
ইন্টারনেট থেকেসরকারি–বেসরকারি অংশীদারত্বে (পিপিপি) কোনো বৃহৎ প্রকল্প করলে কর ছাড় পাওয়া যাবে। এমনকি ওই প্রকল্পের বিদেশি বিশেষজ্ঞদের আয়করেও ছাড় মিলবে। এবারের বাজেটে এই সুবিধা দেওয়া হয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) পিপিপি প্রকল্পে কর ছাড় দিয়ে গত ২২ জুন প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, পিপির প্রকল্পটি বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করার পর প্রথম ১০ বছর কোনো আয়কর দিতে হবে না। ১৪ ধরনের প্রকল্পে এই কর ছাড় মিলবে। এগুলো হলো জাতীয় মহাসড়ক বা এক্সপ্রেসওয়ে, ফ্লাইওভার (উড়ালসড়ক), এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, নদীর ওপর সেতু, টানেল (সুড়ঙ্গ পথ), নদীবন্দর, সমুদ্রবন্দর, বিমানবন্দর, সাবওয়ে, মনোরেল, রেলপথ, বাস টার্মিনাল, বাস ডিপো এবং বৃদ্ধাশ্রম। তবে এসব প্রতিষ্ঠানের ১২ সংখ্যার কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) থাকতে হবে।
একই সঙ্গে এনবিআর আরেকটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে; যেখানে বিদেশি বিশেষজ্ঞদের কর ছাড় দেওয়া হয়েছে। কোনো প্রকল্প চালু হওয়ার পর যদি কোনো বিদেশি কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়; তাহলে ওই কর্মী প্রথম তিন বছর ৫০ শতাংশ হারে কর অব্যাহতি পাবেন। কর ছাড় পাওয়া ১৪ ধরনের পিপিপি প্রকল্পেই শুধু বিদেশি কর্মীরা এই সুবিধা পাবেন। তবে শর্ত হলো, কোনো পিপিপি প্রকল্পের বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার ৫ বছর পার হওয়ার পর কোনো বিদেশি কর্মী নিয়োগ দিলে কর ছাড় পাওয়া যাবে না। বিদেশি কর্মীকে টিআইএন থাকার পাশাপাশি প্রতিবছর আয়কর বিবরণী জমা দিতে হবে।
সাধারণত বড় অবকাঠামো প্রকল্প পিপিপির মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হয়। এই প্রকল্পের ধরন হলো, সরকার ও বেসরকারি উদ্যোক্তারা যৌথভাবে বিনিয়োগ করে থাকে। বিনিয়োগের আনুপাতিক হারে মুনাফা ভাগাভাগি হয়। কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, ২০-২৫ বছর পিপিপি প্রকল্পটির বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করে বিনিয়োগ ও মুনাফা তুলে নিয়ে সরকারের হাতে ছেড়ে দেয় সংশ্লিষ্ট বেসরকারি উদ্যোক্তা।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার প্রথম মেয়াদে ২০০৯ সালে নব উদ্যোগ বিনিয়োগ প্রয়াস নামে পিপিপি কার্যক্রমের সূচনা করে। তখন তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি। এরপর প্রতি অর্থবছরেই সরকারের অংশের জন্য বিশেষ বরাদ্দ রাখেন অর্থমন্ত্রী। ২০১০ সালে পিপিপি কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয়। তবু কাঙ্ক্ষিত সাড়া মিলছে না। বর্তমানে দুটি প্রকল্প পিপিপির মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে। তবে এই দুটি প্রকল্প স্বাস্থ্য খাতের হওয়ায় নতুন প্রজ্ঞাপনে কর ছাড় পাওয়া যাবে না। তা ছাড়া হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রাজধানীর অদূরে কুতুবখালী পর্যন্ত ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ করছে ইতাল থাই নামে একটি কোম্পানি। এই প্রকল্প কর সুবিধা পাবে। অন্যদিকে কালিয়াকৈর হাই টেক পার্ক নির্মাণকাজও চলছে। প্রকল্পটি এনবিআরের ওই দুটি প্রজ্ঞাপনের কর সুবিধা পাবে না।
এ ছাড়া পিপিপি কর্তৃপক্ষের আওতায় আরও ৪৩টি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের সমীক্ষার কাজ চলছে। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ৩৬ প্রকল্প তালিকাভুক্ত আছে। এই প্রকল্পগুলোর সরকার পিপিপির আওতায় বাস্তবায়ন করতে আগ্রহী। অবশ্য কয়েক বছর ধরেই প্রতিটি এডিপিতেই এমন প্রকল্প থাকে। কিন্তু বেসরকারি উদ্যোক্তারা আগ্রহী হচ্ছেন না।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: