২০০৯–২০২৪ সালে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর বঞ্চিত কর্মকর্তাদের ন্যায়বিচার ও পুনর্বহালে সরকারের বিশেষ উদ্যোগ

বিশেষ প্রতিনিধি, অধিকার পত্র ডটকম

ঢাকা, ৩০ নভেম্বর ২০২৫:

বাংলাদেশের সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীতে বিগত সরকারের সময়ে যেসব কর্মকর্তা বৈষম্য, অবিচার ও হয়রানির মুখোমুখি হয়েছেন—তাদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

রবিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সামরিক বাহিনীর বঞ্চিত কর্মকর্তাদের আবেদন যাচাই-বাছাই সংক্রান্ত কমিটির প্রতিবেদন গ্রহণের সময় তিনি বলেন, “যে পরিমাণ ভয়াবহ অবিচার উন্মোচিত হয়েছে—তা কল্পনাতেও ভাবিনি।”

২০০৯ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত বঞ্চনার পূর্ণ চিত্র

কমিটির অনুসন্ধানে উঠে এসেছে ২০০৯ সাল থেকে ৪ আগস্ট ২০২৪ পর্যন্ত সামরিক বাহিনীর শত শত কর্মকর্তা বৈষম্য, অযৌক্তিক শাস্তি, জঙ্গি ট্যাগ, রাজনৈতিক অপবাদ এবং বেআইনি গুমের মতো পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন।

কমিটি মোট ৭৩৩টি আবেদন পায়, যার মধ্যে যাচাই শেষে ১৪৫টি অভিযোগে যথার্থতা পেয়ে সুপারিশ করেছে।

বিভ্রান্তিকর অপবাদ ও অবৈধ গুমের চাঞ্চল্যকর তথ্য

কমিটি জানায়—

• ছয়জন কর্মকর্তাকে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা বা জঙ্গি অপবাদ দিয়ে ১–৮ বছর পর্যন্ত অবৈধভাবে গুমে রাখা হয়েছিল।
• একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভুয়া জঙ্গি নাটক বানিয়ে হত্যার অভিযোগও পাওয়া গেছে।
• তার স্ত্রীকেও এক বছরের শিশুসহ ছয় বছর কারাগারে রাখা হয় কোনো বিচার ছাড়াই।

বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে প্রশ্ন তোলায় নির্যাতনের অভিযোগ

২০০৯ সালের বিডিআর হত্যাকাণ্ড নিয়ে সরকারের নিষ্ক্রিয়তার বিষয়ে সোচ্চার হওয়া পাঁচজন কর্মকর্তাকে ‘ব্যারিস্টার তাপস হত্যা চেষ্টার’ মতো ভুয়া মামলায় ফাঁসানো হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

১/১১ সময়কার অন্যায় বরখাস্ত, ধর্মীয় আচরণে ‘জঙ্গি ট্যাগ’

• ১/১১ সময় ডিজিএফআইয়ে দায়িত্ব পালন করা পাঁচজন কর্মকর্তাকে বিনা অভিযোগে বরখাস্ত করা হয়।
• ধর্মীয় আচরণ নিয়মিত পালন করায় চারজন লেফটেন্যান্টকে জঙ্গি-ট্যাগ দিয়ে চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল।

কোন বাহিনীতে কতজনের জন্য সুপারিশ

কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী—

• সেনাবাহিনী: ১১৪ কর্মকর্তা—স্বাভাবিক অবসর, পদোন্নতি, বকেয়া ভাতা ও চারজনের পুনর্বহাল।
• নৌবাহিনী: ১৯ কর্মকর্তা—উপযুক্ত পদোন্নতি, ভাতা ও সুবিধা।
• বিমান বাহিনী: ১২ কর্মকর্তা—অবসর, আর্থিক প্রাপ্যতা ও পদোন্নতির সুপারিশ।

 প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য

প্রফেসর ইউনূস বলেন,
“পূর্ণ পেশাদারিত্বের সঙ্গে সত্য তুলে ধরায় কমিটিকে ধন্যবাদ জানাই। বঞ্চিত প্রতিটি সদস্য তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবেন—এটি সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকার।”

বৈঠকে কমিটির সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল আব্দুল হাফিজ, মেজর জেনারেল (অব.) শামস-উল-হুদা, মেজর জেনারেল (অব.) পাশা হাবিব উদ্দিনসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।