ঢাকা | শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শিশুকে পানিতে ডুবে যাওয়া থেকে সচেতনতাই রক্ষা করতে পারে

odhikarpatra | প্রকাশিত: ২ জুন ২০২২ ২১:২৬

odhikarpatra
প্রকাশিত: ২ জুন ২০২২ ২১:২৬

সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলায় চড়আঙ্গারু গ্রামে বসবাস করে আলেয়া খাতুন। স্বামী কৃষি কাজ করে। স্বামীর কাজে সহযোগিতা করে আলেয়া। আলেয়ার দুই ছেলে তিন মেয়ে। ছোট মেয়ে আম্বিয়া। বয়স ৯ বছর। সকাল হতে না হতেই ঘুম থেকে উঠে চলে যায় বাড়ির বাইরে। সারাদিন ব্যস্ত থাকে সমবয়সীদের সাথে খেলাধুলা নিয়ে। বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে ফুলছড়ি নদী। আষাঢ় মাস। নদীতে পানি থৈ থৈ করছে। অল্প-অল্প শ্রোত আছে নদীতে। বাড়ির ঘাটে নৌকা বাঁধা আছে। নৌকায় বসে সবাই মিলে খেলা করছে। হঠাৎ চিৎকার-চেঁচামেচির আওয়াজ। সবাই নদীর ঘাটে এসে দেখে আম্বিয়া নৌকা থেকে পানিতে পড়ে হাবুডুবু খাচ্ছে। অন্যান্য বান্ধবীরা তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু কেউ তাকে নদী থেকে তুলতে পারছে না। অবশেষে আম্বিয়ার চাচা আম্বিয়াকে নদী থেকে তুলে আনল। বেঁচে গেল আম্বিয়ার জীবন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতি বছর পানিতে ডুবে প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার শিশু মারা যায়। এদের বয়স  ২ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। এই বয়সী শিশুদের মৃত্যুর অন্যতম কারণ পানিতে ডুবে মারা যাওয়া। দেশে শিশুমৃত্যু রোধে এবং বিভিন্ন রোগ নিয়ন্ত্রণে সরকার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এবং তাতে সফলও হয়েছে। কিন্তু পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুরোধে কোনো অগ্রগতি এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস-২০২০’ থেকে দেখা যায়, দেশে ৫ বছরের কম বয়সী ৪৪ শতাংশ শিশুর মৃত্যুর কারণ নিউমোনিয়া। এরপরই পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর স্থান প্রায় ৯ শতাংশ। বিশেষজ্ঞদের মতে সফলতার দিক থেকে ডায়রিয়ায় মৃত্যুরোধে বাংলাদেশ এক নম্বর। গণটিকা দেয়ার কারণে ডিপথেরিয়া বলতে গেলে একেবারেই নেই। ধনুষ্টংকার এখন পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে আছে। কিন্তু পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কোনো সাফল্য এদেশে এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি।
শিশু ও মাতৃমৃত্যু রোধ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পুষ্টি, নারীর ক্ষমতায়ন ইত্যাদি খাতে সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগে অনেক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে এবং হচ্ছে। কিন্তু পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুরোধে উল্লেখযোগ্য কোনো কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়নি। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতায় শিশুদের সাঁতার শেখানোর উপর দু’টি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এছাড়া তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের আওতায় আটটি সংস্থার মাধ্যমে ‘শিশু ও নারী উন্নয়নে সচেতনতামূলক যোগাযোগ কার্যক্রম’ প্রকল্পের আওতায় শিশু ও মাতৃমৃত্যু রোধ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পুষ্টি, নারীর ক্ষমতায়ন ইত্যাদি বিষয়ের পাশাপাশি শিশু ও কিশোরদের সাঁতার শেখানোর গুরুত্বের উপর দেশব্যাপি বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার করা হচ্ছে। 
বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা’র মতে, শিশুদের পানিতে ডুবে যাওয়া প্রতিরোধে ১০টি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। এর তিনটিই বাংলাদেশের সাফল্যের অভিজ্ঞতা থেকে নেয়া। এগুলো হলো-পুকুরের পাড়ে বেড়া দেয়া, শিশুর দিবাযতœ কেন্দ্র গড়ে তোলা এবং শিশুকে সাঁতার শেখানো।
শিশুদের সাঁতার শেখার গুরুত্বের ওপর স্কুলের শিক্ষকেরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। প্রতিটি মানুষের শারিরীক সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য প্রতিদিন ব্যায়াম করা প্রয়োজন। সাঁতার একটি উত্তর ব্যায়াম। আর এ কারনে প্রতিটি মানুষের পানিতে সাঁতার কাটা অত্যান্ত জরুরি। সাঁতারের মাধ্যমে অনেক রোগ-ব্যাধি থেকে মানুষ মুক্ত থাকতে পারে বলে বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন। এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি শিক্ষকেরা ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে তুলে ধরতে পারেন।
একজন মানুষ সাঁতার জানলে কি কি সুবিধা ভোগ করতে পারে এবং সাঁতার না জানলে কি কি অসুবিধাগুলো সমুুক্ষিণ হতে পারে তা বিভিন্ন মিডিয়ার/গণমাধ্যমের মাধ্যমে প্রচারের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। এর ফলে  মানুষ সাঁতার কাটতে উদ্বুদ্ধ হতে পারবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুমৃত্যু কমাতে প্রসূতিদের জরুরি স্বাস্থ্য সেবা দেয়া হয়। এ সময় স্বাস্থ্য পরিচর্যার বিষয়ে পরামর্শের সংগে শিশুর পানিতে ডুবে যাওয়ার বিষয়টিও যুক্ত করতে হবে। এছাড়া সমাজের প্রতিটি মানুষকে সচেতন হতে হবে। বিশেষকরে যে সকল এলাকায় ডোবা, নালা, পুকুর অথবা নদী আছে। সে সকল এলাকার মা, বাবাসহ পরিবারের সকল শ্রেণীর মানুষদের সচেতন হতে হবে, যাতে কোনো শিশু পানির দিকে যেতে না পারে। এ জন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেও ব্যাপক সচেতনতামূলক  কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। তা হলেই আমাদের শিশুরা পানিতে ডুবে যাওয়া থেকে রক্ষা পাবে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: