ঢাকা | বৃহঃস্পতিবার, ৯ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

মুসলিম বিরোধী হামলা থেকে বাঁচতে হিন্দুদের তিলক, সিঁদুর পরার পরামর্শ

Admin 1 | প্রকাশিত: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৯:১৬

Admin 1
প্রকাশিত: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৯:১৬

ভারতে একটি দক্ষিণপন্থী হিন্দু সংগঠন পরামর্শ দিয়েছে, পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে হিন্দুরা যাতে 'হেইট ক্রাইমে'র হাত থেকে বাঁচতে পারেন তার জন্য হিন্দু পুরুষদের কপালে তিলক ও হিন্দু মহিলাদের সিঁদুর বা বিন্দি পরা উচিত।

হিন্দু সংহতি-র সভাপতি তপন ঘোষ মনে করছেন, হিন্দুরা যদি তিলক-সিঁদুরের মাধ্যমে নিজেদের আলাদা পরিচয় তৈরি করতে পারেন তাহলে পাশ্চাত্যে ইসলাম-বিরোধী হামলাগুলোর আঁচ তাদের গায়ে লাগবে না।

তবে তার এই বক্তব্য সামনে আসার পর ভারতের সোশ্যাল মিডিয়াতে তুমুল সমালোচনা হচ্ছে, অনেকেই বলছেন হিন্দুদের এভাবে বাঁচানোর কথা বলে তিনি কি অন্য ধর্মের লোকজনের ওপর হামলাকেই সমর্থন করছেন? বুধবার আমেরিকার কানসাসের একটি বারে শ্রীনিবাস কুচিবোটলা নামে এক প্রবাসী ভারতীয় যুবককে ঠান্ডা মাথায় গুলি করে হত্যা করে মার্কিন নৌবাহিনীর এক সাবেক সেনা।

ভারতে বছরদশেকের পুরনো কট্টরপন্থী হিন্দু সংগঠন হিন্দু সংহতি মনে করছে, ওই হিন্দু যুবক যদি কপালে তিলক পরে থাকতেন তাহলে তিনি হয়তো ওই হামলার হাত থেকে বেঁচেও যেতে পারতেন - কারণ হিন্দুরা আসলে না কি এই সব আক্রমণের নিশানা নন। সংগঠনের নেতা তপন ঘোষের পরামর্শ, পাশ্চাত্যের হিন্দুরা নিজেদের আলাদা করে চেনাতে কপালে তিলক বা সিঁদুর ব্যবহার করে দেখুন।

বিবিসিকে তিনি বলছিলেন, "এটা পরলে সবাই চিনতে পারবেন যে হিন্দু আসলে কারা। কে না জানে শিখরা বহুবার আক্রান্ত হয়েছেন কারণ বিন লাদেনের পাগড়ির সঙ্গে তাদের পাগড়িকে অনেকে গুলিয়ে ফেলেছে। অনেক তরুণ প্রজন্মের শিখ তো নিরাপত্তার জন্য পাগড়ি পরা ছেড়েই দিয়েছে।"

"এখন যেহেতু পশ্চিমা দেশগুলোতে প্রচুর সংখ্যায় হিন্দু আছে, তাই হিন্দু ছেলেরা যদি তিলক আর হিন্দু মহিলারা বিন্দি বা সিঁদুর পরা শুরু করেন - তাদের অবশ্যই আলাদা পরিচিতি তৈরি হবে। সেই জন্যই আমি ওই প্রস্তাবি দিয়েছি।"

সংবাদমাধ্যমে তার এই মন্তব্য প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়াতে তুমুল তর্কবিতর্ক শুরু হয়েছে - অনেকেই যেমন তার প্রস্তাব অবাস্তব ও কুরুচিপূর্ণ বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন, তেমনি অনেকে আবার তা সমর্থনও করছেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক প্রিয়ংবদা সরকারের মতে, তিলক-সিঁদুরের কথা বলে হিন্দু পরিচয়টাকেই আসলে খুব সরলীকরণ করে ফেলা হচ্ছে।

তিনি বলছিলেন, "পরিচিতি বা আইডেন্টিটি জিনিসটা সহজ নয় মোটেই - এর ভেতরে অনেক জটিলতা আছে। আর পরিচয় মানে কখনওই শুধু ধর্মীয় পরিচয় হতে পারে না, এখানেই একটা মস্ত গন্ডগোল করে ফেলা হচ্ছে।"

নিউ জার্সি-তে বহু বছর ধরে বাস করেন কলকাতার ছেলে শৌভিক রায়, তিনি আবার বলছিলেন আমেরিকায় তিনি কখনওই তিলক পরার কথা স্বপ্নেও ভাববেন না।

তার কথায়, "এটা আসলে ভীষণ বোকার মতো প্রস্তাব। আসলে যখনই একটা জাতি বা ধর্মীয় গোষ্ঠী নিজেদের আলাদা করে দেখাতে চায়, আলাদা ভাষায় বা ভঙ্গীতে কথা বলে কিংবা আলাদা 'অ্যাপিয়ারেন্স' দিতে চায় - তখনই কিন্তু বাদবাকি অভিন্ন সমাজে তাদেরকে ঘিরে একটা সংশয় বা 'ডাউট' তৈরি হতে পারে।"

"আমেরিকা আসলে খুব অন্য রকম দেশ, একটা সমুদ্রের মতো। সাগরে যেমন সব নদী মেশে, এখানে এসে মেশে পৃথিবীর সব দেশের লোক - তাই আমরা বলি মেল্টিং পট। এখানে সংবিধান সব ধর্মের লোককে নিজের বিশ্বাস অনুযায়ী চলার স্বাধীনতা দেয় ঠিকই - কিন্তু তাই বলে সমাজের সেটাই রীতি হবে, আমেরিকা কিন্তু তা মনে করে না", নিউ জার্সি থেকে বলছিলেন শৌভিক রায়।

হিন্দু সংহতি-র তপন ঘোষ এককালে আরএসএস-র প্রচারক ছিলেন, তার সংগঠন সম্প্রতি কলকাতায় বেশ বড় জনসভাও করেছে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: