ঢাকা | Monday, 20th October 2025, ২০th October ২০২৫

ট্রাম্পনামা: ২০১৮ এরর পর আবারও সরকারি শাটডাউন কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে যুক্তরাষ্ট্র

odhikarpatra | প্রকাশিত: ৫ October ২০২৫ ২১:৩৩

odhikarpatra
প্রকাশিত: ৫ October ২০২৫ ২১:৩৩

যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি কার্যক্রম আবারও স্থবির হয়ে পড়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রিপাবলিকান দল ও বিরোধী ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে বাজেট নিয়ে সমঝোতা না হওয়ায়, সাত বছরের মধ্যে এই প্রথম দেশটিতে সরকারি শাটডাউন শুরু হলো। বাজেট আইন পাস না হওয়ায় বুধবার রাত ১২টা ০১ মিনিট থেকে (স্থানীয় সময়) কেন্দ্রীয় সরকারের বড় অংশ কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। এ সময় প্রাথমিকভাবে প্রায় ৭ লাখ ৫০ হাজার সরকারি কর্মচারীকে অস্থায়ীভাবে বেতন ছাড়া ছুটিতে (ফার্লো) পাঠানো হয়েছে। অপরদিকে, সীমান্ত নিরাপত্তা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, চিকিৎসা সেবা, এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের মতো জরুরি সেবা চলবে বটে, তবে সংশ্লিষ্ট কর্মীরা আপাতত কোনো বেতন পাবেন না।

কেন হলো এই শাটডাউন?

বাজেট পাসে রিপাবলিকানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেও সিনেটে প্রয়োজনীয় ৬০ ভোটের ঘাটতি রয়েছে। এই সুযোগে ডেমোক্র্যাটরা তাদের দাবিগুলো সামনে এনেছেন। তারা স্বাস্থ্যখাতে ভর্তুকি ও মেডিকেডে কাটছাঁট প্রত্যাহারের দাবি তুলেছেন। অপরদিকে রিপাবলিকানরা নতুন কোনো ছাড় দিতে নারাজ। ফলে বাজেট বিল আটকে গেছে সিনেটে। সামাজিক নিরাপত্তা ও মেডিকেয়ার চেক পাঠানো হলেও নতুন কার্ড ও যাচাইকরণ প্রক্রিয়া বন্ধ থাকতে পারে। জাতীয় উদ্যান ও জাদুঘর আংশিক বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আগের শাটডাউনে এসব স্থানে ভাঙচুর ও বর্জ্য ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা ঘটেছিল। শিক্ষা ও ছাত্রঋণ খাত আপাতত কম প্রভাবিত হলেও দীর্ঘস্থায়ী হলে সমস্যায় পড়বে বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার্থী। গবেষণা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, কারণ CDC ও NIH-এর মতো সংস্থাগুলো কর্মী ছাঁটাই করবে। ভ্রমণ ও পাসপোর্ট প্রক্রিয়া বিলম্বিত হবে বলে সতর্ক করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

রাজনৈতিক অচলাবস্থা

বিশ্লেষকরা বলছেন, এবারকার শাটডাউন কিছুটা ভিন্ন। ট্রাম্প প্রশাসন শাটডাউনকে চাপের কৌশল হিসেবে ব্যবহার করতে চায়। এমনকি প্রেসিডেন্ট নিজেই ইঙ্গিত দিয়েছেন, “অপ্রয়োজনীয়কর্মীদের স্থায়ীভাবে ছাঁটাই করার সুযোগও নিতে পারেন। অন্যদিকে ডেমোক্র্যাটরা স্বাস্থ্যসেবা ভর্তুকি রক্ষার দাবিতে আপসহীন অবস্থানে আছেন। তাদের মতে, সাধারণ মানুষের সমর্থন তাদের পক্ষেই আছে।

অর্থনীতির সম্ভাব্য ক্ষতি:

কংগ্রেসনাল বাজেট অফিসের (CBO) হিসাবে, প্রতিটি সপ্তাহের শাটডাউনে প্রবৃদ্ধি কমতে পারে ০.১ থেকে ০.২ শতাংশ পয়েন্ট। যদিও পূর্ববর্তী শাটডাউনের মতো দ্রুত ঘুরে দাঁড়ানোর আশা করা হচ্ছে, তবে এবার যদি ছাঁটাই স্থায়ী হয়, তবে ক্ষতি দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে। সর্বশেষ শাটডাউন হয়েছিল ২০১৮ সালে, যা ৩৫ দিন ধরে চলেছিল যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময়। সেটিও শেষ হয়েছিল তীব্র জনদুর্ভোগ ও বিমান চলাচলে বিপর্যয়ের কারণে। এবার কবে সমাধান হবে তা এখনও অনিশ্চিত। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শাটডাউন যত দীর্ঘায়িত হবে, ততই বেড়ে যাবে সরকারি অচলাবস্থার ক্ষতি ও সাধারণ আমেরিকানের ভোগান্তি।

যুক্তরাষ্ট্রে বাজেট সমঝোতা নিয়ে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের দ্বন্দ্ব নতুন কিছু নয়, তবে এবারকার শাটডাউনকে ঘিরে অনিশ্চয়তা অনেক গভীর। স্বাস্থ্যখাতকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক টানাপোড়েন যেমন তীব্র হচ্ছে, তেমনি সরকারি কর্মচারী থেকে শুরু করে সাধারণ আমেরিকান নাগরিক সবার জীবনযাত্রায় এর প্রভাব পড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সমঝোতা ছাড়া শাটডাউন দীর্ঘস্থায়ী হলে অর্থনীতি ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে। তাই শেষ পর্যন্ত সমাধান আসবে রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমেই কিন্তু কখন, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।

- বিশেষ প্রতিনিধি (Special National Correspondent) মোঃ সাইদুর রহমান (বাবু)



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: