
তিনি হয়ে গিয়েছিলেন ফেসবুকের চরিত্র। ভার্চ্যুয়াল জগতের মানুষ। নাসির হোসেন কেন দলে নেই, নাসির হোসেন দলে থাকলে কী হতো, নাসির হোসেন কার ইচ্ছা-অনিচ্ছায় দলে নেই, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আরও কত আলোচনা!
সেই নাসির অবশেষে সুযোগ পেলেন আয়ারল্যান্ড সিরিজের দল আর চ্যাম্পিয়নস ট্রফির স্ট্যান্ডবাই তালিকায়। সেই নাসিরকে ডাবলিনে কাল দেখা গেল বাংলাদেশ দলের সেরা এগারোতেও। কিন্তু নাসির কি নাসিরের মতো ফিরলেন?
মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ জুটিতেই বাংলাদেশ ম্যাচ জিতে যাওয়ায় নাসিরকে ব্যাটিংয়ে নামতে হয়নি। তবে নিউজিল্যান্ড ইনিংসের একেবারে শুরুতে ক্যাচ ফেলে প্রত্যাবর্তন ম্যাচের শুরুটা ভালো হয়নি তাঁর। মাশরাফি বিন মুর্তজার প্রথম ওভারের তৃতীয় বলে স্কয়ার লেগে সহজ ক্যাচ দিলেন টম ল্যাথাম। নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক তখন শূন্য রানে। অপ্রস্তুত নাসিরের পিচ্ছিল হাত থেকে পড়ে গেল ক্যাচ!
পরে বাংলাদেশের ফিল্ডাররা ক্যাচের সুযোগ নষ্ট করেছেন আরও, অনেক সময় গ্রাউন্ড ফিল্ডিংও হয়েছে দৃষ্টিকটু। কিন্তু সব ছাপিয়ে নাসিরের ক্যাচ ফেলার ছবিটাই ভেসে উঠছিল বারবার। অনেক লড়াইয়ের পর কেউ দলে ফিরলে সবার চোখ যে তাঁর ওপরই থাকে! ল্যাথাম তখন আউট হলে কিউইদের স্কোর কত হতো সেটি অনুমানের বিষয়। তবে আউট না হওয়ায় রান হয়েছে ২৭০। শূন্যতেই জীবন পাওয়া ল্যাথামের অবদান তাতে ৮৪।
নাসির দাবি করতে পারেন, ‘শেষ পর্যন্ত ল্যাথামকে তো আমিই ফিরিয়েছি!’ অবশ্যই। ল্যাথামকে বোল্ড করেছেন, তার আগে নিল ব্রুমকে আউট করে দ্বিতীয় উইকেটে তাদের ১৩৩ রানের জুটিও ভেঙেছেন নাসির। যাঁর বলে ইনিংসের প্রথম ওভারেই ল্যাথামের ক্যাচ ফেলেছিলেন, সেই মাশরাফি সেই স্কয়ার লেগে দাঁড়িয়েই ব্রুমের ক্যাচ নিয়ে নাসিরকে উপহার দেন প্রথম উইকেট।
গত বছরের অক্টোবরে ইংল্যান্ড সিরিজের পর থেকেই নাসির জাতীয় দলে ব্রাত্য। বাতাসে ভাসতে থাকে অনেক গুঞ্জন। কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের পছন্দের তালিকায় নেই বলে দলে নাসিরের সুযোগ হচ্ছে না! বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানও নাকি সন্তুষ্ট নন তাঁর ওপর। যার কোনোটাই নাসিরের জন্য স্বস্তির ছিল না। একপর্যায়ে তিনি নিজেও মানতে শুরু করেছিলেন, জাতীয় দলে ফিরতে হলে আগে কী করেছেন, সেসব আঁকড়ে থেকে লাভ নেই। তাঁর দরকার একটা নতুন সুযোগ, যা দিয়ে আবারও পা রাখতে পারবেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে।
ক্লনটার্ফ ক্রিকেট ক্লাব মাঠে কাল সে সুযোগটা আসার আগে নাসিরের সম্বল ছিল ঘরোয়া ক্রিকেট। আয়ারল্যান্ড যাওয়ার আগে প্রিমিয়ার লিগে দুর্দান্ত খেলে গেলেন। গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের হয়ে চার ম্যাচে রান ১০৬*, ৪১*, ১৫* ও ৬৪। শেষ ম্যাচে উইকেটও পেয়েছেন তিনটি। সেঞ্চুরি করেছেন গত মার্চ-এপ্রিলে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-২৩ দলের আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট ইমার্জিং কাপে নেপালের বিপক্ষেও।
এত কিছুর পরও শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে কি একটু ঘাটতি রয়ে গিয়েছিল নাসিরের? নয়তো ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ দলের অন্যতম সেরা এই ক্রিকেটারের হাত ফসকে বল পড়ে! নাসিরের দুর্ভাগ্য, ওই ক্যাচ মিসের জন্য প্রায় সাড়ে সাত মাস পর আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নেমেই কেঁপে উঠলেন তিনি। ফেসবুকের দেয়াল থেকে মাঠে নেমেই যেন ঝাঁপ দিলেন সমালোচনার আগুনে। ৯ ওভারে ৪৭ রানে ২ উইকেট—এমন বোলিংও ঢাকা পড়ে যাচ্ছিল ল্যাথামকে দেওয়া জীবনের ছায়ায়।
বাজে ফিল্ডিং করে সমালোচনার ‘ভাগ’ পেয়েছেন অন্যরাও। দুটি ক্যাচ নেওয়া মাহমুদউল্লাহও আছেন সে তালিকায়। নাসির ক্যাচ ফেলেন ইনিংসের তৃতীয় বলে, আর মাহমুদউল্লাহ শেষ থেকে তৃতীয় বলে। সেটাও লোপ্পা ক্যাচ। রুবেল হোসেনকে লং অন দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ক্যাচটা দিয়েছিলেন রস টেলর।
বাকি দুই বলে মাত্র ২ রান যোগ হওয়ায় নিউজিল্যান্ডের ইনিংসে মাহমুদউল্লাহর ক্যাচ ফেলার কোনো প্রভাব নেই। কিন্তু ফিল্ডিংয়ে শুরু আর শেষের এমন মিল একটা শঙ্কা তো জাগায়ই। চ্যাম্পিয়নস ট্রফি যে সামনেই!
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: