
এবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধেই শুরু হয়েছে তদন্ত। তিনি বিচার কার্যক্রমে বাধা দিয়েছেন কি না, তা সাব্যস্ত করতেই এ তদন্ত হচ্ছে। রাশিয়ার সঙ্গে ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণা দলের কথিত আঁতাত খতিয়ে দেখতে নিয়োগপ্রাপ্ত বিশেষ কৌঁসুলি রবার্ট মুলার প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে এ তদন্তের উদ্যোগ নিয়েছেন। প্রভাবশালী পত্রিকা ওয়াশিংটন পোস্টসহ দেশটির কয়েকটি গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান এ খবর দিয়েছে।
নিয়মবহির্ভূতভাবে রাশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করার অভিযোগ ওঠার জেরে গত ফেব্রুয়ারিতে পদত্যাগ করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিন। গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের সদ্য সাবেক প্রধান জেমস কোমি গত সপ্তাহে হলফ করে সিনেট গোয়েন্দাবিষয়ক কমিটিতে বলেছেন, ট্রাম্প তাঁকে একান্ত এক সাক্ষাতে বলেছিলেন, তিনি চান না ফ্লিন নিয়ে তদন্ত আর সামনে এগোক। কিন্তু হোয়াইট হাউস দাবি করেছে, সাবেক জেনারেল ফ্লিনসহ কাউকে তদন্ত বন্ধ করতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কখনোই জেমস কোমি বা অন্য কাউকে বলেননি।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিচার প্রতিষ্ঠায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিলেন, তা প্রমাণিত হলে অভিশংসনের সম্মুখীন হতে পারেন। মার্কিন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনগুলোতে বলা হয়েছে, ট্রাম্প মাইকেল ফ্লিনকে নিয়ে চলা তদন্ত বন্ধে এফবিআই–প্রধানের দায়িত্বে থাকা জেমস কোমিকে সত্যিই বলেছিলেন কি না, তা জানতে জ্যেষ্ঠ গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। প্রসঙ্গত, গত ৯ মে কোমিকে ট্রাম্প বরখাস্ত করেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আইনি পরামর্শকেরা মন্তব্য করেছেন, তাঁকে নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর ‘নীতিবর্জিত’।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ খবরে এক টুইটার বার্তায় বলেন, ‘তারা রাশিয়ার হস্তক্ষেপ নিয়ে একটি গালগল্প তৈরি করল। এ ব্যাপারে কোনো প্রমাণই মিলল না। এবার তারা বিচারে বাধা দেওয়ার আরেক গালগল্প ফেঁদেছে।’
এদিকে সাবেক হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মন্ত্রী জে জনসন রাশিয়ার ভূমিকার তদন্ত নিয়ে কংগ্রেসের গোয়েন্দাবিষয়ক কমিটির উন্মুক্ত শুনানিতে সাক্ষ্য দেবেন বলে জানা গেছে।
বিচারব্যবস্থায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সম্ভাব্য বাধাদান নিয়ে তদন্ত শুরু হওয়ার খবরটি প্রথম দেয় ওয়াশিংটন পোস্ট। এরপর নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল নিজেদের সূত্র উদ্ধৃত করে একই খবর দিয়েছে।
ওয়াশিংটন পোস্ট বলেছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কর্মকাণ্ড নিয়ে রাশিয়া তদন্তের বিশেষ কৌঁসুলি রবার্ট মুলার তদন্ত শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়ায় পুরো কার্যক্রম গুরুত্বপূর্ণ মোড় নিতে পারে। নিউইয়র্ক টাইমস–এর প্রতিবেদনে মুলারকে সরাতে ট্রাম্পের কথিত চিন্তাভাবনার কথা তুলে ধরা হয়েছে।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদনগুলোতে আরও বলা হয়েছে, কোমিকে বরখাস্ত করার কয়েক দিন পরই ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিচারকাজে সম্ভাব্য বাধাদানের তদন্ত শুরু করা হয়। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে তদন্তে যে তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে, তাঁরা হলেন জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক ড্যানিয়েল কোটস, ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সির প্রধান মাইক রজার্স এবং কিছুদিন আগ পর্যন্ত রজার্সের ডেপুটি থাকা রিচার্ড লেজেট।
ট্রাম্প প্রচারণা দলের সঙ্গে রাশিয়ার গোপন আঁতাতের অভিযোগ তদন্তের জন্য মার্কিন কংগ্রেসের একাধিক কমিটি কয়েক মাস ধরে তদন্ত করছে। এই তদন্তের অংশ হিসেবেই জেমস কোমি সিনেটের গোয়েন্দাবিষয়ক কমিটির সামনে প্রথমে উন্মুক্ত সভায় ও পরে রুদ্ধদ্বার কক্ষে প্রশ্নের উত্তর দেন। কোমি বলেন, ‘যেভাবে রুশ তদন্ত পরিচালিত হচ্ছিল, তা পরিবর্তনের জন্যই তাঁকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।’
একটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল–এর খবরে বলা হয়, তদন্তের গতিপথ পাল্টাতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জেমস কোমিকে বরখাস্ত করেন কি না, তা খতিয়ে দেখবেন মুলার।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের আইনজীবী মার্ক ক্যাসোউইৎজের মুখপাত্র মার্ক করালো বলেন, ‘প্রেসিডেন্টকে নিয়ে এফবিআইয়ের এ ধরনের তথ্য ফাঁস ভয়ানক, অযৌক্তিক ও অবৈধ।’
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: