
ঢাকার কেরানীগঞ্জের পানগাঁও ইনল্যান্ড কনটেইনার টার্মিনালটিতে (পিআইসিটি) আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনার আসছে। কিন্তু এই টার্মিনাল থেকে উল্লেখযোগ্য হারে যাচ্ছে না রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার। কিছু কিছু রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার পিআইসিটি থেকে গেলেও প্রতি টনে অন্তত ৫০ ডলার (৪ হাজার টাকা) জাহাজভাড়া বেশি গুনতে হচ্ছে রপ্তানিকারকদের।
আবার সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, পিআইসিটি ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে বিভিন্ন পণ্যে ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ কম ট্যারিফ নেওয়া হয়।
টার্মিনালটির সর্বোত্তম ব্যবহারের লক্ষ্যে গতকাল সোমবার অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা উঠে আসে। এতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত প্রধান অতিথি ও নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বিশেষ অতিথি ছিলেন। সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন নৌসচিব অশোক মাধব রায়। পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে দুটি আলাদা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম খালেদ ইকবাল ও পিআইসিটির কমিশনার হোসেন আহমেদ।
এম খালেদ ইকবাল ১৯৯১ সালে পিআইসিটি স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ ও ২০১৩ সালে উদ্বোধন এবং টার্মিনাল ব্যবহারকারীদের জন্য সরকারের খরচ কমানোর পদক্ষেপগুলো তুলে ধরেন। জানান, পিআইসিটি হয়ে একটি জাহাজে করে যেসব পণ্য আনা-নেওয়া করা যায়, সড়কপথে তা পরিবহন করতে গেলে ৩০০টি ট্রাক লাগবে। সুতরাং এই টার্মিনাল সড়কপথের ওপর চাপ কমাতেও ভূমিকা রাখবে।
কমিশনার হোসেন আহমেদ বলেন, পিআইসিটি বাণিজ্যবান্ধব। তবে ছোট ব্যবসায়ীরা টার্মিনালটি মোটামুটি ব্যবহার করলেও বড়রা সেভাবে এগিয়ে আসছেন না।
অর্থমন্ত্রী গতকাল কয়েক মিনিটেই তাঁর কথা শেষ করেন। বলেন, ‘বন্দরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই এখানে উপস্থিত আছেন। সবার বক্তব্য শুনলাম। কিছু পরামর্শও এসেছে। সমস্যা সহজেই চিহ্নিত করা যায়। তবে আমার মনে হয়, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কিছুটা দূরে একটি ভাসমান টার্মিনাল নির্মাণই হতে পারে এই সমস্যার বড় সমাধান।’ অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যকে উপস্থিত সবাই হাততালি দিয়ে স্বাগত জানান।
ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রথমেই কথা বলেন আমদানিকারক আমির হোসেন। তাঁর অভিযোগ জাহাজ কোম্পানিগুলোর (শিপিং লাইনস) বিরুদ্ধে। জানান, ইস্পাত আমদানিকারকেরাই পিআইসিটিকে সচল করে দিতে পারে। কিন্তু সমস্যা হলো জাহাজভাড়া। প্রতি টনে ৪ হাজার টাকা বেশি দিতে হয়, যে খরচ সড়কপথে পড়ে ১ হাজার টাকা।
জাহাজ কোম্পানির অফিস বনানী এলাকায় থাকাটাকেও সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেন আমির হোসেন। তিনি আরও বলেন, সব লেনদেন বেসরকারি ব্যাংকের সঙ্গে, অথচ পিআইসিটিতে আছে মাত্র সোনালী ব্যাংকের একটি শাখা।
জাহাজ কোম্পানি সিএমএ সিজিএমের আমদানি বিভাগের প্রধান নিজামউদ্দিনের কাছে আমির হোসেনের বক্তব্যের জবাব চান নৌমন্ত্রী শাজাহান খান। জবাবে নিজামউদ্দিন বলেন, পিআইসিটি থেকে রপ্তানি কার্যক্রম ভালোভাবে শুরু হলে সমস্যা মিটে যাবে। খালি কনটেইনার নিয়ে গিয়ে আমদানি পণ্য আনতে হয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।
শাজাহান খান তখন নিজামউদ্দিনকে পরামর্শ দেন, ভবিষ্যতে বেশি লাভের জন্য লোকসান দিতে হয়, তাঁরা যেন সেই লোকসানটা এখন দেন।
নিট পোশাক রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সাবেক সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জেই ৮০০ পোশাক কারখানা। পানগাঁও ব্যবহার করতে পারলে আমরা বেঁচে যাই।’
পিআইসিটির সর্বোত্তম ব্যবহারে ক্রেতাদের নিয়ে আরেকটি বৈঠক করা দরকার বলে পরামর্শ দেন হাতেম। বলেন, পানগাঁও থেকে পণ্য রপ্তানির আরেকটি বাধা হচ্ছে ক্রেতারা। আর ক্রেতাদের সঙ্গে চুক্তি থাকে জাহাজ কোম্পানিগুলোর। এমনকি ক্রেতারা বলেও দেয় যে কোন জাহাজ ব্যবহার করতে হবে।
ফ্রেইট ফরোয়ার্ডিং এজেন্ট ইউসুফ আলী বলেন, মূল সমস্যাটি সবাই পাশ কাটিয়ে যাচ্ছেন। আমদানি-রপ্তানির সময় উল্লেখ করতে হয় জাহাজে কোন জায়গা থেকে পণ্য উঠবে (এফওবি) বা কোন জায়গায় পণ্য খালাস হবে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই থাকে চট্টগ্রাম বন্দর। তাঁর প্রশ্ন, চট্টগ্রাম থেকে পানগাঁওয়ের ভাড়াটা তাহলে কে দেবে?
পিআইসিটির সর্বোত্তম ব্যবহারে পিআইসিটি থেকে হাসনাবাদ পর্যন্ত সড়ককে চার লেনে উন্নীতকরণ, পোস্তগোলা থেকে জুরাইন হয়ে মেয়র হানিফ উড়ালসড়ক পর্যন্ত রাস্তার উভয় পাশে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ইত্যাদি পরামর্শ দেন ব্যবসায়ীরা।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: