ঢাকা | রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

অতি আত্মবিশ্বাসী হওয়ার কোনো কারণ নেই

Admin 1 | প্রকাশিত: ৫ মার্চ ২০১৭ ২২:৫১

Admin 1
প্রকাশিত: ৫ মার্চ ২০১৭ ২২:৫১

সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) উপব্যবস্থাপনা পরিচালক বা ডিএমডি মিসুহিরো ফুরুসাওয়া। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠানে বিশেষ বক্তব্য দেন। সেই বক্তব্যে বাংলাদেশের অর্থনীতির সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে কথা বলেছেন। বক্তব্যটি আইএমএফের ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে। বক্তব্যের সংক্ষেপিত অংশ তুলে ধরা হলো-
বাংলাদেশ ভালো করছে। তারপরও অতি আত্মবিশ্বাসী হওয়ার কোনো কারণ নেই। উন্নয়নের পরবর্তী ধাপে যেতে বাংলাদেশের সামনে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ আছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশের সামনে থাকা চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানো। গত কয়েক বছরে অর্জিত উচ্চ প্রবৃদ্ধি টেকসই করতে হলে এই ধরনের বেসরকারি বিনিয়োগ খুবই প্রয়োজন। ব্যবসায় প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ধরে রাখতে এবং উৎপাদনশীলতার প্রবৃদ্ধির জন্য একইভাবে সরকারি বিনিয়োগও উল্লেখযোগ্য হারে বাড়াতে হবে। এ ছাড়া দীর্ঘ মেয়াদের বিনিয়োগের জন্য শেয়ারবাজারেও উন্নতি করতে হবে।
বিনিয়োগ বাড়াতে একদিকে যেমন অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে রাজস্ব বাড়াতে হবে; অন্যদিকে বিদেশি বিনিয়োগপ্রবাহও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হলো, নতুন মূল্য সংযোজন কর (মূসক) আইন বাস্তবায়ন করা। এ ছাড়া লাল ফিতার দৌরাত্ম্য বন্ধ করে ব্যবসা-বাণিজ্য সহায়ক নীতি গ্রহণ করতে হবে।
বাংলাদেশ যদি তার অর্থনৈতিক সম্ভাবনার পুরোটা ব্যবহার করতে চায়; তবে কাঠামোগত সংস্থার, প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা শক্তিশালী করা ও দক্ষতার উন্নয়নকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। কার্যকর করব্যবস্থা গড়ে তোলাও প্রয়োজন। আবার আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও ব্যবসায় পরিবেশের উন্নতিতে বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রম নিতে হবে। সর্বোপরি টেকসই, শক্তিশালী ও মধ্যমেয়াদি প্রবৃদ্ধির জন্য স্থিতিশীল নিরাপদ পরিবেশ দরকার। আত্মবিশ্বাসে চিড় যাতে ধরাতে না পারে, সে জন্যই নিরাপত্তা দরকার।
গত দুই দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতির ব্যাপক রূপান্তর হয়েছে। মূলত তৈরি পোশাক খাতের সম্প্রসারণের কারণেই এই উন্নতি। যা একদিকে দারিদ্র্য বিমোচন করেছে, নারীর কর্মসংস্থানে ভূমিকা রেখেছে। এসব কারণে ক্রমেই মাথাপিছু আয় বেড়েছে। বাংলাদেশের মধ্য আয়ের দেশের পরিণত হওয়ার অগ্রযাত্রায় এই বিষয়টি (মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
বিভিন্ন উন্নয়ন সূচকে অসাধারণ ভালো করেছে বাংলাদেশ। ১৯৯০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত দারিদ্র্যের হার অর্ধেকে নেমে এসেছে। বৈষম্য কম এবং তা নিম্ন পর্যায়ে আছে। গড় আয়ু বৃদ্ধি, শিশুমৃত্যু হ্রাস, সুপেয় পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন সূচকে নিম্নমধ্য আয়ের দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অসাধারণ অগ্রগতি দেখিয়েছে। এগুলো খুবই অনুপ্রেরণাদায়ক অর্জন।
আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা ও টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে পারে আইএমএফ। আমি এই নিশ্চয়তা দিতে পারি যে, এই বিষয়ে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করবে আইএমএফ।
আইএমএফের বর্ধিত ঋণসুবিধা (ইসিএফ) নিয়েছে বাংলাদেশ। সুসংহত প্রবৃদ্ধি অর্জনে শক্তিশালী নীতি প্রণয়নে সহায়তা করেছে এই ঋণসুবিধা। এতে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় আছে, যা বাংলাদেশকে শক্ত অবস্থানে নিয়ে গেছে। বিদেশি মুদ্রার উচ্চ মজুত (রিজার্ভ), মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে সরকারি ঋণভার কম। এ ছাড়া সার্বিক মূল্যস্ফীতিও কম।


২০১৬ সালে বিশ্ব জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ১ শতাংশ বলে পূর্বাভাস দিয়েছি। তবে ২০১৭ ও ২০১৮ সালে এই প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ এবং ৩ দশমিক ৬ শতাংশে উন্নীত হবে বলে আশা করছি। মূলত উন্নত ও উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর প্রবৃদ্ধির প্রতিফলন ঘটবে বিশ্ব জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে। বিশেষ করে এশিয়ার উদীয়মান ও উন্নয়নশীল দেশগুলো বেশ ভালো প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে। আগামী দিনে চীনই হবে বিশ্ব প্রবৃদ্ধির প্রধান চালিকাশক্তি।
তবে বিশ্ব অর্থনীতির সামনে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ আছে। প্রধান চ্যালেঞ্জটি হলো রাজনৈতিক। উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোতে বিশ্বায়ন নিয়ে অসন্তোষ তৈরি হচ্ছে। এতে যদি সংরক্ষণবাদের দিকে রাজনৈতিক নীতি ধাবিত হয়; তবে তা উৎপাদনশীলতা ও আয়, বাজার ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর প্রভাব ফেলবে। এ ছাড়া ভূরাজনৈতিক দুশ্চিন্তা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ঝুঁকিও আছে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: