ঢাকা | শনিবার, ২ আগস্ট ২০২৫, ১৮ শ্রাবণ ১৪৩২

যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া উত্তেজনা চরমে, বাকযুদ্ধ থেকে পরমাণু সাবমেরিন মোতায়েনের সিদ্ধান্ত ট্রাম্পের

odhikarpatra | প্রকাশিত: ২ আগস্ট ২০২৫ ২১:০০

odhikarpatra
প্রকাশিত: ২ আগস্ট ২০২৫ ২১:০০

ইউক্রেন ও শুল্ক নিয়ে রাশিয়ার একজন কর্মকর্তার সঙ্গে অনলাইনে তীব্র বাকযুদ্ধের পর শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দু’টি পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন। এতে নতুন করে উত্তেজনার তৈরি হয়েছে।

ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানিয়েছে, ট্রাম্প ও রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান দিমিত্রি মেদভেদেভ গত কয়েক দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র বাকযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। 

হঠাৎ ট্রাম্প তার ‘ট্রুথ সোশ্যাল’ প্ল্যাটফর্মে এক পোস্টে সেই বাকযুদ্ধকে পরমাণু শক্তির মতো খুবই গুরুতর ও সংবেদনশীল বিষয়ের দিকে নিয়ে যান, যা সাধারণত প্রকাশ্যে আসে না।

ট্রাম্প তার সামাজিক মাধম্যের পোস্টে বলেন, ‘অত্যন্ত উস্কানিমূলক মন্তব্যের’ কারণে তিনি ‘দু’টি পারমাণবিক সাবমেরিন সংশ্লিষ্ট এলাকায় মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে এসব নির্বোধ ও উস্কানিমূলক মন্তব্য কেবল কথার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে।’

৭৯ বছর বয়সী এই রিপাবলিকান নেতা আরও লেখেন, ‘কথার গুরুত্ব অনেক। ভুল বোঝাবুঝি বিপজ্জনক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। আশা করি, এবার সেটি হবে না।’

তবে ট্রাম্প তার পোস্টে সাবমেরিন দু’টি পরমাণু অস্ত্রে সজ্জিত কি না, কিংবা এগুলোর অবস্থান কোথায় তার উল্লেখ করেননি।

কিন্তু শুক্রবার রাতে নিউজম্যাক্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, ‘সাবমেরিন দু’টি এখন রাশিয়ার কাছাকাছি আছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা সবসময় প্রস্তুত থাকতে চাই। তাই আমি ওই এলাকায় দু’টি পরমাণবিক সাবমেরিন পাঠিয়েছি। আমি শুধু নিশ্চিত হতে চাই যে তার (মেদভেদেভ) কথাগুলো কেবলই কথা, এর চেয়ে বেশি কিছু নয়।’

ট্রাম্পের এই মন্তব্যের কয়েক ঘণ্টা আগেই রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন জানান, মস্কো হাইপারসনিক পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র ‘ওরেশনিক’ এর ব্যাপক উৎপাদন শুরু করেছে। এ বছরের শেষ নাগাদ এসব ক্ষেপণাস্ত্র ইউক্রেনের পাশের দেশ বেলারুশে মোতায়েন করা হতে পারে। বেলারুশ রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র।

এই পরমাণু শক্তি প্রদর্শনের পেছনে আরও কারণ আছে। ট্রাম্প ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের জন্য রাশিয়াকে এক সপ্তাহ সময় বেঁধে দিয়েছেন। তা না হলে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। তবে সেই হুমকি উপেক্ষা করে ইউক্রেনে রুশ হামলা চলছে পুরো দমে।

শুক্রবার প্রকাশিত এএফপির বিশ্লেষণে দেখা গেছে, জুলাই মাসে রাশিয়া ইউক্রেনে রেকর্ড সংখ্যক ড্রোন হামলা চালিয়েছে।

জুন মাস থেকে রাশিয়ার হামলায় শত শত ইউক্রেনীয় সাধারণ নাগরিক নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার ভোরে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় ৩১ জন নিহত হন বলে উদ্ধারকর্মীরা জানিয়েছেন।

পুতিন বারবার যুদ্ধবিরতির আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছেন। শুক্রবার তিনি বলেন, তিনি শান্তি চান, তবে প্রায় সাড়ে তিন বছরের এই আক্রমণ শেষ করতে হলে ইউক্রেনকে তার শর্তগুলো মেনে নিতে হবে। এবিষয়ে তার অবস্থান ‘অনড়’ থাকবে।

তার শর্তের মধ্যে রয়েছে ইউক্রেনকে কিছু ভূখণ্ড ছেড়ে দিতে হবে এবং ন্যাটোতে যোগদানের স্বপ্ন বাদ দিতে হবে।

বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে পুতিন বলেন, বেলারুশে ওরেশনিক ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের জন্য স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে এবং বছরের শেষ নাগাদ তা সম্পন্ন হবে।

বিশ্বের বেশিরভাগ পরমাণু অস্ত্র রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার হাতে। যুক্তরাষ্ট্র ‘পারমাণবিক ত্রয়ী’ (ভূমি, সমুদ্র এবং আকাশ) অস্ত্র ব্যবহার করে। এরই অংশ হিসেবে, তারা সবসময় পরমাণু অস্ত্রবাহী সাবমেরিন সমুদ্রে টহলে রাখে।

ট্রাম্প নিউজম্যাক্সকে বলেন, মেদভেদেভ যখন ‘পারমাণবিক’ শব্দটি ব্যবহার করলেন, তখনই তিনি সাবমেরিন মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেন। তিনি বলেন, ‘যখন কেউ ‘নিউক্লিয়ার’ বলে, আমি তা হালকাভাবে নিই না। কারণ সেটি চূড়ান্ত হুমকি।

মেদভেদেভ বৃহস্পতিবার তার টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্টে ট্রাম্পের সমালোচনা করেন এবং ‘ডেড হ্যান্ড’-এর কথা উল্লেখ করেন। এটি ছিল স্নায়ুযুদ্ধের সময়কার রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের একটি অতি-গোপন স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা।

এর আগে ট্রাম্প রাশিয়া ও ভারতের অর্থনীতিকে ‘মৃত’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন।

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ‘আল্টিমেটামের খেলা’ খেলার অভিযোগ তুলে তিনি সোমবার ‘এক্স’-এ পোস্ট করে বলেন, ট্রাম্পের ‘মনে রাখা উচিত’ যে রাশিয়া একটি শক্তিশালী শক্তি।

পাল্টা জবাবে ট্রাম্প লেখেন, ‘ওই সাবেক ব্যর্থ প্রেসিডেন্ট এখনো নিজেকে প্রেসিডেন্ট ভাবে।’ তিনি আরও সতর্ক করে বলেন, ‘শব্দ বেছে বলো, মেদভেদেভ! তুমি কিন্তু ভয়ানক এক জায়গায় পা রাখছো।’

এক সময়ের সংস্কারপন্থি হিসেবে পরিচিত মেদভেদেভ ২০০৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন, সে সময় তিনি ছিলেন বাস্তবে পুতিনের প্রতিনিধি মাত্র। পরবর্তীতে তিনি কট্টর জাতীয়তাবাদী অবস্থানে যান এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় পশ্চিম-বিরোধী প্রচারণায় সক্রিয় হন। তবে রুশ রাজনীতিতে তার প্রভাব সীমিত।

বৃহস্পতিবারের হামলায় নিহতদের স্মরণে শুক্রবার কিয়েভজুড়ে শোক পালিত হয়। নিহত ৩১ জনের মধ্যে ৫ জন শিশু ছিল। ক্ষেপণাস্ত্রে বিধ্বস্ত নয়তলা ভবনের সামনে ফুল ও মোমবাতি রেখে শ্রদ্ধা জানান তারা।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, যুদ্ধ থামাতে পারেন কেবল ভ্লাদিমির পুতিনই। তিনি আবারও সরাসরি বৈঠকের প্রস্তাব দেন।

তিনি ‘এক্স’-এর এক পোস্টে লেখেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এই প্রস্তাব দিয়েছে। ইউক্রেনও এতে সমর্থন জানিয়েছে। এখন যা প্রয়োজন তা হলো রাশিয়ার প্রস্তুতি।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: