মূল্য সংযোজন কর (মূসক) এ দেশে ভ্যাট নামেই বেশি পরিচিত। এটি ভোক্তার ওপর আরোপিত কর। হিসাবনির্ভর আধুনিক কর এই ভ্যাট। একেক দেশে একেক হার হলেও বাংলাদেশে ১৫ শতাংশ মূসক আরোপ করা হয়।
একটি পণ্য আমদানি বা উৎপাদন থেকে খুচরা পর্যায় পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে যে মূল্য সংযোজন হবে, এর ওপরেই মূসক বসে। এই কর উৎপাদন থেকে খুচরা বিক্রি পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরে আরোপ ও আদায় করা হলেও চূড়ান্তভাবে কেবল পণ্য বা সেবার ভোক্তাকে বহন করতে হয়। কেননা, মধ্যবর্তী স্তরগুলোতে ব্যবসায়ীরা তাঁদের মূল্য সংযোজনের ভিত্তিতে যে মূসক দেবেন, তা পরবর্তী স্তরের বিক্রেতার কাছ থেকে আদায় করে নিজের টাকা রেখে বাকিটা সরকারকে দেবেন। এভাবেই নিজেদের রেয়াত নিয়ে ফেলেন ব্যবসায়ীরা।
মূসক কখনোই ব্যবসায়ী বা বিক্রেতার দায় নয়। শেষ পর্যন্ত এটি পরিশোধ করেন ভোক্তারাই। উদাহরণ দিয়ে বলা যেতে পারে, একটি পণ্য কেনার সময় ক্রেতা হয়তো দেখছেন, তিনি ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিচ্ছেন। কিন্তু আসলে তা নয়, প্রতি স্তরে যে ভ্যাট ব্যবসায়ীরা দিয়েছেন, তাও পণ্যের দামের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকে। তাই সব ভ্যাট ক্রেতার ওপরে বর্তায়।
আগামী ১ জুলাই থেকে বাংলাদেশে যে নতুন মূসক আইন বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে, তাতে ১৫ শতাংশ মূসক আরোপ করা হবে। মৌলিক খাদ্যপণ্য, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, গণপরিবহন সেবাসহ বিভিন্ন খাতে মূসক অব্যাহতি দেওয়া আছে। বিদ্যমান আইনেও মূসক হার ১৫ শতাংশই আছে। তবে প্রজ্ঞাপন, সংকুচিত ভিত্তিমূল্য ও ট্যারিফ মূল্য নির্ধারণ করে বহু পণ্যের মূসক হার কমিয়ে রাখা হয়েছে।
ব্যবসায়ীদের সুবিধা
সব ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাট দিতে হবে না। ৩০ লাখ টাকার নিচে বার্ষিক লেনদেন বা বেচাকেনা হলে ওই ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন নিতে হবে না। কোনো ভ্যাটও দিতে হবে না। এই ধরনের ক্ষুদ্র ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখা হয়েছে। তবে ৮০ লাখ টাকা পর্যন্ত টার্নওভারের ক্ষেত্রে ৩ শতাংশ হারে টার্নওভার কর দিতে হবে। তবে সিগারেট ও মদ খাতের উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা এই সুবিধা পাবেন না।
প্যাকেজ ভ্যাট
প্যাকেজ ভ্যাট বহাল রাখার দাবি জানিয়ে আসছেন ব্যবসায়ীরা। ‘প্যাকেজ ভ্যাট’ হিসাবে যে টাকা নেওয়া হচ্ছে, তা কোনোভাবে মূসক নয়। মূল্য সংযোজনের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। এটি বার্ষিক থোক কর। নতুন মূসক আইনেও এর কোনো সমর্থন নেই। ছোট ব্যবসায়ী যাঁদের বার্ষিক টার্নওভার সাত লাখ টাকার মধ্যে, তাঁদের হিসাব যাতে রাখতে না হয় সে জন্য এ দেশে প্যাকেজ ভ্যাট ব্যবস্থা চালু হয়।
উন্নত দেশ, বেশি মূসক
বর্তমানে ১৬০টি দেশে মূসক ব্যবস্থা আছে। একেক দেশে একেক রকম হার থাকে। যে দেশে হিসাব ব্যবস্থা যত উন্নত, সেই দেশে মূসক হার বেশি হলেও তা আদায়ে সমস্যা হয় না। এ জন্য ইউরোপ, আমেরিকাসহ উন্নত দেশে মূসক হার বেশি। তবে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশেই মূসক হার বেশি।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: