতা ও দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকর প্রভাব বোঝার অক্ষমতা এর কারণ। এ জন্য নিঃসন্দেহে সরকার দেশে-বিদেশে নিন্দিত হবে। তিনি বলেন, সুন্দরবন রক্ষায় তাঁদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। তাঁরা তাঁদের ভূমিকা পালন করে যাবেন।

ঋণচুক্তি সই কিংবা প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় চুক্তিপত্র বিনিময়ের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে গণমাধ্যমকে জানানো হয়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এটি প্রধানমন্ত্রীর সফর-সংক্রান্ত কোনো অনুষ্ঠান ছিল না। ওই সময় সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ দিল্লিতে উপস্থিত ছিল বলে তখনই চুক্তিটি সই হওয়া সুবিধাজনক ছিল। কোনো কোনো সংবাদমাধ্যম খবরটি তখন প্রকাশ করেছে।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, রামপাল প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী ‘বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিআইএফপিসিএল)’-এর সঙ্গে প্রকল্পের ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান ভারতের এক্সপোর্ট ইম্পোর্ট (এক্সিম) ব্যাংকের সই হওয়া চূড়ান্ত চুক্তিপত্র ১০ এপ্রিল দুই পক্ষের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে বিনিময় করা হয়। দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে সেই অনুষ্ঠানে বিআইএফপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক উজ্জ্বল কান্তি ভট্টাচার্য এবং এক্সিম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডেভিড রাসকিনহা পরস্পরের মধ্যে চুক্তিপত্র বিনিময় করেন।

এ সময় সেখানে ভারতের পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান, ভারতের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন সিআইআইয়ের চেয়ারম্যান আদি গোদরেজ, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ-সচিব ও বিআইএফপিসিএলের চেয়ারম্যান আহমেদ কায়কাউস এবং উভয় পক্ষের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

চূড়ান্ত ঋণচুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকার এই ঋণের সার্বভৌম নিশ্চয়তা (সভরেন্ট গ্যারান্টি) দিচ্ছে। এ বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে যে রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পটি বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ উদ্যোগে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। দুই দেশই এই প্রকল্পের সমান অংশীদার। প্রকল্পের সব বিদ্যুৎ বাংলাদেশ ব্যবহার করলেও এর লাভ-লোকসানের দায় বিআইএফপিসিএল তথা দুই দেশ সমানভাবে বহন করবে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কেন এককভাবে ঋণের সার্বভৌম নিশ্চয়তা দেবে। বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের সূত্র এ বিষয়ে জানায়, যেহেতু প্রকল্পটি বাংলাদেশে বাস্তবায়িত হচ্ছে সেহেতু সার্বভৌম নিশ্চয়তা দেওয়ার দায়িত্ব বাংলাদেশেরই।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: