
রোহিত শর্মা সান্ত্বনার হাত বাড়িয়ে দিলেন। বিষণ্ন মুখে তামিম ইকবালও হাত বাড়িয়ে করমর্দন করলেন। এজবাস্টনে কাল দিন শেষের এই ছবিটা উল্টোও হতে পারত। ম্যাচ জয়ের আনন্দ নিয়ে তামিমই বাড়িয়ে দিতে পারতেন হাত। রোহিত তাতে খুঁজে পেতেন সান্ত্বনা।
সম্ভাবনা জাগিয়েও সেটা কেন হলো না? কেন প্রথমবারের মতো কোনো সেমিফাইনালে গিয়ে হলো না বাংলাদেশ দলের ফাইনাল খেলার স্বপ্নপূরণ? ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার কথায় ঝরে পড়ল আক্ষেপ, ‘আমাদের ৩০০-৩২০ রান করা উচিত ছিল। পরপর দুজন সেট ব্যাটসম্যানের বিদায় আমাদের জন্য ছিল বড় ধাক্কা।’
৩১ রানে ২ উইকেট পড়ার পর তামিম ইকবাল-মুশফিকুর রহিম মিলে যোগ করেছেন ১২৩ রান। কিন্তু মাত্র ২৫ রানের ব্যবধানে দুজনই ফিরে গেলেন, মাঝে ফিরে গেলেন সাকিব আল হাসানও। বাংলাদেশের বড় রানের দিকে ছোটাও সেখানেই মোটামুটি শেষ। মাহমুদউল্লাহ, মোসাদ্দেক, মাশরাফিদের চেষ্টায় এরপর বাংলাদেশ করতে পেরেছে ২৬৪ রান। ওপেনার রোহিত শর্মার ১১তম ওয়ানডে সেঞ্চুরি (১২৩*) আর অধিনায়ক বিরাট কোহলির অপরাজিত ৯৬ রানের সৌজন্যে ভারত ম্যাচ জিতে গেছে ৪০.১ ওভারেই।
ফাইনালের একেবারে কাছে গিয়েও ফাইনালে উঠতে না পারার হতাশা নিশ্চয়ই আছে বাংলাদেশ দলের। তবে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালে যাওয়াটাও কম প্রাপ্তি নয়। মাশরাফি সান্ত্বনা খুঁজতে চাইলেন তা থেকেই, ‘টুর্নামেন্টে আমরা ভালো খেলেছি। তবে আরও উন্নতি করতে হবে। আমাদের আরও শিখতে হবে। মানসিকভাবে আমাদের আরও শক্ত হতে হবে। এ রকম ম্যাচ বেশি বেশি খেললেই সেটা হবে।’ খেলা শেষে সহ-অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও বলেছেন একই কথা। এমন ম্যাচ আরও বেশি খেলতে হবে। খেলতে খেলতে, জিততে জিততেই আসবে উন্নতি। মাশরাফির মতো তাঁরও আক্ষেপ, ‘আজকের উইকেটে যেখানে ৩২০-৩৩০ রান হওয়া উচিত ছিল, সেখানে আমরা ৭০-৮০ রান কম করেছি।’
বাংলাদেশের বোলারদের কোনো সুযোগই বলতে গেলে দেননি ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা। সেই বোলারদেরই একজন তাসকিন আহমেদও আগে বলেছেন ব্যাটিং-ব্যর্থতার কথাই, ‘এ রকম উইকেটে আমাদের আরও বেশি রান করা উচিত ছিল।’ তবে ২৬৪ করার পরও বিশ্বাস হারাননি এই পেসার, ‘আমাদের তবু বিশ্বাস ছিল। বিশ্বাস ছিল বলেই কিন্তু আমি ঝুঁকি নিয়েও এই উইকেটে বাউন্সার দিয়েছি। কারণ, আমাদের দলের সেটাই পরিকল্পনা ছিল।’
ফাইনালে যেতে না পারলেও চ্যাম্পিয়নস ট্রফির অভিজ্ঞতা এবং সেমিফাইনালে যাওয়ার সাফল্য ভবিষ্যতে দলকে আরও অনুপ্রাণিত করবে বলে বিশ্বাস অধিনায়ক মাশরাফির, ‘আমাদের দলে অনেক তরুণ খেলোয়াড় আছে। তারা হয়তো এই টুর্নামেন্টে ভালো করতে পারেনি। তবে আমাদের কয়েকজন অভিজ্ঞ খেলোয়াড়ও আছে। আশা করি পরের বার আমরা ভালোভাবে ফিরে আসব।’
মাশরাফিদের জন্য যেটা হতাশার ম্যাচ, ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি সেটাকেই মনে করছেন তাঁদের জন্য পরিপূর্ণ এক ম্যাচ, ‘পরিপূর্ণ একটা ম্যাচ খেললাম। আমরা চেয়েছিলাম সম্মিলিত পারফরম্যান্স দিয়ে ম্যাচটা জিততে। তবে ৯ উইকেটে জিতব এতটা আশা করিনি। এটাই হয়তো আমাদের কোয়ালিটি।’ রোহিত শর্মা আর শিখর ধাওয়ানের ৮৭ রানের উদ্বোধনী জুটিতেই সহজ হয়েছে ভারতের জয়। অধিনায়ক আশাবাদী, পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৮ জুনের ফাইনালেও দলকে ভালো শুরু এনে দেবেন তাঁরা।
ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের কাজ অবশ্য সহজ করে দিয়েছিলেন বোলাররাই। জয়ের চিত্রনাট্যটা তখনই লেখা হয়ে গিয়েছিল বলে মনে করেন কোহলি, ‘আমাদের বোলাররাও খুব ভালো বল করেছে। ম্যাচের কখনোই আমরা তাদের (বাংলাদেশ) এগিয়ে যেতে দিইনি। দ্রুত কয়েকটা উইকেট ফেলে দিতে পেরেছি। সেটাই তাদের ছন্দ নষ্ট করে দিয়েছে।’ আলাদা করে বললেন অনিয়মিত স্পিনার কেদার যাদবের কথা। তামিম আর মুশফিকের উইকেট দুটি নিয়ে যে বাংলাদেশের ইনিংসটাকে কক্ষচ্যুত করে দেন তিনিই!
আইসিসির কোনো টুর্নামেন্টে এটাই বাংলাদেশের সেরা পারফরম্যান্স। কিন্তু ফাইনালে উঠতে না পারায় সে আনন্দ কিছুটা হলেও ঢেকে গেছে হতাশায়। সেই হতাশা নিয়েই আগামীকাল বিকেলে দেশে ফিরবে মাশরাফি বিন মুর্তজার দল।
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৬৪/৭
ভারত: ৪০.১ ওভারে ২৬৫/১
ফল: ভারত ৯ উইকেটে জয়ী
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: