ঢাকা | শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১
রণতরিবহর ও ডুবোজাহাজের পর ‘থাড’

দ. কোরিয়ায় বসল ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা

Admin 1 | প্রকাশিত: ২৭ এপ্রিল ২০১৭ ২১:০৫

Admin 1
প্রকাশিত: ২৭ এপ্রিল ২০১৭ ২১:০৫

পারমাণবিক শক্তিসম্পন্ন ডুবোজাহাজ পাঠানোর পরদিনই গতকাল বুধবার মিত্রদেশ দক্ষিণ কোরিয়ায় আলোচিত ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ‘থাড’ স্থাপনের কাজ শুরু করল যুক্তরাষ্ট্র। উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র এবং পরমাণু পরীক্ষা নিয়ে উত্তেজনার মধ্যে এই প্রতিরক্ষাব্যবস্থা মোতায়েন করছে দেশটি। থাড হচ্ছে টিএইচএএডি বা ‘টার্মিনাল হাই-অলটিচিউড এরিয়া ডিফেন্স’ কথাটির সংক্ষেপ। এটি শত্রু ক্ষেপণাস্ত্র আকাশেই ধ্বংস করার একটি ব্যবস্থা।

কোরীয় উপদ্বীপে এ উত্তেজনার মধ্যে উত্তর কোরিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে গতকালই হোয়াইট হাউসে সিনেট সদস্যদের ব্রিফ করার কথা ছিল মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিসের। বলা হচ্ছে সিনেটরদের এ ধরনের ব্রিফিং একটি বিরল ঘটনা।

আঞ্চলিক পরাশক্তি ও উত্তর কোরিয়ার মিত্র চীন শুরু থেকে সে দেশের সীমান্তের এত কাছে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা স্থাপনের বিরোধিতা করে আসছে। তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, থাড এই অঞ্চলের নিরাপত্তাব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করবে।

গতকাল সকালে সামরিক যানে করে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলের আড়াই শ কিলোমিটার দক্ষিণের একটি সাবেক গলফ কোর্সে নিয়ে যাওয়া হয় থাডের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম। ওই গলফ কোর্সেই স্থাপন করা হবে এই প্রতিরক্ষাব্যবস্থা।

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র এবং পরমাণু হামলার আশঙ্কায় সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে এই থাড মোতায়েনের সিদ্ধান্ত হয়। তবে তা পূর্ণাঙ্গভাবে কার্যকর করতে এ বছরের শেষ নাগাদ লেগে যাবে।

থাডের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম স্থাপনের জায়গায় নিয়ে যাওয়ার সময় কয়েক শ বাসিন্দা বিক্ষোভ করেন। সেখানকার অনেকে মনে করেন, থাড নামের সুরক্ষাব্যবস্থা নিজেই একটি লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হতে পারে। এতে আশপাশের বাসিন্দারা ঝুঁকির মধ্যে থাকবে। বিক্ষোভকারীরা সরঞ্জাম বহনকারী সামরিক যানকে লক্ষ্য করে পানির বোতল ছুড়ে মারে। পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে তাদের প্রতিহত করার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়।

চীন বলেছে, থাড মোতায়েনের সিদ্ধান্ত উত্তর কোরিয়াকে তেমন প্রভাবিত করতে পারবে না। দক্ষিণ কোরিয়ার মাটিতে থাড মোতায়েনে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ক্ষতিগ্রস্ত হবে উল্লেখ করে এর আগে রাশিয়া এবং চীন এর বিরুদ্ধে সম্মিলিত অবস্থান জোরদার করার কথা বলেছে।

এর আগে মঙ্গলবারই যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক শক্তিচালিত ডুবোজাহাজ ইউএসএস মিশিগান দক্ষিণ কোরিয়ার বুশান নৌঘাঁটিতে পৌঁছায়। সাবমেরিনটি এ অঞ্চলে আসা মার্কিন বিমানবাহী রণতরি কার্ল ভিনসনের সঙ্গে যুক্ত হবে বলে মার্কিন নৌবাহিনী জানিয়েছে।

পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র ছাড়াও ইউএসএস মিশিগানে ১৫৪টি টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র, ৬০ জন বিশেষ প্রশিক্ষিত সেনা এবং কয়েকটি মিনি-সাবমেরিন রয়েছে বলে দক্ষিণ কোরিয়ার গণমাধ্যম জানিয়েছে। কোরীয় উপদ্বীপে মার্কিন শক্তি প্রদর্শনের অংশ হিসেবে কার্ল ভিনসনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ইউএসএস মিশিগান সামরিক মহড়া চালাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রণতরি কার্ল ভিনসন অস্ট্রেলিয়ায় মহড়া শেষে কয়েক দিন আগে কোরীয় উপদ্বীপের উদ্দেশে রওনা হয়। উত্তর কোরিয়া মার্কিন যুদ্ধজাহাজ মোতায়েনে তীব্র নিন্দা করে সেগুলো হামলা চালিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়ার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে।

হোয়াইট হাউসে ব্রিফিং

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে হোয়াইট হাউসে সিনেট সদস্যদের ব্রিফ করবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস। আরও উপস্থিত থাকবেন জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক ড্যান কোট এবং সশস্ত্র বাহিনীর জয়েন্ট চিফ অব স্টাফের প্রধান জোসেফ ডানফোর্ড। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই ব্রিফে সব সিনেটরকে উপস্থিত থাকতে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। একে বিরল ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

হোয়াইট হাউস সূত্র জানায়, ক্যাপিটল হিলে প্রায়ই নানা বিষয়ে শুনানি হয়। পররাষ্ট্রবিষয়ক সিনেট কমিটিকেও নানা বিষয়ে অবহিত করা হয়। কিন্তু হোয়াইট হাউসে এ ধরনের ব্রিফিং ব্যতিক্রম।

উত্তর কোরিয়া এ পর্যন্ত পাঁচটি পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালায়। মনে করা হয়, দেশটি যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত পৌঁছাতে সক্ষম—এমন দূরপাল্লার পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করছে। এ হামলার আশঙ্কা থেকে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র-উত্তর কোরিয়ার সম্পর্ক উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। কূটনৈতিক চাপের পাশাপাশি কোরীয় উপদ্বীপে যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: