odhikarpatra@gmail.com ঢাকা | Tuesday, 28th October 2025, ২৮th October ২০২৫

কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনে ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা দলীয় স্বার্থের জায়গায় জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে হবে : সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

odhikarpatra | প্রকাশিত: ২৯ July ২০২৫ ১৫:৫৫

odhikarpatra
প্রকাশিত: ২৯ July ২০২৫ ১৫:৫৫

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন তখনই সম্ভব, যখন রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা দলীয় স্বার্থের জায়গায় জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

রাজধানীতে আজ বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মিলনায়তনে ‘জুলাই গণহত্যার বিচার আলোচনা ও তথ্যচিত্র প্রদর্শন’ অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।

অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তৃতা করেন আইন ও বিচার বিভাগের সচিব শেখ আবু তাহের। 

অনুষ্ঠানে জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ এবং মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত মানুষের জন্য দোয়া করা হয়। 

অনুষ্ঠানে জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে ‘ট্রায়াল অব জুলাই কার্নেজ’- শীর্ষক একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত এবং জুলাই মাসের অভ্যুত্থানে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন আইন ও বিচার বিভাগের যুগ্ম সচিব রুহুল আমিন। 

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, দেশের প্রতিটি নাগরিকের ন্যায্য সুরক্ষা ও মর্যাদা পাওয়ার অধিকার রয়েছে এবং তা নিশ্চিত করা হবে। তাই বিচার প্রক্রিয়া অবশ্যই নিয়মতান্ত্রিক ও আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পন্ন হবে। তবে শুধুমাত্র বিচারেই সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না- রাষ্ট্রকে নতুনভাবে গড়ে তুলতে হলে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে।

উপদেষ্টা আরো বলেন, যদি অপরাধের বিচার না হয়, তাহলে মানুষের বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থা নষ্ট হয়ে যাবে। সরকার এ বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে এবং বিচারিক প্রক্রিয়া স্বচ্ছতা বজায় রেখে সম্পন্ন করা হচ্ছে। 

তিনি বলেন, বিচারকাজ যেন নির্ভরযোগ্য ও প্রশ্নবর্জিত হয়- সেজন্য নির্ধারিত আইনি প্রক্রিয়া কঠোরভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে, যাতে ভবিষ্যতে এ নিয়ে কোনো নেতিবাচক আলোচনা না হয়।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আরো বলেন, যদি আমরা দেশকে ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে তুলে ধরে পরিবর্তন না করতে পারি, তবে বিচার কেবলমাত্র একটি আনুষ্ঠানিকতা হিসেবেই থেকে যাবে। এতে করে এমন অন্যায়ের পুনরাবৃত্তি ঘটতেই থাকবে। তাই প্রাতিষ্ঠানিক বিচারের পাশাপাশি রাষ্ট্রকে বদলে দেওয়ার যে দায় আমাদের সবার ওপর বর্তায় এবং দেশের মানুষের যে সত্যিকারের পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা রয়েছে, সেটাকে সবার উচিত গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করা ও সম্মান জানানো।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, যখন কোনো দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে এবং দলীয় সরকারের মুখপাত্রে পরিণত হয়, তখন পরিস্থিতি চরম রূপ নেয়। এ ধরনের ঘটনার জন্ম তখনই হয়। 

তিনি মনে করেন, রাতারাতি এই অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। এজন্য সকলকে সচেতন থেকে ধারাবাহিকভাবে পরিবর্তনের পথে কাজ করে যেতে হবে।

চব্বিশের জুলাই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ও নির্দেশদাতারা কীভাবে পালাতে সক্ষম হলো, সেটিও বিচারের দাবি রাখে বলে উল্লেখ করেন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। 

তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডে জড়িত যারা নির্দেশদাতা, তাদের বেশিরভাগই ইতোমধ্যেই দেশ ছেড়ে পালাতে পেরেছে। 

এই বিষয়টিও বিচারের আওতায় আসা উচিত। তারা কীভাবে দেশ ছাড়ল? আমরা কীভাবে তাদের উপস্থিত রাখতে ব্যর্থ হলাম? অনুপস্থিত অবস্থায় তাদের বিচার করতে হলে, তা থেকে স্পষ্ট হয় যে, রাষ্ট্রযন্ত্রের কোথাও না কোথাও বিচারহীনতার সংস্কৃতি এখনো রয়ে গেছে।

উপদেষ্টা আরো বলেন, জুলাই হত্যাকারীদের সমর্থকরা এখনো বিভিন্ন সেক্টরে থেকে গেছে। যদি না থাকত, তাহলে খুনিরা পালিয়ে যেতে পারত না।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের অনুপস্থিতিতে বিচার হবে। ট্রাইব্যুনাল রায় দেবেন। কিন্তু তাদের (জড়িত-নির্দেশদাতা) সত্যিকার অর্থে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে না, এটি মেনে নেওয়া যায় না। 

তিনি বলেন, বিচারে রায় হলে কিছু অভিযুক্ত ব্যক্তি সাজা পাবে, তবে বেশির ভাগই শাস্তির বাইরে থেকে যাবে। ফলে বিচারের এই দিকটি নিয়ে ভাবতে হবে।

গ্রেফতার-বাণিজ্য ও মামলা-বাণিজ্য থেকে এখনো মুক্তি মেলেনি বলে উল্লেখ করেন এ উপদেষ্টা।  

জাতীয় স্বার্থের জায়গায় কাজ করতে রাজনৈতিক দলের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম আশা প্রকাশ করে বলেন, চব্বিশের জুলাই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নির্দেশদাতাদের একটি বড় অংশের বিচার এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে বলে। 

তিনি বলেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলায় প্রথম সাক্ষ্য গ্রহণ হবে আগামী ৩ আগস্ট।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: