
অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গেই কেন যেন কখনোই খুব ভালো খেলতে পারে না বাংলাদেশ। টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেই জয় মাত্র একটি। ২০০৫ সালের জুনে ওয়েলসের কার্ডিফে ন্যাটওয়েস্ট ত্রিদেশীয় সিরিজে রিকি পন্টিং, অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, গ্লেন ম্যাকগ্রা আর ম্যাথু হেইডেনদের সর্বজয়ী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাশরাফিদের সেই জয়টাই প্রথম এবং শেষ। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এখনো পর্যন্ত ২০টি ম্যাচে (একটি অবশ্য বৃষ্টির কারণে মাঠেই গড়াতে পারেনি, ২০১৫, ব্রিসবেন) বেশির ভাগ সময়ই হার এসেছে বড় ব্যবধানে। ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতা’ বলতে যা বোঝায়, সেটি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খুব কমই দেখাতে পেরেছে বাংলাদেশ। কার্ডিফের জয় পাওয়া ম্যাচটি বাদ দিয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাকি ১৮ ম্যাচের মাত্র চারটিতে জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েছিল বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়ার শক্তিমত্তা কিংবা দলের অনভিজ্ঞতা পাশাপাশি ব্যাটিং-বোলিং ব্যর্থতার কারণে ম্যাচগুলো জেতা যায়নি। আজ ওভালে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে সেই ম্যাচগুলোর স্মৃতি মনে করা যেতেই পারে...শাহরিয়ার নাফীসের ৭৫ রানে কেন্টারবুরিতে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশ । ছবি: এএফপি
কেন্টারবুরি, ২০০৫
এই ম্যাচটা বিখ্যাত ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য। ৭৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে কেন্টারবুরির এই ম্যাচে বাংলাদেশ যখন ধুঁকছে, ব্রেট লি-জেসন গিলেস্পিরা যখন নিজেদের সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ওপর, ঠিক তখনই প্রতিরোধের দেয়াল গড়েন এক তরুণ উদীয়মান ব্যাটসম্যান—শাহরিয়ার নাফীস। ১৫২ মিনিট ব্যাট করে ১১৬ বলে নাফীস খেলেন ৭৫ রানের এক ইনিংস। শেষের দিকে ১০৫ বলে ৭১ রানে করে নাফীসকে দারুণ সঙ্গ দেন উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান খালেদ মাসুদ। নাফীস-মাসুদের ৯৪ রানের জুটির পাশাপাশি খালেদ মাসুদ ও খালেদ মাহমুদের ৫৭ রানের জুটি বাংলাদেশের রানটা তুলে দেয় ২৫০-এ। মাহমুদ করেন ২২। আগে হাবিবুল বাশারের ব্যাট থেকে আসে ৩০। অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিংয়ের সময় বাংলাদেশও দারুণ সম্ভাবনা জাগিয়েছিল। ৮৩ রানেই পড়ে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার ৩ উইকেট। ড্রেসিং রুমে ফিরেছিলেন গিলক্রিস্ট, হেইডেন, পন্টিংয়ের মতো ব্যাটসম্যানরা। নড়েচড়ে বসেছিলেন সবাই। তবে ক্লার্কের ৮০ আর সাইমন্ডসের ৪২ অস্ট্রেলিয়ার মানরক্ষা করে দারুণভাবেই।
আবদুর রাজ্জাকের বলে ২০০৬ সালে জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েছিল বাংলাদেশ। ছবি: এএফপিচট্টগ্রাম, ২০০৬
এখনো পর্যন্ত সেটিই হয়ে আছে বাংলাদেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার একমাত্র পূর্ণাঙ্গ সফর। দুই টেস্ট ও তিন ওয়ানডের সেই সফরে ফতুল্লার প্রথম টেস্টে বাংলাদেশ জয়ের দারুণ সম্ভাবনা জাগিয়েছিল। কিন্তু রিকি পন্টিংয়ের অসাধারণ এক সেঞ্চুরিতে অস্ট্রেলিয়া টেস্ট ম্যাচটি জেতে ৩ উইকেটে। চট্টগ্রামের দ্বিতীয় টেস্টে জেসন গিলেস্পি অপ্রত্যাশিতভাবেই করেছিলেন এক ডাবল সেঞ্চুরি। চট্টগ্রামে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া জয় পায় ৪ উইকেটে। এই ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে বাংলাদেশ ১৯৫ রানে গুটিয়ে গেলেও সেই রান খুব সহজে টপকাতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। বাঁ হাতি স্পিনার আবদুর রাজ্জাক ৩৬ রানে ৩ উইকেট নিয়ে দারুণ প্রতিরোধ গড়েছিলেন। গিলক্রিস্ট, ক্যাটিচ, ক্লার্ক, সাইমন্ডস ও পন্টিং আউট হয়ে ড্রেসিংরুমে ফেরেন। রাজ্জাকের ৩ উইকেট পাশাপাশি মাশরাফি বিন মুর্তজা ও তুষার ইমরান নেন একটি করে উইকেট। ম্যাচ শেষে সেই পুরোনো আক্ষেপটাই ঘিরে ধরে বাংলাদেশকে—ম্যাচে ব্যাটিংটা যদি ভালো হতো।ব্যাটিং ব্যর্থতায় ২০০৮ সালে ডারউইনের ম্যাচটি হারতে হয় বাংলাদেশকে। ছবি: এএফপি
ডারউইন, ২০০৮
২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে তিন ওয়ানডের সিরিজ খেলতে অস্ট্রেলিয়া গিয়েছিল বাংলাদেশ। সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে ডারউইনের মারারা ক্রিকেট গ্রাউন্ডে কেন যেন খুব বাজে ব্যাটিং করল অস্ট্রেলিয়া। রান আউটের শিকার হস মাইকেল ক্লার্ক, ডেভিড হাসি ও শেন ওয়াটসন। অস্ট্রেলিয়ার স্কোরটা ২০০ পার হয়নি। ৫০ ওভারে ৫ উইকেটে থামে ১৯৮ রানে। ম্যাচটা বাংলাদেশ জিততে পারত। ব্যাটিংটা একটু ভালো করলেই অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর গৌরব পেতে পারত মোহাম্মদ আশরাফুলের বাংলাদেশ। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটিংটা হলো আরও বাজে। তামিম ইকবাল ৬৩ রান করে লড়লেন একাই। সাকিব আল হাসানের ২৭ আর আবদুর রজ্জাকের ১৪ ছাড়া দুই অঙ্কের ঘরেই থাকতে পারলেন না কেউই। ১২৫ রানে অলআউট হয়ে শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা ৭৩ রানে হারে বাংলাদেশ।ইমরুল ৯৩ রানে আউট না হলে হয়তো ২০১১ সালে ইতিহাসই গড়ত বাংলাদেশ। ছবি: এএফপি
ঢাকা, ২০১১
অস্ট্রেলিয়া প্রথমে ব্যাট করে ৩৬১ রান তুলে ফেলার পর মিরপুরের শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে যখন শোচনীয় হারের শঙ্কা। ঠিক তখনই মিচেল জনসন, হেস্টিংস, প্যাটিনসনদের দারুণ চাপে ফেলেছিল বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ১৩৬ রান যোগ করেন ইমরুল কায়েস ও শাহরিয়ার নাফীস। এই জুটি যতক্ষণ উইকেটে ছিল বাংলাদেশ হাঁটছিল অভাবনীয় এক গৌরবের পথেই। কিন্তু খুব অল্প ব্যবধানে প্রথমে ৯৩ রানে ইমরুল ও পরে ৬০ রানে নাফীস আউট হয়ে গেলে বাংলাদেশ ম্যাচ থেকে দূর সরে যেতে থাকে। মাহমুদউল্লাহ অবশ্য ৬৮ রানের এক ইনিংস খেলেছিলেন। কিন্তু নিচের সারির ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় বাংলাদেশকে থামতে হয় ২৯৫ রানেই। দলের দুই সেরা ব্যাটসম্যান সাকিব আল হাসান আউট হন ৯ রানে, মুশফিকুর রহিম ১ রানে। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে মাইক হাসি খেলেছিলেন ১০৮ রানের ইনিংস। শেন ওয়াটসন করেন ৭২। পন্টিং আর ক্লার্ক দুজনেই করেন ৪৭। শেষ দিকে মিচেল জনসন করেন ৪১ আর হেস্টিংস ২১। ৬৬ রানে হারা এই ম্যাচটি কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের এক স্মরণীয় ম্যাচই।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: