ঢাকা | বুধবার, ২৮ মে ২০২৫, ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থগিতে যুক্তরাষ্ট্রের দাবি প্রত্যাখ্যান করল ইরান

odhikarpatra | প্রকাশিত: ২৬ মে ২০২৫ ২০:১৮

odhikarpatra
প্রকাশিত: ২৬ মে ২০২৫ ২০:১৮

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন পরমাণু চুক্তির অংশ হিসেবে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থগিত রাখার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে ইরান। সোমবার দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে না।


তেহরান থেকে এএফপি জানান, গত কয়েক সপ্তাহে এই ইস্যুটি বিশেষভাবে আলোচনায় এসেছে। ইরান বলছে, তাদের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম শান্তিপূর্ণ বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচির অংশ, তবে যুক্তরাষ্ট্র এ কার্যক্রম বন্ধ করতে চায়।

চলতি বছরের এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া ইরান-যুক্তরাষ্ট্র আলোচনা দুই দেশের মধ্যকার সর্বোচ্চ পর্যায়ের সংলাপ। এই সংলাপ শুরু হয়েছে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ২০১৫ সালের ঐতিহাসিক পারমাণবিক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে যাওয়ার পর এই প্রথম।

রোমে সর্বশেষ বৈঠক প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, এটি ছিল ‘খুব, খুব ভালো’, যদিও ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে ‘জটিল’ বলে অভিহিত করেছেন।

ক্ষমতায় ফিরে ট্রাম্প আবারও ‘সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগ’ নীতিতে ফিরে গেছেন। তিনি কূটনীতিকে সমর্থন জানালেও ব্যর্থ হলে সামরিক পদক্ষেপের হুমকি দিয়েছেন।

তেহরান চায় এমন একটি নতুন চুক্তি, যার মাধ্যমে তাদের ওপর আরোপিত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে।

পশ্চিমা দেশগুলো এবং ইসরাইল মনে করে, ইরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে—যা ইরান বরাবরই অস্বীকার করে আসছে।

আলোচনায় মার্কিন প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ বলেন, ‘ইরান এক শতাংশ ইউরেনিয়ামও সমৃদ্ধ করতে পারবে- এমন কোনো অনুমতি যুক্তরাষ্ট্র দিতে পারে না।’

‘সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন’

সোমবার ইরান তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে জানায় যে, তারা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থগিত করবে না।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাকায়ি তেহরানে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘এটি কল্পনাপ্রসূত এবং পুরোপুরি ভিত্তিহীন।’

তিনি বলেন, ইরান একটি বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচির অধিকার রাখে, যার মধ্যে জ্বালানি উৎপাদনের জন্য ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের এই দাবি পারমাণবিক অস্ত্রবিস্তার রোধে গৃহীত চুক্তি (এনপিটি)’র পরিপন্থী, যার সদস্য ইরান।

ওমানে মধ্যস্থতায় রোমে হওয়া সর্বশেষ বৈঠকের পর ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রধান আলোচক আব্বাস আরাকচি জানান, ‘আলোচনাগুলো অত্যন্ত জটিল, যা দুই-তিনটি বৈঠকে নিষ্পত্তি করা সম্ভব নয়।’

ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আলবুসাঈদী বলেন, পঞ্চম দফার আলোচনা কিছু অগ্রগতি আনলেও তা চূড়ান্ত নয়। তিনি আশাবাদী, ‘বাকি বিষয়গুলো আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই স্পষ্ট হবে।’

তবে রোববার ট্রাম্প জানান, আলোচনার অগ্রগতি হয়েছে এবং ‘ইরান ইস্যুতে ভালো কোনো খবর’ আসতে পারে। তিনি বলেন, ‘পরবর্তী দুই দিনের মধ্যে কোনো ঘোষণা আসতে পারে।’

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পরবর্তী আলোচনা কখন হবে তা এখনও নির্ধারণ করা হয়নি।

এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হচ্ছে এমন সময়ে, যখন জুন মাসে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রম পর্যালোচনা করবে।

এছাড়া, ২০১৫ সালের চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে চলতি বছরের অক্টোবরেই, যার লক্ষ্য ছিল ইরান যেন পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা অর্জন করতে না পারে, যদিও ইরান সবসময়ই এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

২০১৫ সালের চুক্তি ভেঙে পড়ার পর থেকে ইরান তাদের পারমাণবিক কার্যক্রম বৃদ্ধি করেছে এবং বর্তমানে তারা ৬০ শতাংশ মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে, যা চুক্তির ৩.৬৭ শতাংশ সীমার অনেক ঊর্ধ্বে, তবে এখনও অস্ত্র-গ্রেড ইউরেনিয়ামের জন্য প্রয়োজনীয় ৯০ শতাংশের নিচে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একবার ইউরেনিয়াম ২০ শতাংশ মাত্রায় সমৃদ্ধ করা হলে তা দ্রুত অস্ত্র-গ্রেড মাত্রায় পৌঁছে দেওয়া সম্ভব।

এদিকে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান চলতি সপ্তাহে ওমান সফরে যাচ্ছেন।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: