
বৈদেশিক বাণিজ্যে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর অংশগ্রহণ প্রতিনিয়ত কমছে। ২০১৩ সালেও আমদানি বাণিজ্যে শীর্ষ পাঁচ ব্যাংকের মধ্যে দুটিই ছিল সরকারি খাতের। ২০১৬ সালে দুটি ব্যাংকই শীর্ষস্থান হারিয়েছে। একইভাবে রপ্তানি বাণিজ্যেও শীর্ষ ব্যাংকগুলোর এখন বেসরকারি খাতের। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) পরিচালিত এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম অডিটরিয়ামে গতকাল রোববার ‘ট্রেড সার্ভিস অপারেশনস অব ব্যাংকস’ শীর্ষক রিভিউ কর্মশালায় এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের পরিচালক শাহ মোহাম্মদ আহসান হাবীব।
এতে বলা হয়েছে, ২০১১ সালে আমদানি বাণিজ্যে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর অংশগ্রহণ ছিল ২৭ শতাংশ। ২০১৬ সালে তা কমে হয়েছে ৭ শতাংশ। ২০১১ সালে আমদানি বাণিজ্যে দেশীয় বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর অংশগ্রহণ ছিল ৬৪ শতাংশ, ২০১৬ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৫ শতাংশ।
প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০১৩ সালে আমদানি বাণিজ্যে শীর্ষ পাঁচ ব্যাংক ছিল জনতা, সোনালী, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, এইচএসবিসি ও ইসলামী ব্যাংক। ২০১৬ সালে শীর্ষ পাঁচ ব্যাংকের তালিকায় স্থান পেয়েছে সাউথইস্ট, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, এইচএসবিসি, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ও ইসলামী ব্যাংক। ২০১৬ সালে রপ্তানি বাণিজ্যে শীর্ষ পাঁচ ব্যাংক হলো ইউনাইটেড কমার্শিয়াল, জনতা, ইসলামী ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ও এইচএসবিসি।
অনুষ্ঠানে বিআইবিএমের মহাপরিচালক তৌফিক আহমদ চৌধূরীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী।
এস কে সুর চৌধুরী বলেন, বাণিজ্যকেন্দ্রিক অর্থ পাচার ক্রমেই উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু অর্থ পাচার নয়, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে অন্য আর্থিক অপরাধও ঘটছে। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ওপর কড়া নজরদারি করছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে চার কৌশলে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার হচ্ছে। এগুলো হলো বাণিজ্যে ওভার অ্যান্ড আন্ডার ইনভয়েসিং, ওভার অ্যান্ড আন্ডার শিপমেন্ট, পণ্যের মিথ্যা তথ্য এবং একাধিক ইনভেয়েস। অর্থ পাচার প্রতিরোধের নীতিমালাগুলো আন্তর্জাতিক স্বীকৃত হলেও আরও উন্নতির সুযোগ রয়েছে। ব্যাংকগুলোকে আমদানি-রপ্তানি মূল্যের সত্যতা নির্ণয়ে আরও সচেতন হতে হবে।
গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, বাণিজ্যসেবার মাধ্যমে কেউ যেন ঋণখেলাপি হতে না পারে, সে জন্য যথোপযুক্ত তথ্য সরবরাহ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর উচিত হবে অধিক স্বচ্ছতা নির্ধারণের জন্য তথ্য যাচাই করা। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরও আধুনিক নীতিমালার প্রয়োজন।
পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, ওভার ইনভয়েসিং এবং আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে মানি লন্ডারিং বন্ধ করতে হবে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যসেবায় আরও গতিশীলতা আনতে ব্যাংকগুলোকে প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিতে হবে।
ইসলামী ব্যাংকের ডিএমডি মাহবুব উল আলম বলেন, ‘আমাদের এখানে ব্যাংকিং সিস্টেম এখনো উন্নত হয়নি। তাই আন্তর্জাতিক ট্রেড সিস্টেমেও অনেকে পিছিয়ে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে বাংলাদেশ ব্যাংককে উদ্যোগ নিতে হবে।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন এনআরবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মেহমুদ হোসাইন, বিআইবিএমের অনুষদ সদস্য সৈয়দ মোহাম্মদ বারিকুল্লাহ।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: