
কোরবানির ঈদের এখনো বেশ কিছু দিন বাকি। ইতিমধ্যেই মিয়ানমার থেকে পশু আসা শুরু হয়েছে। কক্সবাজারের টেকনাফ করিডর হয়ে আসছে এসব পশু। এর মধ্যে রয়েছে গরু ও মহিষ।
ব্যবসায়ীরা জানান, ইঞ্জিনচালিত নৌকায় চড়ে প্রায় ১২ ঘণ্টার সমুদ্রযাত্রা শেষে কক্সবাজারের টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ করিডরে পৌঁছে এসব পশু। মিয়ানমারের বন্দরনগর আকিয়াব, টংগু ও মংডু শহরের কাছাকাছি এলাকা থেকে এসব পশু আনা হচ্ছে। ব্যাপারীরা করিডর থেকে পশু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে।
টেকনাফ স্থলবন্দরের শুল্ক বিভাগ সূত্র জানায়, চলতি আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে করিডরে এসেছে ১ হাজার ৭৫৫টি পশু। এর মধ্যে গরু ১ হাজার ৫৪৪টি। মহিষ ২১১টি। জুলাই মাসে এসেছিল ৪ হাজার ৭৪০টি গরু ও ২ হাজার ২৯টি মহিষ। এর বিপরীতে সরকার রাজস্ব পেয়েছে ৩৩ লাখ ৮৪ হাজার ৭০০ টাকা।
টেকনাফ শুল্ক কর্মকর্তা এ কে এম মোশারফ হোসেন বলেন, ‘এবার আগেভাগে মিয়ানমার থেকে কোরবানির পশু আমদানি শুরু হয়েছে। মিয়ানমার থেকে পশু আমদানি বাড়াতে আমরা সভা করে ব্যবসায়ীদের উদ্বুদ্ধ করেছি।’
শাহপরীর দ্বীপ করিডরে নাফ নদীর ওপর তৈরি জেটি। নৌকা জেটিতে ভিড়লে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্য ও শুল্ক বিভাগের কর্মকর্তারা হাজির হন। নৌকায় গণনা করা হয় পশু। এরপর সরকারি রাজস্ব (শুল্ক) পরিশোধ করে সেই পশু নৌকা থেকে তোলা হয় করিডরে।
গতকাল সোমবার সকালে করিডরে গিয়ে দেখা গেছে, পাঁচটি বড় নৌকায় করিডরে আনা হয়েছে ছোট ও মাঝরি গড়নের ৪২৬টি গরু। এ ছাড়া করিডরের খোলা মাঠে বাঁধা আছে আরও পাঁচ শতাধিক গরু ও মহিষ। এগুলোও আগের দুই দিনে আনা হয়েছে।
শুল্ক বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল টেকনাফের ব্যবসায়ী মং সেন ১৩২, আব্দুল্লাহ মনিরের ১১৩, কাদের হোসেনের ৮১ ও আবুল হোসেন এনেছেন ১০০টি গরু।
চট্টগ্রামের পাইকারি গরু ব্যবসায়ীরাও ভিড় করছেন করিডরে। কথা হয় চট্টগ্রাম নগরের পাহাড়তলীর ব্যবসায়ী দিদারুল আলমের সঙ্গে। তিনি দুই দিন অবস্থান করে করিডর থেকে কিনেছেন ১৪১টি গরু। এখন সেগুলো নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
দিদারুল আলম বলেন, ১৪১টি গরু কিনেছেন ৯৮ লাখ ৭০ হাজার টাকায়। প্রতিটি গরুর ওজন হবে গড়ে চার মণের বেশি। করিডর থেকে গরুগুলো সাবরাং নেওয়া হবে। সেখান থেকে ট্রাকবোঝাই করে নেওয়া হবে চট্টগ্রামে।
চট্টগ্রামের আরেক পশু ব্যবসায়ী জালাল আহমদ বলেন, করিডরে চার মণ ওজনের প্রতিটি গরুর দাম পড়ছে ৭০ হাজার টাকা। ট্রাক ভাড়াসহ আনুষঙ্গিক খরচ যোগ করে চট্টগ্রামে পৌঁছাতে প্রতিটি গরুর দাম পড়ে গড়ে ৭২ হাজার টাকা। সেখানে গরু বিক্রি হবে ৭৫ থেকে ৮০ হাজার টাকায়। কোরবানির সময় এসব গরু লাখ টাকায় বিক্রি হবে। মিয়ানমারের গরু মোটাতাজা বলে চাহিদাও থাকে প্রচুর।
টেকনাফ শুল্ক বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, মিয়ানমার থেকে চোরাইপথে পশু আসা রোধে ২০০৩ সালে ২৫ মে শাহপরীর দ্বীপে এ করিডর চালু হয়। তখন থেকে প্রতিটি গরু-মহিষের বিপরীতে ৫০০ এবং ছাগলের জন্য ২০০ টাকা হারে সরকারি রাজস্ব আদায় হচ্ছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে করিডর দিয়ে পশু আমদানি হয়েছে ৫৪ হাজার ৪৯৬টি গরু, ১২ হাজার ৩৯৫টি মহিষ ও ৪৫টি ছাগল। এসব পশুর বিপরীতে সরকারি রাজস্ব আদায় হয়েছে ৩ কোটি ৩৪ লাখ ৫৭ হাজার টাকা।
পশু ব্যবসায়ী ও শাহপরীর দ্বীপ জেটির ইজারাদার নুরুল হক বলেন, করিডরে আড়াই থেকে তিন মণ ওজনের একটি গরুর দাম পড়ছে ৪৮ থেকে ৫৮ হাজার, চার মণ ওজনের গরু ৭০ হাজার, পাঁচ থেকে সাত মণ ওজনের গরু বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকায়।
টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাইন উদ্দিন খান বলেন, দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় শহর থেকে আসা ব্যবসায়ীরা চাঁদাবাজিসহ হয়রানির শিকার যেন না হন সে ব্যাপারে পুলিশ তৎপর রয়েছে।
টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল এস এম আরিফুল ইসলাম বলেন, পশুবোঝাই ট্রলার বঙ্গোপসাগর ও নাফ নদী অতিক্রম করে যাতে নিরাপদে করিডরে আসতে পারে সে জন্য বিজিবি সহায়তা দিচ্ছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: