ঢাকা | শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১

‘আফগানিস্তানে সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করছে ভারত’

Admin 1 | প্রকাশিত: ২৭ এপ্রিল ২০১৭ ১০:০৮

Admin 1
প্রকাশিত: ২৭ এপ্রিল ২০১৭ ১০:০৮

জঙ্গি সংগঠন টিটিপি ও জেইউএর সাবেক এক মুখপাত্র দাবি করেছেন, এই দুই সংগঠনকে ব্যবহার করছে ভারত ও আফগানিস্তান। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী আজ বুধবার সন্ত্রাসী সংগঠন তেহেরকি-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) ও জামাত-উল-আহরার (জেইউএ) সাবেক মুখপাত্র লিয়াকত আলীর এই স্বীকারোক্তিমূলক বক্তব্য প্রকাশ করেছে।

এহসানউল্লাহ এহসান নামে কুখ্যাত এই লিয়াকত আলী তাঁর বক্তব্যে দাবি করেছেন, আফগানিস্তানে নির্বিঘ্নে চলাফেরায় ওই সংগঠন দুটিকে সাহায্য করছে আফগানিস্তান ও ভারতের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো। পাশাপাশি আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তানে অনুপ্রবেশে দিকনির্দেশনা দিয়েছে ভারতের প্রধান গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’। খবর রয়টার্স ও ডনের।
তবে রয়টার্সসহ অন্য গণমাধ্যম এ বক্তব্য যাচাই করতে লিয়াকতের সঙ্গে যোগযোগ করতে সক্ষম হয়নি। এ ব্যাপারে টিটিপির কারও মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। আফগানিস্তানের এক জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা কর্মকর্তা লিয়াকতের এ দাবি নাকচ করে দিয়েছেন।

লিয়াকত আলী গত সপ্তাহে আত্মসমর্পণ করেন। আজ তাঁর স্বীকারোক্তিমূলক বক্তব্যের ভিডিও চিত্র প্রকাশ করা হয়েছে। ওই ভিডিও চিত্রে লিয়াকত আলীর অভিব্যক্তিতে টিটিপি ও জেইউএর জ্যেষ্ঠ নেতাদের প্রতি অসন্তুষ্টি ফুটে ওঠে। তিনি সংগঠন দুটির নেতাদের ধান্দাবাজ বলে উল্লেখ করে বলেন, সংগঠন দুটি নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য ইসলামকে বিকৃত করেছে। তারা তরুণ-তরুণীদের অন্তর্ভুক্ত করতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইসলামের অপব্যাখ্যা দিয়ে প্রচারণা চালানোর বিষয়ে সক্রিয় রয়েছে।

ভিডিও চিত্রটি প্রকাশ করার পর পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল আসিফ গফুর টুইট পোস্টে বলেন, ‘এহসান উল্লাহ এহসান পাকিস্তানকে অস্থিতিশীল করতে বিদেশি শত্রুদের এজেন্ডা ও নকশা প্রকাশ করেছেন। আমাদের তরুণেরাই আমাদের শক্তি। তারা কখনো অন্যের শিকার হবে না।’

লিয়াকত আলী বলেন, আমি ২০০৮ সালে কলেজছাত্র থাকাকালে টিটিপিতে যোগ দিই। আমি টিটিপি ও জামাত-উল-আহরারের মুখপাত্র ছিলাম। গত নয় বছরে আমি সংগঠন দুটির অনেক কিছু দেখেছি। এরা নিজেদের স্বার্থে মানুষকে ইসলামের নামে বিভ্রান্ত করছে, বিশেষ করে তরুণদের। ওই সংগঠন দুটির মধ্যকার স্বতন্ত্র একটি গ্রুপ অপহরণ করে টাকা আদায় করছে ও নিরপরাধ লোকদের হত্যা করছে। এরা স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা করছে এবং জনসমাগমস্থলে বোমা হামলা চালাচ্ছে। ইসলাম আমাদের এ শিক্ষা দেয় না। ওয়াজিরিস্তানে অভিযান শুরু হলে এই সংগঠন দুটির নেতারা নেতৃত্ব ও ক্ষমতার জন্য নিজেদের মধ্যে লড়াই শুরু করে। হেকিমুল্লাহ নিহত হওয়ার পর টিটিপি নেতৃত্বের সংকটে পড়ে। ওমর খালিদ খোরাসানি ও সাজনা ও মোল্লাহ ফাজুল্লাহর পৃথকভাবে প্রচারণা অভিযান শুরু করেন। সবাই ক্ষমতা চায়। কাজেই শ‌ুরা লটারির মাধ্যমে মোল্লাহ ফাজুল্লাহকে নেতা নির্বাচিত করে।

লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত কোনো নেতার কাছ থেকে আপনি কি আশা করতে পারেন? পাশাপাশি ফাজুল্লাহ যিনি, তাঁর শিক্ষকের মেয়েকে তুলে নিয়ে জোর করে বিয়ে করেন, তাঁর কাছ থেকে কী আশা করতে পারেন? তাঁর মতো লোক ইসলামের সেবা করার জন্য উপযুক্ত নয়।

এহসান বলেন, ‘উত্তর ওয়াজিরিস্তানে অভিযানের পর আমরা আফগানিস্তান পালিয়ে যাই।’ তিনি দাবি করেন, সেখানে আমরা ভারত ও “র”-এর সঙ্গে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করি। তারা (টিটিপির নেতারা) ভারতের সমর্থন পান। প্রতিটি কর্মকাণ্ডের জন্য তারা ভারত থেকে অর্থ পান। টিটিপির নেতারা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সংগঠনের সেনাদের সামনের দিকে ঠেলে দিয়ে নিজেরা পালিয়ে থাকে।

ভারত ও ‘র’-এর কাছ থেকে সাহায্য নেওয়া শুরু করার পর আমি খোরাসানি বলেছিলাম যে আমরা কাফেরদের সহায়তা করছি এবং আমরা তাদের আমাদের নিজেদের দেশের লোকজনকে হত্যা করতে সহায়তা করছি। এর জবাবে খোরাসানি বলেন, পাকিস্তানকে অস্থিতিশীল করতে ইসরায়েলও যদি টাকা দেয়, তবে নির্দ্বিধায় আমরা তাদের সহায়তা নেব। এই পর্যায়ে আমার কাছে পরিষ্কার হয় যে টিটিপির নেতারা নিজেদের কিছু স্বার্থসিদ্ধির জন্য সংগঠনটিকে ব্যবহার করছে।

এহসান বলেন, ‘র’-এর সঙ্গে যোগাযোগ ও সমন্বয়ের মাধ্যমে আফগানিস্তানে এই সংগঠনগুলো কমিটি গঠন করে। আফগানিস্তানে নির্বিঘ্নে চলাফেরায় সহায়তা করতে ভারত তাদের কাছে কিছু কাগজপত্র সরবরাহ করে। আফগানিস্তানে ওই কাগজপত্রগুলো পাকিস্তানের আইডি কার্ডের মতো কাজ করত। আফগানিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতির বিবেচনায় ওই কাগজপত্র ছাড়া সন্ত্রাসীদের নির্বিঘ্নে চলাফেরা করা কঠিন ছিল। কোথাও যাওয়ার আগে এই সন্ত্রাসীরা আফগানিস্তান ও ভারতের নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করত। এরপর তারা অনুমোদন দিত এবং পাকিস্তানে অনুপ্রবেশের পথ বাতলে দিত।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: