odhikarpatra@gmail.com ঢাকা | Monday, 20th October 2025, ২০th October ২০২৫

নেতৃত্ব বিকাশে অবশ্যই ডাকসু নির্বাচন করতে হবে : রাষ্ট্রপতি

Admin 1 | প্রকাশিত: ৫ March ২০১৭ ০৬:২৪

Admin 1
প্রকাশিত: ৫ March ২০১৭ ০৬:২৪

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ দেশের গণতন্ত্রের ভিত্তি শক্তিশালী করতে নতুন নেতৃত্ব গড়ে তোলার জন্য ডাকসু নির্বাচনের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ছাত্র নেতৃত্ব বিকাশে অবশ্যই ডাকসু নির্বাচন করতে হবে। তিনি আজ বিকেলে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে আয়োজিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, দেশে যোগ্য ও সৎ নেতৃত্ব গড়ে না উঠলে জাতির ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব গড়ে উঠবে না।
তিনি বলেন, দেশের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক নেতৃত্বের কোন বিকল্প নেই। রাষ্ট্রপতি দেশে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ এবং সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ছাত্র সমাজের গৌরবোজ্জল ভূমিকার উল্লেখ করে বলেন, ছাত্র সমাজকেই দেশের রাজনীতির অতীত ঐতিহ্য ও গৌরব পুনরুদ্ধার করতে হবে।
রাষ্ট্রপতি তাঁর ভাষণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ১৯৭১ সালে মহান মক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী মুক্তিযোদ্ধা, ভাষা শহীদ এবং বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জীবন উৎসর্গকারী ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়ের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।
রাষ্ট্রপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে উন্নত মানব সম্পদ গড়ার কেন্দ্রবিন্দু হিসাবে উল্লেখ করে বলেন, ১৯২১ সালের ১ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়টি চালু হবার পর থেকে আধুনিক, বিজ্ঞানভিত্তিক এবং সময়োপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে এবং দেশের সার্বিক অগ্রগতি, উন্নয়ন ও মর্যাদা সমুন্নত রাখতে বিশ্ববিদ্যালয়টি গতিশীল এবং বাস্তবভিত্তিক বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, আমি ছাত্র জীবনেই আমার রাজনীতি শুরু করেছিলাম। আগামী দিনে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে নেতৃত্ব দিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দক্ষ ও যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তুলবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তবে তিনি ছাত্র রাজনীতির বর্তমান অবস্থায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ছাত্র রাজনীতি এখন আর ছাত্র রাজনীতির স্থানে নেই, কোন বিশেষ মহল বা ব্যাক্তির স্বার্থ রক্ষা করতে যেয়ে রাজনীতির কল্যাণভিত্তিক আদর্শচ্যুত হয়ে যাচ্ছে নেতৃত্ব।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ছাত্র রাজনীতি এখন কেন সাধারণ জনগণের আস্থা, সমর্থন ও শ্রদ্ধা হারাচ্ছে। তিনি ছাত্র রাজনীতিতে তার ভূমিকার কথা উল্লেখ করে বলেন, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন না, তবে একজন ছাত্র নেতা হিসাবে তিনি অনেকবার এই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পসে এসেছেন এবং অবস্থান করেছেন। ফলে এই বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে তিনি গর্ববোধ করেন।
রাষ্ট্রপতি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন এবং ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের উল্লেখ করে বলেন, এই দুটি আন্দোলন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশকে একটি অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল এবং আধুনিক রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি লাভে সহায়তা করেছে। জাতির সম্মান, মর্যাদা ও গ্রহণযোগ্যতা বয়ে এনেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়।

রাষ্ট্রপতি অভিযোগ করে বলেন, স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি উগ্রবাদের বিস্তার ঘটানোর মাধ্যমে বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি নস্যাতের চেষ্টা করছে।
তিনি ১৯৭১ সালে সংঘটিত নৃশংসতার কথা স্মরণ করে বলেন, এই কায়েমী স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীটি গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও ধর্ষণসহ মানবতার বিরুদ্ধে নানা ঘৃণ্য অপরাধ করেছে এবং দেশকে মেধাশূন্য করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষকসহ বহু বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের বিয়োগান্তক ঘটনা প্রসঙ্গে আবদুল হামিদ বলেন, ওইদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঢাবি ক্যাম্পাসে একটি কর্মসূচিত অংশ নেয়ার কথা ছিলো। কিন্তু স্বাধীনতা বিরোধী চক্র এর আগেই বঙ্গবন্ধুকে তাঁর পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ হত্যা করে।
দেশের উন্নয়নের পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ক্ষেত্রেও ব্যাপক অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘কিন্তু এখনো আমাদের সমাজ ও দেশে স্বাধীনতার পক্ষ ও বিপক্ষ শক্তি, প্রগতিশীল ও প্রতিক্রিয়াশীল, ভালো ও মন্দ অথবা ধর্মানুরাগী ও উগ্রবাদীদের মধ্যে লড়াই শেষ হয়নি।’
তিনি স্নাতক ডিগ্রি অর্জনকারীদের স্বাগত জানান এবং তাদের এই পর্যন্ত পৌঁছানোর ক্ষেত্রে পিতা-মাতা, শিক্ষক, সমাজ, দেশ ও জনগণের অবদানের কথা ভুলে না যাওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতি আহবান জানান।
তিনি আরো বলেন, ‘তোমরা তাদের সকলের কাছে ঋণী। তোমাদের মেধা, প্রজ্ঞা ও কাজের মাধ্যমে নিজ নিজ জায়গা থেকে জাতির আশা-আকাংখা পূরণে তোমাদের অবশ্যই সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।’
রাষ্ট্রপতি শিক্ষার্থীদের তাদের চাকরির সুবাদে বিশ্বের যেখানেই থাকুক না কেনো, এই দেশ দেশের মানুষকে ভুলে না যাওয়ার পাশাপাশি কোন মিথ্যা ও অশুভ শক্তির কাছে মাথানত না করার পরামর্শ দেন।
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ১৭ হাজার ৭৮৫ জনকে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি ডিগ্রি দেয়া হয়। মোট ৮০ জনকে স্বর্ণপদক, ৬১ জনকে পিএইচডি এবং ৪৩ জনকে এম.ফিল ডিগ্রি দেয়া হয়।
অনুষ্ঠানে কানাডার ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট ও ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক অমিত চাকমা সমাবর্তন বক্তৃতা প্রদান করেন। সমাবর্তনে তাকে ‘ডক্টর অব সায়েন্স’ ডিগ্রি দেয়া হয়। ১৯৫৯ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি চাকমা পরিবারে জন্ম নেন এই কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার।
অনুষ্ঠানে ঢাবি’র ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমদ এবং বিভিন্ন অনুষদের ডীনগণও বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বর্তমান ও সাবেক মন্ত্রী, সিনিয়র রাজনীতিক এবং সাবেক ছাত্রনেতারাও উপস্থিত ছিলেন।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: