ঢাকা | Tuesday, 14th October 2025, ১৪th October ২০২৫
শিশুরা আসলে অপরাধী নয়—তারা সমাজের অন্যায়ের শিকার

পথশিশুদের জন্য মানবিক রাষ্ট্র চাই: ছিন্নমূল শিশুদের পুনর্বাসন সময়ের দাবি

odhikarpatra | প্রকাশিত: ৬ October ২০২৫ ২৩:৫৮

odhikarpatra
প্রকাশিত: ৬ October ২০২৫ ২৩:৫৮

বিশেষ সম্পাদকিয় প্রতিবেদন | অধিকার পত্র ডটকম

বাংলাদেশের নগরজীবনের এক অবিচ্ছেদ্য বাস্তবতা হলো পথশিশু বা ছিন্নমূল শিশু। ফুটপাত, রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, পার্ক—সব জায়গায় তাদের উপস্থিতি দেখা যায়। এরা সমাজের সেই অবহেলিত অংশ, যাদের জীবনে নেই নিরাপদ আশ্রয়, নিয়মিত খাবার, শিক্ষা বা চিকিৎসা। অথচ এই শিশুরাই ভবিষ্যতের নাগরিক—তাদের হারিয়ে যাওয়া মানে দেশের সম্ভাবনাকে হারানো।

পথশিশুদের বাস্তবতা :

বাংলাদেশে আনুমানিক ১০ থেকে ১২ লাখেরও বেশি পথশিশু রয়েছে (বিভিন্ন এনজিও সূত্র অনুযায়ী)। এদের বেশিরভাগই রাজধানী ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে দিন কাটায় অস্থায়ী কাজ, ভিক্ষা বা বর্জ্য সংগ্রহের মাধ্যমে। তারা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত, পুষ্টিহীনতায় ভোগে, এবং অনেক সময় মাদকাসক্তি বা অপরাধচক্রের ফাঁদে পড়ে যায়।

এই শিশুরা আসলে অপরাধী নয়—তারা সমাজের অন্যায়ের শিকার। রাষ্ট্র ও নাগরিক সমাজ যদি তাদের পাশে দাঁড়ায়, তাহলেই তারা স্বপ্ন দেখতে শিখবে, আত্মনির্ভর হতে পারবে।

কী করলে পথশিশুদের জীবনে পরিবর্তন আনা সম্ভব?

১️⃣ পুনর্বাসন কেন্দ্র স্থাপন:
প্রতিটি জেলা ও বড় শহরে সরকার পরিচালিত শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্র থাকা জরুরি, যেখানে থাকবে নিরাপদ আশ্রয়, শিক্ষা ও পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা।

২️⃣ অবৈতনিক শিক্ষা কর্মসূচি:
রাস্তায় কাজ করা শিশুদের জন্য মোবাইল স্কুল বা সন্ধ্যাকালীন শিক্ষা কেন্দ্র স্থাপন করা যেতে পারে। অনেক এনজিও ইতিমধ্যে এটি করছে—রাষ্ট্রীয়ভাবে সমন্বয় করলে এর প্রভাব বহুগুণ হবে।

৩️⃣ স্বাস্থ্যসেবা ও পুষ্টি:
নগর এলাকায় ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসা ইউনিট ও পুষ্টি কর্মসূচির মাধ্যমে শিশুদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও টিকা নিশ্চিত করা জরুরি।

৪️⃣ মাদক ও অপরাধ থেকে দূরে রাখা:
পথশিশুদের অনেকেই অপরাধচক্রের কবলে পড়ে। এজন্য বিশেষ শিশু সুরক্ষা টাস্কফোর্স গঠন এবং পুনর্বাসনের পর মানসিক কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা উচিত।

৫️⃣ জনসচেতনতা ও নাগরিক অংশগ্রহণ:
শুধু সরকার নয়—সাধারণ নাগরিক, করপোরেট প্রতিষ্ঠান ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকেও শিশু পুনর্বাসন উদ্যোগে সম্পৃক্ত হতে হবে। প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব হোক, অন্তত একজন শিশুর পাশে দাঁড়ানো।

পথশিশু, ছিন্নমূল বা ভাসমান শিশু—তারা কেউ সমাজের বোঝা নয়। সুযোগ পেলে তারাও শিক্ষক, ডাক্তার, শিল্পী বা প্রকৌশলী হতে পারে।

“একটি শিশুর হাসি মানেই একটি জাতির আশার প্রতীক।”

তাই আজ সময় এসেছে তাদের প্রতি সহানুভূতি নয়, অধিকারভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে পুনর্বাসনের পদক্ষেপ নেওয়ার।
একটি মানবিক বাংলাদেশ গড়তে হলে, এই শিশুদের জন্যই প্রথমে নিরাপদ ছাদ, খাবার, শিক্ষা ও ভালোবাসা নিশ্চিত করতে হবে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: