ঢাকা | শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
৭০তম কান চলচ্চিত্র উৎসব

শুধুই লালগালিচা নয়...

Admin 1 | প্রকাশিত: ২৫ মে ২০১৭ ২০:৫৯

Admin 1
প্রকাশিত: ২৫ মে ২০১৭ ২০:৫৯

 

কানের লালগালিচায় সোনম কাপুর। ছবি: এএফপিকানের লালগালিচায় সোনম কাপুর। ছবি: এএফপি

প্রতিবছর কান চলচ্চিত্র উৎসবে লালগালিচায় পোশাক ও সৌন্দর্যে ক্যামেরার সব আলো কেড়ে নেন ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন। ২০০২ থেকে এখন পর্যন্ত প্রতিবছর কানে হেঁটেছেন। বেশির ভাগ অংশগ্রহণই প্রসাধনী পণ্যের প্রতিনিধি হয়ে। তাঁর পরে কানের লালগালিচায় যুক্ত হয়েছে আরও বেশ কয়েকটি বলিউড মুখ।
সৌন্দর্যের ঝলক ও জৌলুশে এই তারকাদের বলিউড প্রতিনিধি হিসেবে দেখলেও কান উৎসবে ভারতীয় ছবির ইতিহাসের মূল আকর্ষণ অন্য জায়গায়। এ কথারই যেন প্রতিধ্বনি হলো সম্প্রতি খ্যাতিমান অভিনেত্রী শাবানা আজমির টুইটে। লিখেছেন, ‘১৯৭৬ সালে নিশান্ত মনোনীত হয়। তখন সবকিছু ছিল বেশ সাধারণ। ছবিই ছিল উৎসবের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, পোশাক নয়।’
বিভিন্ন সময়ে ভারতের সমান্তরাল ও আঞ্চলিক ছবিগুলো অংশগ্রহণ করেছে কানের অফিশিয়াল বিভিন্ন বিভাগে। ২০১৩ সালে ৬৬তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে পালিত হয় ভারতীয় সিনেমার ১০০ বছর পূর্তি। এবারও সিনেফন্ডেশন বিভাগে মনোনীত হয়েছে ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার ছাত্রী পায়েল কাপাডিয়ার স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি আফটারনুন ক্লাউডস।

সত্যজিৎ রায়ের পথের পাঁচালী পায় ‘বেস্ট হিউম্যান ডকুমেন্টারি’ হিসেবে পাম দ’র পুরস্কারসত্যজিৎ রায়ের পথের পাঁচালী পায় ‘বেস্ট হিউম্যান ডকুমেন্টারি’ হিসেবে পাম দ’র পুরস্কার

শুরুতেই বাজিমাত!
১৯৪৬ সাল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোল শেষে কানের পর্দা উঠেছে। সেখানেই ‘গ্রাঁ প্রি দু ফেস্তিভাল এন্তারন্যাশনাল দু ফিল্ম’ পুরস্কার জিতে নেয় চেতন আনন্দের ছবি নীচা নগর। সেকালের ‘গ্রাঁ প্রি’ আজ পাম দ’র নামে পরিচিতি। ১৯৫২ সালে মনোনীত হয় আর ভি সান্তারামের ছবি অমর ভোপালি। ১৯৫৫ সালে বুট পলিশ পাম দ’র বিভাগে মনোনীত হয়। শিশু অভিনেতা নাজ তুলে নেয় বিশেষ পারফরমেন্স পুরস্কার। ১৯৫৬ সালে রাজবংশ খান্নার প্রামাণ্যচিত্র গোটোমা দ্য বুড্ঢা পায় জুরি পুরস্কার।

বাংলায় জয়
ভারতীয় ছবি হিসেবে কান চলচ্চিত্র উৎসব অংশগ্রহণে বাংলা ভাষার ছবি ও পরিচালকদের আছে বিশেষ অবদান। ১৯৫৪ ও ১৯৫৫ সালে পরপর দু’বছর বিমল রায়ের ছবি দো বিঘা জমিন ও বিরাজ বহু মনোনীত হয় পাম দ’র বিভাগে। এরপরই ঘটে এক যুগান্তকারী ঘটনা। উপমহাদেশের কিংবদন্তি নির্মাতা সত্যজিৎ রায়ের পথের পাঁচালী পায় ‘বেস্ট হিউম্যান ডকুমেন্টারি’ হিসেবে পাম দ’র পুরস্কার। এ ছাড়া বিভিন্ন বছরে নানা বিভাগে মনোনীত হওয়া বাংলা চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে আছে সত্যজিৎ রায়ের ঘরে-বাইরে, পরশপাথর, দেবী ও গণশত্রু এবং বিমল রায়ের সুজাতা, মৃণাল সেনের একদিন প্রতিদিন। মৃণালের ছবি খারিজ জুরি পুরস্কার জেতে এবং খণ্ডহর দেখানো হয় ‘আঁ সার্তেন রিগার্দ’ বিভাগে। দেখানো হয় গৌতম ঘোষের অন্তর্জলি যাত্রা ও গুড়িয়া এবং সন্দীপ রায়ের উত্তরণ। ‘কানস ক্ল্যাসিক’ হিসেবে দেখানো হয় সত্যজিৎ রায়ের চারুলতা ছবিটি।নিশান্ত-এর প্রদর্শনী উপলক্ষে কানে শাবানা আজমি, শ্যাম বেনেগাল ও স্মিতা পাতিল। ছবি: টুইটারনিশান্ত-এর প্রদর্শনী উপলক্ষে কানে শাবানা আজমি, শ্যাম বেনেগাল ও স্মিতা পাতিল। ছবি: টুইটার

আরও অংশগ্রহণ
বিভিন্ন সময়ে আহমেদ আব্বাসের পরদেশি, মনি ভট্টাচার্যের মুঝে জিনে দো, এম এস সাত্থুর গরম হাওয়া, সাজি এন কারুনের স্বহাম, শ্যাম বেনেগালের নিশান্ত মনোনীত হয় পাম দ’র বিভাগে। এ ছাড়া পাম দ’রে খুব একটা আওয়াজ তুলতে না পারলেও ভারতীয় তারকা ও সিনেমাওয়ালাদের নিয়মিত যাতায়াত ছিল উৎসবটিতে। অন্যান্য বিভাগে জিতেও নেয় কিছু পুরস্কার। মীরা নায়ারের সালাম বোম্বে এবং মুরালি নায়ারের মারান সিমহাসানাম জিতে নেয় ক্যামেরা দ’র। এই বিভাগে বিশেষ পুরস্কার পায় সাজি এন কারুনের পিরাভি এবং ভারতীয় বংশোদ্ভূত পরিচালক দীপা মেহতার ছবি স্যাম অ্যান্ড মি। যদিও সিনেমাটি মনোনীত হয় কানাডার সিনেমা হিসেবে। আসিফ কাপাডিয়ার স্বল্পদৈর্ঘ্য দ্য শিপ থিফ ‘সিনেফন্ডেশন অ্যাওয়ার্ড’ জেতে। ছবিটি যুক্তরাজ্যের হয়ে লড়াই করে। মনীশ ঝার স্বল্পদৈর্ঘ্য আ ভেরি ভেরি সাইলেন্ট ফিল্ম জিতে নেয় জুরি প্রাইজ।
কানের আঁ সার্তেন রিগার্দ বিভাগে বিভিন্ন সময় দেখানো হয় ভারতীয় অন্যান্য আঞ্চলিক ছবিও। এর মধ্যে আছে মণিপুরি পরিচালক আরিবাম সেয়াম শর্মার ইশানৌ, সাজি এন কারুনের বাণাপ্রস্থাম, সুশান্ত মিশ্রর ইন্দ্রধনুরা চাই, মুরালি নায়ারের আরিমপারা, অসিম আলুওয়ালির মিস লাভলি, কানু বেলের তিতলি, নিরাজ ঘেওয়ানের মাসান ও গুরবিন্দার সিংয়ের চৌথি কোট।পথের পাঁচালীপথের পাঁচালী
আউট অব কমপিটিশন বিভাগে দেখানো হয় দেবদাস ও মুনসুন শুটআউট। বিশেষ প্রদর্শনী বিভাগে দেখানো হয় বোম্বে টকিজ। অনুরাগ কাশ্যপের গ্যাংস অব ওয়াসিপুর-এর দুই কিস্তি ও আগলি দেখানো হয় ডিরেক্টরস’ ফোর্টনাইট বিভাগে। পেডেলারস ও দ্য লাঞ্চবক্স দেখানো হয় ইন্টারন্যাশনাল ক্রিটিকস উইকে। ২০১৩ সালে উৎসবের পর্দা উঠে অমিতাভ বচ্চনের হাতে। বিদ্যা বালান ও নন্দিতা দাস অংশগ্রহণ করেছিলেন কানের বিচারক হিসেবে।
কান মনোনয়নের তালিকায় বলিউডের জনপ্রিয় সিনেমাগুলো নেই, এ সত্যি। তবে কান যে সিনেমা ফেরিওয়ালাদের বড় বাজার, এ খবর আছে বলিউডের কাছে। আঞ্চলিক ছবি থেকে শুরু করে বলিউড-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ভিড় জমাচ্ছেন মার্শ দু ফিল্মে (কানের সিনেমা বাজার)। এবার তেলেগু ব্লকবাস্টার ছবি বাহুবলী টু: দ্য কনক্লুশন দেখানো হয় সেখানে। মালয়ালম ছবি সংঘামিত্রার ইউনিটও হাজির হয়েছিল ছবির প্রচারে। এসেছিলেন নায়িকা শ্রুতি হাসান ও সংগীত পরিচালক এ আর রহমানও।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: