ঢাকা | Sunday, 19th October 2025, ১৯th October ২০২৫

আদালতের রায়ে ক্ষমতাচ্যুত সরকার : থাইল্যান্ডের পঞ্চম প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন শিনাওয়াত্রা

odhikarpatra | প্রকাশিত: ২৯ August ২০২৫ ২০:৩০

odhikarpatra
প্রকাশিত: ২৯ August ২০২৫ ২০:৩০

বিশেষ প্রতিবেদন

থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন শিনাওয়াত্রা আদালতের রায়ে পদ হারালেন। কম্বোডিয়ার সঙ্গে ‘ব্যক্তিগত সম্পর্ক’ ও জাতীয় স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে আদালতের রায়ে পদচ্যুত হলেন থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন শিনাওয়াত্রা। গত ১ জুলাই দেশটির সাংবিধানিক আদালত তার প্রধানমন্ত্রীর পদ স্থগিত করে রেখেছিলো। রায়ের পর দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রী অন্তর্বর্তীকালীনভাবে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেবেন। শিগগিরই নতুন প্রধানমন্ত্রীর জন্য ভোট অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে। থাইল্যান্ডের রাজনীতিতে আদালতের এমন হস্তক্ষেপ নতুন নয়। ২০০৮ সালের পর থেকে এটি পঞ্চমবার কোনো প্রধানমন্ত্রীকে আদালতের রায়ে পদচ্যুত করা হলো। রাজনৈতিক অস্থিরতায় দেশটি আবারও অনিশ্চয়তার মুখে পড়ল।

বৃহস্পতিবার দেওয়া রায়ে আদালত জানায়, পেতংতার্ন এমন একটি ব্যক্তিগত সম্পর্ক বজায় রেখেছেন, যা কম্বোডিয়ার রাজনৈতিক স্বার্থের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। আদালতের মতে, এটি থাইল্যান্ডের সাংবিধানিক ও জাতীয় নিরাপত্তার পরিপন্থি।

সংক্ষিপ্ত সংবাদ সম্মেলনে পদচ্যুত পেতংতার্ন বলেছেন, “আমি রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে একজন থাই নাগরিক হিসেবে জনগণের প্রতি আমার আন্তরিকতা অটুট থাকবে।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, এটি থাইল্যান্ডের সাম্প্রতিক ইতিহাসে আদালতের মাধ্যমে পঞ্চমবার কোনো প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতাচ্যুত করা হলো। ফলে দেশটি আবারও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মুখে পড়ল।

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া উভয়ই আসিয়ান (ASEAN)-এর গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। অতীতে সীমান্ত বিরোধ ও রাজনৈতিক মতপার্থক্য দুই দেশের সম্পর্কে টানাপড়েন সৃষ্টি করেছিল। এবার ব্যক্তিগত সম্পর্কের অভিযোগের কারণে এই উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে বলে বিশ্লেষকেরা আশঙ্কা করছেন।

অন্যদিকে, কম্বোডিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী হুন সেন সবসময় আঞ্চলিক কূটনীতিতে প্রভাবশালী ছিলেন। পেতংতার্নের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক প্রকাশ্যে আসায় থাইল্যান্ডের রাজনীতিতে বিদেশি প্রভাব কতটা গভীর এ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, আদালতের এ রায় কেবল অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার দ্বন্দ্ব নয়, বরং আসিয়ান রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে। থাইল্যান্ডে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বারবার আদালত ও সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে ব্যাহত হয়েছে। ফলে দেশটি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য বারবার ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে।

প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন শিনাওয়াত্রা : সংক্ষিপ্ত পরিচয়

পূর্ণ নাম: পেতংতার্ন শিনাওয়াত্রা (Paetongtarn Shinawatra)

জন্ম: ২১ আগস্ট ১৯৮৬, ব্যাংকক, থাইল্যান্ড

পারিবারিক পটভূমি: তিনি থাইল্যান্ডের প্রভাবশালী শিনাওয়াত্রা রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য। তাঁর পিতা থাকসিন শিনাওয়াত্রা ছিলেন থাইল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, যিনি সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন। তাঁর খালা ইংলাক শিনাওয়াত্রাও দেশটির প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এবং তাকেও আদালতের রায়ে অপসারণ করা হয়েছিল।

শিক্ষা: পেতংতার্ন শিনাওয়াত্রা রাজনৈতিক বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষায় ডিগ্রি অর্জন করেছেন।

রাজনৈতিক জীবন:

তিনি ফেউ থাই পার্টি (Pheu Thai Party)-এর নেত্রী হিসেবে রাজনীতিতে সক্রিয় হন।

২০২৩ সালের নির্বাচনে তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রার্থী হন এবং অবশেষে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।

অভিযোগ পদচ্যুতি:

ফাঁস হওয়া একটি ফোনালাপে তিনি কম্বোডিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী হুন সেনকে "চাচা" বলে সম্বোধন করেন এবং থাই সেনাবাহিনীকে সমালোচনা করেন।

আদালত রায়ে জানায়, তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্ক জাতীয় স্বার্থবিরোধী এবং এ কারণেই তিনি প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে অপসারিত হন। উল্লেখ্য পেতংতার্ন শিনাওয়াত্রা থাইল্যান্ডের  সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন।

থাইল্যান্ডে আদালতের রায়ে পদচ্যুত হওয়া প্রধানমন্ত্রী-

১. থাকসিন শিনাওয়াত্রা (২০০৬)

  • দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হন।
  • সেনা অভ্যুত্থানের আগে আদালত তাঁর বিরুদ্ধে রায় দেন।

২. সামাক সুন্দরাভেজ (২০০৮)

  • টিভি কুকিং শো চালানোর কারণে “সংবিধান ভঙ্গ” অভিযোগে আদালতের রায়ে পদচ্যুত হন।

৩. সোমচাই ওংসাওয়াত (২০০৮)

  • আদালত তাঁর দল People’s Power Party-কে ভেঙে দেয়, ফলে তিনি স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রধানমন্ত্রী পদ হারান।

. ইংলাক শিনাওয়াত্রা (২০১৪)

  • ক্ষমতার অপব্যবহার এবং পদোন্নতিতে স্বজনপ্রীতির অভিযোগে সাংবিধানিক আদালতের রায়ে ক্ষমতাচ্যুত হন।

. পেতংতার্ন শিনাওয়াত্রা (২০২৫)

  • কম্বোডিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও সেনাবাহিনীকে সমালোচনার অভিযোগে আদালতের রায়ে ক্ষমতাচ্যুত।

 

 

মো. সাইদুর রহমান বাবু, স্পেশাল করোসপন্ডেন্টস, অধিকারপত্র



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: