ঢাকা | শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২
কানাডায় ঈদ আনন্দ

ঈদ–কানাডা

Admin 1 | প্রকাশিত: ২৫ জুন ২০১৭ ১১:৪৬

Admin 1
প্রকাশিত: ২৫ জুন ২০১৭ ১১:৪৬

বিদেশ বিভূঁয়ে ঈদ যেন, দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মতো। সেই আনন্দ, সেই আবেগ উচ্ছ্বাস প্রকাশের পরিবেশ কী আর বিদেশের মাটিতে পাওয়া যায়? ‘রমজানের রোজার শেষে এল খুশির ঈদ’, এমন গানও আর মোহাচ্ছন্ন করে না। ঈদে নতুন জামাকাপড় পরার আনন্দ, চাঁদরাতে হাতে মেহেদি পরা, বিশেষ বিশেষ রসনাবিলাসের জন্য রান্না, বাসাবাড়ি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে রাত জেগে নতুনভাবে সাজানো, আলপনা এঁকেএঁকে বাড়ির উঠোন-বারান্দা ভরে ফেলা, অতিথি আপ্যায়ন, ঈদ উপহার বা বকশিশ পাওয়ার আনন্দ; এমনসব আমেজ কোথায় পাব? এ যে অন্য দেশ, এত আমার বাংলাদেশ নয়!
প্রথম বছর কানাডার ঈদ ছিল মর্মবেদনার যন্ত্রণা, ছিল হাহাকারের গুঞ্জরন। ভালোমন্দ কিছু রান্না করলেও পরিচিতের বহর তেমন ছিল না বলে লোকজন আসেনি বা আমাদেরও কোথাও যাওয়া হয়নি। তবে কম্পিউটারের স্ক্রিনে ছিল বাংলাদেশের ঈদ আনন্দের ছোঁয়া। স্কাইপেতে পরিবারের লোকজনদের সঙ্গে সারাদিন ছিল কথোপকথন, দেখেছি তাদের ঈদের আয়োজন। এভাবেই কেটে গেল বেশ কটি বছর। তবে ঈদের জন্য সরকারি কোনো ছুটি না থাকাতে অনেকেরই ঈদের দিনে কাজ করতে হয়। অনেকের কাজ এমন যে দিন আনে দিনে খাওয়ার মতো, তখন ছুটি নেওয়াতে বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। তাই বাধ্য হয়ে কাজে যাওয়া লাগে। যার ফলশ্রুতিতে ঈদ আনন্দ ম্লান হতে শুরু করে। তারপরেও মুসলিম কমিউনিটি দিনে দিনে আরও বিশাল আকার ধারণ করল। বিশ বছর আগের ঈদ এখন আর নেই, এখন মনে হবে বাংলাদেশের একটি ক্ষুদ্র অংশ এই বিদেশে ঈদ আনন্দ উৎসবে মেতে উঠেছে।
বাংলাদেশের আদলেই এখানে ঈদ উদ্‌যাপন করা হয়। পুরো রোজার মাসব্যাপী ঈদের জন্য চলতে থাকে ঈদ বাজার, ঈদ মেলা নামে বিভিন্ন সংগঠনের আয়োজনের সমাবেশ, যেখানে শাড়িচুড়ি থেকে শুরু করে ঈদ আনন্দের সব রকম পণ্যসামগ্রীর সমারোহ থাকে। হাতেমেহেদি পরানোও হয় সেখানে, আর কিছু কেনাকাটা না করলেও অনেকে হাতেমেহেদি পরার জন্য ছুটে যান মেলাতে। সেই সঙ্গে বাঙালির ঘরেঘরে ঈদের প্রস্তুতিও চলতে থাকে। বাঙালি অধ্যুষিত এলাকা ভিক্টোরিয়া পার্ক অ্যান্ড ড্যানফোর্থ এরিয়ায় ঈদের রমরমা ভাব চোখে পড়ার মতো। বাঙালি পসরাগুলোও ঈদের সাজে সেজে থাকে। ঈদের দিন সকালে দফায় দফায় জামাতে নামাজ পড়ার ব্যবস্থাও থাকে। নামাজ শেষে একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলির দৃশ্য বাংলাদেশের ঈদ জামাতের কথা মনে করিয়ে দেয়।
বিভিন্ন দেশের মুসলিমরা ঈদ উদ্‌যাপনের আয়োজন শুরু করে রোজার শুরু থেকে। পুরো এক মাস রোজা শেষে ঈদের আনন্দ উপচে পড়ে মুসলিম কমিউনিটিতে। অন্যান্য মুসলিম কমিউনিটির লোকজন মসজিদ কেন্দ্রিক ঈদ উদ্‌যাপন করে থাকে। নারী-পুরুষ সকলেই মসজিদের গিয়ে নামাজ আদায় করে ঈদ কোলাকুলি পর্ব শেষে বিশাল খাবারের আয়োজনে অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে সোমালিয়া জ্যামাইকা, সৌদি আরব, সাউথ আফ্রিকার মুসলিম সম্প্রদায় এমনকি মিডল ইস্টের মুসলিম উম্মাহর লোকজনও অংশগ্রহণ করে থাকে। তবে বেশির ভাগ বাঙালি চলে যায় বাংলা টাউনে। ঈদকে ঘিরে হয় বাঙালির পুনর্মিলনী।
মিশ্র জাতি গোষ্ঠীর দেশ কানাডা। সমগ্র পৃথিবী থেকে আসা প্রায় সব দেশের মানুষের সমাগম এখানে। ভিন্নভিন্ন শিল্প, সংস্কৃতির সংমিশ্রণে গড়ে উঠেছে এই দেশ, যেখানে রয়েছে সৌহার্দ্য, সম্প্রীতির নিবিড় বন্ধন। তার মধ্যে মুসলিম উম্মাহর ঈদ আনন্দ সংযোজন বিশেষ দৃষ্টি কাড়ে। যেহেতু সমঅধিকারের দেশ কানাডা, তাই জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সব রকম সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার আইন প্রয়োগের পাশাপাশি বিভিন্ন অর্গানাইজেশনেরও ব্যবস্থা আছে। ঠিক সেভাবে মুসলিম উম্মাহর মানুষদের জন্যও সুবন্দোবস্ত রয়েছে, রয়েছে ধর্ম, অধর্ম পালনের অবাধ স্বাধীনতা। এখন ঈদের দিন বিশেষভাবে ছুটি দিতে বাধ্য, তাই যার ইচ্ছে সে ছুটি নিয়ে ঈদ উদ্‌যাপন করছে। তবে যেহেতু ঈদ একদিনে হচ্ছে না বা বছরে একই দিনে পালিত হচ্ছে না সেই কারণে ঈদের দিন সরকারিভাবে ছুটি ঘোষণাও সম্ভব হচ্ছে না। শিয়া, সুন্নির মতবাদের কারণে অনেক সময় একই দিনে ঈদ উদ্‌যাপিত হয় না। এ ব্যাপারে পার্লামেন্টে কথা উঠলে ঘোষণা দিয়েছিল, বছরের যে কোনো একদিন ঈদের জন্য নির্দিষ্ট করলে সরকারি ছুটির ব্যবস্থা করা যেতে পারে যেভাবে ক্রিসমাসের ছুটি আছে।
কানাডায় ঈদ আনন্দ এখন বেশ সমাদৃত। যেভাবে আমরা বলি, ধর্ম যার-যার, উৎসব সবার। ঠিক একই মানসিকতায় ঈদের আনন্দ অনেক ভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে। যার ফলে কানাডা সরকার প্রধানের ঈদ শুভেচ্ছা পাই, এমনকি বিভিন্ন ঈদ আনন্দেও প্রধানমন্ত্রীকে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়। যে কোনো আনন্দ উচ্ছ্বাসে জাতি, ধর্ম, বর্ণের কোনো বালাই থাকে না। আনন্দ যেন সংক্রমিত হতে থাকে তার নিজ ইচ্ছায়, যেন প্রকৃতির মতো। ঈদের আনন্দ ঘরে-ঘরে আন্দোলিত হোক, সেই সঙ্গে দূর হোক সকল জরা যন্ত্রণা। সবাইকে আগাম ঈদ মোবারক।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: