ঢাকা | বৃহঃস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
৮ মে বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস

আমাদের সম্মিলিত উদ্যোগ ও সচেতনতাই পারে থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধ 

ডা.মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ | প্রকাশিত: ৮ মে ২০২২ ১৬:৪৬

ডা.মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
প্রকাশিত: ৮ মে ২০২২ ১৬:৪৬

 
 
আজ রবিবার   ‘বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস ২০২২ পালিত হবে।প্রতি বছর ৮ মে সারাবিশ্বে থ্যালাসেমিয়া দিবস হিসেবে পালন করা হয়। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নানা আয়োজনে দিবসটি পালিত হয়। আজকের বিষয় নিয়ে কলাম লিখেছেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট হোমিও গবেষক ও জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা  ডা. এম এম মাজেদ তাঁর কলামে লিখেন....থ্যালাসেমিয়া রক্তের এমন একটি মারাত্মক রোগ যা শিশুরা বংশগতভাবে তাদের পিতা- মাতা থেকে পেয়ে থাকে।রক্তে যদি হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কম থাকে তাহলে থ্যালাসেমিয়া হয়। এর ফলে রক্তস্বল্পতা দেখা দিতে পারে। থ্যালাসেমিয়া ধারণকারী মানুষ সাধারণত রক্তে অক্সিজেন স্বল্পতা বা অ্যানিমিয়াতে ভুগে থাকেন। অ্যানিমিয়ার ফলে অবসাদগ্রস্ততা থেকে শুরু করে অঙ্গহানি পর্যন্ত ঘটতে পারে।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বে থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক প্রায় ২৫০ মিলিয়ন। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রতি ১৪ জনে একজন থ্যালাসেমিয়ার বাহক রয়েছে এবং ৭০ হাজারেরও বেশি শিশু এই থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত। এ ছাড়া প্রতিবছর ছয় হাজার শিশু বিভিন্ন রকমের থ্যালাসেমিয়া রোগ নিয়ে জন্মগ্রহণ করছে। আর বিশ্বে প্রতি বছর এক লাখ শিশু থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্মগ্রহণ করে।
★ থ্যালাসেমিয়া কী: ১৯৩০ সালে প্রথম ‘থ্যালাসেমিয়া’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়। গ্রিক শব্দ ‘থালসা’ এর ইংরেজি শব্দ'রক্তাল্পতা"সহযোগে থ্যালাসেমিয়া শব্দটি তৈরি। ‘থালসা ’ অর্থ ভূমধ্যসাগরীয় এবং এ্যানিমিয়া অর্থ ‘রক্তাল্পতা’। ভূমধ্যসাগরের আশেপাশের দেশগুলোতে প্রথম এ রোগ আবিষ্কার হয় বলে এর নামকরণ হয় থ্যালাসেমিয়া। ভূমধ্যসাগর ছাড়া আফ্রিকা এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতেও থ্যালাসেমিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা যায়।
★কারণঃ- ত্রুটিপূর্ণ হিমোগ্লোবিন জীনের কারণে থ্যালাসেমিয়া হয়। ত্রুটিপূর্ণ হিমোগ্লোবিন জীন হিমোগ্লোবিনের গ্লোবিন অংশে ত্রুটি সৃষ্টি করে। ফলে লোহিত রক্তকণিকার আয়ু স্বাভাবিক ১২০ দিন থেকে কমে মাত্র ২০-৬০ দিনে নেমে আসে। অপরিপক্ক লোহিত রক্তকণিকার ভাঙনের দরুণ রক্তস্বল্পতা দেখা যায়। বাবা অথবা মা, অথবা বাবা-মা উভয়েরই থ্যালাসেমিয়া জীন থাকলে বংশানুক্রমে এটি সন্তানের মধ্যে ছড়ায়। বাবা-মা দুজনই যদি থ্যালাসেমিয়ার বাহক হন, তাহলে শিশুর থ্যালাসেমিয়া নিয়ে ভূমিষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা ২৫%, বাহক শিশু জন্ম নেওয়ার সম্ভাবনা ৫০% আর সুস্থ শিশু জন্ম নেওয়ার সম্ভাবনা ২৫%। ভাই-বোনের (চাচাতো, মামাতো, খালাতো, ফুফাতো) মধ্যে বিয়ে হলে এবং পরিবারে কারো থ্যালাসেমিয়া থাকলে সন্তান-সন্ততির থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত বা বাহক হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।
★প্রকার: থ্যালাসেমিয়া প্রধানত ২ ধরনের। যথা- আলফা এবং বিটা থ্যালাসেমিয়া। ১৬ নম্বর ক্রোমোসমে উপস্থিত ত্রুটিপূর্ণ আলফা গ্লোবিন চেইন উৎপাদনকারী জীনের ত্রুটির দরুণ আলফা থ্যালাসেমিয়া এবং ১১ নম্বর ক্রোমোসমে উপস্থিত ত্রুটিপূর্ণ বিটা গ্লোবিন চেইন উৎপাদনকারী জীনের ত্রুটির দরুণ বিটা থ্যালাসেমিয়া হয়। আলফা থ্যালাসেমিয়া আবার আলফা থ্যালাসেমিয়া মেজর (হাইড্রপস ফিটালিস) ও আলফা থ্যালাসেমিয়া মাইনর (হিমোগ্লোবিন-এইচ ডিজিজ/আলফা থ্যালাসেমিয়া ট্রেইট) এ ২ রকম হতে পারে। যেখানে প্রথমটি অনেক মারাত্মক। বিটা থ্যালাসেমিয়া অনুরূপভাবে বিটা থ্যালাসেমিয়া মেজর (কুলি’স এনিমিয়া) ও বিটা থ্যালাসেমিয়া মাইনর (ট্রেইট) ২ রকম হতে পারে। এক্ষেত্রেও প্রথমটিই মারাত্মক বেশি। থ্যালাসেমিয়া বিভিন্ন হিমোগ্লোবিনোপ্যাথির সাথে একইসাথে সহাবস্থান করতে পারে। এদের মধ্যে আমাদের দেশে প্রধানত হিমোগ্লোবিন-ই বিটা থ্যালাসেমিয়া পাওয়া যায়। সামগ্রিকভাবে বিটা থ্যালাসেমিয়া, আলফা থ্যালাসেমিয়া অপেক্ষা বেশি তীব্র ও মারাত্মক।
★লক্ষণ: বিটা থ্যালাসেমিয়ার ক্ষেত্রে জন্মের ২-৩ বছরের মাঝে লক্ষণ প্রকাশ পায়। প্রথমে অবসাদ অনুভব, দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট, মুখমণ্ডল ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া, অস্বস্তি প্রভৃতি পরিলক্ষিত হয়। ধীরে ধীরে প্লীহা বড় হয়ে যাওয়া, শরীরে অতিরিক্ত লৌহ জমা হওয়া, সংক্রমণ, অস্বাভাবিক অস্থি, জন্ডিস, গাঢ় রঙের প্রস্রাব, মুখের হাড়ের বিকৃতি, ধীরগতিতে শারীরিক বৃদ্ধি, হৃৎপিণ্ডে সমস্যা ইত্যাদি প্রকাশ পায়।
★প্রতিরোধের উপায়ঃ-
কোনো মা-বাবার একটি সন্তান যদি থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হয়, তাহলে সেই মা যখন তাঁদের পরবর্তী সন্তানকে গর্ভে ধারণ করবেন, তখন তিনি তাঁর গর্ভের শিশুটিও থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত কি না, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে জেনে নিতে পারেন। এটি জেনে নেওয়া যায় গর্ভকালীন প্রথম তিন মাসের মধ্যেই।আর বিয়ের আগেই পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া উচিত, যেন দুজন থ্যালাসেমিয়া বাহকের মধ্যে বিয়ে না হয়। কারণ, দুজন থ্যালাসেমিয়া বাহকের মধ্যে বিয়ে হলে তাঁদের সন্তানের থ্যালাসেমিয়া হওয়ার আশঙ্কা অত্যন্ত বেশি।সাধারণত থ্যালাসেমিয়া বাহকের মধ্যে রোগের কোনো ধরনের লক্ষণ থাকে না। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাহক যখন গর্ভাবস্থায় থাকেন, তখন তাঁর রক্তশূন্যতা হলে তা আয়রন, ফলিক অ্যাসিড বা অন্য কোনো ওষুধ সেবনের মাধ্যমে ভালো হয় না। এ ছাড়া বাহকের তেমন কোনো সমস্যাই হয় না।থ্যালাসেমিয়া মূলত শিশুদের একটি রোগ। চিকিৎসক ছাড়াও সাধারণ মানুষের এ রোগ সম্পর্কে জানা উচিত। আর এটি একটি মারাক্ত জেনিটিক ডিজিজ বিধায় খুব একটা নিরাময় হয় না বলে সবাই বিশ্বাস করত।তবে ইদানীং বিভিন্ন দেশের অনেক অভিজ্ঞ হোমিও  চিকিৎসক অগণিত থ্যালাসেমিয়া রোগীকে সম্পূর্ণ রূপে আরোগ্য করার দাবী করেছেন যাদের ডিসচার্জ করার পর পাঁচ  ছয় বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরেও রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন হয়নি।হোমিওস্পেশালিষ্টদের মতে,শতকরা ৫০ ভাগ থ্যালাসেমিয়া রোগীকে হোমিওচিকিৎসার মাধ্যমে পুরোপুরি রোগ মুক্ত করা আল্লাহর রহমতে সম্ভব।আর অবশিষ্ট থ্যালাসেমিয়া রোগীরা পুরা পুরী রোগমুক্ত না হলেও হোমিওচিকিৎসায় তাদের অবস্থা এতটাই উন্নত হয় যে,অভিজ্ঞ হোমিও চিকিৎসকের মাধ্যমে চিকিৎসা নিলে মাসে বা বছরে একবার রক্ত নিলেই চলে।হ্যাঁ,হোমিওপ্যাথিতে মনো-দৈহিক গঠনগত চিকিৎসা কন্সটিটিউশনাল নামে এক ধরণের চিকিৎসা
 


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: