ঢাকা | শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দূষণে বছরে ৯০ লাখ মানুষের মৃত্যু : গবেষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১৯ মে ২০২২ ২৩:৪৫

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৯ মে ২০২২ ২৩:৪৫

বিশ্বে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে মারা গেছে প্রায় ৬৩ লাখ মানুষ। আর প্রতি বছর তার চেয়েও অনেক বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের দূষণের কারণে। দ্য লানসেট প্লানেটারি হেলথ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে৷

২০১৫ সাল থেকে শুরু করে ক্রমবর্ধমান বায়ুদূষণ ও বিষাক্ত সীসার কারণে বছরে ৯০ লাখ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের প্রকল্প ‘গ্লোবাল বার্ডেন অব ডিজিস’ এর ২০১৯ সালের তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করে এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন বিজ্ঞানীরা।

বুধবার (১৮ মে) প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, মানুষ ও পৃথিবীর স্বাস্থ্যের জন্য পরিবেশ দূষণ অস্তিত্বের হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই সাথে আধুনিক সমাজের স্থায়িত্বকে তা বিপন্ন করে তুলছে। যুদ্ধ, সন্ত্রাস, ম্যালেরিয়া, এইচআইভি, যক্ষা, মাদক ও অ্যালকোহলের চেয়েও বিশ্বের জন্য এর প্রভাব মারাত্মক বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

বাইরের বাতাস থেকে শ্বাস-প্রশ্বাসের কারণে মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন এবং তারা এই মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য বাতাসে ‘ভয়াবহ’ বিষাক্ত সীসার উপস্থিতির কথা উল্লেখ করেন।

মানব সৃষ্ট বর্জ্য বাতাস, পানি, মাটি দূষিত করে কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে এতে মানুষ মারা যায় না। পরিবর্তে এটি হৃদরোগ, ক্যান্সার, শ্বাসকষ্টের সমস্যা সৃষ্টি করে, ডায়রিয়া অন্যান্য গুরুতর অসুস্থতা সৃষ্টি করে।

গবেষণা প্রতিবেদনের সহলেখক রিচার্ড ফুলার বলেন,‘আমরা উত্তপ্ত পাত্রের উপর বসে আছি এবং ধীরে ধীরে জ্বলছি। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন, ম্যালেরিয়া ও এইচআইভির মতো ইস্যুগুলো যতটা মনযোগ পাচ্ছে এই বিষয়টি ততটা পাচ্ছে না।’

বিজ্ঞানীদের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত শিল্প ও নগরায়নের কারণে সৃষ্ট বায়ু দূষণজনিত মৃত্যু সাত শতাংশ বেড়েছে৷

এর আগে ২০১৭ সালে প্রকাশিত এই গবেষণার আরেক সংস্করণে দূষণজনিত মৃত্যুর বার্ষিক সংখ্যা ছিল ৯০ লাখ। সে সময় প্রতি ছয়টি মৃত্যুর একটির জন্য দায়ী ছিল দূষণ। আর বছরে মোট আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ছিল চার দশমিক ছয় ট্রিলিয়ন ডলার।

এই গবেষণা থেকে দেখা যায় বিশ্বকে নাড়িয়ে দেয়া করোনা মহামারির চেয়েও অনেক বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে দূষণের কারণে। সবশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী কোভিড-১৯ এ এখন পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা ৬২ লাখ ৯৪ হাজার ৭৯২ জন।

নতুন প্রকাশিত গবেষণা অনুযায়ী বিশ্বে পানি আর অভ্যন্তরীণ বায়ু দূষণজনিত মৃত্যু কমছে। তবে আফ্রিকা ও অন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এখনো তা বড় সমস্যা হিসেবে রয়ে গেছে। শাদ, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক ও নাইজারে এই ধরনের দূষণে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হচ্ছে।

অন্যদিকে ভারি ধাতু, কৃষিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক আর জীবাষ্ম জ্বালানি থেকে তৈরি হওয়া নির্গমণের কারণে মৃত্যু লাফিয়ে বাড়ছে। ২০০০ সালের পর থেকে এই ধরনের মৃত্যু ৬৬ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন গবেষণার আরেক লেখক রাচায়েল কুপকা।

দূষণজনিত মৃত্যুতে শীর্ষ দশটি দেশের একটি তালিকাও দিয়েছেন গবেষকরা। দেশগুলো পর্যায়ক্রমে: ১. শাদ, ২. সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, ৩. নাইজার, ৪. সলোমোন দ্বীপপুঞ্জ, ৫. সোমালিয়া, ৬. দক্ষিণ আফ্রিকা. ৭. উত্তর কোরিয়া, ৮. লেসোথো, ৯. বুলগেরিয়া ও ১০. বুরকিনা ফাসো।

এদিকে ল্যানসেটের গবেষণায় বলা হয়েছে, দূষণের কারণে ২০১৯ সালে ২৩ লাখ ভারতীয়র মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১৬ লাখই বায়ুদূষণে। এছাড়া পাঁচ লাখের বেশি মৃত্যু হয়েছে পানিদূষণে। ভারত বায়ুদূষণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর একটি। দেশটিতে বায়ুদূষণে প্রতিবছর ১০ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়।

গবেষণা বলছে, দূষণজনিত মৃত্যুর ৯০ শতাংশের বেশি হয়েছে স্বল্প ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে। এর মধ্যে ২৩ লাখ মৃত্যু নিয়ে শীর্ষে রয়েছে ভারত। তাদের প্রতিবেশী চীনের অবস্থান দ্বিতীয় স্থানে। দেশটিতে মৃত্যুর সংখ্যা ২১ লাখ। সূত্র : ডয়চে ভেলে, বিবিসি



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: